প্রবাসী
“ওই খেপেছে পাগলী মায়ের দামাল ছেলে কামাল ভাই/অসুর পুরে শোর উঠেছে জোরসে সামাল সামাল সামাল তাই/ কামাল তু নে কামাল কিয়া ভাই” তুর্কী বীর কামাল পাশাকে নিয়ে বিদ্রোহী কবি কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা এই কবিতার অংশবিশেষ ছিল আমাদের স্কুলের পাঠ্য।
পৃথিবীর যে অল্প কয়েকজন রাস্ট্রনায়ক জাতির ইতিহাস বদলে দিয়েছেন, স্বল্পতম সময়ে জাতিকে, পশ্চাতপদ জনগোষ্ঠীকে নিয়ে এসেছেন সামনের সারিতে, তাদের মধ্যে তুর্কী বীর কামাল পাশার অবস্থান সবার উপরে। তাই তো তার উপাধি আতা তুর্ক বা তুর্কীদের জনক। কামাল পাশা ছিলেন তুরস্কের জাতীয়তাবাদী নেতা,তুরস্ক প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রথম প্রেসিডেন্ট।
কামাল পাশার জন্ম ১৯শে মে ১৮৮১ সালে তৎকালীন অটোমান তুর্কী সাম্রাজ্যর স্যালোনিকা শহর , এখনকার গ্রীসের অন্তর্গত থেসালোনিকি শহরে।
মা বাবা নাম রেখেছিলেন মুস্তাফা। বাবা আলী রেজা এফেন্দি ছিলেন প্রথম জীবনে কাস্টম কর্মচারী এবং পরবর্তীতে একজন ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ী। ৭ বছর বয়সে বাবাকে হারান মোস্তাফা। বোন এবং মা সহ বড় হন চাচার কাছে। মা জুবাইয়েদ হানিম ছেলেকে ধার্মিক হিসেবে গড়ে তুলতে তাকে ভর্তি করে দিয়েছিলেন ধর্মীয় স্কুলে।
তিনি চেয়েছিলেন ছেলে বড় হয়ে একজন সফল ব্যবসায়ী হয়ে পরিবারের অর্থনৈতিক সম্বৃদ্ধি আনুক। মা এবং চাচাকে না জানিয়ে ১২ বছর বয়সে ধর্মীয় স্কুল ছেড়ে ভর্তি হন মোনাস্তির সামরিক উচ্চ বিদ্যালয়ে। তার চিন্তা এবং স্মৃতিশক্তিতে মুগ্ধ হয়ে সামরিক স্কুলের অঙ্কের শিক্ষক মুস্তাফা এফেন্দি ( Captain Üsküplü Mustafa Efendi ) তার নাম দিয়েছিলেন “কামাল” কামাল শব্দের অর্থ হল বিশুদ্ধ বা প্রকৃত । ১৮৯৯ সালে অটোম্যান সামরিক একাডেমীতে ভর্তি হন। ১৯০৫ সালে্র জানুয়ারী মাসে সামরিক একাডেমী থেকে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করে সামরিক বাহিনীতে যোগ দেন।
সামরিক জীবন- ১৯০৭ সাল পর্যন্ত দামেস্কে ক্যাপটেন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, ১৯১০ সালে কসোভোতে আলবেনিয়ান বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াই করেন। তার সামরিক প্রতিভার পরিচয় মেলে ১৯১১-১২ সালের ইতালী/তুর্কী যুদ্ধে। সে সময়ের ইউরোপের রুগ্ন বালক ছিল অটোম্যান তুরস্ক। ১৯০২ সালে অটোম্যান সাম্রাজ্যের উত্তর আফ্রিকা ভাগাভাগি করে নেওয়ার চুক্তি করে ফ্রান্স এবং ইতালী। চুক্তির ফলে লিবিয়া পড়ল ইতালীর ভাগে এবং ফ্রান্স এর ভাগে পড়ল মরোক্কো।
১৯১১ সালের সেপ্টেম্বরে দেড় লক্ষ সৈন্যের বিশাল বাহিনী নিয়ে ইতালী আক্রমন করে বসল অটোম্যান সাম্রাজ্যের লিবিয়া। মাত্র ৮ হাজার নিয়মিত সৈন্য এবং ২০,হাজার স্থানীয় আরব বেদুইনদের নিয়ে মুখোমুখি হলেন মস্তোফা কামাল। যদিও ১৯১১ সালের এই যুদ্ধে অটোম্যান তুর্কীদের পরাজয় ঘটে, মুস্তাফা কামাল তোবরুকের যুদ্ধে মাত্র ২০০ তুর্কী সৈন্য নিয়ে ২,০০০ ইতালীয়কে পরাজিত করে দখল করে নেন তাদের অস্ত্রশস্ত্র।
বলকানের যুদ্ধ- ক্ষয়িষ্ণু তুর্কী সাম্রাজ্যের এবার বিপদ এলো উত্তর দিক থেকে । ১৯১২ সালের প্রথম বলকান যুদ্ধে গ্রীস, সার্বিয়া, মন্টিনিগ্রো, বুলগেরিয়া দখল করে নিল থ্রেস এলাকা।
পরের বছরের দ্বিতীয় বলকান যুদ্ধে থ্রেসের হারানো এলাকার অধিকাংশ এলাকা উদ্ধার করেন মোস্তাফা কামাল। ১৯১৪ সালে সার্বিয়া এবং অস্ট্রোহাঙ্গেরীর মধ্যে এলাকা এবং জাতিগত সমস্যা নিয়ে শুরু হল প্রথম বিশ্ব যুদ্ধ। .জার্মানী এবং অস্ট্রোহাংগেরীর পক্ষে যুদ্ধে যোগ দিল তুরস্ক বিপক্ষের দেশগুলো হল ফ্রান্স,ইতালী,বৃটেন এবং রাশিয়া।
গ্যালিপল্লীর যুদ্ধ (World War I and Gallipoli ) ।
কামাল পাশার জীবনে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এক গুরুত্ব পূর্ন অধ্যায়।
১৯১৫ সালে কামাল পাশা তখন তুরকী সাম্রাজ্যের ৫ম বাহিনীর ১৯ তম ডিভিশনের কমান্ডার। গালিপল্লীর সেদিনের যুদ্ধ সামরিক ইতিহাসে এক অবিস্মরনীয় অধ্যায়। সে অসম যুদ্ধে কামাল পাশার তুর্কী বাহিনী বৃটিশ এবং ফরাসী যৌথ বাহিনীর অগ্রযাত্রা রখে দিয়েছিল দার্দানালিস প্রনালীতে। প্রায় ৫ লক্ষ ৬৮ হাজার বৃটিশ ফরাসী সৈন্যের সাথে ছিল অস্ট্রেলীয় এবং নিউজিল্যান্ডের সৈন্যরা। বিপরীতে ছিল ৩ লক্ষ ১৫ হাজার তুর্কী সেনা ।
সৈন্যদের প্রতি কামাল পাশার আদেশ ছিল “ আমি তোমাদের আক্রমন করতে নির্দেশ দিচ্ছি না, আমি নির্দেশ দিচ্ছি তোমাদেরকে মাতৃভুমির জন্য মরতে” এ যুদ্ধে প্রায় এক তৃতীয়াংশ তুর্কী সেনা মৃত্যবরন করে আর আহত হয় অর্ধেকের বেশী। সেদিনের যে যুদ্ধ তুর্কীদের অনুপ্রানিত করেছিল জাতিয়তাবাদে যার নেতৃত্বে ছিলেন কামাল পাশা। অবশেষে হার স্বীকার করে সম্মিলিত বাহিনী ১৯১৬ এর জানুয়ারীতে পিছু হটে।
ককেশাস এবং রুশ যুদ্ধ- ১৯১৬ সালে কামাল পাশাকে যেতে হল রাশিয়ান বাহিনীর বিরুদ্ধে । সেখানেও জয়লাভ করলেন কামাল পাশা।
১৯১৭ সালের মার্চে পুরো দ্বিতীয় তুর্কি সেনাবাহিনীর কমান্ড লাভ করেন কামাল পাশা। রুশ বিপ্লবের কারনে রাশিয়ান বাহিনী ককেশাস ছেড়ে চলে যায়।
আরবের যুদ্ধ- এই সময় কামাল পাশাকে তুর্কী সুলতান নির্দেশ দিলেন হেজাজে বা আরব উপদ্বীপে সামরিক অভযানের। সে নির্দেশ উপক্ষা করেন কামাল পাশা। ১৯১৭ সালের ডিসেম্বরে জেরুজালেম দখল করে নেয় বৃটিশ বাহিনী।
এবার কামাল পাশাকে বলা হল প্যালেস্টাইনে যেতে। সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে আক্রমনের পরিবর্তে সিরিয়ায় প্রতিরক্ষামুলক অবস্থান নিতে পরামর্শ দিলেন কামাল। সুলতান সে পরামর্শ অগ্রাহ্য করলে কামাল পাশা সেনাবাহিনীতে ইস্তফা দেন। ১৯১৮ সালে যখন তুর্কী জার্মান কেন্দ্রীয় শক্তির জোটের পরাজয় ক্রমশঃ স্পস্ট হয়ে উঠছে সেনাবাহিনীতে ফিরে আসেন কামাল। ১৯১৮ সালের সেপ্টেম্বরে তুর্কী বাহিনীর পরাজয় ঘটে মদহ্যপ্রাচ্যে ।
সুশৃংখলভাবে পিছু হটেন কামাল, ১৯১৮ এর অক্টোবর নভেম্বরে অস্ত্রবিরতি চুক্তি হয় বৃটিশ ফরাসীদের সাথে। মধ্যপ্রাচ্য থেকে বাদবাকী সেনা প্রত্যাহার করে পুনরায় সংগঠিত করার চেস্টা চালান। এই সময় থেকেই অটোমান সাম্রাজ্যের মৃত্যু ঘন্টা বেজে ওঠে। ১৯১৮ সালের ১৯ নভেম্বরে কন্সট্যান্টিনোপলে ফিরে আসতে গিয়ে দেখেন ততদিনে বিজয়ী বৃটিশ এবং ফরাসীরা দখল করে নিয়েছে কনস্ট্যান্টীনোপল।
তুরকের স্বাধীনতা যুদ্ধ- প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের মধ্য দিয়ে ক্রমশ এলাকা হারাতে থাকে অটোম্যান তুরস্ক।
১৯১৯ সেনাবাহিনীকে সংগঠিত করার কাজ দেওয়া হয় কামাল পাশাকে। কামাল দেখলেন তুরস্ক দেশটার অস্তিত্বি হুমকির সম্মুখীন। তিনি সেনাবাহিনীকে সঙ্গঠিত করলেন জাতীয় প্রতিরোধ যুদ্ধের জন্য। ১৯২০ সালের সেভর এর চুক্তিতে তুর্কী দেশ ভাগ করে দেওয়া নিল বৃটিশ, ফরাসী, গ্রীক এবং আর্মেনিয়ানদের মধ্যে। বস্ফরাস প্রনালীতে আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েন করে এ এলাকার উপর তুরসকের দহিকার ছিনিয়ে নেওয়া হল চুক্তিতে।
তুরকীর ভাগে রইল আঙ্কারার আশে পাশে অল্প কিছু এলাকা। এচুক্তি কামালের কাছে মনে হল পরাধীনতার শিকল। তিনি জাতীয়তাবাদী প্রতিরোধ যুদ্ধ গড়ে তুললেন। বৃটিশরা তুর্কী সুলতানের বাদ বাকী ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে এবং পার্লামেন্ট ভেঙ্গে দিতে বাধ্য করল। কামাল পাশা নতুন জাতীয় নির্বাচনের ডাক দিলেন, গঠন করলেন নতুন পার্লামেন্ট এবং নিজে হলেন এই পার্লামান্তের স্পিকার।
তুরককে ভাগ বাটোয়ারা করে নেওয়ার জন্য সেভ্র এর চুক্তির বিরুদ্ধে তুরস্কের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু করলেন কামাল। তুরস্কের জাতীয়তাবাদী সৈন্যদলকে উত্তরে আর্মেনিয়া এবং পুর্বে গ্রীক সেনাবাহিনীর মোকাবিলায় নামতে হল। ১৯২১ সালের শরতে এসে মার্শাল কামাল পাশা সমস্ত বিদেশী শক্তিকে তুরস্ক থেকে হটিয়ে দিতে সক্ষম হলেন। বিদেশী শক্তি বুঝল তুরস্কের কামাল পাশা মাথা নোয়াবার নন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বিজয়ী শক্তি গুলো নতুন করে আলোচনা শুরু করল সেভর এর চুক্তিকে বাদ দিয়ে।
শ অর্থনৈতিক দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ন বসফোরাস প্রনালীর নিয়ন্ত্রন রাখতে চেয়েছিল বৃটিশরা। কিন্তু সম্পুর্ন স্বাধীনতা এবং বিদেশী প্রভাবমুক্ত তুরস্কের প্রশ্নে বিন্দুমাত্র ছাড় দিতে রাজী ছিলেন না কামাল। ফলশ্রুতিতে ১৯২৩ সালের ২৪শে জুলাই স্বাক্ষরিত হল লোসানের (Treaty of Lausanne ) চুক্তি যাতে তুরস্কের গ্রান্ড ন্যাশনাল এসেম্বলীকে স্বীকৃতি দেওয়া হল স্বীকৃতি দেওয়া হল তুরস্ক প্রজাতন্ত্রকে। প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন কামাল। এই সময় বিয়ে করেন লতিফি উসাকলিগিলকে।
তাদের বিয়ে টিকে ছিল ২ বছরের কম সময়। তার কোন সন্তান সন্ততি ছিল না। তার পালিত পুত্র কন্যা ছিল ১২ জন।
তুরস্কের সংস্কার- ক্ষমতাসীন হওয়ার পর কামাল নজর দিলেন দেশ গড়ার। প্রথমেই খিলাফত বাতিল করে দিলেন।
ইসলামী বিশ্বে শোর উঠল। কামালকে ইসলাম বিরোধী বানাতেও কেউ কেউ ছাড়ল না। তিনি বিশ্বাস করতেন শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। আগে ধর্ম ভিত্তিক যে শিক্ষা ব্যবস্থা ছিল তা তুলে দিয়ে আধুনিক বিজ্ঞান ভিত্তিক শিক্ষা ব্যাবস্থা চালু করলেন। জটিল আরবী হরফে্র পরিবর্তে ল্যাটিন হরফ চালু করতে কতদিন লাগতে পারে এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ চাইলেন কামাল।
বিশেষজ্ঞরা মত দিলেন ৫ বছরে এ কাজ করা সম্ভব। কামাল বিশেষজ্ঞদের নির্দেশ দিলেন ৫ মাসে আরবীর পরিবর্তে ল্যাটিন ভাষা্র হরফে তুর্কী ভাষাতে শিক্ষার ব্যাবস্থা করতে এবং তিনি তা করেছিলেন। তিনি আরবীর পরিবর্তে তুর্কী ভাষায় কুরান শিক্ষার ব্যাবস্থা করলেন।
তিনি ইউরোপীয়দের মত করে পোষাক চালু করলেন। মেয়েদের মাথায় স্কার্ফ পরা নিষিদ্ধ করেন।
বোরকা যদিও নিষিদ্ধ করা হয় নি তবে বোরকাকে নিরুৎসাহিত করা হত। ১৯২৬ সালে ইসলামী কোর্ট এবং শরিয়া আইন ব্যাবস্থা বদলে নতুন সিভিল আইনব্যাবস্থা চালু করলেন। মেয়েরা পুরুষদের সমান অধিকার লাভ করল। তার সংস্কার সংরক্ষনবাদী ইসলামীদের মনঃপূত ছিল না। তারা কামালকে ইসলামের শত্রু হিসেবে আখ্যায়িত করল।
১৯২৬ সালে তার এক সহকর্মী তাকে গুপ্ত হত্যার মাধ্যকে হত্যা করতে চেয়েছিল কিন্তু সে চেস্টা সফল হয় নি। ১৯৩০ সালের শেষ দিকে মেনমেন শহরে ইসলামী মৌলোবাদীরা বিদ্রোহ করলে কামাল তা দমন করেন। ১৯৩৬ সালের দিকে তিনি ইন্টারন্যাশনাল স্ট্রেইট কমিশনকে হটিয়ে দিয়ে বসফরাস প্রনালী জাতীয়করন করেন। এই মহান নেতা ১৯৩৮ সালের ১০ই নভেম্বর মারা যান।
মোস্তফা কামাল পাশার সংস্কার এবং তার নীতির সমালোচকদের সংখ্যাও কম নয়।
তার একদলীয় শাসন ব্যাবস্থাকে দেখে হয়েছে একনায়কতন্ত্র হিসেবে, দেখা হয়েছে ইসলামের শত্রু হিসেবে। কিন্তু তিনি ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছিলেন স্বাধীন স্বার্বভৌম তুরস্কের । সামরিক বাহিনীতে তার চাকরী এবং ১৫ বছরের প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি নিঃস্বার্থভাবে দেশ সেবা করে গেছেন। স্বল্প সময়ের মধ্যে যে সংস্কার সাধন তিনি করেছিলেন তা ছিল বিষ্ময়কর। তাইতো ১৯৩৪ সালে তুরস্কের পার্লামেন্ট তাকে “আতা তুর্ক” উপাধিতে ভুষিত করে।
আজও কামাল আতা তুর্ক তুরস্কে দেবতার মত পূজনীয়।
তুরস্ক দেশ- মুসলিম প্রধান দেশগুলোর মধ্যে সবচে’ উন্নত দেশ হল তুরস্ক। ইউরোপ এবং এশিয়া মহাদেশের সংযোগস্থলে অবস্থিত তুরস্ক দেশের অধিকাংশ এলাকা এশিয়া মহাদেশে এবং অল্প কিছু এলাকা ইউরোপ মহাদেশে। দেশটির আয়তন ৭ লক্ষ ৮৩ হাজার বর্গকিলোমিটার এবং লোকসংখ্যা প্রায় সাড়ে সাত কোটী। তুরস্ক সাংবিধানিকভাবে ধর্ম নিরপেক্ষ দেশ হলেও এ দেশের ৯৮% জনসংখ্যা মুসলমান।
শিল্পোন্নত দেশগুলোর সংগঠন Organisation for Economic Co-operation and Development –OECD এর সদস্য একমাত্র মুসলিম প্রধান দেশ হল তুরস্ক । এ ছাড়াও তুরস্ক NATO সামরিক জোটের সদস্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহযোগী সদস্য এবং , Organisation for Security and Co-operation in Europe (OSCE) এর সদস্য। উন্নত অর্থনীতির দেশ সমুহের সংগঠন G-20, এর সদস্য দেশ তুরক। অর্গানাইজেশান অফ ইসলামিক কান্ট্রিজ বা OIC এর মধ্যে জি,ডি,পি এর মোট পরিমানের দিক থেকে তুরস্ক প্রথম। শিক্ষার হার- ৯৪% তুরস্কের মাথা পিছু আয় বাৎসরিক ১৬, ৭৩০ ডলার।
উচ্চ মধ্যম অর্থনীতির দেশ তুরস্ক। ইউ,এন,ডি,পি, এর হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্সে তুরস্ক উচ্চমানের দেশ।
তুরস্কের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস- বর্তমান সময়ের তুরস্ক ছিল রোমান সাম্রাজ্যের আনাতোলিয়া প্রদেশ। ৬ষ্ঠ থেকে ১১শ শতাব্দী পর্যন্ত ওগুজ তুর্কীরা (Oğuz Turks )মধ্য এশিয়া থেকে ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যের দিকে বসতি স্থাপন শুরু করে। ১০৭১ সালের যুদ্ধে জয়লাভ করে সেলজুক তুর্কীরা আনাতোলিয়ায় সেলজুক তুর্কী সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করে।
সেলজুকরা বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের উল্লেখযোগ্য অংশে দখল করে। ১২৪৩ সালে মোঙ্গোলরা তুরস্ক দখল করে নেয়। সেলজুক তুর্কী সাম্রাজ্য মংগোলদের করদ রাজ্যে পরিনত হয়। শেষ সেলজুক তুর্কী সম্রাট মেসুদ-২ এর মৃত্যু ঘটে ১৩০৮ সালে। ক্রমাগত মংগোল অভিবাসনের মুখে তুর্কীরা পশ্চিম দিকে সরে যেতে থাকে।
এই সময়ে আনাতোলিয়ার উত্তর পশ্চিম অংশের খুদ্র অংশ ছিল অটোম্যান তুর্কী গোষ্ঠী। পরবর্তী ২০০ বছরে অটোম্যান তুর্কীরা বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের আনাতোলিয়া এবং বল্কান অঞ্চল দখল করে নেয়। ১৪৫৩ সালে অটোম্যান সম্রাট মেহমুদ-২ এর সময়ে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের রাজধানী কন্সট্যান্টী নোপল দখল করে আনাতোলিয়া এবং ইউরোপের এই অঞ্চল দখল করে নেয়।
১৫শ, ১৬শ এবং সপ্তদশ শ্তাব্দীতে অটোম্যান সাম্রাজ্যের স্বর্নুযুগে ইউরোপ, ককেশাস, বল্কান, ভুমধ্যসাগর, উত্তর এবং পুর্ব আফ্রিকা, সিরিয়া মেসোপটেমিয়া আরব উপদ্বীপ এলাকা সমুহ দখল করে নেয় তুর্কীরা। সে সময়ের তুর্কী সাম্রাজ্য ছিল এখনকার সময়ের ৩০ টির মত দেশ নিয়ে।
ষোড়শ এবং সপ্তদশ শতাব্দী ছিল অটোম্যান তুর্কীদের স্বর্ন যুগ। সম্রাট সুলাইমান ছিলেন অটোম্যান তুর্কীদের মধ্যে সবচে’ সফল, তাকে বলা হত Suleiman the Magnificent সপ্তদশ শতাব্দীর শেষের দিকে ইউরোপে পর্তুগীজ, হ্যাপ্সবুর্গ স্প্যানিশ, অস্ট্রীয় , এবং ভেনিসিয়ান শক্তি গুলোর উত্থান ঘটে। ১৬৯৯ সালের কারলোউইজের চুক্তি থেকে অটোম্যানদের পতন শুরু হয়। তুর্কী সাম্রাজ্যের হাঙ্গেরী এবং ট্রান্স সিলভেনিয়া এলাকা দখল করে নেয় অস্ট্রিয়া, ডালমাটিয়া এবং মোরিয়া দখল করে নেয় ভেনিস,এবং পোল্যান্ড দখল করে নেয় পডোলিয়া এলাকা। উনবিংশ এবং বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিক পর্যন্ত অটোম্যান তুর্কীদের পতন অব্যাহত থাকে।
তারা ক্রমাগত হারায়, গ্রীস, আলজেরিয়া তিউনিসিয়া, লিবিয়া এবং বল্কান অঞ্চল গুলো। ৬০০ বছরের ও বেশী সময় ধরে টিকে ছিল অটোম্যান সাম্রাজ্য।
সুত্র- ১)
১) Click This Link
২)http://en.wikipedia.org/wiki/List_of_countries_by_GNI_(PPP)_per_capita
৩)http://en.wikipedia.org/wiki/Mustafa_Kemal_Atatürk
৪)http://1muslimnation.wordpress.com/2006/11/12/islam-to-secularism-how-kemal-ataturk-reformed-ottoman-turkey/
৫)http://allaboutistanbul.tripod.com/ataturk.htm
৬)http://asianhistory.about.com/od/turkeyhistoryculture/p/Ataturk-Biography-of-Mustafa-Kemal.htm
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।