ভাঙ্গতে পারবে না আমি ভঙ্গুর নই। ছুঁতে পারবে না কভু যদি ক্ষিপ্র হই। সর্বপ্রথম মনে রাখবেন আমি বলেছি, যাদের অন্য দেশে যাওয়ার মত যোগ্যতা আছে। তাদের প্রথম থেকেই অন্য দেশে যাওয়া উচিত। অন্যদেশ বলতে ইংলিশ স্পিকিং দেশের কথাই মুলত বুঝিয়েছি।
জাপান অবশ্যই পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ দেশগুলোর একটি। এটা অবশ্যই পছন্দ করি। কিন্তু ভাষার কারণে এখানে এসে আমরা পিছিয়ে পড়ি। ডিগ্রি হয়তো হয় কিন্তু শেখা হয় না ভাল। ল্যাবে জাপানিজ স্টুডেন্টদের প্রতিটা প্রেজেন্টেশন যদি জাপানিজে হয় আপনি শিখবেন কিভাবে?
অনেক ভাল রিজাল্ট করা স্টুডেন্ট জাপানে এপ্লাই করলে স্কলারশিপ পেয়ে যায়, তারা IELTS পরীক্ষা দেয়াকে ভেজাল মনে করে।
জাপানে তো টোফেল/IELTS লাগে না সুতরাং এতো ভেজাল করে বেড়ায় কে, এভাবে জাপান চলে আসে। আমার মতে তাদের IELTS দিয়ে মিনিমাম স্কোর যোগাড় করে ঐসব দেশে চলে যাওয়া উচিত। তাছাড়া ইদানিং জাপান স্পাউজদের ভিসার ব্যাপারে অনেক কড়াকড়ি করছে। বিন্দুমাত্র ভুল/সন্দেহ হলে ওরা ভিসা দেয় না স্পাউজদের।
স্কলারশিপ এমাউন্ট অনেক কমিয়েছে।
২০০৩ সালে স্কলারশিপ ছিল ১৮০,০০০ ইয়েন। ২০০৬ সালে ছিল ১৭৫,০০০ ইয়েন। প্রতি বছর কমাতে কমাতে এখন স্কলারশিপ ১৪৮,০০০ ইয়েন। এই ইনকামের কারণে স্পাউস নিয়ে থাকা গেলেও কিন্তু তেমন কোন সেভিং থাকেনা। তবে স্পাউজদের ভিসা দিতে ঝামেলা করছে ইদানিং।
আমার এক ফ্রেন্ড এখানে মাস্টার্স করেছে, পিএইসডির জন্য স্কলারশিপ এক্সটেনশনও হয়েছিলো, কিন্তু মনবুশো স্কলারশিপ রিফিউজ করে দেশে চলে গেছে। কারণ তার স্পাউজের ভিসা হয়নি ৩ বার এপ্লাই করেও। মাস্টার্সে ২.৫ বছর ছিলো এখানে কিন্তু ভাল কিছু করতে পারেনি, সারাক্ষণ বৌকে যদি মিস করে সব কাজ ঠিকমত করবে কিভাবে? সুতরাং যারা বিবাহিত কিম্বা জাপান আসার পরে উচ্চশিক্ষারত অবস্থায় বিয়ে করার সম্ভাবনা আছে তাদের আসার ব্যাপারে আমি অনুৎসাহিত করি।
এমন আরো কয়েকজনকে চিনি, স্পাউজদের ভিসা না হওয়ায় ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছে, কিম্বা কষ্ট করে মাথা গুজে পড়ে রয়েছে।
আরেকজনের অভিজ্ঞতা বলি: তার স্ত্রী ভিসার এপ্লিকেশন জমা দেয়ার পরে এমবাসি থেকে বলে আমরা আপনার সাথে ফোনে যোগাযোগ করব।
কিন্তু ১ মাস পার হলেও কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে তিনি কল করেন এমবাসিতে।
এমবাসি থেকে বলে: "আপনাকে কি বলা হয়েছিলো?"
উনি বলেন: "আপনারা তো বলেছিলেন যোগাযোগ করবেন। "
তখন এমবাসি থেকে উত্তর দেয়: "তাহলে কল করেছেন কেন? আমরা তো বলেছিই যোগাযোগ করব। "
এই হলো তাদের আচরণ। তারপর ২ মাস পরে এমবাসি থেকে বলে একাডেমিক সার্টিফিকেট নিয়ে আসতে, সেগুলো জমা দেয়ার আরো ২ মাস পরে তাকে বলে আপনার পাসপোর্ট নিয়ে যান।
কিন্তু কথা সেটা না। কথা হলো ৪ মাস পরে যখন পাসপোর্ট নেয়ার জন্য কল করে তখন তার স্ত্রী ফোন রুমে রেখে ওয়াস রুমে ছিল, পরে ওয়াস রুম থেকে ফিরে এসে কল ব্যাক করে। এমবাসি থেকে বলে: "এতক্ষণ কল ধরেননি কেন?" চিন্তা করেন, ওদের কল ধরার জন্য ৪ মাস ধরে টয়লেটেও মোবাইল নিয়ে যেতে হবে। যারা এসব অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছেন তারাই বুঝবে কতটা যন্ত্রনাদায়ক ব্যাপার এগুলো। এগুলো আমার মনে হয় একজন মনবুশো স্কলারের জন্য যথেষ্ঠ অপমানজনক।
কারণ দেশের উপরের সারির ছেলারাই জাপান যায়।
আমাদের দেশের পলিটিকাল পরিস্থিতি এবং আমাদের নৈতিক অধঃপতনের কারণেই হয়তো আমরা সকল দেশের এমবাসিতেই সমস্যা পোহাই। আমাদের ওরা চোর-দুর্ণীতিবাজ ছাড়া অন্য কিছু মনে করে না।
সবচেয়ে বড় কথা আমাদের দেশের ভাল স্টুডেন্টদের প্রথম টার্গেট করা ২/৩ টা দেশের মাঝে জাপান ছিল, কিন্তু যাদের ভাল রিজাল্ট আছে তাদের প্রথম টার্গেট হওয়া উচিত অন্য কোন দেশ, যেমন কানাডা, ইউএসএ কিম্বা অস্ট্রেলিয়া। তাছাড়া অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়া বর্তমানে বেশি কঠিন বলে আমার কাছে মনে হয় না, চেষ্টা থাকতে হবে।
সবশেষে বলি বিশেষ করে যারা বাইরে সেটেল্ড হতে চায় তারা অবশ্যই যেন জাপান না আসেন। যে দেশে সেটেল্ট হতে চায় প্রথম থেকেই সেই দেশে ট্রাই করা উচিত। জাপানে এসে পিএইসডি শেষে জাপানে চাকুরী পাওয়া যায়, কিন্তু লংটার্ম থাকার জন্য জাপান কখনো ভাল দেশ নয়। সকল সিনিয়র যারা আছে তারাও বলে, আবার আমার নিজেরও উপলব্ধি এটা। কারণ এখানে বাচ্চারা না পারে বাংলা শিখতে না পারে ইংরেজি শিখতে।
জাপানীজে কথা বলে বাংলা বলতে পারে না। ইংলিস মিডিয়াম স্কুল অনেক বেশি এক্সপেন্সিভ, তাছাড়া যত্রতত্র ইংলিস মিডিয়াম স্কুল নেইও।
ছোট্ট ভাইয়েরা যারা জাপান এসে ডিগ্রি করার কথা চিন্তা করছো তারা দ্বিতীয়বার চিন্তা করিও। কারণ বয়স কারো ফিরে আসে না। অনেক ভাল করে লেখাটি লিখতে চেয়েছিলাম, কিন্তু সময়ের অভাবে লেখাটি মনমত হয়নি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।