আমি কখনো যায়নি জলে,কখনো ভাসিনি নীলে,কখনো রাখিনি চোখ ডানা মেলা গাঙচিলে আগামী কাল থেকে শুরু হচ্ছে-হজ্জ যাত্রীদের হজ্ব ফ্লাইট। সুতরাং শেষ সময়ের প্রস্তুতি সবাই নিয়ে থাকবেন। যদি সময় করে একবার দেখে নেন সব কিছু গুছিয়ে উঠেছেন কিনা তবে যাত্রা সহজ হবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে মকবুল হজ্বের তৌফিক দিন-----
এবারের পর্ব মদীনা-
যারা প্রথম দিকে যাচ্ছেন তাদের প্রথম গন্তব্য হবে প্রিয় নবীর শহর মদীনাতে। প্রথমে আপনারা বায়তুল্লাহ শরীফে উমারাহ করে পরের দিন রওয়ানা হয়ে যাবেন মদীনার উদ্দেশ্যে-
১।
শুকনো কিছু খাবার হাতে নেয়ার ব্যাগে রাখুন কারন জেদ্দা এয়ারপোর্টে নেমে আপনার নির্দিস্ট গন্তব্যে যেতে আপনার ৬-১০ ঘন্টা সময় লেগে যেতে পারে। বিমান বন্দরে অনেকক্ষন অপেক্ষা করতে হবে।
২। উমরা করে আপনারা যেদিন মদীনার পথে রওয়ানা দেবেন সে সময়ের সফর বেশ লম্বা প্রায় ৬-১০ ঘন্টার ব্যাপার । এতে তেমন বিচলিত হবার দরকার নেই গাড়ী পথে দুটি জায়গায় থামে।
প্রয়োজনীয় কাজ বা খাবার খেতে পারবেন।
৩। এ সময় আপনারা যারা উমরা করবেন তারা বেশীর ভাগ কাজ করে ফেলার চেস্টা করবেন যেমন হাজরে আসওয়াদ চুমু খাওয়া বা হাতীমে নামাজ পড়া ইত্যাদি। কারন পরবর্তীতে যখন ফিরে আবার মক্কায় আসবেন তখন মক্কা থাকবে লোকেলোকারন্য।
৪।
মদীনা যাবার সময়টি যদি হয় রাত্রি তবে একটা জিনিস খেয়াল করবেন মক্কা থেকে মদীনা পুরো পথটি অন্ধকারে ঢাকা এত উন্নত দেশেও সে পথটি অন্ধকার রাখা হয়েছে কারন আমাদের হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) যখন মদীনায় হিযরত করেন তখন পুরো পথটিই ছিলো অন্ধকারে ঢাকা আর তাই এখনও সেই পথটি অন্ধকার করে রাখা হয়েছে।
৫। মদীনা অনেক শান্ত শহর। মদীনাবাসী দের দান করার কথা বলা হয়েছে। এ শহরের বাসীদের সাথে আচার আচরনে মার্জিত হতে হবে,মনে রাখতে হবে এই মদীনা বাসী দের কাছেই আমাদের নবী আশ্রয় নিয়াছিলেন।
এ শহরে প্রতি মুহুর্তে মনে করতে হবে আমার নবীর শহর ,তিনি এখানেই আছেন আর তাই আদব কায়দাও সেভাবেই করতে হবে।
৬। বাসে থাকা অবস্হায়ই আপনি মসজিদে নববীর মিনার দেখতে পারবেন। আমরা বাঙালীরা মসজিদ থেকে বেশ খানিকটা দূরে থাকি তাই পথ ভালো ভাবে চিনে নিতে হবে। এক্ষেত্রে ফ্লাই ওভার ও চৌরাস্তা দেখে পথ সহজেই চিনতে পারবেন।
৭। মদীনায় যে বাসা বা হোটেলে থাকবেন তার ঠিকানা লেখা কার্ড সবসময় সাথে রাখবেন।
৮। মসজিদে নববীতে পুরুষ ও মহিলাদের নামাজ পড়ার জায়গা ভিন্ন। মহিলাদের জায়গা অনেক ভিতরের দিকে তাই সাথে মহিলা থাকলে আযানের বেশ কিছুটে আগেই মসজিদে পৌছানোর চেস্টা করুন।
৯। মসজিদে যদি ৬ নং গেট দিয়ে ঢুকেন তবে রওজা মোবারক সামনে পরে আদাবের সহিত হূজুর (সাঃ) এর প্রতি দুরুদ ও সালাম পড়ে মসজিদ চত্বরে প্রবেশ করুন।
১০। মহিলাদের জায়গা পিছনের দিকে। এখানে জায়গা চেনার উপায় হলো বাথরুমের নম্বর দিয়ে গেটের কাছে ৪ নং ও ৫ নং বাথরুম থাকবে সেখানে অপেক্ষা করতে বলবেন।
১১। মসজিদের মধ্যে চলাচলের জন্য বেশ কিছু গাড়ী বা শ্যাটল সার্ভিস আছে। হাত দেখালেই থামবে ও জায়গা মতো পৌছে দেবে। সাধারনত মহিলাদের জন্য।
১২।
মহিলাদের নামাজের গেট নং ১১ ও ২৮।
১৩। রওজা মোবারক জিয়ারতের জন্য নির্দিস্ট সময় আছে । মহিলারা ফজর নামাজের ও এশার নামাজের পর রওজা জিয়ারত করতে পারবেন । মহিলাদের জন্য ২৮ ও ৫৪ নম্বর গেট দিয়ে রওজায় ঢুকতে হবে।
সেখানে মসজিদের খাদেমরা বাকী পথ দেখিয়ে দিবে। আদাবের সাথে কাজ করবেন । সবাই জিয়ারতে যথেস্ট সময় পাবেন মন ভরে নামাজ পড়ার সময় পাবেন তাই অযথা দৌড়াদৌড়ি বা অন্যের অসুবিধা করবেন না । পুরুষদের জন্য বাকী সবসময়ের জন্য রওজা মোবারক জোয়ারতের জন্য খোলা থাকে। রওজার সামনে যে সবুজ বা সাদা কার্পেটের জায়গা টুকু আছে তাকে রিয়াজুল জান্নাত বা জান্নাতের টুকরা বলে ।
অবশ্যই সেখানে নামাজ পড়বেন ও মন ভরে দোয়া করবেন। হুজুরে (সাঃ) এর রওজা মোবারক
রিয়াজুল জান্নাত
মসজিদের মেহরাব যেখনে হুজুর মোহাম্মদ (সাঃ) নামাজ পড়তেন
১৪। মসজিদের পিছনেই জান্নাতুল বাকী এখানে অনেক সাহাবীগনের কবর রয়েছে পুরুষেরা জিয়ারতে যেতে পারবেন। মহিলাদের জিয়ারতের জন্য যেতে দেয়া হয়না । মহিলারা দূরে দাড়িয়ে দোয়া করবেন।
১৫। মদীনায় জিনিসের দাম মক্কার তুলনায় কম তাই এখান থেকে জিনিসপত্র কিনতে পারেন । বিশেষ করে খেজুর মসজিদের ৬ নং গেট থেকে বের হয়ে রাস্তা পার হয়ে কিছুদুর এগুলেই বিখ্যাত খেজুর মার্কেট এখান থেকে বিভিন্ন দামে খেজুর কিনতে পারবেন।
১৬। জমজমের পানি দেশে আনার জন্য মসজিদের ৪ নং গেটের বাম পাশে ১০ লিটারের ক্যান বেচে সেখান থেকে কিনে পাশেই লেমিনেটিং করিয়ে নিতে হবে কারন লেমিনেটিং না করালে ফেরৎ বিমানে নিতে দিবে না।
খরচ পরবে ১০ রিয়াল।
১৭। মসজিদে ঢোকার পথের বাম পাশে বেশ কিছু দোকান দেখবেন- সেখান থেকে কোরান শরীফ ,তজবী,যায়নামাজ কিনতে পারেন সাশ্রয়ী হবে।
১৮। মসজিদে নববি থেকে প্রায় ৩ কিমি দুরে মসজিদে কুবা ।
এটা মদীনার প্রথম মসজিদ। হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) মদীনাতে এসে প্রথম এখানে নামাজ পড়েন । এমসজিদে নামাজ পড়লে একটি উমরার সওয়াব পাওয়া যায়। মসজিদে নববীর সামনে থেকে ট্যাক্সি তে মাসজিদে কুবায় যাওয়া যায় ১০ রিয়ালে । হেটে ও যাওয়া যায়, হেটে যাওয়া সুন্নাত ।
হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) ফযরের নামাজ নিজের মসজিদে শেষ করে হেটে মসজিদে কুবায় যেতেন।
আরেকটি মসজিদ আছে মসজিদে কিবলাতাঈন । এই মসজিদে নামাজ পড়ার সময়ই ওহী নাযিল হয় এবং হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) নামাজের মধ্যেই কিবলা বায়তুল মোকাদ্দেস থেকে বায়তুল্লাহ কাবার দিকে ফিরিয়ে নেন। এখন ও সে মসজিদে দুইটি কিবলা বিদ্যমান। ২টি কিবলার মসজিদ পৃথিবীতে এই একটিই।
অবশ্য বায়তুল মোকাদ্দেসের দিকের কিবলার পথ বন্ধ করে দেয়া আছে।
১৯। অনেকেই নানা জায়গায় ঘুরতে যাবেন তার মধ্যে অবশ্যই ওহূদ পাহাড়ে যাবেন। এখানে অনেক ফজিলত আছে। বলা হয় এ পাহাড় জান্নাতের একটি দরজা হবে।
এ পাহাড়ে উঠে দোয়া করবেন এবং খেজুর বা মিষ্টি কিছু খাবেন। পাশেই সাহাবীদের কবরস্হান এটা জিয়ারত করবেন ,তারও পাশে একটি মিউজিয়ামের মত আছে সেখানেও ঘুরে দেখতে পারেন। তাছাড়াও রয়েছে খন্দকের ময়দান,যেখানে ৪টি মসজিদ এখনও আছে পারেল ২ রাকাত নামাজ পড়ে নিবেন।
২০। বিখ্যাত আজওয়া খেজুরের বাগান আছে দেখতে যেতে পারেন ।
গাছ থেকে পেরে খেতেও পারবেন।
২১। মসজিদে নববীতে ঢোকার সময় মোবাইল সাথে নিতে দেয়না তাই মোবাইল নিতে হলে বুকের ব্যাগের ভিতরে নিতে হবে। জিয়ারতের সময় রওজা মোবারকের ছবি তোলা নিষেধ। এটা মেনে চলুন।
২২। মসজিদে নামাজ পড়ার সময় ফজরে ও এশাতে ভিতরে পড়ার চেস্টা করবেন কারন বাহিরে প্রচন্ড ঠান্ডা থাকে। এ দুই সময় অবশ্যই গরম কাপড় নিয়ে যাবেন। শাল বা মফলার হলে ভালো হয়। দুপুরে বাহিরে পড়তে পারেন কারন সেখানে অনেক সয়ংক্রিয় ছাতা থাকে যেটা আপনা আপনি দুপুর ১১ টায় খুলে ও বিকাল ৫ টায় বন্ধ হয়ে যায়।
কিছু গুম্বুজও এসময়ে একি সাথে খুলে ও বন্ধ হয়। খুবই সুন্দর লাগে দেখতে।
২৩। মসজিদের দক্ষিন দিকে একটি মিউজিয়াম আছে সেখনে মোহাম্মদ (সাঃ) এর উপর বিভিন্ন বই ,সিডি,মসজিদের পোস্টার বিনামূল্যে পাবেন।
মাগরীব নামাজের পরে যেতে হবে।
অবশেষে সবাই কে শুভেচ্ছা ও আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে মকবুল হজ্বের তৌফিক দান করুক । আমীন।
১ম পর্ব
২য় পর্ব ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।