আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এ যুগের সত্যিকারের মুগলি

আমি উচ্চারিত সত্যের মতো স্বপ্নের কথা বলতে চাই পাঁচ টন ওজনের বিশালাকার কুচকুচে বুনো হাতি। ওই হাতিতে চড়ে অবলীলায় ঘুরে বেড়াচ্ছে একটি মেয়ে। চিতা বাঘকে বানিয়েছেন সে ‘ভাই’। আফ্রিকান দৈত্যাকৃতির ব্যাঙ, যে কিনা খেয়ে ফেলতে পারে আস্ত কোনো ছাগল, তাকে বানিয়েছে সে আদুরে 'বন্ধু'। জাপটে ধরাসহ ওই বুনো ব্যাঙের সাথে চলে তার দিনভর কতই না খেলা।

চিতাবাঘ তার হাত চেটে আদর করে দিচ্ছে। বিষাক্ত সাপ এসে তার হাত থেকে খেয়ে যাচ্ছে খাবার। কোনো সিনেমায় নয়, বাস্তবেই ঘটছে এই ঘটনাগুলো। ক্ষুদে ওই মেয়েটির নাম টিপ্পি দেগ্রে। সেই খুদে টিপ্পির বয়স এখন ২৩ বছর।

জন্মের পর থেকেই সে বড় হয়েছে আফ্রিকার কালাহারি এলাকার মরু অঞ্চলের সুবিশাল অরণ্যাঞ্চলে। তাকে নিয়ে এরইমধ্যে নির্মাণ হয়েছে সিনেমা। তাকে নিয়ে লেখা হয়েছে একাধিক বইও। সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে জঙ্গলে তার বন্ধুদের নিয়ে তোলা অসংখ্য ছবি। বলা হচ্ছে, টিপ্পিই হচ্ছেন এ যুগের আসল 'মুগলি'।

প্রখ্যাত লেখক রুডিয়ার্ড কিপলিংয়ের ভ্রমনকাহিনীর 'মুগলি' যেমন বড় হয়েছিল বিশালাকার ভল্লুকের কাছে। এ যুগের মুগলিও বড় হয়েছে একেবারে প্রকৃতির সান্নিধ্যে, বুনো জীব-জন্তুর কাছে। এ এক অবিশ্বাস্য কাহিনী। ফটোগ্রাফার সিলভি রবার্ট ও অ্যালেইন দেগ্রে ছিলেন ফ্রিল্যান্স ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার। আশির দশকের শেষের দিকে গিয়েছিলেন আফ্রিকার কালাহারি মরুভূমিতে ছবি তুলতে যান ফরাসি এই দম্পতি।

সেই আফ্রিকার নামিবিয়ার রাজধানী উইন্ডহকে জন্ম নেয় তাদের প্রথম কন্যা সন্তান। আলফ্রেড হিচককের দ্য বার্ডস'ছবির অভিনয়শিল্পী টিপ্পি হেড্রেনের নামানুসারে কন্যার নাম রাখেন টিপ্পি দেগ্রে। নবজাতক মেয়েটির পরিচর্যার পাশাপাশি চলতে থাকে পশুপাখি ক্যামেরায় ধরে রাখার কাজ। সেই কাজের জন্য সিলভি ও অ্যালেইনকে চষে বেড়াতে হলো আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চল। মেয়ে টিপ্পি বেড়ে উঠতে লাগল একদমপ্রকৃতির কোলেই।

মনুষ্য বন্ধু নেই তো কি হয়েছে, তার বন্ধু জুটে গেল বনের কিছু পশুপাখি। খেলার জায়গা হলো বিশাল ঘাসবন, মরুভূমি কিংবা ঠাস বুনোটের ঝোপঝাড়। মাথার ওপর ছাদ হলো উদার জমিনের সুনীল আকাশ। টিপ্পি বেড়ে উঠতে উঠতে বনের জন্তুরাই হয়ে উঠলো তার সেরা বন্ধু। কিন্তু বাবা মায়ের সাথে টিপ্পি একদিন ফিরে আসে ফ্রান্সে।

আফ্রিকার বন্ধুদের সাথে প্রকাশিতব্য ছবি সম্বলিত বই ‘টিপ্পি: মাই বুক অব আফ্রিকা’ হইচই ফেলে দেয় সারা পৃথিবীতে। তারকা হয়ে যায় টিপ্পি। ১৯৯৯ সালে বাবা মায়ের বিচ্ছেদ ঘটলে আফ্রিকার সাথেও বিচ্ছেদ ঘটে টিপ্পির। কিন্তু টিপ্পি যে প্যারিসের নয়, সেটা বোঝা গিয়েছিল তার আচরণেই। স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে গিয়েও টিপ্পির মনটা যেন পড়ে ছিল আফ্রিকায়, কালাহারিতে।

পরবর্তীতে চলচ্চিত্র নির্মাণের উপর উচ্চশিক্ষা শেষ করে পুঁথিগত বিদ্যা কাজে লাগাতে বেছে নেন সেই আফ্রিকাকেই। ডিসকভারির হয়ে কাজ শুরু করেন এই ক্ষুদে 'মুগলি'। ৪ জুন পাদেয়া আফ্রিকার যান সেই ছোট্ট 'মুগলি'। তার চার পেয়ে বন্ধুদের সাথে কাটানো চমৎকার শৈশবের জের ধরেই বুনোজগৎকে বিশ্বের সামনে তুলে আনছেন স্বমহিমায়। কালাহারির জীবন্ত ছবিগুলো আজও জানান দেয়, প্রকৃতিই মানুষের অকৃত্রিম বন্ধু; অন্য কিছু নয়।

Click This Link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।