আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিমাই সমাচার

একদা একদিন নিমাই আসিয়া কহিল, তাহার উদরে ভীষণ গণ্ডগোল দেখা দিয়াছে। এতে করিয়া সে অনুভব করিতে লাগিল, তাহার বাম হস্তখানি ক্রমশ কার্যক্ষমতা হারাইয়া ফেলিতেছে। অগত্যা উপায়ান্তর না দেখিয়া নিমাই চিকিৎসকের নিকট ব্যামো সারিবার নিমিত্তে শরণাপন্ন হইল। চিকিৎসক তাহাকে সর্ব প্রকার পরীক্ষণ নিরীক্ষণ করিয়া, ব্যামোর কারন অনুসন্ধানে ব্যার্থ হইয়া, পরিশেষে এক বোর্ড মিটিং আয়োজন করিলেন। উক্ত বোর্ড মিটিং এ- সকল চিকিৎসক এই মর্মে উপনীত হইলেন যে, নিমাই এক জটিল ও কঠিন রোগে ভুগিতেছে, অদ্যাবধি এই রোগ অনাবিষ্কৃতই রহিয়া গিয়াছে, তাই চিকিৎসকগণ এই রোগ এবং রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি, তদুপরি রোগ মুক্তির পথ্য আবিস্কারের নেশায় দেশ থেকে দেশান্তরে এই খবর পৌঁছাইয়া দিলেন।

এই দিকে নিমাইকে লইয়া শুধু তাহার নিজ এলাকা নহে বরং জাতীয় এমনকি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভীষণ হইচই পড়িয়া গেলো। অন্যদিকে নিমাইয়ের বিধবা মা নির্মলা দেবী, তাঁহার পুত্রের এমন দুরবস্থা দেখিয়া ক্রমশয় চিন্তিত হইয়া পড়িলেন, তিনি ভাবিয়া কূল করিতে পারিলেন না, নিমাইকে লইয়া কোন বনে যাইবেন। নিমাই দিনের পর দিন আরও অসুস্থ হইয়া পড়িল, সে আর আগের মত বনে বাদাড়ে, জলে জঙ্গলে, দিন কিংবা রাতে দাপ্রাইয়া বেড়াইতে সম্পূর্ণ রুপে অসমর্থ হইয়া পড়িল। তাঁহার কার্যক্ষমতা ধীরে ধীরে ক্ষীণ হইতে লাগিল। অন্যদিকে চিকিৎসকগণ তাঁহার রোগ মুক্তির প্রাথমিক পথ্য হিসেবে তাহাঁকে টানা এক হপ্তাহ সূর্যোদয় হইতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত, প্রখর সূর্যের নিচে অর্ধ উলঙ্গ অবস্থায় চিৎ হইয়া শুইয়া জলপট্টি দিতে বলিলেন, আর পথ্য হিসেবে রোজ দুবেলা করে ফাইজলামিম্লক্স (১০০০ এম জি), জল ছাড়াই গিলিয়া খাইবার নির্দেশ দিলেন, সাথে দৈনন্দিন খাবারের তালিকা পরিবর্তন করিয়া তাহাতে কেবল জাউ ভাত সাথে কচুর ঝোল, বেশি করিয়া মরিচ দিয়া খাইতে বলিলেন।

এমতাবস্থায় আন্তর্জাতিক মহল, নিমাইয়ের রোগ মুক্তির নিমিত্তে, দেশীয় চিকিৎসকগণকে আরও ভালো করিয়া পরীক্ষণের সহায়তা হিসেবে- আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করিতে লাগিলেন। নিমাই এবং তাঁহার পরিবারের এমন দুরবস্থা দেখিয়া অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সহযোগিতার হাত বাড়াইয়া দিলো, তবে সুদের হার নির্ধারণ করিল অতি উচ্চ মাত্রায়। অনেকটা জোর করিয়া এই সহযোগিতা গ্রহনে নিমাই ও তার পরিবারকে এক প্রকার বাধ্য করা হইল। এভাবে কিছুকাল কাটিবার পরে দেশীয় চিকিৎসকগণ, নিমাইয়ের রোগ মুক্তি না হইবার কারনে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং দেশীয় বিরোধীদলের চাপের মুখে কোণঠাসা হইয়া পড়িল। এই লইয়া দেশে দাঙ্গা হাঙ্গামা বাঁধিয়া গেলো, বিরোধীগণ হরতাল, অবরোধ, মিছিল, মিটিং, লংমার্চ সহ আরও নানান কর্মসূচি করিয়া বেড়াইতে লাগিল।

বিরোধীদের এমন আচরনে দেশে এক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজমান হইল, এই রুপ পরিস্থিতি দমনে চিকিৎসকগণ হামলা মামলা তদুপরি নিজেদের লাঠিয়াল বাহিনী লইয়া, বিরোধীদের উপর ঝাঁপাইয়া পড়িল। অপরদিকে নিমাই ও তাঁহার মাতা নির্মলা দেবী সামগ্রিক পরিস্থিতিতে ভীষণ বিচলিত, চিন্তিত এবং অসহায় হইয়া পড়িলেন, একে তো নির্মলা দেবী পুত্রের চিকিৎসার খরচ জোগাইতে হিমশিম খাইয়া পড়িতেছিলেন অন্যদিকে নিমাইকে লইয়া চলমান জটিলতায় দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে তাঁহার জীবনের নাভিশ্বাস চরমে উঠিয়া পরিল। চিকিৎসকগণ হপ্তাহের পর হপ্তাহ নানান কায়দায় চিকিৎসা পদ্ধতি পরিবর্তন করিয়া নিমাইয়ের উপর পরীক্ষণ করিতে লাগিলেন, এদিকে নিমাইয়ের রোগ নানা বৈচিত্র্যে তাঁহার শরীরে হানা দিতে লাগিল, চিকিৎসকগণ যখন কহিলেন, তাঁহার যে কোনও মুহূর্তে শরীরের নানান অংশে সমস্যা দেখা যাইতে পারে, ঠিক তখনই নিমাই অনুভব করিতে লাগিল, তাঁহার ডান চরণ খানি কেমন যেন অসাড় হইয়া পড়িয়াছে, শুধু কি তাই- এখন সে চোখেও ঝাপসা দেখিতে শুরু করিয়াছে, তাঁহার মস্তক খানাও আগের মত কাজ করিতেছেনা। নিমাইকে লইয়া চলমান অস্থিরতা এমন পর্যায়ে পৌঁছাইয়া গেলো যে, লাগামহীন খুন, গুম ও নানাবিধ অত্যাচার বাড়িয়া যাইতে লাগিল। কতিপয় সমাজ সেবক ও বুদ্ধিজীবী মহল নিমাই সংকটে ভীষণ উদ্বেগ প্রকাশ করিলেন, তাঁহারা ইহাকে এক কঠিন সংকটময় ঘোর অন্ধকার কাল বলিয়া অভিহিত করিলেন, নিমাইয়ের এই মহা ব্যাধিতে তাঁহারা আবিস্কার করিলেন এবং ভীষণভাবে উপলব্ধি করিলেন যে, এই মুহূর্তে নিমাইয়ের নারী সঙ্গের বড্ড প্রয়োজন, এদের মধ্যে কেও কেও আলোচনা সভা, সেমিনার, এমন কি মৌন মিছিল ও মানববন্ধন করিয়া নিমাইয়ের রোগমুক্তি লইয়া উঠিয়া পড়িয়া লাগিলেন।

তাহাদের ধারনা যে কোন মুহূর্তে, নিমাইয়ের পৌরুষ শরীরের নিচ হইতে ক্রমশ মাথায় উঠিয়া যাইতে পারে, এতে করিয়া নিমাই যে কোন দিন হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হইয়া পরপারে স্থায়ী বসত গড়িতে পারে। নিমাই এবং নির্মলা দেবী এমন অস্থির পরিস্থিতিতে বড্ড বিচলিত হইয়া পড়িলেন, তাঁহারা দিশকুল হারাইয়া এক অদ্ভুত সময়ের মধ্য দিয়া দিন যাপন করিতে লাগিলেন। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় চিকিৎসকগণের সাথে এক নতুন চুক্তিতে আবদ্ধ হইলেন, যেখানে তাঁহারা অর্থ সহযোগিতার বিপরীতে নিমাইয়ের সুচিকিৎসার নিমিত্তে তাঁহার শরীর হতে যকৃত ও বৃক্ক লইয়া পরীক্ষা নিরীক্ষা করিবেন, শুধু তাই নয়- এই অমূল্য এবং অতি মানবীয় শরীরের অংশ সমুহ; বিদেশী লোকেদের প্রদর্শনের জন্য এক প্রদর্শনীরও আয়োজন করিবেন। এই লইয়া আবার নতুন করিয়া দেশে অশান্তি সৃষ্টি হইল। এরই মধ্যে কিছু ভেষজ কবিরাজ, হোমিও, বৈদ্য ও টোটকা চিকিৎসক নিমাইয়ের চিকিৎসা করিবার জন্য বিরোধীদের সাথে মহাজোট তৈরি করিয়া এক মহা আন্দোলন শুরু করিয়া দিলো।

এদিকে নিমাই ও নির্মলা দেবী নিজেদের স্বীয় অস্তিত্ব টিকাইয়া রাখিবার লক্ষে প্রভুদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হইতে লাগিলেন। তাহাদের এ ছাড়া আর কোন গতি নাই বলিয়া তাঁহারা ধরিয়া লইলেন। এভাবেই নিমাই নাছোড়বান্দা দুষ্ট রোগ লইয়া আর নির্মলা দেবী অতি দুঃখ কষ্ট সহ্য করিয়া বছরের পর বছর বাঁচিয়া রহিলেন। প্রায় প্রতিরাতেই নিমাই ও নির্মলা দেবীর ঘুম ভাঙ্গিয়া যায় এক অদ্ভুত স্বপ্ন দেখিয়া, যেখানে এক দেবতা- স্বর্গ থেকে নামিয়া আসিয়া, জিয়ন কাঠির ছোঁয়ায় নিমাইকে রোগ আর নির্মলা দেবীকে অসহনীয় যন্ত্রণা ও অর্থ কষ্ট হইতে মুক্তি দিয়া যায়। সবাই যখন নিমাই ও নির্মলা দেবীর বেঁচে থাকার রহস্য জানিতে ব্যাকুল হইয়া সংবাদ খুঁজিয়া ফেরে, তখন চার নয়নে মিশে থাকা স্বপ্নটাই নিমাই ও নির্মলা দেবীর বেঁচে থাকার নিয়মিত প্রয়াস যোগাইয়া চলে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।