আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একনজরে তত্ত্বাবধায়ক-সরকার প্রশ্নে বিভক্তির ওপর বিভক্তি রায়ের ১৬ দফা

ন্যাকামো ভীষণ অপছন্দ, যদিও বাধ্য হয়ে সহ্য করি! গতকাল রবিবার রাত সাড়ে ১০টায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি সংক্রান্ত রায় প্রকাশ হয়েছে। রায় নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে সাত বিচারক ছিলেন দ্বিধাবিভক্ত। এ রায় নিয়ে গতকাল রবিবার দিনভর বৈঠক করেছেন রায়দানকারী আপিল বিভাগের ৭ বিচারপতি। রায় নিয়ে দ্বিধাবিভক্তি ছিলো আপিল বিভাগের বিচারকের মধ্যে। দফায় দফায় বৈঠক করে দ্বিধাবিভক্তি ঘোচানোর চেষ্টা করা হয়।

সকাল সাড়ে ১১টায় প্রধান বিচারপতির সুপ্রীম কোর্টের খাস কামরায় রায় নিয়ে বৈঠকে বসেন ৭ বিচারপতি। এরা হলেন: সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক বর্তমান প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন আপিল বিভাগের বিচারক এসকে সিনহা মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা নাজমুন আরা সুলতানা সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও মো. ইমান আলী দুপুর দেড়টা পর্যন্ত টানা বৈঠক চলে। একপর্যায়ে বৈঠক থেকে চলে যান বিচারপতি খায়রুল হক। সন্ধ্যা ৭টায় তিনি পুনরায় রায় প্রকাশের কার্যক্রমে যোগ দেন। রাত সাড়ে দশটায় পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়।

রায়ে ৪ জন ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের পক্ষে রায় দিয়েছেন। অন্যদিকে সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের সিদ্ধান্তের বিপক্ষে রায় দিয়েছেন তিন বিচারক। এদের মধ্যে বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল না করে বিষয়টি সংসদের উপর ছেড়ে দেয়ার অভিমত দেন। তিনি আলাদা করে ১৫০ পৃষ্ঠার অভিমত দেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা রাখার পক্ষে ১৬৯ পৃষ্ঠার মূল রায়টি লিখেছেন বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞা।

তার এই রায়ের সঙ্গে সরাসরি একমত পোষণ করেছেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা। বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞা তার রায়ে বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে অপব্যবহার করা হয়েছে। ২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিতর্ক বিষয়ে তার রায়ে বলা হয়েছে, সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির প্রধান উপদেষ্টার পদ গ্রহণ হল সর্বশেষ পন্থা। এর আগে আরও ৫টি পন্থা (অপশন) রয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে তত্কালীন প্রধান বিচারপতি কেএম হাসান প্রধান উপদেষ্টার পদ প্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানানোর পর অন্য কোন পন্থা বেছে না নিয়ে তত্কালীন রাষ্ট্রপতি কেন প্রধান উপদেষ্টার পদ গ্রহণ করেছিলেন, সেটা আমাদের বোধগম্য নয়।

রাষ্ট্রপতি অন্য কোন পথ অবলম্বন না করে প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন-এটাই কি ১৩তম সংশোধনীর অপরাধ? এটা কোনভাবেই সংবিধান পরিপন্থী নয়। এ ব্যবস্থা কোনভাবেই গণতন্ত্র, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বা ক্ষমতার পৃথকীকরণ এবং সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বা এগুলো ধ্বংস করে না। ১৩তম সংশোধনী সাংবিধানিক প্রয়োজনীয়তায় পরিণত হয়েছে। সূত্রমতে, বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার অপব্যবহার হওয়ার কারণে ওই ব্যবস্থাকে বাতিল করা যাবে না বলে উল্লেখ করেছেন। ভবিষ্যতে যাতে এ ব্যবস্থার অপব্যবহার না হয় তার জন্য পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন।

বাতিলের পক্ষে মূল রায়টি বাংলায় লিখেছেন বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক। ৩৪২ পৃষ্ঠার এ রায়টি লিখে প্রাথমিকভাবে গত মার্চে জমা দেন। বিচারপতি খায়রুল হক তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিলের পক্ষে মূল যে কথাটি বলেছেন তা হচ্ছে- ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার শুধু জনগণের দ্বারা নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্যগণ দ্বারা গঠিত হইতে হইবে। ’ তার রায়ে ১৬ দফা অভিমতে বলা হয়: (১) জনগণ বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মালিক, জনগণই সকল ক্ষমতার উত্স, জনগণই একমাত্র সার্বভৌম (২) বাংলাদেশের সরকার মানুষের সরকার নহে, আইনের সরকার(!) (৩) সংবিধান বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন, ইহা বাংলাদেশের সকল প্রতিষ্ঠান ও পদ সৃষ্টি করেছে এবং প্রয়োজনীয় ক্ষমতা ও দায়িত্ব অর্পণ করেছে (৪) জনগণের সার্বভৌমত্ব, প্রজাতন্ত্র, গণতন্ত্র ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি এবং সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর (৫) গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় কোন ধরনের ছেদ বাংলাদেশের সংবিধান অনুমোদন করে না (৬) সুপ্রীম কোর্ট তার বিচারিক ক্ষমতাবলে যেকোন অসাংবিধানিক আইনকে অবৈধ ঘোষনা করতে পারে বা বাতিল করতে পারে (৭) কোন মোকদ্দমার শুনানিকালে কোন আইনের সাংবিধানিকতার প্রশ্ন উত্থাপিত হলে সুপ্রীম কোর্ট সে সম্পর্কে নির্লিপ্ত থাকতে পারে না, আইনের প্রশ্নটি নিরসন করাই সুপ্রীম কোর্টের দায়িত্ব (৮) সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদের অধীনে জাতীয় সংসদ সংবিধানের যেকোন সংশোধন করতে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কিন্তু রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি ও সংবিধানের মৌলিক কাঠামো ক্ষুণ্ন বা খর্ব বা সংশোধন করতে পারে না (৯) সংবিধান (ত্রয়োদশ সংশোধন) আইন, ১৯৯৬, বাংলাদেশ সংবিধান সংশোধন করেছে (১০) সংবিধান (ত্রয়োদশ সংশোধন) আইন, ১৯৯৬, রাষ্ট্রের ভিত্তি এবং সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকে খর্ব করেছে বিধায় উক্ত বিতর্কিত আইন অসাংবিধানিক ও অবৈধ, সুতরাং বাতিল হবে (১১) বিশেষ প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ও কারণাধীনে কোন আইন ভাবীসাপেক্ষ ভাবে অবৈধ ঘোষণা বা বাতিল করা যেতে পারে (১২) সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবার ক্ষেত্রে, জাতীয় সংসদের বিবেচনা অনুসারে, যুক্তিসঙ্গত কাল পূর্বে, যথা, ৪২ দিন পূর্বে, সংসদ ভেঙ্গে দেওয়া বাঞ্ছনীয় হবে, তবে, নির্বাচন পরবর্তী নতুন মন্ত্রিসভা কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত পূর্ববর্তী মন্ত্রিসভা সংক্ষিপ্ত আকার গ্রহণ করতঃ উক্ত সময়ের জন্য রাষ্ট্রের স্বাভাবিক ও সাধারণ কার্যক্রম পরিচালনা করবেন (১৩) সংবিধান (ত্রয়োদশ সংশোধন) আইন, ১৯৯৬, অসাংবিধানিক ও অবৈধ হলেও জাতীয় সংসদ ইহার বিবেচনা ও সিদ্ধান্ত অনুসারে উপরে বর্ণিত নির্দেশাবলী সাপেক্ষে দশম ও একাদশ সাধারণ নির্বাচনকালীন সময়ে প্রয়োজনমত নূতনভাবে ও আঙ্গিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে (১৪) সাধারণ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার তারিখ হতে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার তারিখ পর্যন্ত নির্বাচনের সহিত প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত এবং নির্বাচন কমিশনের বিবেচনা অনুসারে এমনকি পরোক্ষভাবে জড়িত, রাষ্ট্রের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দসহ সংশ্লিষ্ট সকল ব্যক্তি নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে থাকবে (১৫) বিদ্যমান সংবিধানের ৫৬(২) অনুচ্ছেদের শর্ত এর পরিবর্তে ১৯৭২ সালের মূল সংবিধানের ৫৬(৪) অনুচ্ছেদ গণতন্ত্রের স্বার্থে আনয়ন করা প্রয়োজন (১৬) ২০০৭ সালে দ্বিতীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ৯০ দিন মেয়াদ পরবর্তী অতিরিক্ত প্রায় দুই বত্সর সময়কাল প্রশ্নবিদ্ধ বিধায় ঐ অতিরিক্ত সময়কালের কার্যাবলী মার্জনা করা হলো। সব মিলিয়ে লক্ষণ বেশি ভালো মনে হচ্ছে নাহ...  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.