আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) বিল, ২০১৩ সংসদে পাস : : পুলিশের লাগামহীন ক্ষমতা আর ডিসি ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটরা হবেন সাক্ষী গোপাল

আন্তরাষ্ট্রীয় সংস্থা ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্সের (এফএটিএফ) চাপে এবং কালো তালিকাভুক্তি এড়াতে তড়িঘড়ি করে সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) বিল, ২০১৩ সংসদে পাস করা হয়েছে। আইনটি পাস করার আগে তাড়াহুড়া করতে গিয়ে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে দুটি ধারা যুক্ত করা হয়, যা মন্ত্রিসভার বৈঠকে ও আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতে (ভেটিং) অন্তর্ভুক্ত ছিল না। এমনকি গত তিন বছরে এ বিলসংক্রান্ত বিষয়গুলো আলোচনাও হয়নি। এভাবে আলোচনা না করে এমন দুটি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করায় নানা মহলে বিষয়টি সমালোচিত হচ্ছে। এ দুটি বিষয় হচ্ছে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) ক্ষমতা খর্ব এবং ফেসবুক, স্কাইপ, টুইটার বা ইন্টারনেট মাধ্যমের কথোপকথন ও ছবি মামলায় সাক্ষ্যপ্রমাণ হিসেবে আদালতে ব্যবহার করা।

৩ জুন সম্পূরক কার্যসূচি হিসেবে সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) বিল, ২০১৩ সংসদে উত্থাপন করা হয়। আট দিনের মধ্যেই সংসদীয় কমিটিতে পরীক্ষার পর তড়িঘড়ি করে ১১ জুন বিলটি পাস হয়। সর্বশেষ এ বছরের ১৪ থেকে ১৮ জানুয়ারি হংকংয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় গৃহীত ‘সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) আইন, ২০০৯’ এবং সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) আইন, ২০১২ সংশোধন করে ‘সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধনী) আইন, ২০১৩’-এর একটি খসড়া প্রণয়ন করে এবং এ খসড়া সংশোধন আইনের ওপর অনুমোদনের জন্য এনসিসিতে কমিটির সভাপতি অর্থমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়। পরে গত ১১ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিসভায় উত্থাপন করে নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। এর সারসংক্ষেপে বলা হয়, এসব সংশোধন প্রস্তাব জাতিসংঘের বিভিন্ন কনভেনশন এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন নিরাপত্তা পরিষদের বিভিন্ন কার্যবিবরণীর বিপরীতে চিহ্নিত বিভিন্ন ঘাটতি পূরণের জন্য করা হয়েছে।

দুটি বিতর্কিত ধারা: সন্ত্রাসবিরোধী আইনে বলা হয়েছে, কারও অপরাধ তদন্ত করার জন্য জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা ডিসির পূর্বানুমোদনের বিধান বাদ দিয়ে শুধু অবহিত করার বিধান আনা হয়েছে। অর্থাৎ কারও অপরাধ তদন্ত করার জন্য ডিসির অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন হবে না। পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিতভাবে এ তদন্ত করতে পারবে। সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯ সংশোধন প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর ৫ জুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ৪০ ধারা সংশোধন করে এ ধারা যুক্ত করা হয়। সংসদীয় কমিটিতে সংশোধন প্রস্তাবের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়।

সেখানে পুলিশের পক্ষ থেকে জোরালোভাবে এ বিষয়ে প্রস্তাব দেওয়া হলে সভায় আইনের ৪০(১) ধারায় সংশোধনী আনা হয়। তদন্ত ও বিচার বিষয়ে পূর্বানুমোদনের অপরিহার্যতাবিষয়ক এ ধারায় বলা ছিল, জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের পূর্বানুমোদন ব্যতিরেকে কোনো পুলিশ কর্মকর্তা এ আইনের অধীন কোনো অপরাধের তদন্ত করতে পারবেন না। সংশোধনীতে এ বাধ্যবাধকতা তুলে দিয়ে বলা হয়েছে, এ আইনের অধীন কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে অবহিত করে মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করতে পারবেন। জানা গেছে, ওই বৈঠকের আগে পুলিশের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল মন্ত্রণালয়ে গিয়ে দুটি ধারা যোগ করার ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ জানায়। তারা রামুসহ বিভিন্ন ঘটনার উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে এসব সংশোধনী আনতে রাজি করায়।

পরে সংসদীয় কমিটির বৈঠকেও পুলিশের একটি প্রতিনিধিদল গিয়ে হাজির হয়। এ সময় কমিটির সভাপতি বৈঠকে আমন্ত্রিত ব্যক্তিদের ছাড়া অন্যদের বাইরে যেতে বললেও তাঁরা সেখানে উপস্থিত থাকেন। সভায় একটি ধারার বিরোধিতা করেন সরকারদলীয় সাংসদ সানজিদা খানম। তবে তাঁর আপত্তি আমলে নেওয়া হয়নি। যোগাযোগ করা হলে সানজিদা খানম বলেন, ‘মত প্রকাশের গণতান্ত্রিক অধিকার সবারই আছে।

সেদিনের কিছু সিদ্ধান্তে আমি একমত হতে পারিনি। আর আমার মতামত যে সঠিক, সেটা ভবিষ্যতে বোঝা যাবে। ’ তবে ফেসবুক, টুইটার, ইন্টারনেটের বিষয়টি যুক্ত করা সম্পর্কে তিনি বলেন, এটা শুধু অপরাধীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, এভাবে পুলিশকে লাগামহীন ক্ষমতা দেওয়া হলে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়বে। যাকে-তাকে এ আইনের আওতায় এনে পুলিশ ক্ষমতার অপব্যবহার করার সুযোগ পাবে।

এ ছাড়া ফেসবুক, স্কাইপ, টুইটার বা অন্য কোনোভাবে ইন্টারনেটে ব্যবহূত আলোচনা, কথাবার্তা, স্থির বা ভিডিওচিত্র সাক্ষ্যপ্রমাণ হিসেবে আদালতে উপস্থাপনের ধারাটিও নতুন যুক্ত করা হয়েছে। আইনের ২১ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো সন্ত্রাসী ব্যক্তি, সত্তা বা সংগঠনের ফেসবুক, স্কাইপ, টুইটার বা ইন্টারনেটের যেকোনো মাধ্যমের অপরাধ-সংশ্লিষ্ট আলাপ-আলোচনা ও কথাবার্তা অথবা অপরাধ-সংশ্লিষ্ট স্থির ও ভিডিওচিত্র অপরাধের সাক্ষ্যপ্রমাণ হিসেবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা আদালতে উপস্থাপন করতে পারবে এবং তা আদালতে গ্রহণযোগ্য হবে। সূত্র : Click This Link ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.