আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শঙ্খচিল

১. ছিনতাই, রাহাজানি- এসব জীবনে অনেক করেছে রাজীব। কিন্তু কিডন্যাপ এই প্রথম। তাও আবার কিডন্যাপ করেছে জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক রওনক ইসলামকে। কিডন্যাপ করে নিয়ে এসেছে ঢাকা থেকে একটু বাইরে, গাজীপুরে। ।

দরজা জানলা বন্ধ ছোট্ট্ একটা রুমে তালা বন্ধ করে রেখেছে তাকে। রুমটি দেখে রওনক সাহেব বেশ অবাক হয়েছিলেন। সাধারনত কিডন্যাপ করে এনে এমন লাগজারিয়াস রুমে থাকতে দেয়া হয় না। সুন্দরভাবে সময় কাটানোর জন্য যা যা প্রয়োজন তার সবই আছে রুমটিতে। একটি বিছানা, তাতে ধবধবে সাদা একটি চাদর, একটি পড়ার টেবিল সাথে একটি চেয়ার, ছোট্ট একটি বুক শেল্ফ যাতে বেশ কিছু বই রাখা, আর একটি টিভি আর ডিভিডি প্লেয়ার।

তুমি আমাকে কেন ধরে এনেছ? আমাকে চিনতে পারছ না তুমি? আমি... আমি লেখক রওনক ইসলাম। ছেলেবুড়ো সবাই এক নামে চেনে আমাকে। তুমি আামাকে চিনতে পারছ না ছেলে? এক নি:শ্বাসে কথাগুলো বললেন রওনক। স্যার, আপনাকে আমি চিনতে পেরেছি বলেই এনেছি। শ্রদ্ধা মেশানো গলায় বলল রাজীব।

মানে কি? কি চাই তোমার? একটু সময় দেন স্যার, বলছি। দেখো ছেলে, কাজটি তুমি মোটেও ভাল করছ না। তুমি বুঝতে পারছ না এর পরিণতি কি হবে। রওনক সাহেব এবার উত্তেজিত। স্যার, আপনি এখন উত্তেজিত।

এখন কথা বলার দরকার নাই। র‌্যাস্ট নেন। আমি পরে কথা বলব। দুপুরে লাঞ্চ পাঠিয়ে দেয়া হবে, খেয়ে নিয়েন। হিম শীতল কণ্ঠে কথাগুলি বলে রাজীব দরজায় তালা দিয়ে বাইরে চলে গেল।

রওনক ইসলাম খুব চিন্তায় পড়ে গেলেন। জীবনে এমন অবস্থায় কখনো পড়েননি। ছেলেটার মোটিফটাও ঠিক বুঝা যাচ্ছে না। বাসার কথা খুব মনে পড়ছে তার। শায়লা নিশ্চয়ই চিন্তা করছে।

ঘুম থেকে জেগে বাজার করতে বেরিয়েছিলেন তিনি। প্রতি শুক্রবার তিনি নিজে বাজার করতে বের হন। তাও আবার হেটে হেটে যান। এতে মাস্ পিপলের সাথে একটা কণ্টাক্ট হয়। লেখার থিম পেয়ে যান তিনি।

লেখার থিম খুঁজতে গিয়ে এমন ঝামেলায় পড়া হবে ভবেননি কখনোই। শুভ নিশ্চয়ই এতক্ষনে আর্ট স্কুল থেকে বাসায় ফিরেছে। বাবা ফিরছেন না দেখে কি করবে সে? এয়ার কন্ডিশন্ড রুমে বসে তিনি ঘামতে থাকলেন। ২. চোখ খুলে রওনক সাহেব বুঝতে পারলেন না, দিন নাকি রাত। দুপুরে বেশ ভাল লাঞ্চ দেয়া হয়েছিল তাকে।

মাগুড় মাছের ঝোল, পাবদা মাছ, শুটকি ভর্তা আর ভাত। রওনক সাহেবের প্রিয় খাবার। তার কোন এক বইয়ে লিখেছিলেন ব্যাপারটি। ছেলেটি মনে হয় পড়েছে। ছেলেটা তার বই পড়ে বুঝতে পেরে খানিকটা রিলাক্সড হয়েছেন তিনি।

আর যাই করুক, তাকে নিশ্চয়ই মারবে না ছেলেটি। তিনি হাত ঘড়িতে সময় দেখলেন। সন্ধ্যা সাতটা। বাড়ি থেকে বের হওয়ার ১০ ঘন্টা হয়ে গেল। রিমোট নিয়ে অন্যমনস্ক রওনক টিভিটা অন করলেন।

চ্যানেল আইয়ের সংবাদ চলছে। এ যে দেখি তারই ছবি টিভিতে! প্রখ্যাত ও জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক রওনক ইসলাম আজ সকাল থেকে নিখোঁজ রয়েছেন। সকাল দশটার দিকে বাজার করতে বের হয়েছিলেন তিনি। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তিনি বাসায় ফিরেননি। তার মোবইলটাও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।

আমরা কিছুক্ষন আগে তার স্ত্রী শায়লা বেগমের সাথে কথা বলেছিলাম। দেখুন তার ভিডিও ফুটেজ। টিভি স্ক্রিনে ভেসে আসল লেখকের বাসার ড্রয়িং রুম। একমাত্র ছেলে শুভকে পাশে নিয়ে বসে আছে শায়লা। অনেকগুলো মাইক্রোফোন তার সামনে।

কান্না কান্না গলায় সে বলছে, সকাল সকাল বেরিয়ে গেল লোকটি। বললাম, গাড়ি নিয়ে যাও। না করল। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত কোথায় আছে কিছু জানতে পারলাম না। দিনে দুপুরে দিব্যি নাই হয়ে গেল লোকটি... টিভি ক্যামেরা ঘুরে গেল চ্যানেল আইয়ের রিপোর্টারের দিকে।

জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক রওনক ইসলামকে পাওয়া না যাওয়ায় সারা দেশে উৎকণ্ঠার শুরু হয়েছে। গুলশান থানায় ইতোমধ্যে জিডি করা হয়েছে। এই মুহুর্তে খবরটি নিয়ে আমরা যাচ্ছি মাননীয় স্বরাস্ট্রমন্ত্রীর কাছে। স্বরাস্ট্রমন্ত্রির সামনে মাইক্রোফোন। আমরা ব্যাপারটা বেশ সিরিয়্যাসলি নিয়েছি।

একজন কথা সাহিত্যক গুম হয়েছেন এটাতো মেনে নেয় যেতে পারে না। কোন আলটিমেটাম? ৪৮ দিনের? ঘিরে থাকা সাংবাদিকদের মধ্য থেকে প্রশ্ন ভেসে আসল। এই স্বরাস্ট্রমন্ত্রী আগেরজনের পথ ধরলেন না। না, কোন দিন তারিখ ক্ষণ মেপে বলা যাবে না। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ইতোমধ্যে তৎপর হয়ে পড়েছে।

আমরা দেখছি ব্যাপারটি। টিভি আবার স্টুডিওতে ফিরে আসল। রওনক টিভি বন্ধ করে দিলেন। সারাজীবন অন্যের খবর নিয়ে গল্প উপন্যাস লিখেছেন আর আজ তিনি নিজেই খবর হয়ে গেলেন! শায়লার কান্না দেখে বুকের মধ্যে ব্যাথা শুরু হল। তিনি আবার বালিশে মাথা রাখলেন।

৩. স্যার, তিনদিন হয়ে গেল। আপনার উত্তেজনা কি কমেছে? আমি আসলে বুঝতে পারছি না, তুমি কি চাও। টাকা চাও, টাকা? কত চাও বল। না, টাকা চাই না। কি চাও, ¯ষ্পষ্ট করে বল।

আমি চাই উপন্যাস। মানে কি? ঝেড়ে কাশ। ধীরে। ধীরে। উত্তেজিত হবেন না।

আপনার আবার হার্টে প্রবলেম আছে। কিছু হয়ে গেলে ডাক্তার দেখাতে পারব না। এতো নাটকীয়তা কিসের তোমার? বলি এতো নাটকীয়তা কি? এখানে আমার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বলছি স্যার। পানি খাবেন? একটু পানি খেয়ে নেন।

অবশ্য আমি যা চাইব আপনার কাছে সেটা আপনার জন্য খুব সহজ। আরে বাবা, সেটাই তো জানতে চাচ্ছি। আমি চাই আপনি আমাকে একটা উপন্যাস লিখে দেবেন। এখানে আপনাকে থাকতে হবে ঠিক ততোদিন যতোদিন না আপনি উপন্যাসটি শেষ করবেন। উপন্যাস লেখা হলেই আমি ছেড়ে দেব আপনাকে।

রওনক সাহেব অবাক হলেন। বলে কি ছেলেটি! উপন্যাস দিয়ে তুমি কি করবে? বলছি। উপন্যাসটি লিখে আপনি লেখাটি আমাকে দিয়ে দিবেন। ওটা হয়ে যাবে আমার লেখা। বিষ্ময় উপচে পড়ছে লেখকের চোখ দিয়ে।

উপন্যাস দিয়ে তুমি কি করবে? আমি ওটা আমার নামে প্রকাশ করব। কিন্তু কেন? তোমার উদ্দেশ্য কি? আপনার লেখা খুব বিক্রি হয়। ছাতা মাথা যাই লিখেন তাই দেখি বিক্রি হয় দেদারসে। আপনার শেষ লেখাটি আমি পড়েছি। লাশ কাটা ঘরে।

নামটি জীবনানন্দ থেকে নিয়েছেন। চমৎকার নাম। পড়ার পর কেঁদেছি অনেকণ। আপনার একটা লেখা যদি আমার নামে ছাপাতে পারি, তবে আর চিন্তা নেই আমার। কেন? তোমার কি চিন্তা? লেখক এবার কৌতুহলী।

আমার অনেক টাকার দরকার। প্রতিদিন ড্রাগ না হলে চলে না আমার। প্রচুর টাকা লাগে। ছিনতাই করতে আর ভাল্লাগে না। সেদিন আমার বন্ধুটা ছিনতাই করতে গিয়ে ধরা পড়ে গেল।

এখন সে পুলিশ কাস্টডিতে আছে। পুলিশ কাস্টডি আমি ভয় পাই না। পুলিশের কাছে ড্রাগ পাব না, সেটাই সমস্যা। ড্রাগ ছাড়া আমার একদম চলে না। তাই বলে তুমি আমার একটা লেখা নিজের বলে চালিয়ে দিতে চাও? হু।

এটা নিশ্চিত একটা ইনকামের উপায়। আপনার শেষ বইটা দেখলাম ইতোমধ্যেই বাংলা সাহিত্যের বেস্ট সেলার তকমা পেয়ে গেছে। আপনার একটা বই যদি আমার নামে ছাপাতে পারি, তবে এটা একটা নিশ্চিত আর নিরাপদ ইনকামের উপায় হবে, নয় কি? ও আচ্ছা! এই বুদ্ধি! রওনক সাহেব চরম উত্তেজিত এবার। তা তোমার কি করে মনে হল আমার স্বত্তা তোমার কাছে বিকিয়ে দেব? লেখালেখি আমার কাছে কি জানো? আমার আত্মা। আমার আত্মা! চিৎকার করে উঠলেন রওনক সাহেব।

আমি জানি লেখালেখি আপনার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু এটা নিশ্চয়ই অস্বীকার করবেন না যে, তার থেকে গুরুত্বপূর্ণ আপনার জীবন। তুমি কি আমাকে খুন করার হুমকি দিচ্ছ? আপনি মানুষের মন নিয়ে লিখেন। আর আমার কথা আপনি বুঝবেন না, তাই কি হয়? ঠিক ধরেছেন। আপনি যদি আমার প্রস্তাবে রাজী না হন, তবে আমি সেটাই করব। আর জানেন তো এদেশে খুনের কোন শাস্তি হয় না।

সাগর রুনি নিয়ে তো অনেক করলেন আপনারা। খুনীদের কিছু হয়েছে? যতদূর মনে পড়ে আপনিও তো পত্রিকায় এ নিয়ে একটা কলাম লিখেছিলেন। তুমি যুবক ভুল করছ। ভুল মানুষকে ধরে এনেছো। রওনক সাহেবের দৃঢ় উচ্চারণ।

ঠিক আছে। তবে তৈরী হন। রাজীব পকেট থেকে ছোট্ট রিভলবারটি বের করল। স্যার, আপনি আমার জন্য কাজটি কঠিন করে দিলেন। ছোট বেলা থেকেই আপনার লেখা পড়ছি।

আপনার এক বিরাট ফ্যান ছিলাম তখন। আপনাকে খুন করাটা আমার জন্য কিছুটা কষ্টের। তবু, উপায়,নেই। রাজীব রিভলবারটি রওনক সাহেবের কপালে ঠেকাল। রওনক সাহেবের ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না।

এতো স্মার্ট একটা ছেলে, পড়ুয়া একটা ছেলে তাকে খুন করবে। তবু বন্দুকের শীতল স্পর্শে তার বুকটা ধড়ফড় করে উঠল। স্যার, স্যাকন্ড থট দেবেন? অনেক সময় স্যাকন্ড থট অনেক বিবেচনাপ্রসূত হয়। স্যার, আপনার ছেলের কথাটা একবার ভাবেন। পিচ্চি ছেলে।

সে কি করে তার বাকিটা জীবন কাটাবে, একবার ভাবেন। আপনার স্ত্রী কি সারাজীবন তাকে আগলে রাখতে পারবে? আপনি মরলে কি হবে আপনার ছেলের? রওনক সাহেবের চোখে শুভর নিষ্পাপ চেহারা ভেসে উঠল। সেদিন টিভিতে তার চেহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছিল ছেলেটা কতটা অসহায় হয়ে পড়েছে। সেই ছেলেটাকে নিজের লেখার জন্য এতিম করে দিবেন তিনি? ছেলে বড়, না লেখা বড়? নিশ্চয়ই ছেলে বড়। আর কিছু ভাবলেন না তিনি।

রাজী হয়ে গেলেন রাজীবের প্রস্তাবে। ৪. রওনক সাহেব লিখছেন। আর কোন কাজ নাই। সারাদিন লেখা। কাহিনী নির্মাণ, চরিত্র চিত্রণ, সংলাপ নির্বাচন- এমন নিবিড় ভাবে মনোনিবেশ আর কখনোই করতে পারনেনি তিনি লেখায়।

লেখা তরতর করে এগিয়ে চলেছে। একটাই চিন্তা তাড়াতাড়ি লিখতে হবে। যত তাড়াতাড়ি শেষ করা যাবে লেখাটা, রওনক সাহেবের মুক্তি তত তাড়াতাড়ি হবে। এই বন্দী অবস্থায় আজ সাতদিন হয়ে গেল। দিনে একবার রাজীব আসে।

লেখার অগ্রগতী সম্পর্কে জানতে চায়। পাঁচ দশ মিনিট পর চলে যায়। আজ প্রথম আলো পত্রিকাটি নিয়ে আসল সে। বলল, স্যার, আপনাকে নিয়ে বাইরেতো তুলকালাম অবস্থা। আজ প্রথম আলোর সম্পাদকীয় পড়ে দেখেন।

সম্পাদকীয় তাকে নিয়েই লেখা হয়েছে। রওনক ইসলাম কোথায়? অতি দ্রুত তাকে খুঁজে বের করা হোক ২০ এপ্রিল, ২০১২ ঠিক এমন একটি শিরোনাম দিয়ে আমরা একটি সম্পাদকীয় লিখেছিলাম। ছয় মাসের মধ্যে আজ আবার একই শিরোনামে লিখতে হল বলে আমরা মর্মাহত। সেবার নামটি ছিল ইলিয়াস আলী আর আজ রওনক ইসলাম। মানুষ দুজন দু’জগতের।

একজন রাজনীতির জগতের। আরেকজন সাহিত্যের। জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক রওনক ইসলাম বাংলাদেশের এক বিরল সম্পদ। মাত্র এক দশকে বাংলা সাহিত্যকে তিনি যেখানে নিয়ে গেছেন তাতে তার প্রতি আমরা চির কৃতজ্ঞ। তার কল্যানে বাংলাদেশের সাহিত্য আজ সারা বিশ্বে সমাদৃত।

তার শেষ উপন্যাস লাশ কাটা ঘরে জায়গা করে নিয়েছে উইকিপিডিয়ার লিস্ট অব ব্যাস্ট সেলিং বুকস এ। অতি সম্প্রতি তিনি পেয়েছেন দ্যা ম্যান বুকার প্রাইজ যা আমাদের দেশের জন্য এক বিরল সম্মানের বিষয়। তার কাছ থেকে আমাদের পাবার আছে আরো অনেক কিছু। এমন একজন লেখক রাজধানীর রাস্তা থেকে দিনে দুপুরে উধাও হয়ে গেছেন- এ খবর উদ্বেগজনক। উদ্বেগ আরো বেড়ে যায় যখন আমরা দেখি বিষয়টিকে পলিটিসাইজ করা হচ্ছে ন্যাক্কারজনকভাবে।

বিরোধী দলীয় নেত্রী বলেছেন , জনাব রওনক সাগর রুনি হত্যাকান্ডে সরকারের সমালোচনা করায় তাকে গুম করা হয়েছে। অন্যদিকে সরকারদলীয়রা বলছে, লেখককে গুম করে বিরোধী দল রাজনৈতিক ফায়দা নিতে চাচ্ছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে আমরা অনাদিকাল থেকে এমন কাঁদা ছুঁড়াছুঁড়ি দেখে আসছি, যা অত্যন্ত হতাশাজনক। আমরা এমন অবস্থা থেকে মুক্তি পেয়ে এই গুম রহস্যের ত্বরিত সমাধান চাই। সেই সঙ্গে এও বলা দরকার, বিক্ষোভ প্রতিবাদ শান্তিপূর্ন হওয়া বাঞ্জনীয়।

রওনক ইসলামের নিখোঁজ হওয়ার খবরে লেখক সমিতির সদস্যরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, পুলিশের আগ্নেয়াস্ত্র ও ঢাল কেড়ে নেওয়া সহ যে সহিংস আচরণ করেছেন তা গ্রহণযোগ্য নয়। অপরদিকে বিরোধীদল আগামী সোমবার সারাদেশে সকাল সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে। ঘটনা যতই গুরুতর হোক, প্রতিবাদ বিক্ষোভের কারণও যতই যুক্তিসঙ্গত হোক, হরতালের মতো জনভোগান্তিমূলক ও অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর কর্মসূচি পরিহার করাই ভাল। রওনক সাহেব পত্রিকা বন্ধ করলেন। রবি ঠাকুর ঠিকই বলেছিলেন, সাত কোটি সন্তানের হে মুগ্ধ জননী, রেখেছ বাঙালী করে, মানুষ করনি! ৫. উপন্যাস লেখা শেষ।

নামটিও রওনক সাহেব দিয়েছেন। শঙ্খচিল। পান্ডুলিপিটি রাজীবের হাতে তুলে দিয়ে তিনি বললেন, এই নাও। আমার জীবনের সেরা লেখা এটা। জানিনা আর চেষ্টা করেও এমন লেখা লিখতে পারব কিনা! এবার আমাকে মুক্তি দাও।

রাজীব বলল, আপনি কিন্তু ঘুণাক্ষরেও কাউকে এ ঘটনা বলবেন না। যদি বলেন তবে কিন্তু আপনার ছেলেকে হারাবেন। মনে রাখবেন, আমার সাথে আরো কয়েকজন আছে। না, বলব না। তুমি নিশ্চিত থাক।

আমাকে যে আজ ছেড়ে দিচ্ছ, সেজন্য সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকব তোমার প্রতি। তোমার ভদ্র ব্যবহার আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমার চিন্তা একটাই। খবরটা নিয়ে দেশে যা শুরু হয়েছে তাতে আমি ফিরে গিয়ে সবাইকে কি বলব। বলে দিবেন লেখালেখির কাজে উধাও হয়ে গিয়েছিলেন।

আপনারা লেখক মানুষ। আপনারা এরকম খামখেয়ালী হবেন, এটা সবাই জানে। হু, তাই বলতে হবে। দেখা যাক। ৬. রাজীব বসে আছে অন্যপ্রকাশের মাজহার সাহেবের সামনে।

অনেক কষ্টে তার দেখা পেল রাজীব। আপনি নিজে পড়েছেন লেখাটা? হু, পড়েছি রাজীব সাহেব। ততোটা খারাপ হয় নাই। তবে পাবলিক খাওয়ার মতো হয় নাই। আরো লিখতে থাকুন।

আপনার লেখার হাত ভাল। ভাল করবেন। আপনি বলছেন, এ লেখাটি ছাপানো যাবে না? কতবার বলব রাজীব সাহেব? লেগে থাকেন। নিশ্চয়ই হবে। রাজীব অনেক কষ্টে তার রাগ সামলাচ্ছে।

আচ্ছা স্যার, আমার শেষ প্রশ্ন। এই লেখাটাই যদি রওনক ইসলাম এনে দিতেন তবে তো না পড়েই ছাপাখানায় পাঠিয়ে দিতেন, নয় কি? রাজীব, আপনি কার সাথে কার তুলনা করছেন? রওনক ইসলাম কখনোই এই মানের লেখা লিখতেন না। আমি এখন উঠব। রওনক সাহেবের বাসায় যেতে হবে। বাই।

বলেই মাজহার সাহেব তার চেয়ার ছাড়লেন। হতবাক ও উত্তেজিত রাজীব রাগে গজগজ করতে করতে অন্যপ্রকাশ থেকে বের হল। সে এ বই প্রকাশের ব্যবস্থা করে তবেই ক্ষান্ত দেবে। রাজীবের সামনে আরো বিষ্ময় অপেক্ষা করছিল। বড় বড় সব প্রকাশনী তো বটেই।

ছোট প্রকাশনীগুলোও তাকে ফিরিয়ে দিল। সবার এক মতামত, বইটা প্রকাশযোগ্য নয়। লেখককে আরো চেষ্টা করতে হবে। রাজীব এবার অন্য পথ ধরল। নিজ খরচে বইটি প্রকাশের ব্যবস্থা করল।

এজন্য তাকে অবশ্য ছিনতাইয়ের সংখ্যা আরো বাড়িয়ে দিতে হল। বইটা প্রকাশ হলে তো সব টাকা সূদে আসলে ফেরত আসবে। যেনতেন লেখকের লেখা না বইটি। বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে সফলতম লেখকের কলম নি:সৃত এই পান্ডুলিপি। ৭. রাজীবকে নিজ বাসায় দেখতে পেয়ে রওনক সাহেব অবাক।

হাতে বড় একটি বস্তা। বস্তা ভর্তি কি যেন। কি ব্যাপার রাজীব! আবার কেন? আবার কি চাও? স্যার, মাপ করবেন আমায়। আপনার পান্ডুলিপিটা ফিরিয়ে দিতে আসলাম। এখানে আমার নামে প্রকাশিত বইগুলোও থাকল।

সব পুড়িয়ে ফেলবেন। একজন পাঠকও আমার বইটি কিনেনি, পড়েনি। পান্ডুলিপিটি আপনি আপনার নামে প্রকাশ করুন। আমি বুঝতে পেরেছি লেখা কেউ কখনো চুরি করতে পারে না। করলেও তার কোন লাভ হয় না।

টাকা পয়সা ধন দৌলত কখনোই একজন লেখকের লেখার সমকক্ষ না। রওনক ইসলামের বিষ্ময়ের ঘোর কাটার আগেই রাজীব চলে গেল। পেছনে পড়ে থাকল বস্তাভর্তি শঙ্খচিল! ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।