সূরা ইয়াসিনে আল্লাহ পাক বলেছেন- 'ইযা আরাদা শাইআন আইয়াক্বুলা লাহু কুন্ ফায়াকুন' অর্থাৎ আমি যখন কোনো কার্যসম্পন্ন করার ইচ্ছা পোষণ করি তখন শুধু বলি হয়ে যাও আর তা সঙ্গে সঙ্গেই হয়ে যায়। মহান আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী সুন্দর পৃথিবী সৃষ্টি হওয়ার পর তিনি আরেকটি ইচ্ছা পোষণ করলেন; তাঁর ঘোষণা অনুযায়ী সে ইচ্ছাটি হলো- 'ইনি্ন জায়িলুন ফিল আরদে খালিফাহ্' অর্থাৎ নিশ্চই আমি পৃথিবীতে আমার প্রতিনিধি প্রেরণ করব। আল্লাহ পাকের কথা মতে, আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব মানুষই হচ্ছে তাঁর প্রতিনিধি আর মানুষের সমাজে আল্লাহ প্রেরিত বিশেষ দূতরাই নবী বা রাসূল হিসেবে পরিচিত। অজ্ঞানতার অন্ধকার, যাবতীয় কুসংস্কার ও সবধরনের পঙ্কিলতা দূর করে সত্য, ন্যায় ও আদর্শের আলোকরশ্মি ছড়ানোই ছিল নবী-রাসূল প্রেরণের মূল লক্ষ্য। যুগের চাহিদানুযায়ী, স্থান-কাল-পাত্র ভেদে পৃথিবীর বিভিন্ন জনপদে মানবসভ্যতার প্রয়োজনে অসংখ্য নবী-রাসূল প্রেরিত হয়েছেন।
আল্লাহ বলেন- 'ওলাক্বাদ বাআসনা ফি কুলি্ল উম্মাতির্ রাসূলা' অর্থাৎ আমরা অবশ্যই সব জাতি-গোষ্ঠীর কাছে রাসূল প্রেরণ করেছি। নবী-রাসূল প্রেরণের ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতায় এ কাফেলার প্রথম প্রেরিত পুরুষ হচ্ছেন সৃষ্টির আদি মানব হজরত আদম (আ.) এবং সর্বশেষ হলেন মানব ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ মহাপুরুষ হজরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সা.); বসুন্ধরায় যাঁর শুভাগমনের মাধ্যমে নবুয়তের দীর্ঘ সিলসিলার সফল পরিসমাপ্তি ঘটে।
সুফি কবি ফরিদুদ্দিন আক্তার বলেছেন- 'সাইয়েদুল কাউনাইন ওয়া খাতামুল মুরসালিন, আখের অমাদ বুদ ফাখরুল আউয়ালিন' অর্থাৎ দুজাহানের সম্রাট তিনি সর্বশেষ রাসূল, এলেন শেষে কিন্তু তিনিই হলেন সৃষ্টির প্রথম গৌরব। হাদিসে কুদসিতে রয়েছে- 'লাউলাকা লামা খালাকতুল আফলাক' অর্থাৎ আল্লাহ বলছেন, হে রাসূল! আমি আপনাকে সৃষ্টি না করলে পৃথিবীর কোনো কিছুই সৃষ্টি করতাম না। রাসূল (সা.) নিজে বলেছেন- 'আউয়ালু মা খালাক্বাল্লাহু নুরি' অর্থাৎ আল্লাহ সর্বপ্রথম আমার নুরকে সৃষ্টি করেছেন।
মহান আল্লাহর প্রথম, প্রিয় ও গৌরবোজ্জ্বল সৃষ্টি হলেন তাঁর পিয়ারা হাবিব হজরত মুহাম্মদ (সা.)। রাসূল (সা.) বলেন, আমি তখনো ছিলাম যখন হজরত আদম (আ.)-এর অস্তিত্ব মাটি ও পানির ভেতরে ছিল। সুতরাং সৃষ্টি তাঁর সর্বাগ্রে কিন্তু মানুষ, মানবতা আর মানবসভ্যতার সর্বোচ্চ প্রয়োজনে পৃথিবীর ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ মানবহিতৈষী রূপে তাঁর আবির্ভাব ঘটেছে নবী-রাসূলগণের সবার শেষে। বোখারি ও মুসলিম শরিফের মতো সিহাসিত্তার বিশুদ্ধ দুই হাদিস গ্রন্থের বর্ণনা মতে, আমাদের প্রিয় নবী (সা.) হলেন নবুয়তের অতিশয় সুরম্য ও চাকচিক্যময় সেই অপূর্ণ প্রাসাদের সর্বশেষ মহামূল্যবান ইট; যার প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে নবুয়ত ও রেসালতের প্রাসাদকে পরিপূর্ণতা দান করা হয়েছে।
ইসলাম শান্তি ও উদারতার ধর্ম।
সহনশীলতা ও পরমতসহিষ্ণুতার ধর্ম। আল্লাহ পাক নির্দেশিত ও রাসূল (সা.) প্রবর্তিত শান্তির ধর্ম ইসলামের রয়েছে অনুপম বৈশিষ্ট্যাবলি; রয়েছে মানুষকে প্রকৃত মানুষ তথা ইনসানে কামেল বা পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার সব ধরনের পালনীয় উপকরণ। পবিত্র ইসলামের রয়েছে কিছু মৌলিক আকি্বদা-বিশ্বাস; যেগুলো অন্য সব মতবাদ বা ধর্ম-দর্শন থেকে একজন মুসলমানকে স্বাতন্ত্র্য দান করে। ইসলামের শীর্ষ মৌলিক আকি্বদা-বিশ্বাসসমূহের অন্যতম হলো খতমে নবুয়ত; যা বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সা.)কে অন্য সব নবী-রাসূল এবং পৃথিবীর সমগ্র মানবগোষ্ঠী থেকে তাঁকে অনন্য উচ্চতায়, সীমাহীন মর্যাদায় ও অপরিসীম স্বাতন্ত্র্য-বৈশিষ্ট্যে অলঙ্কৃত করেছে। নিম্নে আমরা খতমে নবুয়ত-সংক্রান্ত সংক্ষিপ্ত দালিলিক আলোচনার প্রয়াস পাব।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন- 'মুহাম্মদ (সা.) তোমাদের মধ্যকার কোনো পুরুষের পিতা নন, বরং তিনি হচ্ছেন আল্লাহর রাসূল এবং সর্বশেষ নবী। ' মহানবী (সা.)-এর কোনো পুত্র সন্তান জীবিত ছিলেন না। ইতিহাসে আমরা দেখতে পাই, হজরত আদম (আ.)-এর পরে তাঁর পুত্র হজরত শীষ (আ.) নবী হয়েছেন, হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর পরে তাঁর পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.) ও হজরত ইসহাক (আ.) নবী হয়েছেন, হজরত ইয়াকুব (আ.)-এর পরে তাঁর পুত্র হজরত ইউসুফ (আ.) নবুয়ত পেয়েছেন এবং হজরত দাউদ (আ.)-এর পর তাঁর পুত্র হজরত সোলায়মান (আ.) নবুয়ত লাভ করেন। কিন্তু বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সা.)-এর ক্ষেত্রে এ ধারাবাহিকতার ব্যতিক্রম ঘটেছে; কেননা আল্লাহ পাক তাঁকে সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূলের মর্যাদায় অভিষিক্ত করেছেন। মহানবী (সা.) হলেন খাতামুন্ নাবিয়্যিন।
তাফসির শাস্ত্র বিশারদ হজরত কাতাদাহ, হজরত বায়যাবি ও ইবনে কাসির প্রমুখের মতে, খাতামুন্ নাবিয়্যিন মানে হলো আখিরুন্ নাবিয়্যিন বা নবিগণের শেষ। আল কামুসসহ বিখ্যাত আরবি অভিধানসমূহে 'খাতাম' এর অর্থ হিসেবে শেষ শব্দকেই উল্লেখ করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনের বাণী- 'আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম'- এর মধ্যেও নবুয়ত ও রেসালতের ধারাবাহিকতার পরিসমাপ্তির ইঙ্গিত পরিলক্ষিত হয়। পৃথিবীতে নবী-রাসূলগণকে আল্লাহ পাক কখনো কোনো গোত্রে, কখনো কোনো বিশেষ অঞ্চলে আবার কখনো কোনো নির্দিষ্ট ভাষা-গোষ্ঠীর মাঝে প্রেরণ করেছেন। কিন্তু মহানবী (সা.)কে আল্লাহতা'আলা কোনো বিশেষ অঞ্চল, গোত্র বা নির্দিষ্ট কোনো ভাষাভাষীর মাঝে সীমাবদ্ধ রাখেননি।
তিনি সমগ্র বিশ্বমানবতার নবী, বিশ্বজনীন ও সর্বজনীন রাসূল। আল্লাহ পাক বলেন- 'বল হে মানবমণ্ডলী! আল্লাহ পাক আমাকে তোমাদের সকলের জন্য রাসূল হিসেবে পাঠিয়েছেন। ' তাই তিনি শুধু আরবের নবী নন; আরব-আজমসহ সমগ্র বিশ্ববাসীর নবী। আল্লাহ পাক আরও বলেন- 'হে রাসূল! আমি আপনাকে গোটা জগদ্বাসীর জন্য করুণার মূর্তপ্রতীক হিসেবে প্রেরণ করেছি। ' সুতরাং গোত্র, অঞ্চল, দেশ, কাল ও ভৌগোলিক সীমারেখা অতিক্রম করে বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সা.) সর্বকালের সবার রাসূলে পরিণত হয়েছিলেন।
তাই সঙ্গত কারণেই তাঁর পরে আর কোনো নবী-রাসূলের আবির্ভাব কাঙ্ক্ষিত নয়। এমনকি এ বিষয়ে খোদ মহানবী (সা.)-এর বাণী আরও সুস্পষ্ট। তিনি বলে- 'আমিই সর্বশেষ নবী, আমার পরে আর কোনো নবী নেই (বোখারি ও মুসলিম)। '
খতমে নবুয়ত সম্পর্কে উলি্লখিত সংক্ষিপ্ত আলোচনায় এটি পরিষ্কার হলো যে, ইসলামের নবুয়ত ও রেসালতের কাফেলার সর্বশেষ কাপ্তান হলেন হজরত মুহাম্মদ (সা.)। তাঁর মাধ্যমেই নবুয়তের দ্বার চিরতরে রুদ্ধ হয়েছে; রেসালতের দাবি নিয়েও পৃথিবীতে আর কারও আবির্ভাব হবে না।
নবুয়ত ও রেসালতের সফল ও সার্থক পরিসমাপ্তি ঘটেছে রাসূলে মাকবুল (সা.)-এর তিরোধানের মধ্য দিয়ে- এ বিশ্বাসকেই ইসলামে খতমে নবুয়ত হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। যারা এ বিশ্বাসের বাইরে অবস্থান করবেন অথবা এ বিশ্বাসের গণ্ডিতে থেকে এর অবস্থানকে দুর্বল করবেন_ ইসলামের দৃষ্টিতে এতদুভয়ের দৃষ্টিভঙ্গিই অগ্রহণযোগ্য হবে। বস্তুত আমাদের এ নিবন্ধে খতমে নবুয়ত-সংক্রান্ত কোনো উচ্চতর গবেষণা বা বিস্তৃত বিবরণ তুলে ধরা মুখ্য বিষয় নয়; হেফাজতে ইসলাম নামের কথিত অরাজনৈতিক ধর্মীয় সংগঠনের ইসলাম রক্ষার নামে অঘোষিত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি প্রদানও এ রচনার উদ্দেশ্য নয়। একজন ইসলামপ্রিয় মুসলিম ও ধর্মপ্রাণ সচেতন মানুষ হিসেবে হেফাজত নেতারা আমাদের ধর্মীয় আকি্বদা-বিশ্বাসে ও আবেগ-অনুভূতিতে মারাত্দক আঘাতের মাধ্যমে যে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করেছেন- তার সম্পর্কে সর্বস্তরের নবীপ্রেমিক মুসলিম জনসাধারণকে অবহিতকরণ ও এর প্রতিকার চাওয়াই হলো আমাদের মূল লক্ষ্য।
৬ এপ্রিল হেফাজতের লংমার্চ-পরবর্তী মতিঝিলের জনসমাবেশে সংগঠনের কেন্দ্রীয় মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী বলেছেন- 'আল্লাহ যুগে যুগে কাফের-বেইমানদের শাস্তিদানের জন্য নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন।
নমরুদকে শিক্ষা দেবার জন্য ইব্রাহিম (আ.)কে প্রেরণ করেন, ফেরাউনকে শায়েস্তা করার জন্য পাঠান হজরত মূসা (আ.)কে, মক্কার কাফের-বেইমানদেরকে শিক্ষা দেবার জন্য রাসূল (সা.)কে পাঠিয়েছেন; ঠিক অনুরূপভাবে বর্তমানে বাংলাদেশের নাস্তিক ব্লগার আর ইসলামের দুশমনদেরকে শাস্তি দেবার জন্য আল্লাহ পাক আল্লামা আহমেদ শফীকে পাঠিয়েছেন। ' হেফাজত নেতার এ বক্তব্য মানব ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম মহাপুরুষ হিসেবে স্বীকৃত ও নবী-রাসূলগণের নিষ্পাপ কাফেলার অগ্রদূততুল্য হজরত ইব্রাহিম (আ.) ও হজরত মূসা (আ.)-এর সুউচ্চ মর্যাদা ও অতুলনীয় শানের প্রতি চরম অবমাননা। বিশেষ করে গোটা বিশ্বের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহাপুরুষ, রাহমাতুলি্লল আলামিন, সাইয়েদুল মুরসালিন, খাতামুন্ নাবিয়্যিন হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আযিমুশ্ শানের প্রতি অমার্জনীয় ধৃষ্টতা প্রদর্শন। নামের সঙ্গে আল্লামা, মাওলানা খেতাবধারী এ হেফাজত নেতা তার এ বক্তব্যের মাধ্যমে অশীতিপর বয়োবৃদ্ধ ও দেশের শীর্ষ বুজুর্গ একজন আলেমকে একদিকে যেমন চরম বিতর্কের মধ্যে ফেলে দিয়েছেন অপরদিকে এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মপ্রাণ মুসলিম জনগণের ধর্মীয় অনুভূতিতে মারাত্দক আঘাত দিয়ে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছেন। তার এ বক্তব্য নিঃসন্দেহে খোদাদ্রোহী, অনৈসলামিক ও কুফরির নামান্তর।
নবী-রাসূলগণ পৃথিবীর অধঃপতিত, দুর্দশাগ্রস্ত ও অমুসলিম অধ্যুষিত জনপদে ইসলামের দাওয়াত নিয়ে সত্য-ন্যায়ের মহান আদর্শের পতাকাবাহী হিসেবে আগমন করেছিলেন। ব্যক্তিত্বের জাদুময়িতা, চারিত্রিক দৃঢ়তা, অলৌকিক কারিশমা, মানবিক ঔদার্য্য, ন্যায়-নীতি ও মূল্যবোধ, সমকালীন বাস্তবতা, জ্ঞান-বুদ্ধি ও মেধা-মননের প্রখরতা, ধৈর্য-সংযম ও সহিষ্ণুতার সর্বোচ্চ নজির স্থাপন করে তারা উন্নত জাতিসত্তা ও প্রত্যাশিত মানবসভ্যতার গোড়াপত্তন করেন। তারা মহাসত্যের দিকে হেকমত ও প্রজ্ঞার সঙ্গে মানুষকে আহ্বান করেছেন, ইসলামের সরল-সহজ ও সুন্দর পথের দাওয়াত দিয়েছেন; কাউকে শাস্তি দেওয়ার জন্য, কাউকে শায়েস্তা করার জন্য তারা আসেননি। হেফাজত নেতা নবুয়ত ও রেসালতের মহান দায়িত্ব পালনকারী নবী-রাসূলগণের সঙ্গে মাওলানা আহমেদ শফীকে সমান্তরাল করে দিয়েছেন। নবী-রাসূলগণের আগমন ও উদ্দেশ্য বিবৃত করে তিনি একইভাবে মাওলানা শফীকে টেনে এনে সেসব মহাপুরুষের কাতারে স্থান দিয়েছেন।
তাহলে কি মাওলানা শফীর আগমন নবুয়তের ধারাবাহিকতা? হেফাজতের অন্য সবাই কি তাহলে একই মত পোষণ করেন? কাদিয়ানি সম্প্রদায়ের সঙ্গে হেফাজতের তাহলে পার্থক্য কোথায়? ধর্মতত্ত্ববিদগণ মনে করেন, এ বক্তব্যের মাধ্যমে খতমে নবুয়তকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। কেননা, মানুষ যত বড় হোক না কেন তাকে কখনো পয়গম্বরগণের সঙ্গে তুলনা করা যাবে না। হেফাজত নেতা তাই করলেন আর তা প্রকাশ্য দিবালোকে, স্বজ্ঞানে এবং সুস্থ মস্তিষ্কে। তার এই সাগ্রহ তুলনায় বুঝা যায় নবুয়তের দরজা বন্ধ হয়নি, কারও কারও জন্য এখনো খোলা রয়েছে; মাওলানা আহমেদ শফী তাদেরই একজন (নাউজুবিল্লাহ)। অবশ্য শফী সাহেব এ বিষয়ে কি ভাবেন তা আমাদের বোধগম্য নয়।
তবে হেফাজত নেতার এই কুফরি বক্তব্যের সময় তিনি তো মঞ্চেই ছিলেন। আমরা তাকে কোনো প্রতিবাদ করতে দেখিনি। 'নীরবতা অবলম্বন মানে সম্মতির লক্ষণ' কথাটিকে যদি মানদণ্ড ধরি তাহলে বিষয়টি গিয়ে কোথায় দাঁড়ায়?
বাংলাদেশ হেফাজত নেতাদের ভাষায় কাফের-বেইমান বা ইসলামের দুশমন অধ্যুষিত কোনো জনপদ নয়। এটি অজস্র অলি-আউলিয়া, সুফি-সাধক ও গাউস-কুতুবের পদধুলি বিজরিত ও তাঁদের পবিত্র স্মৃতিধন্য হাজার বছরের একটি ঐতিহ্যিক দেশ। ধর্মভিত্তিক জনসংখ্যার শুমারে এটি শতকরা নব্বই ভাগ মুসলমানের দেশ।
জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সহস্র বছরের এটি এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্তের দেশ। সেই দেশের বুকে দাঁড়িয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনমানুষের ধর্মীয় অনুভূতি ও আকি্বদা-বিশ্বাসের পরিপন্থী বক্তব্য দিয়ে হেফাজত নেতা শুধু ইসলামের বিরুদ্ধেই যে অবস্থান নিলেন তাই নয়; তার এ অপরাধ রাষ্ট্রদ্রোহিতার পর্যায়েও পড়ে। তাই আমাদের সুস্পষ্ট দাবি- নবী-রাসূলগণের অবমাননাকারী ও ইসলামকে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীগত স্বার্থে ব্যবহারকারী এসব চিহ্নিত ব্যক্তিকে অবিলম্বে দেশের প্রচলিত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। ধর্মীয় উসকানি দিয়ে মুসলমানদের মাঝে উন্মাদনা সৃষ্টির মাধ্যমে একটি মুসলিম রাষ্ট্রের শান্তি বিনষ্টের অপচেষ্টায় মেতে ওঠা ও স্থীতিশীলতা নষ্ট করা- কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আর যদি তা ধর্মের মোড়কে, ইসলামের নামে বা ইসলাম রক্ষার নামে করা হয় তাহলে তা হবে আরও চরম গর্হিত অপরাধ।
সম্প্রতি বাংলাদেশে হেফাজতে ইসলামের কর্মকাণ্ডে আপামর জনগণ ইসলাম সম্পর্কে ভুল বার্তা পেতে শুরু করেছেন। ইসলামের নামে মাতৃত্ব ও সম্মানের প্রতীক নারীর ওপর আঘাত, গণমাধ্যমকর্মীদের নির্যাতন, অবাস্তব দাবিনামা, সংঘাত-সংঘর্ষে জড়ানো, ধর্মীয় লেবাসে প্রতিপক্ষের দিকে অগি্নমূর্তি ধারণ, সংবাদ সম্মেলনে ও বক্তব্যে অবাধে মিথ্যা তথ্য পরিবেশন, নির্বিচারে-ঢালাওভাবে মানুষকে নাস্তিক-মুরতাদ ঘোষণা- সর্বোপরি শারীরিকভাবে একজন বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তিকে নবী-রাসূলগণের সঙ্গে তুলনা করে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে খতমে নবুয়তের মতো ইসলামের খুবই স্পর্শকাতর আকি্বদা-বিশ্বাসকে প্রশ্নবিদ্ধ করার মাধ্যমে হেফাজতে ইসলাম এ দেশে শান্তির ইসলামকে বিতাড়নের ঘৃণ্য অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। তাই শান্তিপ্রিয় সব মানুষকে দেশ, জাতি ও ইসলামের বৃহত্তর স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। হেফাজতে ইসলামের রুক্ষ্মমূর্তিতে বিভ্রান্ত না হয়ে ইসলামের প্রকৃত, শাশ্বত, চিরন্তন ও সর্বমানবিক রূপ পরিগ্রহের মাধ্যমে আমাদের সমাজজীবনে কাঙ্ক্ষিত শান্তি, প্রগতি ও সমৃদ্ধি আনয়নে অবদান রাখতে সবার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাই।
লেখকদ্বয় : র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী
সংসদ সদস্য, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩, সম্পাদক, মত ও পথ
ই-মেইল :
ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন ,সহযোগী অধ্যাপক, ফারসি
ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
ই-মেইল : ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।