কাপুরুষের শেষ আশ্রয় হল দেশপ্রেম প্রিয় লেখক ও নাট্যকার হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পরপরই পবিত্র রমযান মাস শুরু হয়ে যায়। অনেক ইচ্ছা থাকার সত্ত্বেও প্রয়াত এই মানুষটিকে শ্রদ্ধা জানাতে নুহাশ পল্লীতে যাওয়া হয়নি। ঠিক করে রেখেছিলাম, ঈদের পরপরই স্ত্রী-পুত্রকে নিয়ে একবার নুহাশ পল্লীতে যাব। ঐ সময় ঢাকা শহর ফাঁকা হয়ে যাবে, এমনকি অন্যেরাও ব্যস্ত থাকবে বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে বা টিভির সামনে, ফলে নুহাশ পল্লীতে নিরিবিলি পরিবেশ পাওয়া যাবে- এমনটিই ছিল কল্পনা।
কিন্তু আমি যে ষোল কোটি মানুষের বাইরে নই কিংবা বলা যায় ষোল কোটি বাঙ্গালীর চিন্তাভাবনা প্রায় একইরকম, তার প্রমাণ পেলাম গতকাল নুহাশ পল্লীর উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে হোতাপাড়া সড়কে ঢোকার মুহূর্তেই।
চিরচেনা এই রাস্তায় যানবাহন সংখ্যা একেবারেই কম থাকে জানতাম। কিন্তু গতকাল দেখি, রাস্তার উভয় পাশে শুধু গাড়ি আর গাড়ি। বুঝতে অসুবিধা হল না, সব গাড়ির গন্তব্য ছিল একই- নুহাশ পল্লী!
পিরুজালী-হোতাপাড়া সড়ক মনে হল ঢাকার শাহবাগ। যাহোক, পনের মিনিটের রাস্তা ভিড় ঠেলে এক ঘন্টায় শেষ করে যখন পৌঁছলাম, দেখি রাস্তার দুপাশে শত শত গাড়ি পার্কিং করে রাখা। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা মেয়েদের, বৃষ্টিস্নাত লালমাটির রাস্তার প্যাঁচপ্যাঁচে কাঁদায় বেশিরভাগের জুতা পায়ে নয়- হাতে!
কথার চেয়ে ছবিতেই যা বোঝার বুঝে নিতে পারবেন সবাই-
গতকালও কেউ একজন নুহাশ পল্লীর ছবি ব্লগে পোস্ট করেছিলেন।
ঐ ব্লগারের মন্তব্য ছিল, এজন্যই হুমায়ূন আহমেদ নুহাশ পল্লীতে তাঁর কবর হোক সেটা চাননি। কিন্তু আমি বিষয়টি দেখি ঠিক উল্টোভাবে। জ্ঞান হওয়ার পর বাংলাদেশে আজ পর্যন্ত কোন মানুষের মৃত্যুতে এত মানুষের শোক ও ভালবাসার প্রকাশ দেখিনি। এই যে হাজার হাজার মানুষ নুহাশ পল্লীতে যাচ্ছে শুধু লেখককের কবর দেখতে তা নয়- তাঁর নিজ হাতে সৃষ্টি নুহাশ পল্লীর সৌন্দর্য দেখতেও। এদের মধ্যে বেশিরভাগই জীবনে প্রথম ও শেষবার নুহাশ পল্লীতে যাচ্ছেন- কিন্তু তাদের স্মৃতিতে হুমায়ূন আহমেদ ও নুহাশ পল্লী অঙ্গাঅঙ্গিভাবে থেকে যাবে আজীবন।
নুহাশ পল্লী জোছনাপাগল হুমায়ূন আহমেদের মতই তাদের কল্পনায় জ্বলজ্বল করবে যতদিন বেঁচে থাকবেন!
নুহাশ পল্লীর ক্ষতিটুকু সাময়িক- কিন্তু তার রেশ থেকে যাক চিরকাল সবার হৃদয়ে! সবাইকে শুভরাত্রি। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।