দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর অবশেষে খুলতে যাচ্ছে বাংলাদেশের জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারের দুয়ার। সরকারি ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় লোক পাঠানোর ব্যাপারে মতৈক্য হয়েছে দুই দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে। এ সংক্রান্ত একটি চুক্তিও হওয়ার পথে। এই চুক্তির ফলে বৃহৎ এ শ্রমবাজারে ৫ লাখ বাংলাদেশীর কর্মসংস্থান হবে। এটা অবশ্যই আমাদের জন্য বড় একটি সুসংবাদ।
গত বুধবার প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন এবং মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ বিষয়কমন্ত্রী ড. এস সুব্রামানিয়ামের মধ্যে ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর বিষয়ে বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া মতৈক্যে পৌঁছেছে। কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে সোর্স কান্ট্রি (উৎস দেশ) হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে মালয়েশিয়া। বর্তমানে ১৩টি সোর্স কান্ট্রি থেকে কর্মী নিচ্ছে মালয়েশিয়া। সোর্স কান্ট্রি হতে পারলে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো সহজ হওয়ার পাশাপাশি খরচও কমে যাবে। এছাড়া এটি জনশক্তি নেয়ার স্থায়ী ব্যবস্থা।
এতে আর কলিং ভিসার (আহূত ভিসা) মতো নির্দিষ্টসংখ্যক জনশক্তি নেয়ার পর লোক নেয়া বন্ধের সুযোগ থাকবে না। সরকারি ব্যবস্থায় জনশক্তি রপ্তানি সংক্রান্ত একটি নীতিমালা ঠিক করতে দেশ দুটির যৌথ উদ্যোগে একটি ওয়ার্কিং কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
মালয়েশিয়া বাংলাদেশের একটি অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার। বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) সর্বশেষ হিসাব মতে, বর্তমানে মালয়েশিয়ায় ৭ লাখ ৮৫১ জন বাংলাদেশী বিভিন্ন খাতে কর্মরত রয়েছেন। তবে ২০০৮ সালের পর থেকে লোক নেয়া বন্ধ থাকায় দেশটির বিভিন্ন খাত যেমন নির্মাণ, প্ল্যান্টেশন, কলকারখানা এবং কৃষি খাতে ব্যাপক হারে শ্রমিক সংকট দেখা দেয়।
মালয়েশিয়ায় অন্তত ২০ লাখ লোকের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে ৫ লাখ লোক বাংলাদেশ থেকে নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ ররেছে মালয়েশিয়া। বলার অপেক্ষা রাখে না, এটি আমাদের জন্য একটি বড় সুযোগ। মালয়েশিয়ায় কাজ নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশীদের বড় প্রতিবন্ধকতা ছিল অভিবাসন ব্যয়। এটা এতোই বেশি যে, ৩/৪ বছরেও সে খরচ উঠানো সম্ভব হয় না।
যা ভুক্তভোগীদের মধ্যে অস্থিরতার সৃষ্টি করে। এ অস্থিরতার কারণেই মালয়েশিয়া বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিয়োগ স্থগিত করে। স্মরণ করা দরকার ২০১০-এর মে মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মালয়েশিয়া সফর করেন এবং উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে শ্রমবাজার উন্মুক্তকরণ ও বাংলাদেশকে সোর্স কান্ট্রি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানান। এ সফর দুদেশের মধ্যে নতুন আলাপ-আলোচনার সুযোগ করে দেয়। তার সুফল শিগগিরই পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ইতিমধ্যে মালয়েশিয়ায় ২ লাখ ৬৮ হাজার অনিয়মিত বাংলাদেশী কর্মীকে নিবন্ধিত করা হয়েছে। যা একটি ইতিবাচক সংকেত।
জানা গেছে, মালয়েশিয়া সরকারের প্রথম এবং প্রধান শর্তই হচ্ছে সরকারের মাধ্যমে লোক পাঠাতে হবে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় জনশক্তি রপ্তানিতে বাংলাদেশ সরকারও আগ্রহী। আমরাও মনে করি, জনশক্তি রপ্তানিতে সরকারি পর্যায়ে চুক্তি হলে অভিবাসন ব্যয় সহনশীল পর্যায়ে থাকবে এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য বন্ধ হবে।
এর ফলে রপ্তানি খাতে অস্বচ্ছতা ও প্রতারণার অবসান ঘটানোও সম্ভব হবে বলে আমাদের বিশ্বাস। এর জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সেবা অন্তত জেলা পর্যায় পর্যন্ত সহজলভ্য করতে হবে এবং এ ব্যাপারে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে। আমরা আশা করবো দ্রুতই প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানি শুরু হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।