যদি ঠাঁই দিলে তবে কেন আজ হৃদয়ে দিলে না প্রেমের নৈবদ্য সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) আইন ২০১৩, জনগণের মৌলিক মানবাধিকার, গোপনীয়তা, বাক স্বাধীনতা হরণ করবে বলে এটা নিয়ে তোলপাড় চলছে , বিভিন্ন এনজিও ও রাজনৈতিক দল এর প্রতিবাদ জানিয়েছে। কিন্তু এই আইন এবং এই আইনের সংশোধনের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের “সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধের” সম্পর্ক সরাসরি, তাই এই বিষয়টা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনুগত সুশীল সমাজ এড়িয়ে যাবেন তা খুবই স্বাভাবিক! সুশীল সমাজ ও তার মিডিয়া ওয়ার অন টেরর প্রজেক্টের সাথে এই আইনের সম্পর্ককে ধামাচাপ দেয়ার জন্য লিবারেলিজমের জায়গা থেকে এর প্রতিবাদ করছেন, সমাজে এখন প্রতিবাদের যে আকাল চলছে তাতে সুশীলদের এই লিবারেল প্রতিবাদকেও সাধুবাদ জানাতে মোটেই কার্পণ্য করব না, তবে সাম্রাজ্যবাদী রাজনীতির সাথে এই আইনের সম্পর্ক বিচার না করলে আমরা কিছুই ধরতে পারব না, এসব দিক নিয়েই আমার এই নোট !
‘ওয়ার অন টেরর’ এর এই যুগপর্বে সাম্রাজ্যের মত রাষ্ট্রও কি করে হেজিমনিক হয়ে উঠে তার নজির এই সন্ত্রাস বিরোধী আইন! এই আইন একই সাথে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী তৎপরতায় যুক্তদের প্রতিহত করার কাজে সহায়ক হবে আবার লোকাল রাজনীতিতে শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধ মত দমনের হাতিয়ারও হয়ে উঠতে পারে!
এই আইন এর প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের লক্ষ্য মূলত দুইটি –
১। বাংলাদেশে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী যে কোন রেডিক্যাল রাজনীতির উত্থান ঠেকানো
২। লোকাল রাজনীতিতে রাষ্ট্রীয় ফ্যাসিবাদের রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করা
১। বাংলাদেশে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী যে কোন রেডিক্যাল রাজনীতির উত্থান ঠেকানো ঃ
পরাশক্তি হিসেবে চীনের অগ্রগতি ঠেকানো, এ অঞ্চলের গভীর সমুদ্রে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের বিপুল জ্বালানি সম্পদ এর উপর মার্কিন নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে নিয়ে একটি সন্ত্রাসবিরোধী মোর্চা গঠন করে এই অঞ্চলে মার্কিন স্বার্থ বিরোধী শক্তির রাজনৈতিক এবং সামরিক উত্থান প্রতিরোধের জন্য যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে তার ওয়ার অন টেরর প্রকল্পে সংযুক্ত করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে অনেক আগেই।
এই পরিকল্পনায় বাংলাদেশে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী যে কোন রেডিক্যাল রাজনীতির উত্থান ঠেকানোর জন্যই “সন্ত্রাস বিরোধী আইন” এর প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন দরকার যেমনটা আছে আফগানিস্তান, পাকিস্তান এবং ইরাকে!ফলে “সন্ত্রাস বিরোধী আইন” এর সাথে জড়িত আছে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ার অন টেরর প্রজেক্ট! যুক্তরাষ্ট্রের নির্দেশেই সন্ত্রাস বিরোধী আইন ২০০৯ প্রবর্তন করা হয়েছে, সন্ত্রাস দমন বলতে যুক্তরাষ্ট্র বুঝে থাকে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিপক্ষে যারা সক্রিয় তাদের যাবতীয় কর্মকাণ্ডকে। ফলে এ আইনের আন্তর্জাতিক রাজনীতি হচ্ছে বাংলাদেশে মার্কিন স্বার্থ সুরক্ষার যে কোন নীতি, চুক্তির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া ব্যক্তি, গোষ্ঠী কিংবা দলকে সন্ত্রাসী বলে ট্যাগ করে দিয়ে তাকে দমন করা!
কয়েক মাস আগে ঢাকায় এফবিআই এর স্থায়ী প্রতিনিধিসহ স্থায়ী অফিস বসানোর চুক্তি স্বাক্ষর, ঢাকায় নিরাপত্তা প্রশিক্ষণের জন্য একটি একাডেমি স্থাপনের প্রস্তাব, টিকফা ও আকসা চুক্তি সাক্ষরের জন্য সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি এবং সাক্ষরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অবস্থানকে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের আইনি কাঠামোতেই সুনিশ্চিত করার পরিকল্পনা, আর এখন আবার নতুন করে সন্ত্রাস বিরোধী দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর এর জন্য আম্রিকার ক্রমাগত চাপ –এই সব কিছুর মূল লক্ষ্য সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার নাম করে এদেশকে ওয়ার অন টেরর এর পরবর্তী যুদ্ধ ক্ষেত্র বানানো! আর বাংলাদেশে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী যে কোন আন্দোলন প্রতিরোধের জন্য সন্ত্রাস বিরোধী আইন মার্কিন স্বার্থে অনিবার্য !
এবার এই আইন কি করে রেডিক্যাল রাজনীতির উত্থান ঠেকিয়ে মার্কিন স্বার্থ সুরক্ষা করবে তার দিকে নজর ফেরানো যাক-
ক) এই বিলের প্রধান ফোকাস হচ্ছে আন্তঃরাষ্ট্রীয় ( যুক্তরাষ্ট্রীয়)ও ‘জাতিসঙ্ঘের সমকালীন বিভিন্ন রেজুলেশন ও কনভেনশনকে আইনে পরিণত করা,
এই বিলের মূল বিষয় যে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের স্বার্থ সুরক্ষা করা তা বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সংবলিত সরকারী বিবৃতিতেই বলা হয়েছে, ‘জাতিসঙ্ঘের সমকালীন বিভিন্ন রেজুলেশন ও কনভেনশন এবং আন্তঃরাষ্ট্রীয় আলোচনার আলোকে সন্ত্রাসবিরোধী আইন অধিকতর সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়ায় বিলটি আনা হয়েছে। ’ অর্থাৎ বাংলাদেশ রাষ্ট্রের চেয়ে এই বিলের প্রধান ফোকাস হচ্ছে আন্তঃরাষ্ট্রীয় ( যুক্তরাষ্ট্রীয়)ও ‘জাতিসঙ্ঘের সমকালীন বিভিন্ন রেজুলেশন ও কনভেনশনকে আইনে পরিণত করা, এর মানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গ্লোবাল রাজনীতির চলমান নীতি দুনিয়া জুড়ে রেডিক্যাল রাজনীতির উত্থান প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় আইনি কাঠামো তৈরি করা!
লেখক মিজানুর রহমান খান তাঁর “বাংলাদেশের জন্য ‘গণবিধ্বংসী অস্ত্র’!” নিবন্ধে উল্লেখ করেন, “বাংলাদেশের ইতিহাসে এটা সম্ভবত একমাত্র সংসদীয় দুর্ঘটনা যে, জাতিসংঘের নয়টি কনভেনশনকে কোনো আইনে ঢালাওভাবে তফসিলভুক্ত করা হয়েছে। এ থেকেই এই সংশোধনীর আন্তসীমান্ত স্বার্থরক্ষার বিষয়টি স্পষ্ট। সংবিধানের ১৪৫ক অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রতিটি আন্তর্জাতিক চুক্তি সংসদে তুলতে বাধ্যবাধকতা আছে।
বলা আছে, জাতীয় নিরাপত্তা-সংক্রান্ত হলে সংসদের গোপন বৈঠকে প্রকাশ করতে হবে। এ রকম কোনো বৈঠকের কথা জানা যায়নি। এখন সংসদকে লুকিয়ে তফসিলভুক্ত করা হয়েছে। এরপর রাষ্ট্রপতি আনুগত্য পরীক্ষায় উতরিয়ে সই করে দিলে তা গেজেট হবে। তখনো মানুষ জানবে না ওই কনভেনশনগুলো কী।
বাংলাদেশ কবে ও কেন তাতে সই বা অনুসমর্থন দিয়েছিল”।
খ) যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধের স্বার্থেই এই বিলে আল-কায়েদা ও ডব্লিউএমডি বিস্তার নিরোধ বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মিজানুর রহমান এই বিধানকে ভালো বলে তাঁর নিবন্ধে উল্লেখ করলেও আমরা মনে করি এই বিধান যুক্ত করে সরাসরি বাংলাদেশকে এখন “ওয়ার অন টেরর” এর ক্ষেত্রে পরিণত করা হল, কেননা আল-কায়েদা ও ডব্লিউএমডি বিস্তার বাংলাদেশের নিরাপত্তার বিষয় না, এটা সরাসরি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী তৎপরতার সাথে জড়িত বিষয়। তাহলে এই বিধান অন্তর্ভুক্তির রাজনীতি কি? এর মানে হচ্ছে বাংলাদেশে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী তৎপরতার বিরুদ্ধে সোচ্চার যে কোন সামাজিক ও রাজনৈতিক শক্তির উত্থানকে আল কায়েদার আবির্ভাব অথবা এদের সাথে আল কায়েদার যোগসাজশ আছে বলে প্রোপাগান্ডা চালিয়ে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার নাম করে তাদের প্রতিহত করা এবং সমূলে উৎপাটন করার জন্য আইনি বৈধতা স্থাপন করা হল এই বিলের মাধ্যমে! গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা তার প্রতিক্রিয়ায় বলেছে,”এই বিল যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাস দমনের তথাকথিত ‘ওয়ার অন টেরর’-এর রণনীতির স্বার্থ রক্ষা করবে”।
গ) সন্ত্রাস বিরোধী আইনের এই অভিনব সংশোধনী যে শুধুই বিদেশি রাষ্ট্রের [যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ইত্যাদি] স্বার্থেই আনা হয়েছে, তা এর বিভিন্ন ধারা উপধারায় সুস্পষ্ট ! বিলের ধারা ৫-এ নতুন একটি উপধারা সংযোজন করে বলা হয়েছে ‘যদি কোনো ব্যক্তি কোনো বিদেশী রাষ্ট্রে অপরাধ সংঘটন করিয়া বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ করে, যাহা বাংলাদেশে সংঘটিত হইলে এই আইনের অধীন শাস্তিযোগ্য হইত, তাহা হইলে উক্ত অপরাধ বাংলাদেশে সংঘটিত হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে এবং যদি তাহাকে উক্ত অপরাধ বিচারের এখতিয়ারসম্পন্ন কোনো বিদেশী রাষ্ট্রে বহিসমর্পণ করা না যায়, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তি ও অপরাধের ক্ষেত্রে এই আইনের বিধানাবলী প্রযোজ্য হইবে।
’ এরকম বিধান রেখে এই বিল পাস করার মানে হচ্ছে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নয়, সামগ্রিকভাবে বিদেশি রাষ্ট্রের নিরাপত্তায় এই বিল আনা হয়েছে । মিজানুর রহমান তাঁর কলামে এই ধরণের বিধানের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, “ বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করলে দণ্ডবিধিতে যাবজ্জীবন দণ্ড রয়েছে। অথচ বিদেশি রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে । দণ্ডবিধির আওতায় আপনি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কাজ করলে যাবজ্জীবন দণ্ড পাবেন। সহায়তা দিলেও একই শাস্তি।
কিন্তু বিদেশি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস (মার্কিন ও ভারতীয় স্বার্থ বিরোধী রাজনৈতিক ও সামরিক তৎপরতা) করলে মৃত্যুদণ্ড। অপরাধ প্রচেষ্টা ও সহায়তাদানকারীর ব্যক্তি বা সত্তার জন্য এই বিলে দুই-তৃতীয়াংশ শাস্তি প্রদানের অভিনব প্রস্তাব করা হয়েছে”। আবার বিদেশি রাষ্ট্রের সম্পত্তির ক্ষতি করলে যাবজ্জীবন এমনকি তাতে ‘প্ররোচিত’ করলেও ১৪ বছর কারাদণ্ডের বিধান সন্নিবেশিত হয়েছে। অর্থাৎ বিদেশি রাষ্ট্র এমনকি কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থার নিরাপত্তাগত স্পর্শকাতরতাকে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের সমুতূল্য করা হয়েছে এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
অর্থাৎ বাংলাদেশে মার্কিন ও ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদ ও আধিপত্যবাদ বিরোধী যে কোন রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলন দমনের রক্ষাকবচ হিসেবে এই আইন এর প্রয়োগ হতে পারে, যেমন এসব রাষ্ট্রের সাথে জাতীয় স্বার্থ বিরোধী চুক্তি [ টিকফা চুক্তি, আকসা চুক্তি] বাস্তবায়ন নির্বিঘ্ন করা যাবে এই আইন এর মাধ্যমে!
২।
লোকাল রাজনীতিতে শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধ মত দমনের হাতিয়ার
এই আইনের লোকাল রাজনীতি হতে পারে রাষ্ট্রযন্ত্র কিংবা সরকারের গণবিরোধী নানান কর্মের তুখোড় সমালোচনা কারী ব্যক্তি, গোষ্ঠী কিংবা দলকে যুক্তরাষ্ট্রের মতই সন্ত্রাসী বলে চালিয়ে দিয়ে তার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া! সন্ত্রাস দমনের নামে এই আইন রাষ্ট্রযন্ত্রের অন্যায়, অবিচার, নিপীড়ন এর বিরুদ্ধে দেয়া মতামত দমনে অপপ্রয়োগের আশঙ্কা আছে, সে আশঙ্কা বাস্তবে রূপ নিলে মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে নাগরিকদের ন্যূনতম অধিকারও আর থাকবে না বলে মনে করার যথেষ্ট কারন রয়েছে!
পুলিশকে অবাধ ক্ষমতা দিয়ে, সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত ও পরিধি বৃদ্ধি করে ‘সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) বিল, ২০১৩’ পাস করায় এই আইন এর মারাত্মক অপপ্রয়োগের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রাম প্রতিহত করার চেষ্টা হতে পারে বলে বিভিন্ন মহল মনে করছেন! রাজপথে মিছিল-মিটিংসহ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ঘটনাকেও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের আওতাভুক্ত করা হয়েছে সংশোধনী বিলের মাধ্যমে। এ ছাড়া এ ধরনের কাজে সহযোগিতা, প্ররোচনা ইত্যাদিও সমান অপরাধ হিসেবে গণ্য করে শাস্তির বিধান করা হয়েছে। মূল আইনের ৬ ধারা পুনস্থাপন করে সন্ত্রাসী কাজের আওতা বাড়ানো হয়েছে। সন্ত্রাসী কাজের প্ররোচনা, ষড়যন্ত্র ইত্যাদিকেও সন্ত্রাসী কাজ হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে। মূল আইনের ৩৯ ধারা অনুযায়ী এই আইনের অধীন সকল অপরাধ আমলযোগ্য এবং সকল অপরাধ জামিন অযোগ্য বলে উল্লেখ আছে।
সন্ত্রাসী কাজের আওতা বৃদ্ধি এবং পৃথক পৃথক শাস্তির বিধান রাখায় যে কোন ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও রাজনৈতিক দলের তৎপরতাকেও সন্ত্রাসী কাজ বলে তাকে দমন করার আইনি বৈধতা তৈরি হল! আইনটি বলবৎ হলে দেশের প্রত্যেক নাগরিককে রাষ্ট্রীয় নজরদারির মধ্যে বসবাস করতে হবে।
“ এ আইন সন্ত্রাসের সংজ্ঞা সম্প্রসারিত করে জনগণের গণতান্ত্রিক আন্দোলন রাষ্ট্রীয় ফ্যাসিবাদের মাধ্যমে দমন-নিপীড়ন করবে”.................. গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা
সন্ত্রাসবিরোধী সংশোধন বিলের বিভিন্ন ধারা (২, ১১, ২১ ও ২৩ ধারা) জনগণের মৌলিক মানবাধিকার, গোপনীয়তা, বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা হরণ করবে অর্থাৎ তা বাংলাদেশের সাংবিধানিক নাগরিক অধিকার ক্ষুণ্ণ করবে। ১১ ও ২৩ ধারার অপব্যবহার করে সরকার যেকোনো ব্যক্তিকে শাস্তি দিতে ও নাজেহাল করতে পারবে। আর ২১ ধারার অপব্যবহার ও অপপ্রয়োগ করে সরকার কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনকে অপদস্ত কিংবা হয়রানি করে অন্যায়ভাবে শাস্তি দিতে পারবে।
এই আইনের অন্যতম ভয়াবহ বিষয় হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ন্ত্রণে করে নাগরিকদের বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা হরণের চেষ্টা !
সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুক, টুইটার নিয়ন্ত্রণে এবার সরাসরি আইন করা হল, বিলের ২১ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো সন্ত্রাসী ব্যক্তি, সত্তা বা সংগঠনের ফেসবুক, স্কাইপ, টুইটার বা ইন্টারনেটের যে কোনো মাধ্যমের অপরাধ-সংশ্লিষ্ট আলাপ-আলোচনা ও কথাবার্তা অথবা অপরাধ-সংশ্লিষ্ট স্থির ও ভিডিওচিত্র অপরাধের আলামত হিসেবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা আদালতে উপস্থাপন করতে পারবে।
এ বিষয়ে সাক্ষ্য আইনে যা-ই থাকুক না কেন, মামলার স্বার্থে তা আদালতের গ্রহণযোগ্য হবে। [সূত্র- Click This Link)। এখানে সন্ত্রাসী ব্যক্তি, সত্তা বা সংগঠনের ফেবু স্ট্যাটাস, মতামতের বিরুদ্ধে এই আইন করা হয়েছে বলে এই আইন এক ধরণের ন্যায্যতা পাবে, কিন্তু সন্ত্রাসী কাজ বলতে যদি সরকার তার নানান গণবিরোধী কাজের বিরোধিতাকেও অলিখিতভাবে অন্তর্ভুক্ত করে তাহলে এই আইনের ভিত্তিতে বিরোধী মত দমনের আইনি বৈধতা পেয়ে যাবে রাষ্ট্রযন্ত্র, এই আশঙ্কার একটা বড় ভিত্তি হল “সন্ত্রাস বিরোধী আইন” এর সাথে জড়িত আছে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ার অন টেরর প্রজেক্ট! ফলে ফেসবুক, টুইটার এর মত সোশ্যাল মিডিয়ার এক্টিভিজমও সরাসরি রাষ্ট্রীয় ও আইনি নিয়ন্ত্রণে চলে আসলে নাগরিক অধিকার ক্ষুণ্ণ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে! ইন্টারনেট গেটওয়েতে নজরদারির প্রযুক্তি দিয়ে বিটিআরসি সোশ্যাল মিডিয়াকেও নিয়ন্ত্রণে আনার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বলে আগেই খবরে প্রকাশ! এখন আবার সন্ত্রাস দমনের নামে আইন এর অপপ্রয়োগ বা অপব্যবহার হলে নাগরিক সমাজের মত প্রকাশ বাধাগ্রস্ত হবে, এতে করে বাংলাদেশ সরাসরি একটা নিয়ন্ত্রনবাদী রাষ্ট্রে পরিনত হবে এটা হলফ করেই বলা যায়!!
সাক্ষ্য আইনে যা-ই থাকুক না কেন, মামলার স্বার্থে তা আদালতের গ্রহণযোগ্য হবে ফেসবুক, টুইটার বা ইন্টারনেটের আলাপ-আলোচনা ও কথাবার্তা অথবা অপরাধ-সংশ্লিষ্ট স্থির ও ভিডিওচিত্র অপরাধের আলামত আমলে নেয়া প্রচলিত আইনের বিরোধী এবং তার ভিত্তিতে শাস্তির বিধান নিপীড়ন মূলক। অপরাধ কিংবা সন্ত্রাসী কাজে জড়িত থাকার প্রমাণ হিসেবে সামাজিক যোগাযোগের আলাপ আলোচনাকে বিবেচনা করা সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই এর স্ট্রিং অপারেশন থেকে ধার করা এবং এই আইন যে যুক্তরাষ্ট্রের নিপীড়নমূলক আইনের অনুকরণেই করা হয়েছে তা সুস্পষ্ট। এ ধরণের বিধান সংযোজনের একটা বড় লক্ষ্য হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়াকে কেন্দ্র করে দানা বেঁধে উঠা যে কোন সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন এর উদ্ভব ঠেকিয়ে দেয়া, তার জন্যই প্রচলিত আইনের বাইরে এসে এসব চরম নিবর্তনমূলক বিধান যুক্ত করা হয়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।