প্রহর শেষের আলোয় রাঙ্গা সেদিন চৈত্র মাস, তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ! প্রায় একবছর আগে কোন এক পেপারে ( সম্ভবত প্রথম আলো ) একটা প্রশ্নের জবাবে পড়ছিলাম যে রেসলিং নাকি গতানুগতিক খেলার মধ্যে পড়েনা। এর কোনো খবর আমরা খবরের কাগজে পড়ি না। আমার কাছে বিষয়টা কনফিউজ লাগছিল। তাই পরবর্তিতে এটা নিয়ে অনেক ঘাটাঘাটি করি।
এক সময় রেসলিং নিয়ে আমার আগ্রহটা চরম পর্যায়ে ছিল।
আন্ডার টেকার কিংবা কেইন অথবা দ্য রক রিংয়ে নামলে উত্তেজিত হইতাম।
আবার যখন আন্ডার টেকার আর কেইন দুই ভাই, তখন রোমাঞ্ছিত বোধ করতাম। অথবা যখন দেখতাম রক কোনো এক ভিলেন টাইপ রেসলারকে আচ্ছামত পিটন দিত, মজা লাগতো। অথচ পরবর্তিতে যখন শুনলাম এসব আগে থেকেই ফিক্স করা, তখন বিশ্বাস হতে চায়নি। পরে ভেবে দেখলাম আসলেই তাই।
হ্যা সত্যিই তাই। আসলে খেলাটা হয় পাতানো। এর মধ্যে কাজ করে মুলত ব্যবসায়ী মনোভাব। WWE নামক সংস্থাটার লোকেরাই এসব ফিক্সিং করে থাকে। একটু ভেবে দেখুন, বিগ শোর কাছে যদি রেয় মেস্টেরিও চাপা খায় তাহলে তার কি অবস্থা হবে? অথচ তার তেমন কিছু হয়না।
একটু কাৎরাকাৎরি করার পর উঠে দাঁড়ায় আর বিগ শো রে ধইরা ধমাধম দেয়।
আসলে বিগ শো সেভাবে চাপাই দেয় না। হয় সে তার কিছু পাশে পড়ে আর নাহয় অন্য কোনো পন্থা অবলম্বন করে।
রেসলিং এর রিং এর ফোমের, উপরে হাল্কা কাঠের বোর্ডের(প্লাইউড) মতো। আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার রিঙের নিচে থাকে মাইক্রোফোন যাতে শব্দটা জোড়ে সোরে শুনা যায়।
রিঙে যেই দুই রেসলারের সম্পর্ক দেখা যায় সবচেয়ে খারাপ, বাহিরে তারা হয়তো অনেক ভালো বন্ধু, হয়তো একই সাথে তারা ট্রেইনিংয়ে যায়, জিম করে। কিন্তু রিঙে তারা শত্রু, শুধুমাত্র স্ক্রিপ্টের কারনে। যাকে দেখা যায় রাগী, কে জানে হয়তো সে সবচেয়ে শান্ত। স্ক্রিপ্ট তাদের ঠিক করে দেয় কে হবে ভিলেন আর কে হবে দর্শকদের কাছে হিরো।
তবে অন্যতম নকল যে জিনিষটা তাহলো, জয়-পরাজয়।
কে জিতবে তা আগে থেকেই ফিক্স করা। এবং কি টুইস্ট গুলাও ফিক্স। প্রথমে দেখা যায় কোনো রেসলার মার খেয়ে তার অবস্থা খারাপ, আর উঠতেই পারছেনা। কিন্তু পরে আমরা দেখি সেই আবার উঠে এসে প্রতিপক্ষকে জেকে ধরে। স্বাভাবিক ভাবেই এটাকে নকল বলা যায়।
জয়ী আর পরাজিত- দুই রেসলারই স্ক্রিপ্টের প্রত্যেকটার মুভ ঠিক রাখার চেস্টা করে।
তবে সমস্যা হয় মাঝে মাঝে। যখন তাদের মাঝে আসলেই সম্পর্ক খারাপ থাকে। কিংবা সেটের মাঝেই কোনো গোলমাল লাগে- হয়তো কেউ ভুলে প্রতিপক্ষের আসল নাম বলে ফেলে। তখন মারামারিটা আসল হয়।
এগুলোকে বলে শুট।
আবার অন্যরকমও হয়। যেমন একবার কিছু রেসলার- যারা সেটে শত্রু কিন্তু রিয়েল লাইফে ভালও বন্ধু, খেলা শেষে নিজেদের মধ্যে কোলাকোলি করে কারন এদের কেউ এই লিগ ছেড়ে চলে যাবে, অন্য লিগে খেলবে। খেয়াল কইরেন, এরা কিন্তু নিজেদের মধ্যে শত্রু ছিল।
প্রো রেসলিং বাদ দিলে এমেচার রেসলিং বলে এক রেসলিং ছিল যেখানে মারামারিটা রিয়েল।
জনপ্রিয় রেসলার কার্ট এঙ্গেল আগে এমেচার রেসলিঙে খেলতো সেখানে খেলে সে মেডেলও পাইছে যা নিয়ে পরবর্তি সময় সে প্রো রেসলিঙে আসতো। মজার ব্যাপার সে এমেচার রেসলিং থেকে প্রো রেসলিংয়ে আসার পর বিস্মিত হয়েছিল এই কাহিনী থেকে।
সেই আন্ডারটেকার আর কেইন ভাতৃদ্বয়ের কথা মনে আছে সবার। তারা আসলে দুই ভাই না। রেসলিংয়ের জগতেই শুধু তারা দুই ভাই।
বাস্তব জীবনে নয়।
তবে মারামারিটা যে পুরাপুরি ফেইক তা নয়। ঘুষাঘুসি তাদের মধ্যে ঠিকই হয়, তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা হয়। নাহলে আন্ডার টেকারের মার কেম্নে সহ্য করে অন্যরা? এবং হ্যা সেখানে মাঝে মাঝে রক্ত ঝরে- এই রক্তের কিছু রিয়েল রক্ত যা আসলেই ঝরে। এবং যখন ২০ ফিট উপর থেকে পড়ে তখন ঠিকই ব্যাথা পায়, হোক না সেটা প্লাইউড কিংবা অন্য কিছু।
আবার চেয়ার দিয়ে যখন মারে, স্বাভাবিক ভাবেই লাগবে- তা আস্তে মারুক আর জোড়ে। বেশি আস্তে মারলে নিশ্চয় দর্শক ধরে ফেলবে। আর যেই জিনিষটা মূল তা হচ্ছে তারা অনেক ভালো এথলেট। ভালো এথলেট ছাড়া এই লাইনে আসাটা সম্ভব নয়। তাদের নিশ্চয় অতোটুকু মার খাওয়ার সহ্য ক্ষমতা আছে।
সম্ভবত এই একটা খেলাতেই ম্যাচ ফিক্সিং করলেও প্রব্লেম নাই।
খেলাটা শেষ পর্যন্ত যাই হোক, পর্যাপ্ত বিনোদন। এবং কঠিনও বটে। সিনেমায় অভিনয় করাটা যতটা সহজ এই রেসলিংয়ে ততটা সহজ নয়। সব দর্শকের সামনে উলটা কিছু করে বসলে সমস্যার অন্ত নেই।
তা ঢাকার জন্য অন্য কিছু করতে হয়, ব্যাপারটা মঞ্চ অভিনয়ের মতো।
যদিও ডাব্লিউ ডাব্লিউ ই ব্যাপারটা সরাসরি স্বীকার করে না তবুও এটাই সত্য যে রেসলিং ফেইক!!
এবং এই ফেইক হওয়ার কারনে টুইস্ট আসে নাহলে হয়তো ভালো রেসলারটা এক তরফা ভাবে জিতে যেত। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।