আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শিশুতোষ গল্প, নকল বান্দর

বার বার মনে পড়ে সোনালী সেই দিন গুলো... রিন্টু আজ কিচ্ছূ খাচ্ছে না। সারাদিন অনেক চেষ্টা করেছে তার মা। কিন্তু কিছুতেই কিছূ হচ্ছে না। গো ধরেছে চাচ্চুকে একটা বাদর আনতে বলেছিল আনেনি কেন। চাচ্চু সারারাত জার্নি করে এসে নিজের ঘরে দরজা বন্ধ করে ঘুমাচ্ছে।

বান্দরবান যাওয়ার সময় খূব বায়না ধরেছিল চাচ্চুদের সাথে যাওয়ার জন্য। কিন্তু চাইলেইতো আর যাওয়া যায় না। পাহাড়ের আকাবাকা আর উচু নিচু পথে বড়দের ঘাম ছুটে যায়। শিশূদের নেয়া কতটা ঝূকিপূর্ন তা না গেলে বুঝানো যাবেনা। তাই ভাইপোর হাত থেকে রক্ষা পেতে আবির বলেছিল তোমার জন্য খেলনা নিয়ে আসবো।

ভাইপো রিন্টুর অনেক খেলনা সে বলেছিল খেলনা লাগবেনা, তুমি যেহেতু বান্দরবান যাচ্ছো আমার জন্য একটা বান্দার নিয়া এসো। ৩ বছরের শিশূ বাচ্ছা তার কথায় সায় দিয়ে বলেছিল আচ্ছা ঠিকআছে এনে দেব। এখন ঠেলা সামলানো বড় দায়। সে কিছূই মানছেনা তার বাদর লাগবেই। মা পড়েছে মহা যন্ত্রনায় কিছূ খায়না কথা বলেনা চুপ করে বসে আছে।

অন্যদিন কার্টূন দেখে আজ তাও দেখে না। কিছূ সামনে দিলে ছূড়ে ফেলে। পুরো বাড়ীতে একটা মাত্র অবুঝ শিশূ সবার খূব আদরের। যখন যা চায় তাই পায়। তার তার প্রত্যাশা দিন দিন বেড়েই চলেছে।

কিছূক্ষন হয়েছে কান্না শূরু করেছে। বিলাপ করছে আর বলছে অমার বান্দর কই। এ ঘটনায় খূব বিরক্ত রিন্টুর মা। কারণ তার অনেক কাজ আছে। রান্না বান্না।

ঘর পরিষ্কারসহ অনেক কাজ। রিন্টুর বাবা চলে গেছে অফিসে। ছোট চাচ্চু কলেজে। কাদতে কাদতে দাদুর ঘরে গেল রিন্টু। দাদু কোলে তোলে নিয়ে রিন্টুর মাকে বকা শুরু করেছে।

দাদুঃ আজ সকাল সকাল-ই বাচ্চাটাকে মেরেছ বউ মা। রিন্টুর মাঃ না মা আমি মারি নি। দাদুঃ তো কাদছে কেন? রিন্টুর মাঃ সে কথা শুনলে আপনি হাসবেন। দাদুঃ কি এমন কথা, বলো শূনি। রিন্টুর মাঃ আপনার নাতি বাদর চায়।

সে বলে বাদর কাধে নিয়ে ঘুরবে। এমন ত্যাদর নাতির কথা শুনে দাদু হেসেই মরে। সে বলে এই কথা তাকে কে শেখালো। রিন্টুর মাঃ সমস্যাটা হচ্ছে আপনার মেঝ ছেলের বান্দরবান যাত্রা। বান্দরবানের নাম শুনে সে বলেছিল ১ টা বান্দর নিয়া আসতে কিন্তু না আনায় এখন সে কিচ্ছূ খাচ্ছে না।

কি মুশকিলে পড়েছি মা বলেনতো কি করি ? বিষয়টা শুনে রিন্টুর দাদু হাসি চেপে রাখতে পারছেনা। এর কি জবাব দেবে তা জানা নেই তার। ভাবছে কি করা যায়। নাতিকে বুঝাচ্ছে সোনা ভাই তুমি খেয়ে নাও তারপর তোমার দাদাভাইকে বলে একটা বান্দর কিনে দেব। রিন্টু শোনার পাত্র না সে বলে না, বান্দর কিনে দেবে চাচ্চু।

তুমি দাদাভাইকে বলে আমাকে একটা হাতি কিনে দিতে বলো। দাদুর চোখ চড়কগাছ। কি মুশকিল বান্দরের দকল শামলাতে পারতেছিনা আবার হাতি। দাদুঃ তুই কি ঘরটাকে চিড়িয়াখানা বানাবি নাকি ? রিন্টুঃ চিড়িয়াখানা বানালে কি বান্দর আর হাতি রাখা যাবে? তার প্রশ্নের জবাব দেয়া আরেক যন্ত্রনার কাজ কোনটা বলতে কোনটা বলে কি চায়, চুপসে যায় দাদু। রিন্টুঃ দাদু চাচ্চুকে ডাকো, আমার বান্দর কই তাকে জিগ্যেস করো।

ঘুমের মধ্যে ডেকে কেউ আবিরের ধমক খেতে চায় না। বাধ্য হয়ে রিন্টু গেল চাচ্চুর দরজায়। গিয়ে দরজা ধাক্কাচ্ছে গায়ের শক্তি দিয়ে। এক পর্যায়ে ঘূম ভাঙ্গে তার। চোখে ঘূম নিয়ে দরজা খুলে আবির রিন্টুকে দেখে কোলে নেয় সে।

কি হয়েছে বাবা ? রিন্টুঃ আমার বান্দর কই ? চোখ কপালে উঠে যায় আবিরের। হায় হায় এ কি বলে। বান্দর পাবে কই। তোমার জন্য মজার খাবার এনেছি বাবা। তুমি খাও।

রিন্টু ঃ না আমি খাবো না, আমি বান্দর নিবো। বেশ উত্তেজিত স্বরে। আবিরঃ এখন বান্দর কোথায় পাবো বাবা, তুমি এখন যাও আমি পরে তোমোকে একটা বান্দর কিনে দেব। আমি খুব ক্লান্ত বাবা, তুমি যাও আমি এখন ঘুমাই পরে কিনে দেব। রিন্টুঃ তুমিতো বলেছিলে বান্দরবান থেকে বান্দর এনে দেবে এখন আনোনি কেন ? এখন বুঝতে পারছে ভুলটা তারই হয়েছে।

অবুঝ শিশূ তার সাথে মিথ্যা বলা ঠিক হয়নি। না বলেও উপায় ছিলনা আবিরের। কারন রিন্টু গো ধরেছিল তার সাথে বেড়াতে যাবে। সে যাত্রায় রক্ষা পেতেই দুষ্টুমি করে বলেছিল, বান্দরবানে বান্দরের উৎপাত বেড়ে গেছে, মানুষের সমস্যা হচ্ছে। তাই মানুষকে বাঁচাতে সে যাচ্ছে বান্দরবান।

বান্দর দাবরাতে ঢাকা থেকে যাচ্ছে তার একদল চাচ্চু। আনন্দ ভ্রমনে যাচ্ছে বললেই আর এই সমস্যা হতো না। বাদরের কথা বলেই এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এখন ঠেলা সামলাতে পারছেনা সবাই মিলেও। বিকেলে ঘুম থেকে উঠে আবির।

ঘুম ভাঙ্গার পরও কান্নার শব্দ আসছে ভাইয়ের ঘর থেকে। চোখ কচলাতে কচলাতে রিন্টুর কাছে যায় সে। কাদতে কাদতে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে সে। এর মধ্যে তার মা বিরক্ত হয়ে ২/৪ ঘা দিয়েছে। আবিরঃ আব্বু তুমি এখনো কাঁদছো।

তোমার কি লাগবে? রিন্টুঃ আমার বান্দর লাগবে। অবাক হয় আবির। এখনো বান্দর থেকে তার চিন্তা সরেনি। উপায় কি, ভেবে পাচ্ছে না। আবিরঃ ভাবী ওকে চিড়িয়াখানা ঘুরিয়ে আনি।

সেখান থেকে বাদও দেখিয়ে আনি। রিন্টুর মাঃ হুম। আরেক যন্ত্রনা বাড়াও। সেখানে গিয়ে বাঘ দেখে আবার চেয়ে বসবে বাঘ নিবো। পরে আরেক সমস্যা।

রিন্টুঃ আমি বাঘও নিবো। এবার সৃষ্টি হয় আরেক নতুন সমস্যার। চাচ্চু আমি একটা বাঘও নেবো। একটা ছোট্ট হাতিও নেবো। আবিরঃ হায় হায় রে, আমি কই যাবো।

বাবারে আমাওে মাফ কইরা দে, আমার ভুল হইয়া গেছে। রিন্টুর মা হাসছে। চাচা ভাতিজার এমন কান্ড কারখানা দেখে। সে বলছে নাও এবার সামলাও। তোমার ভাচিজা নিয়া যেখানে খুশি যাও যা খুশি কেনো।

আমি কিছু জানি না। শুধু আমার ছেলে না কাঁদলেই হলো। আবিরঃ চলো চাচ্চু দেখি কোথায় পাওয়া যায় দেখি তোমার বাঘ, হাতি আর বান্দর। পথে বের হয়ে দেখা আবিরের দেখা হয় তার বন্ধূ রিজুর হীরার সাথে। তার সাথে কথা বলতে বলতে তার সমস্যার কথায় বেরিয়ে আসে।

হীরাঃ এইটা কোন সমস্যা হলো। আমার কাছেই আছে এর সমাধান। চল আমার সাথে আমার দোকানে চল। আমিতো পাশের মার্কেটেই দোকান নিছি। বেটি টয়’স।

চল চল। আবির হীরার দোকানে পৌছে। হীরা প্যাকেট থেকে একটা বাদর বের করে। অবিকল বাদর। তবে সাইজে ছোট।

যে কেউ প্রথম দেখাতে বাচ্চা বদর বলে ভুল করবে। হীরা ব্যাটরি লাগিয়ে পেটে চাপ দেয়। একদম অরজিনাল বাদরের মতো শব্দ করে। প্রথমে রিন্টু ভয় পেয়ে চাচা আবিরের পেছনে চলে যায়, আর হিঃ হিঃ করে হাসে। সারা গায়ে লোম বাদরের গায়ের রঙে রঙ।

কাপড় দিয়ে তৈরি করা। হাত দুটোকে খুলো গলায় আটকানোর ব্যবস্থা আছে। রিন্টুর গলায় আটকাতে চাইলে সে চিৎকার করে। ভয়ে লাগতে চায় না। আবির তার গলায় লাগায় রিন্টু পেছন থেকে বাদরের পেটে চাপ দেয়।

বাদর শব্দ করে। বিষয়টা রিন্টু খুব উপভোগ করছে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।