আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক- আল্লাহর মেহমান হজ্বযাত্রীদের প্রতি কিছু কথা-বাস্তব অভিজ্গতার ভিত্তিতে কিছু টিপস(১ম পর্ব)

আমি কখনো যায়নি জলে,কখনো ভাসিনি নীলে,কখনো রাখিনি চোখ ডানা মেলা গাঙচিলে হজ্ব ইসলামের অন্যতম ফরয রুকন। ইসলামে ধনীদের প্রতি হজ্ব ফরয করা হয়েছে। আমাদের বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দেখা যায় আমাদের বাবা-মা দাদা-দাদী বা নানা-নানী রা হজ্বে যান। কিন্তু পারতপক্ষে আরো অল্প বয়সে হজ্ব করা উচিৎ। হজ্ব যেমন কস্টের কাজ তেমনি এর সওয়াবও অসীম বলা হয় এক কবুল হজ্বের বিনিময় জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নয় .............আর হজ্বের নিয়তে হজ্ব সম্পাদন করলে হজ্ব কবুল হয়েছে এটা ভেবে নিতে হবে।

হজ্ব ফেরৎ মানুষ এতটাই পবিত্র যেন এখনি ভুমিষ্ট হয়েছে। হজ্বের ব্যাপারে আসলে যত বিধিনিষেধ আছে তার মধ্যে একটি অন্যতম বিশ্বাস হলো যে বিয়ে না করে হজ্ব করলে পূর্ন সওয়াব পাওয়া যায়না ও মেয়ে বিয়ে না দিয়ে হজ্বে গেলে হজ্ব কবুল হয়না আসলে এ দুটোরই কোন ভিত্তি নেই........একেবারেই নাই। আপনার কাছে যদি সে পরিমান অর্থ থাকে যে আপনি হজ্বে যেতে পারবেন এবং সে সময় আপনার পরিবার আপনার অনুপস্হিতিতে ব্যায়ভার বহন করতে পারবে তবে আপনার উপর হজ্ব ফরয। আর হজ্ব করতে হবে হালাল অর্থে........এদুটি ছাড়া হজ্বের আর কোন শক্ত শর্ত নেই। তবে মহিলাডের সাথে মাহরাম থাকে আবশ্যক।

গতবার আমাদের সাথে বেশ কিছু মহিলা হজ্বে এসেছিলেন মোয়াল্লেম কে মাহরাম করে আসলে এটা ঠিক না মহিলাদের মাহরাম তারাই হতে পারবেন যাদের সাথে বিবাহ নিষিদ্ধ। আবার আসি সেসব বিষয় যা আসলে কোন বইতে পাবেন না কিন্তু চলার পথে বার বার এসবের সম্মুখীন হবেন ............সে সবের সমাধান দেশে যে যে বিষয়ে খেয়াল রাখবেন- ১। পাসপোর্ট ও এয়ার টিকিট একটি পলিথিন প্যাকেটে পেচিয়ে রাখুন। বার বার বের করার জন্য নেতিয়ে পরবে না । ২।

রিয়ালের সাথে কিছু ডলারও নিয়ে যান। তাহলে পরে ভাঙিয়ে সুবিধা মত খরচ করতে পারবেন। ৩। রিয়ালের ছোট নোট মানে ৫ টাকা ১০ টাকা ও এক টাকা বেশী করে নিবেন। নামাজ পড়তে যাবার সময় দান করার জন্য ১ রিয়াল নিয়ে যাবেন এবং খাবার বা কাপড় কেনার জন্য ৫-২০ রিয়ালই যথেস্ট।

৫ রিয়ালে ঘড়ি,স্কার্ফ,মাথার ওড়না,টেবিল ক্লথ,ছাতা,আতর ইত্যাদি পাবেন খাবারের মধ্যে রুটি ,দই,পাউরুটি জুস ৫ রিয়ালে পাবেন। ১০-২০ রিয়ালে ভালো কোরানশরীফ ,তজবী,স্যান্ডেল ,জোব্বা পাবেন। মক্কায় হারাম শরীফে যাবার পথে রাস্তার পাশে এসব পেয়ে যাবেন। ৪। কিছু শুকনো খাবার যেমন বিস্কুট ,চানাচুর নিয়ে যাবেন মক্কায় এসব নেই ,বিস্কুট কিছু দোকানে পাওয়া যায় কিন্তু দাম বেশী।

৫। অবশ্যই আচার ও মরিচ নিয়ে যাবেন একই রকম খাবের খেতে খেতে যখন বিরক্ত হয়ে যাবেন তখন ভালো লাগবে। চাটনীর প্যাকেট গুলোও নিয়ে যেতে পারেন। ৬। চা বানানোর সরন্জাম নিয়ে যাবেন যেমন ইলেকট্রিক কেতলি,টি ব্যাগ চিনি ও দুধ।

তাছেড়া গরম পানি রাখার ফ্লাস্ক নিয়ে যাবেন ,কারন মক্কায় যেয়ে কাশি হয় আর যাদের শ্বাস কস্ট আছে তাদের ভীষন কস্ট হয় । মক্কায় সাপ্লাইয়ের পানি কনকনে ঠান্ডা সবাই গরমে অতিস্ট হয়ে এই ঠান্ডা পানি খেয়ে আরও বেশী ঠান্ডা বাধায়। তাই একটু গরম পানি আপনার শরীর সুস্হ রাখবে। ৭। আমাদের দেশের হাজী দের সোনালী ব্যাংক একটা বুকে বাধার ব্যাগ দেয় এই ব্যাগটা অনেক কার্যকারী।

টাকা ,ডলার বা রিয়াল প্যাকেটে করে এই ব্যাগে রেখে বুকে বেধে রাখবেন। সবসময় তাতে হারানোর ভয় থাকবেনা । কখনো ব্যাগে বা হোটেলে টাকা রেখে যাবেন না । ৮। তোয়াফ বা সায়ী করার জন্য ৭ দানার তজবী পাওয়া যায় ,হয় কিনে নিবেন নাহয় বানিয়ে নিবেনকাজে লাগবে।

৯। কাধে ঝোলানোর জন্য কাপড়ের ব্যাগ বানিয়ে নিবেন,মসজিদে যাবার সময় এতে পানির বোতল,পলিথিন ব্যাগ নিয়ে যাবেন । মসজিদ চত্বরে ঢুকে স্যান্ডেল খুলে পলিথিন ব্যাগে মুড়ে সেই ঝোলানো ব্যাগে রাখবেন। ১০। কোরান শরীফ নিয়ে যাবার দরকার নেই হারাম শরীফে অনেক অনেক প্রকারের কোরান শরীফ আছে।

তবে জায়নামাজ অবশ্যই নিয়ে যাবেন। ১১। আমাদের দএশের যে বাটার স্পন্জের স্যান্ডেল আছে না সেগুলি নিবেন এক জোড়া করে । বেশী নেবার দরকার নেই যেভাবে বললাম সেভাবে রাখলে হারানোর ভয় নেই। ১২।

যাবার আগে নিজস্ব ওষুধ দেখেনিন। কিছু ঠান্ডার ওষুধ যেমন ফেক্সোফেনাডিন বা ডেসলোরাটাডিন,কিছু এন্টিবায়োটিক যেমন এজিথ্রোমাইসিন এবং এমোক্সাসিলিন নিয়ে যাবেন। কফ সিরাপ,নেসাল ড্রপ নিয়ে যাবেন। তুলা গজ ডেটল বা পভিসেপ,ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ ,মাইক্রোপোর নিয়ে যাবেন। ডায়াবেটিস ও প্রেশারের ওষুধ হিসাব করে নিয়ে নিবেন ,এজমার রোগীরা অবশ্যই ইনহেলার নিবেন কখনই যেন ভুল না হ্য়।

ওখানে ওষুধের দাম আকাশচুম্বী। ১৩। সুই সুতা, নেল কাটার, ছোট কাচি ,রেজার নিয়ে যাবেন। বার বার ওমরা করলে বারবার নাপিতের কাছে যাবার দরকার নেই রেজার দিয়ে মাথা কামিয়ে নিবেন। ১৪।

প্লাস্টিকের প্লেট ,মগ,ছোট বাটি নিয়ে যাবেন কাচের নিবেন না ভারী হবে তাছাড়া ভেন্গেও যাতে পারে। ১৫। অনেকবইয়ে অনেক দোয়া দুরুদ পাবেন অনেক জায়গায় ছড়ানো ছিটানো ...আমি নিজে কি করেছিলাম তাই বলি বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্ন দোয়া একত্রে ফটোকপি করে একটা খাতার মতো বানিয়ে নিয়েছিলাম । আপনিও সেটা করতে পারেন সুবিধা হবে। ১৬।

নামাজ ছাড়া অন্য কোথাও গেলে পিটি সু নিয়ে যাওয়া ভালো কারন অনেক পথ হাটার জন্য এ জুতো গুলো উপকারী। ডায়াবেটিস রোগীরা অবশ্যই পাতলা কাপড়ের স্যু নিবেন এবং হেটে আসার পর পা ভালো করে হাল্কা সুসুম গরম পানিতে দশ মিনিট ভিজিয়ে রাখবেন ১৭। দেশথেকে যাবার আগে দুই ধরনের টিকা দেয়া হয় অবশ্যই টিকা নিয়ে নিবেন একটি মেনিনজাইটিসের অপরটি ইনফ্লুয়েন্জার । হাজী ক্যাম্প,ঢাকা মেডিকেল,সোহরাওয়ারদী মেডিকেলে বিনামূল্যে দেয়া হয়। এই টিকা যত আগে নেয়া যায় ততই ভালো কারন টিকা নেয়ার পর একটু জ্বর হবে তা দেশেই হয়ে যাওয়া ভালো ১৮।

এক প্যাকেট ওয়ান টাইম গ্লাভস নিয়ে যাবেন ১৯। তায়াম্মুমের জন্য মাটি নিতে হবে। আবার মাটি টা এমন ব্যাগে রাখবেন যেটা বিমানে আপনার হাতে থাকবে। এবার আসুন মক্কায় কি কি খেয়াল রাখবেন- ১। বাসা থেকে গোসল করে ইহরামের নিয়তে ইহরাম পরে দুই রাকআত নামাজ পরে নিবেন ইহরামের উপরে বেল্ট পরে নিবেন।

এহরাম পড়া অবস্হায় নিষিদ্ধ কাজ গুলো মনে গেথে নিবেন । গা মোছা,পুরুষের মাথায় কাপড় দেয়া ,চুলকানো ,মাথা আচড়ানো ,সুগন্ধি ব্যাবহার,সাবান ব্যাবহার ঝগড়া ঝাটি সবই ইহরাম অবস্হায় নিষিদ্ধ। ইহরাম পড়ার নিয়ম- http://youtu.be/2zSO70ZgE5o ২। মক্কায় যেয়ে হোটেল রুমে বা বাসায় যেখানেই থাকেন না কেন ,প্রথমেই ফ্রেশ হয়ে মোয়াল্লেমের বলা সময়ে হারাম শরীফে যাবেন । আশে পাশের জিনিস খেয়াল রাখবেন,কারন মক্কায় হারানোর সম্ভাবনা নেই ।

বড় কোন হোটেল যেমন হিলটন বা মেরিডিয়ান বা কোন রাস্তার উপরে চিহ্ন খেয়াল রাখুন । ভুলেও মক্কা তাওয়ার বা মক্কার ঘড়ি দিক নির্দেশনার জন্য রাখবেন না কারন সেটা সব জায়গা থেকে একই রকম দেখায়। ৩। হারিয়ে গেলে বিচলিত না হয়ে নিজের কাজ সারতে থাকুন তওয়াফ বা সায়ী .. আর সন্গীদের আগে থেকেই বলে রাখুন .। হারিয়ে গেলে হারাম শরীফের সবুজ বাতির সামনের সিড়িতে থাকবেন ,সেখানে পেতে সহজ হবে।

৪। যাবার আগেই সিম পেয়ে যাবেন ওখানে গেলে ১০ রিয়াল ভরে নিবেন ও নিজেদের মানে পরিবারের নম্বর কাছে রাখবেন। হঠাৎ মসজিদে পথ হারিয়ে গেলে মসজিদের ঝারুদার বা কোরানশরীফের রাখওয়ালাদের জিগেস করুন তাদের বেশীর ভাগই বাঙালী। ৫। মসজিদে এতেকাফের নিয়তে ঢুকবেন অযথা কথা বলবেন না ।

বেশী বেশী ইস্তগফার দোয়া দুরুদ পড়ুন। ৬। তওয়াফ মাতাবে করবেন । দোতালা তিনতলায় যাবার দরকার নেই। একটো খালি পাবেন সকালে ৯-১০টা ও এশার নামাজের পরে।

এই মাতাবে অনেক সাহাবীদের কবর আছে সে কথা খেয়াল রাখবেন আল্লাহর প্রতি একাগ্রচিত্তে তোয়াফ করবেন । অযথা কথা বলবেন না । ৭। হাজরে আসওয়াদ পেলে চুম্বন করবেন। না পেলে এমন ঠেলাঠেলি করবেন না যাতে আহত হবার সুযোগ থাকে কারন এটা আবশ্যক কিছু নয়।

৮। হাতীমের মধ্যে নামাজ পড়ার চেস্টা করবেন। (এশায় ও সকালে খোলা থাকে)। ৯। ওয়াক্তের নামাজের জন্য মসজিদের দোতালায় উঠে যাবেন ভীড় কম পাবেন ।

সাথে মহিলা থাকলে আব্দুল আজিজ গেট থেকে ২ তলায় উঠে হাতের বামে যেয়ে উমরা গেটের কাছে যাবেন । সেখানে অনেক প্রশস্ত জায়গা পাবেন কাবা শরীফে র মধ্যে কিন্তু বেশ কিছু ইমারজেন্সী মেডিকেল সেন্টার আছে । প্রত্যেক টি গেট থেকে ঢুকে দোতালায় হাতের বায়ে দরকার হলে যেতে পারেন। আরেকটা হলো- প্রতি নামাজের পর সেখানে বেশ কটি জানাজার নামাজ হয় তাই ফরয পড়ার পর । একটু দেরী করতে হবে ।

জানাজার নামাজ পরে বাকী সুন্নত পড়বেন। ১০। হারাম শরীফে আসার সময় কিছু দান করবেন। আবার দেখবেন অনেকেই জুস ,রুটি বই ফল বিলাচ্ছে........ নিয়ে নিবেন। জুম্মার দিনে দুপুরের খাবারও বিলি করে।

১১। মক্কায় কোরান শরীফের দাম বেশী,পারলে মদিনা থেকে কিনবেন । বাকী জিনিস যেমন তজবী,জায়নামাজ মক্কা থাকে কিনতে পারেন। ১২। সাফা মারওয়ার পিছনে হুজুর (সাঃ) বাড়ীর সামনে দিয়ে যেয়ে বাস স্ট্যান্ড পাওয়া যায় সেখান থেকে ১০ রিয়ালে আয়েশা মসজিদে যাওয়া যায় যেখানে যেয়ে বার বার ওমরার জন্য ইহরাম বাধতে পারবেন।

১৩। হজ্বের আগে ২-৩ দিন নামাজ ছাড়া অযথা গোরাফিরা করবেন না । কারন হজ্বের ৫ দিন খুবই পরিশ্রম যাবে । নিজেকে প্রস্তুত রাখুন। মিনা মুজদালেফা জামারা আরাফাত ও মদিনার টিপস পরবর্তী পোস্টে।

২য় পর্ব  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।