কেবলই নিজেকে খুঁজছি
শীতের দিনে জমাট বাঁধা মটর ডাল যেমনি
রোদে ছড়িয়ে দেওয়া হয় রন্ধন উপযোগী করার জন্য,
তেমনি আমরা গুটিকয়েক মটর-মটরী
খেঁজুরপাতার পাটিতে ছড়িয়ে থাকতাম উঠোনময়
নিমাই দাদুর পাঠশালায়।
শীতের সকালে কুয়াশা ভেঙে ছুটে যেতাম
মুড়ি আর খেঁজুর রসের পাটালী খেয়ে।
কোন দিন থাকতো পিঠা অথবা এক বাটি পায়েস,
পাটি পেতে বসে যেতাম পিঠ ঠেকিযে
আড়মোড়া ভাঙা সূর্যের দিকে।
নিমাই দাদুর বাসি কাজে বেশ দেরি হতো
এজন্য মাঝে মাঝেই খেতেন গিন্নীর বকুনী
ততক্ষনে সেরে নিতাম বাড়ির কাজের বাকী অংশ,
তারপর শুরু হতো আমাদের খুনসুটি
আর কাঁচা কাঁচা মুখে পাকা পাকা বুলি।
অতঃপর নিমাই দাদু এসে বসতেন
লুঙ্গির মতো করে পড়তেন ধুতি।
গায়ে একটা পুরনো চাদর থাকতো জড়ানো,
মুখ ভর্তি খোঁচা খোঁচা পাকা দাঁড়ি
শুরু হতো হাতের লেখার প্রদর্শনী।
তারপর পরপর চলতো বাংলা, অংক, ইংরেজী
এরই ফাঁকে ফাঁকে চলতো দুষ্টুমী।
পাড়ায় দুষ্টুছেলে বলে আমার ছিল বিশেষ পরিচিতি,
তাছাড়া পড়ায় উতরে যেতাম বলে
সাতখুন মাফ জুটে যেতো কপালে।
কদাচিৎ আমারও পড়া ভুল হতো
তখন খেতে হতো কানমলা
অবশ্য মাঝে মাঝে অলিখিত চুক্তি হতো
কান যখন নিজেদেরই তবে কেন আর ব্যথা করা
একে অপরকে জোরে না মললেই হলো।
প্রায়ই চুক্তি ভেঙে যেতো অথবা পড়তো দাদুর চোখে
তখন খেতে হতো বেতের বাড়ি হাত পেতে।
কতবার শব্দার্থে আর নামতায় হারিয়ে
টুনটুনির কান মলে লাল করেছি।
বেচারী টুনটুনি! শুনেছি লেখাপড়া বেশিদূর এগোয়নি
কোথায় যেন করছে সংসার
আর আমি রাত জেগে কবিতা লিখে সময় করছি পার।
নিমাই দাদুর গিন্নী আমায় 'উলা' বলে ডাকতেন
'উলা' হলো 'হুলা'র গিন্নীয় ভাষা
তো আমাকে 'উলা' বলে ডেকে
মাঝে মাঝে এটা ওটা দিতেন খেতে
আর ফেরার পথে গাছের পেয়ারা ঢুকতো পকেটে।
হারিয়ে গেছে নিমাই দাদুর পাঠশালা
কেবল রয়ে গেছে স্মৃতির পাতায়।
সেই উঠোনে ছড়ানো মটর-মটরীগুলো
এখন ছড়িয়ে আছে মানচিত্রের পাতায়।
কিন্তু কেউ খোঁজ নেয়, কেমন আছে নিমাই দাদু?
আমিও কি নিই সবসময়?
আজ বয়স হয়েছে নিমাই দাদুর
তবু তেমনি আছে, তেমনি রসিক
তেমনই সংসারভোলা, আত্নভোলা
একজন সরলপ্রাণ মানুষ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।