সকালের মিষ্টি রোদ পেরিয়ে আমি এখন মধ্যগগনে, তরুণ বয়সে আমাদের অনেকেরই প্রধানত একটি উদ্দেশ্য থাকে, আর তা হল- প্রেম করা অর্থাৎ মেয়েদের পেছনে ছুটা অথবা টাকা উপার্জন করা। আসুন দেখি কোনটার কি ফলাফল: আপনি যদি একটি মেয়ের পেছনে ছুটতে থাকেন: আপনি যদি কোন মেয়ের প্রেমে পরে যান তবে দিনের ২৪ ঘন্টার মধ্যে প্রায় ১৬ ঘণ্টাই আপনাকে তার কথা ভাবতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসমেট, ইয়ারমেট অথবা একই সাবজেক্টের মেয়ে হলে তো কথাই নেই। সেক্ষেত্রে আপনাকে আরও কছু অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হবে, যেমন: প্রতিদিন তাকে বাদাম কিনে খাওয়াতে হবে, প্রতি দুই দিন অন্তর অন্তর তাকে ফুচকা কিনে খাওয়াতে হবে, প্রতি সপ্তাহে তাকে ভাল কোন রেস্টুরেন্টে দুপুরে লাঞ্চ করাতে হবে, প্রতি পনের দিন অন্তর অন্তর তাকে রিক্সায় কররে হাওয়া খাওয়াতে নিয়ে যেতে হবে। আর প্রতি রাতে আপনাকে তার সাথে কমপক্ষে ত্রিশ টাকার কথা বলতে হবে।

অতি ভদ্রতা বশত আপনাকে তার মোবাইলে টাকা লোড করে দিতে হবে। প্রতি মাসের শেষের দিকে আপনার সাথে তার ঝগড়া বাধবে, ভালভাবে ক্ষমা চাইতে পারলে আপনাকে সে ক্ষমা করে দিবে, তা না হলে সমস্যা নেই- পরবর্তী মাসের শুরুর দিকে আবার আপনাদের ঝগড়া মিটে যাবে! কারণ তখন আপনার হাতে থাকবে আপনার লেখা-পড়ার খরচ চালানোর জন্য বাড়ি থেকে আনা কিছু “টাকা”। আর সেই টাকা থেকে তাকে প্রতিমাসে কিছু উপহার দেওয়া চাই-ই চাই। অপর একটা কমন দায়িত্ব হল- সে মিস্ড কল দেয়ার সাথে সাথে তাকে কল ব্যাক করা। আর এত কিছুর বিনিময়ে আপনাকে সে কিছুই দিবে না।

বিশিষ্ট পণ্ডিত মানিক শর্মা (আমার বন্ধু) –এর মতে “ একজন মেয়ে মাসে ১০ টাকা দিয়েই তার মোবাইল খরচ পাড় করে দেয়”। সেক্ষেত্রে সে আপনাকে কি-ই বা দিতে পারে। মোবাইল খরচ কম হলেও সে কিন্তু মোবাইলে আপনার চেয়ে বেশি কথা বলে থাকে! কারণ আপনি শুধু কল দেন সেই মেয়ের নাম্বারে, আপর দিকে সে মিস্ড কল মারে আরও শ-খানেক ছেলের নাম্বারে। আর এই কমন দায়িত্ব পালন করতে করতে আপনার লেখাপড়ার বারোটা বেজে যাবে। তারপরও কোন ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পাড় হলেন।

বেকারত্ব আপনাকে পেয়ে বসবে। অতপরঃ কিছুদিন পরে কান্না ভেজা চোখে (ছলনা) আবার তার আগমন। কেমন আছ জিজ্ঞেস করতেই বলবে- ‘ বাবা আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে। আগামী পরশু আমার বিয়ে। ছেলে “FnF” কোম্পানির চীফ মার্কেটিং অফিসার।

আমার বিয়েতে এসো। পারলে আমায় ভুলে যেও। আর আমায় ভুল বুঝনা”। এবার এই ছেঁকা ভুলতে আপনার সময় লাগবে আরও প্রায় দুই বছর। এক সময় বাবা-মা আপনাকে জোড় করে একটি মায়ের সাথে আপনার বিয়ে দিয়ে দিবে।

কিছুদিন পর হয়তো আপনার বেকারত্ব ঘুচবে। কিন্তু রেজাল্ট খারাপ হওয়ার কারণে আপনার চাকরী হবে ভুয়া কোন এনজিওর নামমাত্র বেতনের সাধারণ কেরানি হিসেবে। কোন একদিন পুরুনো বন্ধুর মাধ্যমে জানতে পারবেন- আপনার প্রাক্তন প্রেমিকা এখন আমেরিকায় সেটেল্ড। আর আপনই দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলবেন- আহ: জীবনে আর শান্তি পেলাম না। আপনি যদি টাকার পিছনে ছুটেন: অপর দিকে টাকার পেছনে ছুটলে আপনার লাভ বাদে ক্ষতি নেই।

কারণ টাকার কোন লোভ নেই, তাকে বাদাম কিনে খাওয়াতে হয় না। সে কখনো ফুচকা খেতে চায় না। আর লাঞ্চ তো দূরের কথা। আর টাকার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল- সে কখনো আপনার সাথে বেঈমানি করে না। আর সে রাগও করে না কখনো।

আপনার যদি অনেক টাকা হয়, তখন আপনার সুন্দর একটা বাড়ি হবে। আপনার যদি সুন্দর একটা বাড়ি হয়, আপনার সুন্দর একটা গাড়ি হবে। আর আপনার যদি অনেক টাকা থাকে, যদি সুন্দর একটা বাড়ি আর সুন্দর একটা গাড়ি থাকে, এবং আপনি যদি অতি নিম্নমানের লোকও হয়ে থাকেন, তাহলেও- আপনার টাকা, বাড়ি, গাড়ির লোভে আপনাকে বিয়ে করবে অতি সুন্দরী এক নারী। কারণ পয়সা থাকলে সবই হয়। আর প্রভাব-প্রতিপত্তি?—কোন দিনও এর অভাব হবে না।

অবশেষে সুখী জীবন। ।