https://www.facebook.com/blogger.sadril জীবনের সাথে রেসলিং করে বড় হতে হতে ছোটবেলার মতো রেসলিং প্রীতি এখন আর নেই। তারপরও প্রতি বছরের এই সময় ডব্লিউ ডব্লিউ ই-এর খোজ খব রাখি শুধুমাত্র র্যাআসেল ম্যানিয়ার জন্য যেখানে নতুন নতুন রেসলিং সুপারষ্টারদের সাথে দেখা যায় লেজেন্ডদের যারা আমার শৈশব মাতিয়ে রেখেছিলো। এবারের র্যা সেল ম্যানিয়ার প্রধান আকর্ষন ছিলো দুটো ম্যাচঃ ট্রিপল এইচ বনাম আন্ডারটেকার, আর রক বনাম জন সিনা। রবিবার বেলা সড়ে এগারোটায় টেন স্পোর্টস-এ দেখাবে। বাসায় কেউ নেই।
বিল্ডিং-এর এক ছোট ভাই রাসেল-কে (এই বছর এস এস সি দিয়েছে) ডাকলাম আমার সাথে দেখার জন্য। টিংটিং-এ শুকনো দেহ নিয়ে রেসলিং দেখতে আসলো রাসেল, টিভির ভেতরে র্যা সেল ম্যানিয়া আর টিভির বাইরে রাসেল ম্যানিয়া। রাসেল যথাসময়ে ঢুকা মাত্র কারেন্ট চলে গেলো। “টিভিটাকে রেসলিং-এর কায়দায় আছাড় দিতে পারতাম” আমার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ। “বিদ্যুত বোর্ডকে বৈদ্যুতিক শক লাগাতে পারতাম”- রাসেলের অভিপ্রায়।
এক ঘন্টার আগে কারেন্ট আসবে না। রাসেলের সাথে সাথে রেসলিং নিয়ে আড্ডা দিলাম। আড্ডা দিতে গিয়ে তার সাথেই রেসলিং বেধে যাবার দশা। আমি যেখানে নব্বইয়ের দশকের রেসলার-দের পছন্দ করি সেখানে রাসেলের পছন্দ নতুন যামানার রেসলারদের। দীর্ঘসময়ের বাক-বিতন্ডার এক পর্যায়ে আমি বলছিলাম, “আগের আমলেই ছিলো মজা! ভিন্স মিকম্যান আর ট্রিপল এইচের লগে সব খারাপ রেসলার একজোট হইতো, স্টোন কোল্ড, রক, মিক ফলি এই গুলার লগে বাদবাকী ভালাগুলা একজোট হইতো।
তারপর এক গ্রুপ আরেক গ্রুপের সাথে লাগতো। রেসলাররা রেসলার হবার পাশাপাশি এক একটা ক্যারেকটার ছিলো। এদের কান্ড কারখানা দেখতেই বেশি মজা লাগতো। এখনকার মাইরতো লোক দেখানো মাইর, মাইর ছিলো সেই আমলে। সেই রকমের মাইর,রক্তারক্তি ঘইটা যাইতো”।
আমার কথা কেড়ে নিয়ে রাসেল বলতে শুরু করে “এখন-ই ভালা। লাগবি তো একটার লগে একটাই লাগ। গ্রুপিং দেখলে রেসলিং লাগে না, আমগো দেশের রাজনীতির ময়দান লাগে। এতো কান্ড কারখানা কান্ড ফ্যাক্টরির কি দরকার?এখন কারেক্টার লাগে না,অ্যাথলেটিসম লাগে। রেন্ডি ওরটনের আর কে ও দেখছেন, এমনে দেয়” বলেই রাসেল আমাকে ধরে আরকেও মেরে দেখাতে গেলো।
কারেন্ট এসে আমাকে উদ্ধার করলো। আরকেও দেয়া বাদ দিয়ে রাসেল বসে পড়লো টিভির সামনে। আমিও একটা চেয়ার টেনে নিলাম। এরই মধ্যে হয়তো বেশ কয়েকটা ম্যাচ শেষ হয়ে গিয়েছে তবে ট্রিপল এইচ আর আন্ডারটেকারের ম্যাচ মাত্র শুরু হয়েছে। আমি আন্ডারটেকার-এর পক্ষে আর রাসেল ট্রিপল এইচ।
রাসেল মাথা নাড়তে নাড়তে বললো, “নাহ, আন্ডু পারবো না ট্রিপল এইচের লগে”
আমি প্রতবাদ জানালাম,“কারে আন্ডু কস বে? আন্ডু তো পইরা আছে ট্রিপল এইচ। আন্ডারটেকার-এর পোশাক দেখ। মুখ ঢাইকা কেমুন রহস্য নিয়া আইতাছে”
-“আপনি তো দেখি রক্ষনশীল দর্শক। এরপর বোরখা পইড়া কাউরে আইতে দেখলে তারেও সাপোর্ট দিবেন”
-“আরে ব্যাটা, টেকাররে কি আর এমনিতেই সাপোর্ট করি। ঐ বুইড়াটা আমার বাপের আমল থেইকা রেসলিং করে”
-“আপনের বাপের আমল থেইকা করে তো আপনার বাপে মানে আঙ্কেলে সাপোর্ট দিবো, আপনি আপনার আমলের সাপোর্ট দেন”
-“আমার আমলে ট্রিপল এইচ ছিলো ভিলেন।
ওর পয়দা হইসে ভিলেন হবার লাইগা। এই আমলে নায়কের অভাব দেইখা ওরে ভিলেন থেইকা নায়ক বানায় দিছে। আবে আন্ডারতেকার-রে দেখ, কিরকম গায়ে আগুন লাগায় আসতাছে। তারপর রিং-এ উইঠা লম্বা চুল বাইর করবো আর চোখ উল্টায় ফেলিয়াবো। খেলা কইরা দেখিস, চোখে কোন পলক ফেলবো না।
ওদিকে ট্রিপল এইচ তো হাতে একটা বোতল লইয়া মাথায় পানি ঢালতে ঢালতে আইছে। তারপর রিং-এ উইঠা কুলকুচি কইরা পানি ছিটায়া দিছে”।
এদিকে আন্ডারটেকার রিং-এ। কিন্তু তার পোশাকের হুড সরাইতে দেখা গেলো টেকার সাহেবের নতুন চেহারা। চুল একদম ছোট করা।
আগের মতো চোখ উল্টানিটাও মারলেন না। বরং কুতকুতে চোখে ট্রিপল এইচের দিকে তাকিয়ে কয়েকবার চোখে পলক ফেললেন। অপলক দৃষ্টি হারানো টেকারকে দেখে আমি নিজেই অপলক চোখে তাকিয়ে রইলাম। তবে মাইর শুরু করলো প্রঅথমে টেকার-ই। ট্রিপল এইচ বেশি সুবিধা করতে পারছে না।
বলে রাখা ভালো, ম্যাচের স্পেশাল রেফারি শন মাইকেল যে কিনা ট্রিপল এইচের দোস্ত এবং দুই বছর আগে প্রতিপক্ষ হিসেবে র্যা সেলম্যানিয়াতেই আন্ডারটেকারের সাথে লড়তে গিয়ে রেসলিং ক্যারিয়ার খতম করে বসে আছেন। মাইর খেতে খেতে হঠাত টেকারকে স্টিলের শিড়ির উপর আছার মেরে ম্যাচে ফিরে ট্রিপল এইচ। তারপর সে চেয়ার দিয়ে টেকারকে বেদম পেটানো পেটায়। তারপর তার প্রিয় অস্ত্র স্লাইস হেমার (বিশাল এক হাতুড়ি) বের করে রিং-এর নিচ থেকে।
“ট্রিপল এইচ কিছু হইলেই হাতুড়িটা বাইর করে।
তুই কি কাঠ মিস্ত্রি?”
আমার এ কথা শুনে রাসেলও ফোড়ন কাটলো “আন্ডারটেকারের-ই বা ওমন ঘোমটা দিয়া রিং-এ আসার দরকার কি? তুই কি নতুন বউ?”
ওদিকে হাতুড়ি দিয়া যেই ট্রিপল এইচ বাড়ি মারতে যাবে ওমনি তাকে থামালো শন মাইকেল। তারপর দুই বন্ধুর মধ্যে নাটকীয় সংলাপ আদান পরাদন হলো।
শন মাইকেলঃ ওরে ওমনে মারিস না। অয় মইরা যাইবো
ট্রিপল এইচঃ কেয়ার করি না। তুই ওরে হারাইতে পারোস নাই,আমি হারামু।
ওরে জিগা, মরার আগে হার স্বীকার কইরা লইতে
শন মাইকেল গিয়া টেকারকে জিজ্ঞেস করে, “তুমি কইলে ম্যাচ শেষ কইরা দেই”। টেকার কাতরাইতে কাতরাইতে বলে, “ না। ম্যাচ শেষ করবা না”। শন মাইকেল তারপরও মাতব্বরী করে বেল বাজার নির্দেশ দেবার জন্য হাত উঠায়,কিন্তু কি মনে করে আরেক দফা মাতব্বরী করে টেকারকে জিজ্ঞেস করতে যায়, “ম্যাচকি শেষ করমু”? টেকার বিরক্ত হয়ে শোয়া অবস্থাতেই শন মাইকেলকে দুই পা দিয়া প্যাচায় ‘হেল স্কেট’ মাইরা বসে। ট্রিপল এইচ অবশেষে টেকারকে হাতুড়ি দিয়া মাইরা শন মাইকেলকে উদ্ধার করে।
শন মাইকেল উইঠা রাগে টেকারকেও একটা লাথি কষায় দেয়,সুবিধামতো ট্রিপল এইচ-ও দিয়ে বসে তার ফিনিশিং মুভ “থ্যামেগ্রি”। দুই বন্ধুর দুই দফা মাইরে টেকার চিত। ট্রিপর এইচ যেই পিন করতে গেলো ওমনী ভদ্রলোক উঠে বসলেন। তারপর শুরু করলেন পাল্টা মাইর।
“সাদরিল ভাই, ট্রিপল এইচের মাইর খাওন দেইখা আমারও খিদা লাগসে।
কিছু খাইতে দেন”
খাওয়ার জিনিষ তেমন কিছু নেই। হাতের কাছে তেতুলের আচাড়ের বইয়্যম পেয়ে রাসেলকে সেটাই খেতে দিলাম। রাসেল আচাড় খেতে থাকলো আর ট্রিপল এইচ আছাড়ের পর আছাড় খেতে থাকলো। অবশেষ ট্রিপল এইচকে টু স্টোন মেরে জয় হলো আন্ডারটেকারের। রাসেল ম্যানিয়াতে এই নিয়ে ২০টা জয় পেয়ে অপরাজিত থাকলো আন্ডারটেকার।
ম্যাচ শেষে টেকার আর মাইকেল ট্রিপল এইচকে ধরাধরি করে নিয়ে গেলো। বিদায়ের শেষ মুহুর্তে তিনজন তিনজনকে জড়িয়ে ধরে বিদায় নিলো।
রাসেলের মন খারাপ। ট্রিপল এইচ হেরে গিয়েছে। আমি বললাম, “চিন্তা কইরো না রাসেল, ভিন্স মিকম্যানের মাইয়া স্টেফানী (ট্রিপল এইচের বউ) তার স্বামীর ভালো যত্ন নিবে”।
রাসেল জানালো। “আন্ডু তো এই বুইড়াকালে সেবা-যত্নের লাইগা একটা ছুড়ি-রে বিয়া করছে”। “কোন ছুড়ি”? রাসেল তার ছুরির মতো ধারালো দাতের হাসিমুখে বললো “মিশেল ম্যাকুল”। ভাবী সম্পর্কে জানতে চাইলে এই লিঙ্ক -এ যান।
পরবর্তী অগুরত্বপূর্ণ ম্যাচগুলো নিয়ে আমাদের আগ্রহ নেই।
চ্যানেল মোড়াতে গিয়ে দেখি, এক চ্যানেলে মামি রিটার্ন্স মুভি চলছে। রাসেল চেচিয়ে উঠে, “সাদ্রিল ভাই,এইটা রাখেন। আমার প্রিয় নায়িকা রাচেল ভাইস”। বাহ, র্যা সেলম্যানিয়া দেখাইতে রাসেলকে ডেকে আনলাম আর সে কিনা রাচেলম্যানিয়া নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো। মামি রিটার্ন্স শেষ হলে আমরা যেই রেসলিং দেখায় রিটার্ন করলাম তখনই আমার মাম্মি রিটার্ন করলো মানে আমার মা ঘরে ঢুকলো।
টেবিলের উপর একটা বোতল রেখে সে ভেতরে গেলো। আমি বোতলের ভেতর গোলাপী তরল দেখে ভাবলাম, “নতুন কোন জুস”। জলদি দুটো গ্লাস নিয়ে এলাম আমার আর রাসেলের জন্য। আম্মু এসে চেচিয়ে উঠে, “আরে করো কি করো কি। এইটা তো কমোড ঘষার লিকুইড”।
আমি তো থ। বোতলের দিকে তাকিয়ে দেখি, “বোতলের এক চিপায় ছোট একটা কমোডের ছবি”। আম্মু বোতল নিরাপদ স্থানে সরিয়ে রাখতে রাখতে বলে “তোরা এই মরনখেলা দেখতে দেখতে এইটা গিলতি আর নিজেরাই মইরা থাকতি”।
ওদিকে রক আর জন সিনার মরনখেলা শুরু হয়ে গিয়েছে। আমি রক-এর পক্ষে আর রাসেল সিনা।
তবে খেলাটা ঠিক জমলো না। এই রক মারে, তো এই জন সিনা মারে। বিশেষ কোন নাটকীয়তা ছিলো না। এই ম্যাচ যদি আমাদের দেশে হতো তবে দেখা যেত রক আর জন সিনার সমর্থকদের মধ্যেই মারামারি লেগে গিয়েছে। ম্যাচের এক পর্যায়ে রক কাইত।
জন সিনা মশকরা করার জন্য রকের মতো ভঙ্গি করে রককেই রকের ফিনিশিং মুভ “পিপল’স এলবো” মারতে গেলো আর তখনই রক দিয়ে বসলো “রক বটম”। ১, ২, ৩...রক জিতলো। আমার ইচ্ছা করছিলো রাসেল চ্যাংড়াটাকেও একটা ড্রপ কিক মেরে বের করে দেই ঘর থেকে কিন্তু তাকে ভদ্রভাবেই বিদায় জানালাম। আমার মতো পুরাতনদের গর্ব থাকবেই, কিন্তু নতুন বিনোদন তাতে তখনই সংযোজিত হবে যখন রাসেলদের মতো নতুনেরা এসে জুটবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।