আমি ব্লগার; ধর্মান্ধ জঙ্গী আর ধর্ম নিয়ে কটুক্তিকারী উভয়কেই সমান ঘৃণা করি! সাভারের চরম দুর্যোগের মধ্যে সান্ত্বনার কোন কথা বলা বৃথা; কিন্তু এই দুর্যোগের মধ্যে কিছু ঘটনা থেকে আমরা আমাদের নতুন করে চিনলাম; হারানো আত্মবিশ্বাস ফিরে পেলাম। আমরা প্রমান করলাম, আমরা এখনও শেষ হয়ে যায়নি। বিশ্ববাসীকে দেখানোর মত এখনও আমাদের অমুল্য সম্পদ আছে; সেটা হলো আমাদের মানবিকতা! যারা দেশকে নিয়ে প্রতিনিয়ত হতাশায় ভোগে, এই দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র বলে বিদ্রূপ করে তাদের জন্য এটা চরম শিক্ষা। যারা জাপানের ভূমিকম্পে জাপানিজদের শৃঙ্খলা নিয়ে মুগ্ধ, আমেরিকার টর্নেডো মোকাবেলায় তাদের উন্নত প্রযুক্তির প্রশংশায় পঞ্চমুখ, তারা দেখে যা, আমরাও শেষ হয়ে যায়নি, বিশব্বাসীকে চ্যালেঞ্জ দেওয়ার মত এখনও আমাদের সমর্থ আছে – আমাদের মানবিকতা বিশ্ববাসীর কাছে অনুকরণীয়। সাভারের ধ্বংসযজ্ঞের পাশাপাশি এই ছবিগুলোও শেয়ার করুন, বিশব্বাসীকে দেখিয়ে দিন, মানূষ হিসাবে আমরা এখনও বিশ্ব সেরা!!
ছবি গুলো হয়ত সবাই দেখেছেন, তারপরও আবার দেখুন, যেসকল উদ্ধার কর্মী নিজেরদের জীবন বাজী রেখে দিনের পর দিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তাদের জন্য স্যালুট !!!
যারা কথায় কথায় আমাদের সেনাবাহিনী নিয়ে তাচ্ছিল্য করিস! ওরা নাকি সকাল-বিকাল লেফট-রাইট করে আর ক্যান্টনমেন্টে আরামে দিন কাটায়! তারা দেখে যা আমাদের সেনাবাহীনীর শৃঙ্খলা আর মানবিকতা!
দুনিয়ার কোথাও কোন সেনা সদস্যকে এভাবে প্রকাশ্যে কাদতে দেখেছিস?? কেন কাদছে জানিস??
সেনাবাহিনীর একজন সিপাহী ৫ জনকে উদ্ধার করে ভিতরে থাকা অবস্থায় প্রায় অচেতন হয়ে পড়েন, বের হয়ে আসছেন এমন সময় তার হাত চেপে ধরে একজন মানুষ- ''ভাই আমাকে বাঁচান''।
সিপাহীটি নিজেই পারছিলেননা শ্বাস নিতে-''আপু আমাকে মাফ করেন, আমার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে,একটু সময় দেন আমি আবার আসছি''। সিপাহীটিকে সুস্থ করার সব পদক্ষেপ নিতে থাকেন ডাক্তার ও ইন্টার্নরা, অচেতন থেকেই প্রলাপ বকতে থাকে সে-''আমি কথা দিয়ে আসছি ওই আপুকে, আমাকে ছাড়েন আপনারা''। তার অবস্থা বেগতিক থাকায় তাকে ডাক্তাররা অনেক বুঝিয়ে দমিয়ে রাখেন।
একজন লোককে উদ্ধার করে আনতে না আনতেই সে স্ট্রেচার থেকে লাফ দিয়ে পড়ে, বলে ওঠে-''আমি ছাড়া আরো দুইজন
ওইখানে আটকা পড়ে আছে, জায়গাটা আমি ছাড়া কেউ
চিনবেনা, আমাকে একবার যেতে দেন আপা, তারা বাইচা আসে, আমি চিকন মানুষ, আমি পারব ওখানে ঢুকতে...
এই না হলে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী ! সাবাশ হে বীর!!!
যারা প্রাইভেট হাসপাতালের মালিকদের রক্ত চোষা বলে গালি দিস! দেখে যা, তাদের সবাই নষ্ট হয়ে যায় নি! এখনও কিছু মানূষ আছে, যাদের প্রতি সম্মানে মাথা নিচু হয়ে আসে!!
প্রাইভেট মেডিকেলের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে যারা অবজ্ঞায় নাক সিটকাস; পাব্লিক-প্রাইভেট বিতর্কে নিজেদের মধ্যে কাদাছুড়া ছুড়ি করিস! তারা চেয়ে দেখ, যাদেরকে তোরা ফার্মের মুরগী বলে তাচ্ছিল্য করিস, তারাও সময়ের প্রয়োজনে ঝলসে উঠতে পারে; সেবা কি জিনিস, সেটা বিশব্বাসীকে শিখিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে!!
চেয়ে দেখ! কোন প্রশিক্ষণ নেই, নিজের কোন স্বজনও ভিতরে চাঁপা পড়েনি তারপরও মৃত্যুকে তুচ্ছ জ্ঞ্যান করে কেমনে উদ্ধার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ে!
চোখ মেলে দেখ, এ্যাম্বুলেন্সের অপেক্ষা করার সময় নেই; আগে প্রান বাঁচাতে হবে, তাই আপন ভায়ের মত মমতায় অপরিচিত বোনকে আকড়ে ধরে কেমনে ছুটে যায় ...
এখন থেকে তোর কাছে কেও কোন মহাবীরের নাম জানতে চাইলে তুই কি আর আলেকজেন্ডারের নাম বলবি?? নাকি আমাদের বাবু’র নাম বলবি???
দেখ, এই বৃদ্ধ লোকটা তেমন কিছুই করতে পারছেনা। গায়ে শক্তি নেই, পকেটেরও উল্লেখ করার মত তেমন সমর্থ নেই, তারপরও শুধু মানবিকতার টানে যা পেরেছে তাই নিয়ে এগিয়ে এসেছে!
আমাদের তরুন প্রজন্ম নিয়ে যাদের অভিযোগের শেষ নেই, তারা কি এই তরুণদের কাছ কিছু থেকে কিছু শিখবে?? সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এভাবেই ওরা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকে মানুষ কে একটু সাহায্য করার জন্য!
কেও বসে নেই, সামাজিক যোগাযোগ সাইট গুলোতে অভুত পূর্ব সাড়া; মানুষের পাশে দাড়ানোর! আমরা প্রমান করেছি মানুষ মানুষের জন্য! আমরা আবারও দেখিয়ে দিলাম মানবিকতায় এখনও আমরা বিশ্বে উদাহরণ দেওয়ার মত এক জাতি!
সাভার ট্রাজেডির ক্ষতিগ্রস্থ সকল কে আল্লাহ্ এই ক্ষতি কাটিয়ে ঊঠার ক্ষমতা দিক! তোমরা একা নও, এই বাংলার সকল মানুষ তোমাদের পাশে আছে।
সাভারে মানুষের মানবিকতার যে পরিচয় পাওয়া গেছে সেই তুলনায় এই পোষ্ট খুবই সামান্য। আপনাদের কাছে কোন ছবি বা ঘটনা থাকলে শেয়ার করুন; তাদের প্রতি সশ্রদ্ধ সালাম! উদ্ধার কর্মী ছাড়াও, যে যেখান থেকে যে যেভাবে এদের পাশে দাড়াচ্ছেন তাদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্দা! সৃষ্টিকর্তা আমাদের সহায় হোন!!
(বি দ্রঃ ‘তুই’ শব্দটা আমরা সাধারণত দুই ক্ষেত্রে ব্যবহার করি; একটা হচ্ছে তাচ্ছিল্য প্রকাশে, আর আরেকটা হচ্ছে অতি আপন সম্পর্ক বুঝাতে। এই পোষ্টে কোন ভাবেই প্রথমটির জন্য ব্যবহৃত হয়নি) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।