আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দেখে এলাম "ঘেটুপুত্র কমলা" প্রিমিয়ার শো !

ব্লগিং হোক আগামীর... শিরোনামে একটু ভুল আছে! আসলে পুরোটা দেখতে পারি নি। ঠিক করেছিলাম ৫ টায় শুরু হলে (সেভাবেই সময় দেয়া ছিল) ৬:৩০ পর্যন্ত দেখবো (৭:০০ টায় আমার একজায়গায় কাজ ছিল)। দেড়ঘন্টা যথেষ্ট। সেভাবেই জ্যম ঠেলে একটু দেরিতে ৫:১৫ টায় পৌছালাম বলাকা সিনেমা হলে। ধারনা করেছিলাম হয়তো অনেক ভীড় দেখবো।

সিট পাবো কিনা সেটাও ক্ষীন সন্দেহ ছিল। হমায়ূনের শেষ ছবি বলে কথা। কোথায় কি !! "ঘেটুপুত্র কমলা" ছবিটার ব্যপারে খুব কৌতুহল ছিল এর ঘোষনার সময় থেকেই। মনে আছে তখন এটা নিয়ে খুব হইচই শুরু হয়েছিল। একটা ব্লগ লিখেছিলাম এই প্রসঙ্গে (ছদ্মনিকে)।

সেইসময় অনেকেই ধারনা করেছিলেন বিষয় নির্বাচন নিয়ে হুমায়ূন ভুল করছেন। সমকামিতা নিয়ে ছবি করা ঠিক হচ্ছে না। কিন্তু সবার ধারনাকে তিনি ভুল প্রমান করে দিয়েছেন সিনেমার শুরুতে একটা ভূমিকা বক্তব্য দিয়ে। এমনকি আমিও বেশ চমক খেয়েছি !! ছবিতে যাওয়ার আগে বলে নেই বলাকা সিনেমা হলে গিয়ে কি দেখলাম। আমার সাথে আরেকজন ছিলো।

দুইজনে মিলে বসলাম গিয়ে নিচতলায়, মাঝামাঝিতে। সামনের দিকে দেখলাম জটলা। টিভিক্যমেরার ভিড়। (দর্শকদের চেয়ে সাংবাদিকই বেশি। এত্তো টিভি চ্যনেল থাকতে মুখের সামনে ক্যামেরার আর অভাব হয় না ) ধরে নিলাম নিশ্চয়ই কোনো একজন তারকা।

মনে মনে আশান্বিত হলাম !! এক টিকিটে তাইলে দুই সিনেমা দেখা হইলেও হইতে পারে। কিন্তু কই আর সব তারকারা (মানে মঠেল এন্ড নায়িকারা আরকি )। একটু পরেই ভুল ভাঙলো। শালার মেহের আফরোজ শাওন (আপা বলবো না খালাম্মা বলবো না ম্যডাম বলবো?!)। যাই হোক সাথে দেখলাম ববিতা আর সুচন্দা।

আমার কপাল এত্তো খারাপ..সব বুড়ি গুলান ! যাক আশায় আশায় ছিলাম তখনো। হঠাৎ দেখি সবার হাতেই প্রান ঝালমুড়ি। পেটের খিদা চনমনাইয়া উঠলো। সাথের বন্ধুরে জিগাইলাম, ঝালমুড়ি খামু, কই পাই? উনি আমারে দেখাইলেন, ঐ যে লাল গেন্জি পরা, ঐগুলাই তো আসল ঝালমুড়ি !! ওরে মাম্মা, হাচাই তো, জিন্স প্যন্ট আর লাল গেন্জিতে ঝালমুড়ি লেইখ্খা ঘুইরা বেড়ায় বঙ্গ ললনা , ঐগুলাই তো আসল ঝাল ! যাক এইবার আমার চোখ একটু খুললো। দেখি টিভি জগতের পরিচিত কিছু মঠেল কাম নায়িকা আশপাশে ঘুরতেছে।

আবার দেখি কিছু মানুষ সুন্দর সুন্দর পোশাক পরে আসছে। দেখলেই মনে হয় অভিজাত শ্রেনীর। আমার ধারনা অভিজাত শ্রেনীর মানুষেরা খুব সচেতন ভাবে নিজের মাহাত্ন্যটা বোঝানোর চেষ্টা করে। কিন্তু সংস্কৃতির রসে অবগাহনের সময় সাধারন মানুষের সাথে তাদের মিশেল ঘটেই। যাই হোক ঐ সব গুরুতর চিন্তা বাদ দিয়া আমি আপাতত অভিজাত তন্বী দর্শনে নিমজ্জিত হইলাম! পাশের এক ব্যটায় দেখি ফুনাইলো, আরে দোস্ত তুই তো আইলি না, আইসা দেখ কত মাইয়া !! (হালায় কয় কি? ) আরে মাজু, তুমি দেহি পুরাই লুল হইয়া গেছো।

সিনেমা দেখতে আসছো না মেয়ে মানুষ। সামনে তাকাও ! ৫:৩০ টায় শুরু হইলো বক্তৃমা। একজনের পর একজন আসতেই আছে। কেন্দ্রীয় চরিত্র কমলার ভূমিকায় মামুনের কথা বাদ দিলে সবারটাই বিরক্ত লাগছে। সবচেয়ে বিরক্ত লাগছে শাওনরে নিয়া যে ছ্যবলামিটা করলো...।

শাওন ম্যঠামও কাইন্দা দিলো। কেন জানি না? যাক আমরা কোনো বিতর্কে না যাই। প্রান ঝাল মুড়ি আলারা ফ্রী মুড়ি দিছে। মুড়ি খাই !! বার বার ঘড়ি দেখি। আমাকে বাইর হইতে হবে ৬:৩০।

কাম আছে। টিভি ক্যামেরা আলারা খুব বিরক্ত করতে লাগলো। নিতাছে তো খালি কমার্শিয়াল শট। ঘুইরা ফিরা ঐ সুন্দরী আপাদের শটই নেয়। আর কাছে আইসা কয় ভাইয়া/আপু একটু সোজা হয়ে বসেন, সামনের দিকে তাকান।

আরে ছামছুদ্দিনের নাতি, আমি যেমনেই বসি তাতে তোর বাপের কি? অবশেষে ৬:১০ এ শুরু হইলো। প্রিমিয়ার শো এর আগে একটা স্পেশাল শো হইছিলো যেখানে হুমায়ূন ছিলেন। সেই শো করা হইছিল উনি শেষবার আমেরিকা যাওয়ার আগে, অপারেশন যেবার হইলো সেবার। সেই অনুষ্ঠানে হুমায়ূনের বক্তব্য আজকে দেখানোর কথা ছিলো শো এর আগে। কিন্তু কিছুক্ষন দেখানোর পর কারিগরি ত্রুটির কারনে সেটাও দেখাতে পারলো না।

জাতীয় সংগীত দিয়ে শুরু হলো সিনেমা। সবাই যথারীতি উঠে দাড়ালো। ছবির শুরুতেই একটা পটভূমি, যেখানে ঘেটুগান এবং ঘেটুপুত্রদের সম্পর্কে বলা হলো। শেষ কথাটি ছিল এরকম, " আনন্দের কথা, ঘেটুগান গান এখন বিস্মৃত। গানবাজনার নামে সেই অশ্লীলতা থেকে সমাজ রেহাই পেলো" এই জাতীয়।

আমার কাছে খুব অবাক লাগলো, হুমায়ূন এত্তো ব্যকফুটে গেলেন কেনো? এটাকে "আনন্দের কথা" হিসেবে বলার আসলে কি প্রয়োজন ছিলো? উনি কি ঘেটুগানকে বিচার করতে বসেছেন না তা নিয়ে সিনেমা দেখাচ্ছেন, বুঝলাম না আর কি। যাই হোক মূল ছবি শুরু হলো। দশ মিনিট দেখার পরেই মনে হলো, নাহ খারাপ হবে না মনে হয়। হুমায়ূনের সেরা ছবি "আগুনের পরশমনি" । এরপর বলা যায় "শ্রাবন মেঘের দিন"।

শুরুটা দেখে মনে হলো এটা হয়তো শ্রাবন মেঘের দিনকে পার করতে পারবে। যখন একটু নড়ে চড়ে বসেছি এমন সময় আমার যাওয়ার সময় হয়ে গেলো। যাক অসুবিধা নেই। এই ছবি পকেটের টাকা খরচ করে হলে গিয়ে দেখা যায়। অন্তত: টাকাটা খারাপ কোনো অভ্যাসের পেছনে তো ব্যয় করা হবে না।

বাইরে বের হয়ে দেখলাম ঝিরঝিরে বৃষ্টি। বদঅভ্যাস বশত, ছাতাটা মেলে ধরলাম। সামুর ব্লগারদের বলবো, হুমায়ূনের শেষ ছবিটা দেখতে পারেন। শুরুটা দেখে মনে হয়েছে, চলে। হয়তো পুরোটা দেখলে মনে হবে, দৌড়ায়।

সিনেমা দেখা হলে একটা রিভিউ দেয়ার চেষ্টা করবো। শুভরাত্রি!  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.