ওরে নবীন, ওরে আমার কাঁচা, ওরে সবুজ, ওরে অবুঝ, আধমরাদের ঘা মেরে তুই বাঁচা এক দেশে ছিলো এক মানুষ। সেই দেশে ছিলো না আর কোন মানুষ। ছিলো লোহা লক্কড় আর ইট সিমেন্টের ঘরকন্না। সেই মানুষের মনে সাধ বড়, তার ভয়ে হবে সবাই জড়সড়। কিন্তু লোহা আর ইটের নিচে মানুষটা চাপা পড়ে থাকে।
কেউ তাকে দেখে না।
একদিন সেই মানুষের সখ হল সে মাথা তুলে তাকাবে। তার কাছে জীবন তখনো কবিতা আর উপন্যাস। ইট পাথরের সমীকরণ সে তখনো আয়ত্ত্ব করতে পারে নি। সে চায় সব বস্তুর মাঝে নিজের সত্ত্বাকে তুলে ধরতে...... অথবা এরকমই কিছু একটা।
একদিন খুব ভোর বেলা মানুষটা উঠে দাঁড়িয়ে পড়ল শহরের সবচে ব্যস্ত রাস্তার মধ্যে। দু'হাত প্রসারিত কাকতাড়ুয়ার মতন দাঁড়িয়ে থাকল। মুখে হাসি মনে উত্তেজনা।
কিন্তু সবকিছু পরিকল্পনামাফিক এগোলো না। রাস্তার পিচ প্রথমে ঘুম থেকে জেগে উঠেই তাকে দেখল, এবং এক ভয়াবহ চিৎকারে আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে ফেলল।
আশপাশের দালান কোঠা সবাই জেগে উঠল। রাস্তার ঠিক মাঝখানে একটা অদ্ভুত দর্শন নতুন ধরণের জিনিস দাঁড়িয়ে আছে। যত লোহা লক্কড় ছিলো তাড়া সবাই তেড়ে এলো। হাত পা শক্ত করে বাঁধা হলো মানুষটার। যাতে পালিয়ে যেতে না পারে।
দেশের রাজা স্ক্রু ডাইভার তখন তার সতীর্থ পেরেকদের নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে বসলেন। তার শান্তিপূর্ণ পৃথিবীতে এ এক অশান্তির আগুন। একে নিভাতে হবে। কোথাকার নতুন এক বস্তু এসে শান্তি নষ্ট করতে চায়!
ততক্ষণে জেগে উঠল দেশের আপামর লোহালক্কড় সুশীল সমাজ। জাতির বিবেককে জাগ্রত করতে তারা নিউজপ্রিন্ট এবং নিউজের প্রাইমটাইম ক্ষয় করা শুরু করলেন।
সবার কলমে এবং কলামে তখন সেই মানুষ।
মানুষটাকে ততক্ষণে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে দেশের উচ্চ প্রটোকলের জেল বাথরুমে। সেখানে কমোডে চলছে তার জেরা। জেরা করছে শীর্ষ পর্যায়ের হাতুড়ি গোয়েন্দারা। কোথা থেকে সে এসেছে কি চায়।
ভিন্ন গ্রহের কিনা!
দেশের যাবতীয় নাটবল্টু বৈজ্ঞানিকও ততক্ষণে সজাগ হয়ে উঠেছে। এই নতুন প্রজাতির বস্তুকে নিয়ে গবেষণা চালানোর দাবি জানালো তারা। এ এলিয়েন হয়ে থাকলে তাদের কাঁটাচামুচের স্পেসশিপগুলো শীঘ্রই তাদের জানালার বাইরে বের করতে হবে। এর প্রস্তুতি দরকার।
এর মাঝেই কিছু মরিচা (যারা কিনা সবাইকে ভালোবাসে) নিয়ে এলো কন্সপিরেসি থিওরি।
কিছু একটা তত্ত্ব তারা দাঁড় করাল যার মূল কথা ছিল এই নতুন বস্তু এক নতুন ধরণের ষড়যন্ত্রের অংশ। লোহার বিরুদ্ধে কাঠ সম্প্রদায়ের এক গভীর ষড়যন্ত্র। এই নতুন বস্তু হয়তো লোহা সম্প্রয়দায়কে জারিত করে (???) লৌহ আধিপত্যে পতন ঘটাবে। আচমকা টনক নড়ল আপামর লৌহ জনতার। ইস্পাত জনতাও তাদের সাথে সংহতি জানালো।
এর পরের ঘটনা খুবই অনুমেয়। (আসলে পুরো গল্পটাই অনুমেয় ছিলো) লৌহ এবং কাঠ জনতার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, এর মাঝে কিছু collateral damage. দীর্ঘ লড়াইয়ের এক পর্যায়ে তারা ভুলেই গেলো লড়াইয়ের আসল কারণ। শেষে কে যে জিতল তাও ঠিক বোঝা গেলো না। শুধু লড়াইয়ের সুযোগে নতুন করে প্লাস্টিক জনতার আবির্ভাব হল।
ওদিকে সেই মানুষ তার ভুল বুঝতে পারল।
যে গুহায় বাস করে তার আলো দেখতে হয় না।
না খেতে পেয়ে একসময়ে হয়তো সে মারাও গেলো। মারার আগে বলে গেলো, "যেখানে সবাই অসুস্থ, সেখানে সুস্থতাই অসুখ। " (সত্যিই কি মরার আগে কেউ এসব বলে?? এইটা আমিই বললাম)
moral of the story: বাজে গল্প নিজ দায়িত্বে শুনতে হয়। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।