আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাজা ত্রিদিব রায়ের লাশ দেশে আনার আবেদনে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি

আমি একজন পর্যটন কর্মী। বেড়াতে, বেড়ানোর উৎসাহ দিতে এবং বেড়ানোর আয়োজন করতে ভালোবাসি। চাকমা সার্কেলের সাবেক রাজা ত্রিদিব রায়ের লাশ পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে আনতে তার ছেলে ও বর্তমান রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়ের আবেদনে সম্মতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে ঠিক কবে তার মরদেহ আনা হবে এ বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি রাজ পরিবারের সদস্যরা। স্থানীয় সূত্র মতে, মরদেহ শনিবার দেশে আনা হতে পারে।

ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়ের ব্যক্তিগত সহকারী সুব্রত চাকমা গত রাতে নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, রাজা ত্রিদিব রায়ের মরদেহ আনার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের অনুমতি পাওয়া গেছে। দেশে আনার পর রাঙ্গামাটি জেলার রাজবন বিহার প্রাঙ্গণে তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। রাঙ্গামাটি জেলা শহরের পাশেই রাজবন বিহার অবস্থিত। এটি রাঙ্গামাটির সবচেয়ে বড় বৌদ্ধবিহার। এর চত্বরেই প্রতি বছর রাজপুণ্যাহ ও কঠিন চিবরদান অনুষ্ঠান হয়ে থাকে।

এতে দেশী-বিদেশী বৌদ্ধ ভিুরা অংশ নিয়ে থাকেন। বিশেষ করে চীন, ভুটান, মিয়ানমার ও নেপালের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী শাসক ও ধর্মীয় নেতারা এখানে অতিথি হয়ে আসেন। চাকমা রাজ পরিবার সূত্র মতে, গত সোমবার পাকিস্তানে ত্রিদিব রায়ের মৃত্যুর পর রাঙ্গামাটিতে তার আত্মার শান্তি কামনা করে বিভিন্ন ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান হচ্ছে। তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ারও প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। প্যান্ডেল নির্মাণ করা হয়েছে।

বর্তমান রাজা দেবাশীষ রায়ের আজ সকালে রাঙ্গামাটি পৌঁছানোর কথা রয়েছে। তিনি গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকা থেকে রাঙ্গামাটির পথে রওনা দেন। এর আগে মঙ্গলবার তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করেন। এ সময় তার সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্য সার্কেল চিফ বা রাজা এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য, প্রতিমন্ত্রী, উন্নয়ন বোর্ড ও আঞ্চলিক পরিষদের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। গত সোমবার পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে রাজা ত্রিদিব রায় মারা যান।

বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী এ নেতা পাকিস্তান চলে গিয়েছেন ১৯৭১ সালেই। এরপর তিনি আর বাংলাদেশে আসেননি। ৭৯ বছর বয়সে মারা যাওয়া ত্রিদিব রায় ৪২ বছর ধরে পাকিস্তানের ইসলামবাদে বসবাস করে আসছিলেন। মাঝে-মধ্যে তিনি অবশ্য থাইল্যান্ডে তার কন্যা চন্দ্রাবতীর কাছে যেতেন। ১৯৩৩ সালের ১৪ মে রাজ পরিবারে জন্ম নেয়া ত্রিদিব রায় ১৯৫৩ সাল থেকে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ ত্যাগ করার আগ পর্যন্ত চাকমা সার্কেলের রাজা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

তার অনুপস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের দুই বছর পর ১৯৭৭ সালে ছেলে ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় রাজা হিসেবে দায়িত্ব নেন। সরকারি সূত্র মতে, ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় তার বাবার মরদেহ বাংলাদেশে এনে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছিলেন। মঙ্গলবার তিনি ফের চিঠি দিয়ে তার বাবার লাশ দেশে আনতে সরকারের অনুমতি চেয়েছেন। তার পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রামের সরকার সমর্থক ুদ্র জাতি গোষ্ঠী থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য, প্রতিমন্ত্রী এবং আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যানও সমর্থন করেছেন বলে জানা গেছে। রাজা ত্রিদিব রায় পাকিস্তান সরকারের সাবেক মন্ত্রী ছিলেন।

তিনি সংখ্যালঘুবিষয়ক মন্ত্রণালয় দেখাশোনা করতেন। তিনি শ্রীলঙ্কা ও আর্জেন্টিনাসহ বিভিন্ন দেশে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বও পালন করেন। পাকিস্তানের সংবাদপত্রে বলা হয়েছে, ত্রিদিব রায় বাংলাদেশের পক্ষ ত্যাগ করে ১৯৭১ সালে জুলফিকার আলী ভুট্টোর নেতৃত্ব মেনে পাকিস্তান চলে আসেন। ১৯৯৬ সাল থেকে তিনি পাকিস্তান বুদ্ধিস্ট সোসাইটির প্রধান ছিলেন। ত্রিদিব রায় পণ্ডিত হিসেবে খ্যাত ছিলেন।

তিনি অনেক গ্রন্থ রচনা করেন। তার অন্যতম আলোচিত গ্রন্থ দ্য ডিপারটেড মেলোডি। এতে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম ও এর জাতিসত্তার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। একই সাথে তিনি এতে দেশ ভাগের প্রসঙ্গটিও নতুন করে আলোচনা করেন। তার মৃত্যুতে চাকমা জনগোষ্ঠী গভীর শোকাচ্ছন্ন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.