আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সোনা ঝরা শৈশব

সেই আদিম বুনো গন্ধটা আজো ঝেরে ফেলতে পারিনি জীবন থেকে বড় কষ্ট হয় বড় মায়া হয় তার জন্য। এত কোলাহল ব্যস্ততার মাঝেও বারেবারে মনে পড়ে যায় যতই থাকিনা কেন আকণ্ঠ নিমজ্জিত রঙিন জলের তলায়। যে রকম করে নদীর জলে,পুকুরের জলে হাঁস ভেসে বেড়ায়, ওমনি ভুস করে ভেসে উঠে বুকের মধ্যে একটি চিনচিনে কাঁচফাটা ব্যথা ধরিয়ে দিয়ে আমার আহ্লাদি সোনা ঝরা শৈশব। তোমাদেরও কি মনে পড়ে যায় আমার মত বাবার ছেঁড়া লুঙিটাকে কাশ্মিরি শালের মত সারা গায়ে জড়িয়ে কোন এক শীতের সকালে বাঁদুরে,বুলবুলিতে অর্ধ খাওয়া বরই মোরগ গুলো সকালে ডেকে উঠার আগেই ঘুম থেকে উঠে মানুষের গাছ তলায় ঝোপ ঝাড়ে কুঁড়ানো। আর কোন রকমে যদি একটি আস্ত বরই পাওয়া যেত চোখের তারায় স্বচ্ছ কাঁচের মত চকচক করত বিশ্ব জয়ের আনন্দ।

কতনা সুখের ছিল সেই সোনা ঝরা দিন গুলো বনের হরিণের মত শুধু ছুটে চলা আর ছুটে চলা মাঠে ঘাটে বনে বাদারে বাতাসের ডানায় ভর করে। যেই টুনটুনিটা সারাদিনময় টুনটুন করে বেড়াত আমাদের ঘরের চারপাশে আমি খুঁজতাম তার বাসা কোথায় কোন ডুমুরের গাছে কি সুন্দর দুটো পাতা জড়ো করে বুনা তার শৈল্পিক বাসা। আমি প্রতিদিন নিঃশব্দে বাসাটির কাছে হেটে যেতাম দেখতাম কয়টি ডিম পেড়েছে কবে ডিম ফুটে ছানা বেরুবে। লেবু বাগানের দোয়েল পাখিটা কোন গাছের কোটরে বাসা করেছে যেন তাদের দেহভাল করার দায়িত্ব আমার। যখন হেমন্তের শেষে ছেলে মেয়েরা কাদা জলে মাছ ধরত আমারও প্রচন্ড ইচ্ছে হত,তাদের মত মাছ ধরি তাই টুপ করে নেমে পড়তাম ন্যাংটো হয়ে।

আমার কচি দুটো হাত মাছের সন্ধান পেয়েছিল কিনা মনে নেই পেলেও বা হাতের ফাঁক গলে খুব সহজেই পালিয়ে যেত যাওয়ার আগে শিং কিংবা টেংরা হাতে বসিয়ে দিয়ে যেত ঘাই আর কি ব্যথা,দু চোখ দিয়ে টপটপ করে গড়িয়ে পড়ত জল যারা সমবয়সি ছিল আমারি মত ছোট আমার ব্যথায় ব্যথিত হয়ে বলত আয় হাতে হিসু করে দিই দেখবি নিমেষেই সেরে যাবে ব্যথা। এইরকম সোনা ঝরা দিন গুলোর কথা কি ভুলে থাকা যায় যেই দিন গুলো কেটে যেত ঈদের দিন আর বৈশাখি মেলার প্রতিক্ষায়। মাটির ব্যাংকে বহু কষ্টে জমানো দুয়েকটা আধুলি তাতে কি আর কেনা যেত হাতি ঘোড়া ছাই পাশ কোনাঘাটের মেলায়। তবুও মাথায় ঠা ঠা রোদ্দুর নিয়ে তিন মাইল হেটে যাইয়া বড় ভাইয়ের হাত ধরে। একটি মাটির বাঁশি একটি বাঁশের বাঁশি একটি মাটির ব্যাংক আর একটি ছোট আম কাটা চাকু কিনে মনের আনন্দে ফিরে আসা।

কোন বছর হয়ত পয়সার অভাবে চাকুটাও কেনা হতনা। তাতে কি এই দূর্বার মনের আনন্দতো থামবার নয় পুকুরের তলা থেকে ডুব দিয়ে ঝিনুক তুলে স্কুলের পাকা দেয়ালে ঘষলেই চমৎকার চাকু হয়ে যেত। তারপর আম গাছের ডালে পা দুলিয়ে দুলিয়ে লবণ মরিচ দিয়ে কাঁচা আম খাওয়া। দুচোখ আমার আজো বষ্পায়িত হয় যখন পশ্চিমাকাশে কুমড়োর ফালির মত জেগে উঠে রমজানের কিংবা কুরবানির ঈদের এক টুকরো চাঁদ আমাকে মনে করিয়ে দেয় আনন্দ বেদনায় মেশানো শৈশবের ঈদ। কোন বছর হয়ত নতুন কাপড় জুটত কোন বছর হয়ত না তারপরও এই দিনটির জন্য কত প্রতিক্ষার প্রহর গোনা।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।