বিভিন্ন সময়ের দো‘আ সমূহ
৮. ঘুমানোর সময় এবং ঘুম থেকে ওঠার সময় দো‘আ :
(ক) ঘুমানোর সময় ডান কাতে শুয়ে বলবে, ‘বিসমিকাল্লা-হুম্মা আমূতু ওয়া আহ্ইয়া’ (হে আল্লাহ! তোমার নামে আমি মরি ও বাঁচি’। অর্থাৎ তোমার নামে আমি শয়ন করছি এবং তোমারই দয়ায় আমি পুনরায় জাগ্রত হব)।
(খ) ঘুম থেকে ওঠার সময় বলবে, আলহামদুলিল্লা-হিল্লাযী আহইয়া-না বা‘দা মা আমা-তানা ওয়া ইলাইহিন নুশূর’ (সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদেরকে মৃত্যু দানের পর জীবিত করলেন এবং ক্বিয়ামতের দিন তাঁর দিকেই হবে আমাদের পুনরুত্থান)। [বুখারী হা/৬৩১৫, ৬৩২৪; মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/২৩৮২, ২৩৮৪, ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯, অনুচ্ছেদ-৬। ]
৯.মেহমানের জন্য দো‘আ :
(ক) আল্লা-হুম্মা আত্ব‘ইম মান আত্ব‘আমানী ওয়াসক্বি মান সাক্বা-নী’ (হে আল্লাহ! তুমি তাকে খাওয়াও যিনি আমাকে খাইয়েছেন এবং তাকে পান করাও যিনি আমাকে পান করিয়েছেন)।
[মুসলিম হা/৫৩৬২ (২০৫৫/১৭৪), ‘পানীয় সমূহ’ অধ্যায়-৩৬, অনুচ্ছেদ-৩২; আহমাদ হা/২৩৮৬০ ‘সনদ ছহীহ’। ] বহুবচনে ‘না’ বলবে।
অথবা বলবে,
(খ) আফত্বারা ইনদাকুমুছ ছা-য়েমূন, ওয়া আকালা ত্বা‘আ-মাকুমুল আবরা-রু, ওয়া ছাল্লাত আলায়কুমুল মালা-য়েকাহ’ (ছায়েমগণ আপনার নিকট ইফতার করুন। নেককার ব্যক্তিগণ আপনার খাদ্য গ্রহণ করুন এবং ফেরেশতাগণ আপনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন)। [আবুদাঊদ হা/৩৮৫৪; ইবনু মাজাহ হা/১৭৪৭; শারহুস সুন্নাহ, মিশকাত হা/৪২৪৯।
]
অথবা বলবে,
(গ) আল্লা-হুম্মা বা-রিক লাহুম ফীমা রাঝাক্বতাহুম ওয়াগফির লাহুম ওয়ারহামহুম’ (হে আল্লাহ! তুমি তাদের যে রূযী দান করেছ, তাতে প্রবৃদ্ধি দান কর। তুমি তাদের ক্ষমা কর ও তাদের উপর রহম কর)। [মুসলিম, মিশকাত হা/২৪২৭, ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯, ‘বিভিন্ন সময়ের দো‘আ সমূহ’ অনুচ্ছেদ-৭। ]
১০. নতুন চাঁদ দেখার দো‘আ :
উচ্চারণ : আল্লা-হু আকবার, আল্লা-হুম্মা আহিল্লাহূ ‘আলাইনা বিল আমনি ওয়াল ঈমা-নি, ওয়াস্সালা-মাতি ওয়াল ইসলা-মি, ওয়াততাওফীক্বি লিমা তুহিববু ওয়া তারযা; রববী ওয়া রববুকাল্লা-হ ।
অর্থ : আল্লাহ সবার চেয়ে বড়।
হে আল্লাহ! আপনি আমাদের উপরে চাঁদকে উদিত করুন শান্তি ও ঈমানের সাথে, নিরাপত্তা ও ইসলামের সাথে এবং আমাদেরকে ঐ সকল কাজের ক্ষমতা দানের সাথে, যা আপনি ভালবাসেন ও যাতে আপনি খুশী হন। (হে চন্দ্র!) আমার ও তোমার প্রভু আল্লাহ’। [দারেমী হা/১৬৮৭-৮৮; তিরমিযী হা/৩৪৫১; মিশকাত হা/২৪২৮; ছহীহাহ হা/১৮১৬। ]
১১.
(ক) ঝড়ের সময় দো‘আ :
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা খায়রাহা ওয়া খায়রা মা ফীহা ওয়া খায়রা মা উরসিলাত বিহী; ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন শার্রিহা ওয়া শার্রি মা ফীহা ওয়া মিন শার্রি মা উরসিলাত বিহী’।
অনুবাদ : হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকটে এর মঙ্গল, এর মধ্যকার মঙ্গল ও যা নিয়ে ওটি প্রেরিত হয়েছে, তার মঙ্গল সমূহ প্রার্থনা করছি এবং আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি এর অমঙ্গল হ’তে, এর মধ্যকার অমঙ্গল হ’তে এবং যা নিয়ে ওটি প্রেরিত হয়েছে, তার অমঙ্গল সমূহ হ’তে’।
[মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৫১৩ ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, ‘ঝড়-ঝঞ্ঝা’ অনুচ্ছেদ-৫৩। ]
অন্য বর্ণনায় এসেছে, আল্লা-হুম্মা লাক্বহান লা ‘আক্বীমান’ (হে আল্লাহ! মঙ্গলপূর্ণ কর, মঙ্গলশূন্য নয়)। [ছহীহ ইবনু হিববান, সিলসিলা ছহীহাহ হা/২০৫৮; ছহীহুল জামে‘ হা/৪৬৭০। ]
(খ) বজ্রের আওয়ায শুনে দো‘আ :
উচ্চারণ : সুবহা-নাল্লাযী ইয়ুসাবিবহুর রা‘দু বিহামদিহী ওয়াল মালা-ইকাতু মিন খীফাতিহি’।
অনুবাদ : মহা পবিত্র সেই সত্তা যাঁর গুণগান করে বজ্র ও ফেরেশতামন্ডলী সভয়ে’।
[রা‘দ ১৩/১৩; মুওয়াত্ত্বা, মিশকাত হা/১৫২২, ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, ‘ঝড়-ঝঞ্ঝা’ অনুচ্ছেদ-৫৩। ]
(গ) ঝড়-বৃষ্টির ঘনঘটায় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সূরা ইখলাছ, ফালাক্ব ও নাস সকালে ও সন্ধ্যায় তিনবার করে পড়তে নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, এগুলিই তোমার জন্য যথেষ্ট হবে অন্য সবকিছু থেকে’। [আবুদাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ, মিশকাত হা/২১৬২-৬৩ ‘কুরআনের ফাযায়েল’ অধ্যায়-৮, পরিচ্ছেদ-২। ]
উল্লেখ্য যে, এই সময় আল্লা-হুম্মা লা তাক্বতুলনা বিগাযাবিকা অলা তুহলিকনা বি‘আযাবিকা ওয়া ‘আ-ফিনা ক্বাবলা যালিকা মর্মে বর্ণিত হাদীছটি ‘যঈফ’। [আহমাদ তিরমিযী, মিশকাত হা/১৫২১, ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, ‘ঝড়-ঝঞ্ঝা’ অনুচ্ছেদ-৫৩।
]
১২. সকাল-সন্ধ্যায় পঠিতব্য দো‘আ :
(ক) ‘বিস্মিল্লা-হিল্লাযী লা-ইয়াযুর্রু মা‘আ ইসমিহী শাইয়ুন ফিল্ আর্যি ওয়া লা ফিসসামা-ই ওয়া হুয়াস সামী‘উল ‘আলীম’ (আমি ঐ আল্লাহর নামে শুরু করছি, যাঁর নামে শুরু করলে আসমান ও যমীনের কোন বস্ত্তই কোনরূপ ক্ষতিসাধন করতে পারে না। তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ)।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি উক্ত দো‘আ সকালে ও সন্ধ্যায় তিন বার করে পড়ে, কোন বালা-মুছীবত তাকে স্পর্শ করবে না’। অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘সন্ধ্যায় পড়লে সকাল পর্যন্ত এবং সকালে পড়লে সন্ধ্যা পর্যন্ত আকস্মিক কোন বিপদ তার উপরে আপতিত হবে না’। [তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/২৩৯১ ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯, ‘সকাল-সন্ধ্যায় ও ঘুমানোর সময় যা পাঠ করতে হয়’ অনুচ্ছেদ-৬।
]
(খ) আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল ‘আফওয়া ওয়াল ‘আ-ফিয়াতা ফিদ্দুন্ইয়া ওয়াল আ-খিরাহ’ (হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট দুনিয়া ও আখেরাতে ক্ষমা ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি)। আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সকালে ও সন্ধ্যায় এই দো‘আ পড়া ছাড়তেন না। [ইবনু মাজাহ হা/৩৮৭১। ]
(গ) রাসূলুল্লাহ (সা.) ফজরের সালাতের পর বলতেন,
আল্লা-হুম্মা ইন্নী আস’আলুকা ‘ইলমান নাফে‘আন, ওয়া ‘আমালাম মুতাক্বাববালান, ওয়া রিঝক্বান ত্বাইয়েবান’ (হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকটে উপকারী জ্ঞান, কবুলযোগ্য আমল ও পবিত্র রূযী প্রার্থনা করছি)। [আহমাদ, ইবনু মাজাহ, ত্বাবারাণী ছাগীর, মিশকাত হা/২৪৯৮, ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯, ‘সারগর্ভ দো‘আ’ অনুচ্ছেদ-৯।
]
১৩. কুরআন তেলাওয়াত ও মজলিস শেষের দো‘আ :-
উচ্চারণ : ‘সুবহা-নাকাল্লা-হুম্মা ওয়া বিহামদিকা, আশহাদু আল লা ইলা-হা ইল্লা আনতা, আস্তাগফিরুকা ওয়া আতূবু ইলাইকা’।
অনুবাদ : ‘মহা পবিত্র তুমি হে আল্লাহ! তোমার প্রশংসার সাথে আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তুমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। আমি তোমার নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তোমার দিকেই ফিরে যাচ্ছি (বা তওবা করছি)।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, মজলিস ভঙ্গের পূর্বে এই দো‘আ পাঠ করলে মজলিস চলাকালীন তার ভাল কথাগুলি তার জন্য ক্বিয়ামত পর্যন্ত মোহরাংকিত থাকবে এবং অযথা বাক্যসমূহের গোনাহ মাফ করে দেওয়া হবে এবং এই দো‘আ উক্ত গোনাহ সমূহের কাফফারা হবে’। [তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/২৪৩৩, ২৪৫০; ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯ ‘বিভিন্ন সময়ের দো‘আ সমূহ’ অনুচ্ছেদ-৭।
]
১৩.বাজারে প্রবেশকালে দো‘আ :
হযরত ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি বাজারে প্রবেশকালে নিম্নোক্ত দো‘আটি পাঠ করে, আল্লাহ তার জন্য ১ লক্ষ নেকী লিখেন, ১ লক্ষ ছগীরা গোনাহ দূর করে দেন, তার মর্যাদার স্তর ১ লক্ষ গুণ উন্নীত করেন এবং তার জন্য জান্নাতে একটি গৃহ নির্মাণ করেন’। -
উচ্চারণ : লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু য়ুহ্য়ী ওয়া য়ুমীতু ওয়া হুয়া হাইয়ুন লা ইয়ামূতু, বেইয়াদিহিল খাইরু ওয়া হুয়া ‘আলা কুল্লে শাইয়িন ক্বাদীর।
অনুবাদ : নেই কোন উপাস্য আল্লাহ ব্যতীত, যিনি একক, যার কোন শরীক নেই। তাঁর জন্যই সকল রাজত্ব ও তাঁর জন্যই সকল প্রশংসা। যিনি বাঁচান ও মারেন।
যিনি চিরঞ্জীব, কখনোই মরেন না। তাঁর হাতেই যাবতীয় কল্যাণ। তিনি সকল কিছুর উপরে ক্ষমতাবান’। [তিরমিযী হা/৩৪২৮, মিশকাত হা/২৪৩১, ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯, ‘বিভিন্ন সময়ে দো‘আ সমূহ’ অনুচ্ছেদ-৭। ]
১৪.কোন গ্রামে বা শহরে প্রবেশের দো‘আ :
উচ্চারণ : ‘আল্লা-হুম্মা ইন্নী আস’আলুকা খায়রা হা-যিহিল ক্বারইয়াতি ওয়া খায়রা আহ্লিহা ওয়া খায়রা মা ফীহা।
ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন শার্রিহা ওয়া শার্রি আহলিহা ওয়া শার্রি মা ফীহা।
অনুবাদ : হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকটে এই জনপদের ও এর অধিবাসীদের এবং এর মধ্যকার কল্যাণ সমূহ প্রার্থনা করছি এবং আমি এই জনপদের ও এর অধিবাসীদের এবং এর মধ্যকার অনিষ্ট সমূহ হ’তে তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি। [ হাকেম, সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৭৫৯। ]
হে আল্লাহ! আমার ত্রুটিগুলি তুমি ক্ষমা কর এবং তোমার পথে এই ক্ষুদ্র খিদমতটুকু কবুল কর। হে আল্লাহ! এ দোআ গুলো পড়ে যত মুমিন নর-নারী আমল করবেন, তাদের আমলনামায় তার ছওয়াব পূর্ণরূপে যুক্ত কর এবং তাদের পিতামাতাকে ও তাদের পরিবারবর্গকে এবং তার সকল শুভাকাংখীকে কবরে ও হাশরে মুক্তি দান কর- আমীন!! সুবহা-নাল্লা-হি ওয়া বেহামদিহী, সুবহা-নাল্লা-হিল ‘আযীম!
চলবে ......।
জরুরী দো‘আ সমূহ #৬
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।