আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সন্ত্রাসবিরোধী আইনে রাজনৈতিক দলের বিচার : একটি সুখবর বটে!!

দেশকে ভালবাশি আমি এখানে দুই ভাগে আমার আলোচনা করব : এক. বাংলাদেশে চলছে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মানবতা বিরোধী অপরাধের সাথে জড়িতদের বিচার। এটা একটা ভালো উদ্যোগ। আমার এতে দ্বিমত নেই। যারা প্রকৃত দোষী তাদের বিচার আমিও চাই। এই বিচারের একটি রায়কে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ সরকার ট্রাইবুনাল আইন সংশোধন করেছে যে, জড়িতরা যে দলের সাথে সম্পৃক্ত সে দলেরও বিচার করা হবে।

এই উদ্যোগটা আরো ভালো উদ্যোগ। বর্তমানে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় তাই এখন দুটি দলের নেতাদের বিচার হচ্ছে। স্বাধীনতার বছরই আমার জন্ম। তাই তখনকার বাস্তব স্বাক্ষ্য হওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয় বা ছিল না। আমি বাস্তবতা নিরীক্ষার আলোকে যা দেখতে পাচ্ছি তার আলোকেই আমার আলোচনা তুলে ধরছি।

আর তা হলো- এই সরকার মেয়াদ শেষ করলে যদি ট্রাইবুনাল কার্যকর থাকে তাহলে সকল দলে অবস্থান করা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া খোলা হলো ট্রাইবুনাল আইন সংশোধনের মাধ্যমে। যা আর কেউ পছন্দ করুক বা না করুক আমি ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ করছি। বর্তমান ট্রাইবুনালে বিএনপির দুইজন নেতারও বিচার হচ্ছে। যদি ব্যক্তি জড়িত থাকার কারণে দলের বিচার হয় মনে হয় বিএনপিরও বিচার করা সম্ভব। যদি প্রশ্ন করা হয় যে- তখন তো বিএনপির জন্ম হয়নি।

তবে তার উত্তর তাই যথেষ্ট নয় অপরাধ করে অন্য দলে চলে গেলে তার বিচার হতে পারে না। এটা কোনো মানবিক কথা হতে পারে না। কারণ তারা বাঁচার জন্যই তাহলে স্বাধীনতার পর গঠিত দলে যোগ দিয়েছে। আদালত এতো কাচা মাছ খায় না যে, শাক দিয়ে মাছ ডাকলে তা বুঝবে না। সুতারাং আদালতের জন্য ব্যক্তির দল ত্যাগের ফাঁকি বাজি বের করাটা খুব একটা কঠিন কাজ হবে বলে মনে হয় না।

সুতরাং ধরা পরতেই হবে যে দলে থাকুক না কেন। তবে এখন যেটি বেশি চিন্তার বিষয় সেটি হলো- আওয়ামী লীগে যারা যুদ্ধাপরাধী আছে তাদের নিয়ে। কারণ ক্ষমতার পট পরিবর্তনে আওয়ামী লীগে অবস্থানকারী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি দেশের জনগণ দেশব্যাপী তুলতে পারে এবং তোলাটা স্বাভাবিক। খোদ বড় বড় মুক্তিযুদ্ধারাই আজ স্বাক্ষী দিচ্ছে যে- আওয়ামী লীগে অনেক মানবতা বিরোধী লুকিয়ে আছে। তাদের মধ্যে অনেকের নাম বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে।

এদের মধ্যে- বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নাম, আইন প্রতিমন্ত্রীর নাম, সাজেদা চৌধুরীর নাম, জনাব মোশাররফ হোসেনের নামসহ অনেকে রয়েছেন। ট্রাইবুনালের কার্যক্রম যদি অব্যাহত থাকে তাহলে তাদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আসতে হবে কোনো সন্দেহ নেই বিচারের রায় যাই হোকে। আমি বলব আওয়ামী লীগ সরকার এই কাজটা খুবই ভালো করেছে যে তারা বলতেছে ট্রাইবুনালের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। এজন্য তাদেরকে অনেক ধন্যবাদ। আর সরকার যদি শুধুমাত্র বর্তমানে যাদের আটক করা হয়েছে তাদের বিচার শেষ করে ট্রাইবুনালের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় তাহলে আমি আমার এই ক্ষুদ্র জ্ঞানে যতটুকু বুঝতে পারছি যাদের দোষী সাব্যস্ত করা হবে তারা সকলেই খালাস পেয়ে যাবেন।

কারণ এটি যেহেতু আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনাল নয়। এটিযে দেশীয় ট্রাইবুনাল সরকারের অনেকই মন্ত্রীই বলেছেন অনেকবার। যার স্বাক্ষী মিডিয়া। আর যদি কাউকে ফাঁসি দেয়া হয়ে যায় তবে সে কারণে বর্তমান সরকারের উচ্চ পর্যায়ের অনেক নেতাকে আবার ফেঁসে যেতে হবে পারে। যা যথাসময় বুঝা যাবে।

তাই এই ট্রাইবুনালের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে দীর্ঘদিন। তবে এই সরকার ট্রাইবুনালের কার্যক্রম বন্ধ করে গেলেও পরবর্তী সরকার এসে তা চালু করতে খুব সমস্যা হবে না একারণে যে রাস্তাঘাট তো সব চেনা হয়ে আছে। তবে সৌভাগ্যে বিষয় হলো বামপন্থী দলগুলো বেচে যাবে । কারণ তাদের দলে যুদ্ধাপরাধী আছে এমন অভিযোগ শোনা যাচ্ছে না। তাদের অনেক কর্মীকেই স্বাধীনতার পর হত্যা করেছে তখনকার সরকার।

তাই তারা বেঁচে যাবেন মনে হয়, যদি অন্য কোনো প্যাচে না পড়ে যান। সুতরাং যুদ্ধাপরাধের দায়ে যদি কোন আওয়ামী লীগ নেতার বিচার হয় তাহলে সেই দলেরও যে বিচার করা যাবে তাতে কোনো সন্দেহ থাকার কথা নয়। কারণ তখন আওয়ামী লীগ নামক রাজনৈতিক দলটি বাংলাদেশে বিদ্যমান ছিল। ট্রাইবুনাল আইন যদি ঠিক থাকে তাহলে আওয়ামী লীগে অবস্থানকৃত যে সমস্ত নেতাদের নামে যুদ্ধাপরাধীর অভিযোগ উঠছে তাদের বিচার করা সম্ভব অবশ্যই সেটা ১০০ বছর পর হলেও। তবে তখন যদি সে লোক জীবিত না থাকে তবে আইনের মার ম্যাচে দলের বিচার করা যাবে সেটা আর তো ঠেকানো যাবে না।

কারণ ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে তার বিচার কার্যক্রম পরিচালনা সম্ভব। যেটা আবুল কালাম আজাদের বেলায় সম্ভব হয়েছে। তখন হয়তো ব্যক্তির সাজা দেয়া যাবে না কিন্তু ঐ ব্যক্তির দলের সাথে সম্পৃক্ততার কারণে সেই দলের বিচার করা যাবে কোনো সন্দেহ নেই। সেটা আবুল কালামের বেলায় হয়েছে। তিনি জামায়াত থেকে বহিষ্কার হওয়ার পরও তার রায়ে জামায়াতকে জড়ানো হয়েছে।

ঠিক আওয়ামী লীগের বেলাও তা হতে পারে। সুতরাং সময় সব কিছু বলে দেবে। দুই. সন্ত্রাসবিরোধী আইন সংশোধন করে রাজনৈতিক দলের বিচার আওয়ামী লীগ সরকার যে কাজটা করতে যাচ্ছে অথ্যাঃ আইন সংশোধন করে রাজনৈতিক দলের বিচার বা নিষিদ্ধ করা। সেটা একটা চমৎকার বিষয়। এটা আরো অনেক আগে করলে বাংলাদেশের জন্য অনেক কল্যান হতো।

যদিও সরকার শুধুমাত্র একটি দলকে ইঙ্গিক করে একাজটি করতে যাচ্ছে। কিন্তু সংবিধান তো থেকে যাবে। তাই সংবিধানের আলোকে তখন যে কোনো দলেরই বিচার করা সম্ভব হবে। রাজনৈতিক দলের সন্ত্রাস বাংলাদেশের জন্য একটি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত রাজনৈতিক দলের সন্ত্রাসের কারণেই দেশের শান্তি-শৃংলা ও কাংখিত উন্নতি ব্যহত হয়েছে অবর্ণনীয়ভাবে।

এই সন্ত্রাসী কার্যক্রমের কারণেই বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক দৈনন্দিন জীবন প্রবাহ ধমকে দাঁড়িয়েছে। যেটা বিশ্বের অন্য কোন দেশের তুলনায় অনেক বেশি চিন্তার বিষয়। আর এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াত, বামপন্থীসহ সবদলের অংশগ্রহণ রয়েছে। তবে বামপন্থী আদর্শের কারণে বামপন্থীদের ও জামায়াত নিজেকে ইসলামপন্থী দাবি করায় জামায়াদের এ ধরনের সন্ত্রাসী কাযক্রম এদেশে খুব সামান্য পরিমাণেই হয়েছে বলা চলে। তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দ্বারা রাজনৈতিক সন্ত্রাস হয়েছে উল্লেখযোগ্য হারে।

যার বাস্তব স্বাক্ষী এদেশের প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলো। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, ও যুবলীগ যে ধরনের রাজনৈতিক সন্ত্রাস পরিচালনা করেছে তার তুলনায় বিএনপি এবং ছাত্রদল অনেক পিছিয়ে আছে। রাজনৈতিক সন্ত্রাসের ক্ষেত্রে আরও পিছিয়ে বামপন্থী দলগুলো ও জামায়াতসহ অন্যান্য ইসলামী দলগুলো। কারণ এইদলগুলো তো আর এককভাবে বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসীন হতে পারেনি। আর সন্ত্রাস বলতে শুধুমাত্র রাজপথে গাড়ি ভাংচুর আর মারামারির মধ্যে সীমাবন্ধ বিষয় নয়।

এটি একটি বিশাল বিষয়। এই বিশাল বিষয়ের সাথে তারাই জড়িত যারা দেশ শাসন করেছে বিগত দিনে। সেক্ষেত্রে বামপন্থী ও ইসলামীপন্থীরা তো অনেকেই পিছিয়ে থাকবে স্বাভাবিক কথা। সন্ত্রাস শুধু রাজপথে হয় না- সন্ত্রাসী কার্যক্রম শুধু রাজপথেই সীমাবন্ধ নয়। যারা সরকারে থাকে তাদের দ্বারা সরকারের সকল ক্ষেত্রেই সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করার সুযোগ থাকে।

এবং বাংলাদেশে সেটা হয়েছেও ব্যাপকভাবে। যার স্বাক্ষী এদেশের সকল স্তরের মিডিয়া। যার কপি প্রকাশিত সকল মিডিয়া অফিসগুলোতে সংরক্ষিত আছে। অথবা রাজনৈতিক দলগুলোতে তাদের নিজেদের স্বার্থে এগুলো সংরক্ষণ করে রাখছে। তাই আশার কথা এই আইনে সকল রাজনৈতিক দলের বিচার ও দল নিষিদ্ধ করা সম্ভব হবে।

তবে নিরপেক্ষ বিচার বিশ্লেষনে দেখা যাবে- দেশের জনগণের ৭০ ভাগই স্বাক্ষ দেবে একা আওয়ামী লীগ দ্বারা স্বাধীনতার যে সকল সন্ত্রাসী কার্যক্রম সংগঠিত হয়েছে আর বাকী সকল দলগুলো মিলেও তাদের সিকি পরিমাণে পৌঁছাতে পারেনি। সুতরাং এই সন্ত্রাসী কার্যক্রমের কৃতিত্বের জন্য বিচার হলে সবার আগে ফেঁসে যাওয়ার সম্ভাবনা আওয়ামী লীগের জন্য প্রকট। যেটার জন্য শুধু সময়ের প্রয়োজন। যেটাকে প্রবাদ বচনে বলে- খাল কেটে কুমির আনা। আওয়ামী লীগ সেই কাজটিই করছে কিনা সেটিই তাদের ভেবে দেখার বিষয়।

তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে আওয়ামী লীগ সরকারকে এই আইনটি সংশোধন করে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্য রাজনৈতিক দলের বিচার বা নিষিদ্ধ করার বিষয়টিকে সাধুবাধ জানাই। এর মধ্যে দিয়ে সকল দলেরই বিচার করা যাবে। শুধুমাত্র একটি দলের বিচারের জন্য এমন আইন হতে পারে না যা পৃথিবীর কোনো দেশে হয়নি। আর জামায়াতের কয়েকজন নেতাকে ফাঁসি দিয়ে কিংবা জামায়াতকে নিষিদ্ধ করে এ দলটিকে শেষ করা যাবে বলে যদি সরকার চিন্তা করে থাকে তাহলে আমি বলতে চাই তাদের চিন্তাটি জ্ঞানসমৃদ্ধ নয়। কারণ পৃথিবীর ইতিহাস স্বাক্ষী যে কোন আদর্শবাহী সংগঠনকে নিষিদ্ধ করে বা তাদের উর্ধতন নেতাদের ফাঁসি দিয়ে সে দলকে নিশ্চিহ্ন করা যায়নি।

বরং তার ফলাফল উল্টো। মানে ব্যাপকভাবে উল্টো। সুতরাং জামায়াত নিষিদ্ধ হলে তারা নতুন নামে সংগঠিত হবে সেটা স্বাভাবিক। তখন তো আর সরকার সেই দলের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ তুলতে পারবে না। যা জামায়াতের জন্য সোনায় সোহাগা রূপেই ফলাফল বয়ে আনবে।

শেষ কথা আর সরকার যে আইনটি সংশোধন করেছে তা সকল দলের জন্যই করেছে। অন্তত এই গণতান্ত্রিক কাজটির জন্য আওয়ামী লীগকে আবারও ধন্যবাদ দিয়ে আমার আলোচনা শেষ করছি। শেষ করার আগে শুধু এটুকু বলতে চাই- গবীবের কথা বাসি হলেই ফলে। যারা কষ্ট করে পড়েছেন সবাইকে ধন্যবাদ। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.