আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার সমস্যাময় ইতিহাস শৈশব থেকে .......এখন পর্যন্ত । (২)

জীবনটা একটা লাইফ..... আমার সমস্যাময় ইতিহাস শৈশব থেকে .......এখন পর্যন্ত । (১) প্রথম পর্বে যাদের কমেন্ট পেয়েছি তাদের ধন্যবাদ দিয়ে নতুন পর্ব শুরু করছি। আমার মনে হচ্ছে আমার পক্ষে পাঠকদের যতটুকু কষ্ট দেয়া সম্ভব ততটা দিয়েছি। এই লেখাটা আরো সরল এবং একটু রস দেয়ারে চেষ্টা থাকবে। যদিও আজেক লিখতে ভাল লাগছিলনা।

কিন্তু লেখাটা ধ্রুত শেষ করতে হবে। (নিমতিতা না হলেও আমলকির মত তিতি হবে। আশা করি আমলকি আপনাদের ভাল লাগবে। ) স্কুল জীবন..... আমারদের স্কুলটা ছিল খুবই মনোরম পরিবেশে। সরকারী এক গবেষনাগারের মধ্যে।

পশেই ছিল রেল ষ্টেশন, খেলার মাঠ, পাহাড়, ধান ক্ষেত। সুন্দর সুন্দর গাছপালা। শহরের মধ্যে এমন একটা সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশ পাওয়া সত্যি কঠিন। এবং অনেকেই কল্পনাও করতে পারবেন না। এত চমঃকার ছিল।

তবে সত্যি কথা কি আমাদের স্কুলে পড়ালেখার মানু তেমন একটা ভাল ছিলনা। আর সবাই এটা জানত। স্কুলটা ছিল বাশের বেড়ার। মুরগীর খামার এবং প্রেম গবেষনাগার স্কুল নামেও অনেকে বলতেন। অনেকেই বছরের মাঝামাঝি কেবল এক বছরের জন্য স্কুলে পরতেন এবং পরে ভালস্কুলে র্ভতি হত।

হ্যা এটা একটা উচ্চ বিদ্যালয় ছিল। প্রাইমারী স্কুলঃ আমার স্কুল জীবন কেমন যেন ভয়ভীতি দিয়ে শুরু। এটা একটা মিশ্র অনুভূতি। (আমি ১৯৮৭ সালে শিশু শ্রেনীতে ভর্তী হই এবং ২০০১ সালে বের হই। ) ক্লাসে আমার দম কেসমন যেন বন্ধ হয়ে আসত।

আমি আমার নাম বাংলায় লিখতে শিখেছিলাম কিন্তু ইংরেজীতে লিখতে পারতাম না। আমার শিক্ষক এবং স্কুলের ছেলেরা এটা নিয়ে হাসাহাসি করেছিল। ক্লাসে ওটা একটা ইন্টারভিউর সত ছিল। তবে আমার বই গুলো আমার খুবই প্রিয় ছিল। কত কত সুন্দর ছবি যে বইগুলোর মধ্যে ছিল।

এই বইয়ের গন্ধ আমার এখনো মনে আছে। বাংলা বই থেকে একটা কবিতা বলি কি বলেন? মনে করার চেষ্টা করছি..... হু মনে পরেছে। "কাক কাল কোকিল কাল আর যে কাল ময়না খেকশিয়ালের হুক্কাহুয়া কানেযে আর শয়না। " আমার বড় ভাই এবং বড় বোন এই স্কুলেই পড়ত। স্কুলটি ছিল আমার বাসা থেকে পায়ে হাটা ৫ মিনিটের পথ।

আমি শিশুতে বড় ভাই ক্লাস ওয়ানে বড় বোন সম্ভবত ৪এ পড়ত । একটা মজার ঘটনা বলি। এইটা আমার জীবনের একটা হস্যাকর ঘটনা। এবং এখানে আমিই বলির পাঠা। একদিন স্কুল থেকে বাসায় আসছিলাম দুজন।

আমার বাবার দোকান হয়ে আমরা বাসায় আসছিলাম। আমার ভাই আমাকে বলল, এককাজ কর আমি চোখ বন্ধ করি, তুই আমাকে বাসায় নিয়ে যা। তাতে করে চোখের রিলেক্স হবে। সে খুব বুধ্ধিমান ছিল, আর আমি ...., কিছুদূর যাওয়ার পর আমিও চিন্তা করলাম আমিও চোখ বন্ধ করি। আর কতক্ষন পরে দেখলাম দুই জনেই রাস্তার পাশের ড্রেন হাবুডুবু খাচ্ছি আর আমার বই গুলি ভেসে যাচ্ছে।

সাল ১৯৮৮। আমার এখনো মনে আছে আমার গণিত বইটি ভেসে যাচ্ছিল। বিশ্বাস করেন আমি পরে গেছি নোংর পানিতে এই করনে আমার দুৎখ ছিলনা। কিন্তু দুৎখ ছিল আমার ভাইয়ের কথা ভেবে। আমি তাকেও প্রচন্ড বিরক্ত করেছি।

(****) স্কুলে আমার দাদা আমাকে দিয়ে আসত। আমার মা ঘর থেকে বের হতেন না (পর্দার) ধর্মীয় কারনে। ক্লাসের ফাকে আমি খেয়াল রাখতাম আমার দাদা আছেন কিনা। যদি সে চলে আসত আমিও চলে আসতাম। একবার ক্লাসের এক ছেলে আমার সাথে খেলছিল।

দুর্খটনা বশত তার মথা টেবিলে কোনায় বারি লেগে সামন্য ছিরে যায় এবং রক্ত বের হয়। টেবিলটা আমিই নারাচ্ছিলাম। আমার দাদা তখন ছিলেন না। ঐ ছেলেটির বড় ভাই সম্ভবত ক্লাস ৩/৪ এ পরত সে এসে আমাকে প্রচন্ড ধমকায় এবং হুমকি দেয়। আমি ভয়ে অস্থির তাদের হাত থেকে বাচার জন্য আমি রাস্তা ব্যবহার না করে স্কুলের পাশে ধারের ক্ষেতের মধ্যদিয়ে বাড়ি যাওয়ার চেষ্টা করছিলাম।

কিন্তু অনেক কাদা থাকার কারনে এগুতে পারছিলাম না। পরে আমার বোন আমাকে দেখতে পেয়ে তারাতাড়ী দাদাকে নিয়ে আসে। এর পর আমার স্কুলে যেতে মন চাইতনা। স্কুলের ছেলেদের সাথে আমি কোন খেলায় পারতাম না। ১/২ বার মারও খেয়েছি।

যদিও আমি মেয়েদরে থেকে দূরে থাকতাম। প্রধান শিক্ষকের মেয়ে (আমাদের সাথেই পড়ত) আমার কান মলা দিয়েছিল। কারন মনে নেই। তবে এটা মনে আছে বাসায় সব সময়ই এই ব্যপারটা নিয়ে আমাকে ক্ষেপাত। তার নাম শাওন ছিল।

আমার ভাই/বোন আমাকে ক্ষেপানোর জন্য গান গাইত। "শাওন রাতে যদি........। " (পরে শাওন অনেক ভাল স্কুলে চলে যায়, তারপর বিশ্ববিদ্যালয়। অবচেতন ভাবে শাওনের ইনফরমেষন রাখা হত। আমাদের বাসার সামনে দিয়েই সে চলা ফেরা করত।

ঐস্কুলে সে শুধু এক বছরেরর জন্য পড়েছিল। আমার কান মলা দেয়ার জন্য। এক সময় বুঝতাম তার আর আমার যোজন যোজন তফাত। পড়ালেখার কথা বলছি। ) এরো কয়েকবছর পরে, কখন যেন আমি ফিল করছিলাম আমাদের স্কুলে অনেক সুন্দর সুন্দর মেয়েরাও পড়াশুনা করে।

হি হি। তাদের ব্যাপারে আমার অনেক আগ্রহ হয়েছিল। আমি চাইতাম তাদের সাথে সাথে থাকতে। এতটুকুই। সাথে থাকা হতনা, ভয় হত।

যদি কামর দেয়। বা কান মলে দেয়। স্কুলে সবাই মোটামুটি ভালবাবেই আসার চেষ্টা করত। সুন্দর ব্যাগ। পরিষ্কার কাপর।

পানির ফ্লাস্ক। টিফিন। সামান্য কিছু টাকাও তাদের থাকত। আমার ব্যাগ ছিলনা বই হাতেই নিয়ে যেতাম। মাঝে মধ্যে পলিথিনের ব্যাগে।

আমার খুবই ইচ্ছা ছিল ইস আমার যদি সুন্দর একটা ব্যগ থাকত। বাবা কে বলেছিলাম কিন্তু শেষ পযন্ত ক্লাস ফাইভে পড়ার সময় একটা ব্যাগ কিনেদিয়েছিল। পরিষ্কার কাপরের ব্যাপারে আমার তেমন আগ্রহ ছিলনা। যদিও টিচারা বকাঝকা করতেন। আমি প্রয়ই টিফিন প্রিয়গে বাসায় যেতাম না।

বাসায় যাওয়া আসাটা ঝামেলা মন হত। আর আমার মা অনেক দেরি করতেন। দেরি করে আসলে মার খেতে হত। মাকে অনুরোধ করতাম কিছু একটা টিফিন হিসাবে দেয়ার জন্য। মাঝে মাঝে তিনি রুটি এবং আলোভাজি পলিথিন মুরিয়ে কাগজের প‌্যকাটে করে দিতেন।

স্কুলে বসে টিফিন খাওয়ার একটা আনন্দ ছিল। ইস একটা সুন্দর টিফিন বক্স হলে কতই না সুন্দর হত। আর যদি একটা সুন্দর পানির ফ্লাক্স থাকে তাহলে তো কথাই নাই। আমারা তো নিম্নবিত্তের ছিলাম। কিন্তু আমাদের পাশের বস্তির ২/১ জন পড়ত আমাদের সাথে তাদেরকেও দেখতাম সুন্দর টিফিন বক্সে করে খাচ্ছে।

যেদিন আমার টিফিন থাকতনা। অনেক সময় মনে হত ইস কেউ যদি আমাকে কিছু একটা খেতে দিত। যদিও আমার লজ্জাবোধ খুব্ই তিব্র ছিল। কখনো কারো কাছ থেকে চাইনি। এই কষ্টগুলো উপলব্ধি করার মত কেউ ছিলনা।

স্কুলে আমি প্রয়ই পেন্সিল , ডায়েরি এবং বই হাড়িয়ে ফেলতাম। কিভাবে জানিনা। এই ভয়ঙ্কর কাজটা হয়ে যেত। শিশি করার মত। আমি বাসায় গিয়ে পালিয়ে থাকতাম।

আমার বাবা/দাদা বকাঝকা করতেন। একবার পেন্সিল হারালাম। আমার ভাইকে জানালে সে আমাকে বাবার ভয় দেখায়। আমি তখন উল্টো তাকে ভয় দেখানো জন্য স্কুলের পাশে এক পাহাড়ের টিলার উদ্দেশ্যে দৌড় সুরু করি, আত্মহত্যা করব বলে। পরে তার চিৎকারে পথচারি একজন আমাকে ধরে আমার বাবার কাছে নিয়ে আসে।

আমার বাবা অবশ্য সেদিন আমাকে কিছু বলেন নাই। আমি স্কুলে কখনই পড়া পারতাম না। স্কুলে শিক্ষকদের মার খাওয়া কমন ব্যাপার ছিল কিন্তু প্রতিবারই এটা ভয়ঙ্গকর লাগত। অমনযোগী ছাত্র হিসাবে আমি সমসময় দ্বীতিয় বা তৃতীয় হতাম। স্কুলে কখনো সব বিষয়ে পাশ করেছি বলে মনে পারেনা।

আমি রিডিং পড়তে পারতাম কিন্তু শিক্ষক পড়া ধরলে তা বলা আমার পক্ষে সম্ভব হতনা। আরেকজন যদি না বলত, বা ম্যডাম যদি কয়েকাবার না বলত আমার এ্যটেনডেন্স দেয়া প্রয়ই অসম্ভব হত। আমি অপেক্ষা করতাম কখন ক্লাশ শেষ হবে বা কখন স্কুল ছুটি হবে। আমি কখনোই ছোট হাতের বি এবং ডি আলাদা করতে পারতাম না। ক্রিকেট খেলতে গেলে বল কখনো ক্যাচ ধরা সম্ভব হত না।

এই জন্য আমাকে কেউ খেলায় নিতনা। কি? কোন সিনেমার গন্ধ পাচ্ছেন? একটা কথাও মিথ্যা নয়। স্কুলটা হয়ত আমার কাছে আমার মায়ের সংসারের মতই বিষাদগার ছিল। বলাযেতে পারে ইশান এর সাথে আমার অনেক মিল আছে। (তারে জমিন পার- আমির খানের ছবি) যারা দেখেন নাই অবশ্যই দেখবেন।

তার মা অনেক শিক্ষত এবং হেল্পফুল ছিল। আর আমার মায়ের সাথে আমার অনেক অনেক দুরত্ব ছিল। পরে অবশ্য দুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। এই ছবিটা দেখে আমি কখনোই চোখের পানি আটকাতে পারিনা। আমার মনে হয় যে আমি আমার শৈশব দেখছি।

আরো বেশি খারপ লাগত, তার মা তাকে অনেক বেশি যত্ন নিত। আমার সেই দিন খুজতাম যেদিন আমার মা আমাকে মারেননি। খাওয়াদাওয়া নিয়ে আমি তাকে প্রচুর জ্বালাতন করতাম। মারও খেতাম। আমার সেই সময়ের সখগুলিঃ আমি ধানের ক্ষেত থেকে ছোট ছোট মাছ ধরে বড় বোতলে রাখতাম।

আমার রং পেনসিল খুবই ভাল লাগত কিন্তু ছবি আকতে একদমই ভাল লাগতনা। বাসার পাশে দাড়িয়ে ট্রেনের যাতায়াত দেখতাম। বগি গনতাম। আমাদের বাড়ীতে পাশাপাশি ২টা সুপারী গাছ ছিল দোলনা বানিয়ে চড়তাম। (দাদা দেখলে খবর ছিল।

) আরেকটা ইউনিক হবি আমার ছিল। দুপুরে সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ত আমি তাদের সামনে গিয়ে তাদের স্বপ্ন দেখাতাম। আমার ধারণা/বিশ্বাস ছিল মানুষকে আমি স্বপ্ন দেখাতে পারি। ঘুমন্ত মানুষের সমানে যেতাম, চোখ বন্ধ করে তাদের সামনে হাত ঘুরাতাম এবং যেই সপ্ন দেখাতে চাইতাম সেটা চিন্তা করতাম। হা হা হা।

বেশির ভাগ সপ্ন ছিল তারা আমাকে ভাল খেতে দিচ্ছে বা কোথাও বেড়াতে নিয়া যাচ্ছে। (আজকে আসলে লিখব কিনা দ্বন্দের মধ্যে ছিলাম। ভাল লাগছিলনা। তারপরেও লিখে ফেললাম। আমি চাই যত দ্রত সম্ভব এটা শেষ করতে।

পরে এ্যডিট করব) ..................................................চলবে। আমার সমস্যাময় যন্ত্রনাময় ইতিহাস শৈশব থেকে .....(৩) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।