আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শিখন্ডী (গল্প)

inside you're ugly ugly like me ১ মেসের চৌকিটার এককোণে ভ্যাবদা মেরে বসে আছে শুভ। হাতে একটি জ্বলন্ত সিগারেট, গত এক ঘন্টায় এইটা নবম সিগারেট। ভার্সিটিতে উঠে সিগারেট ধরলেও কাউকে এইটা বুঝতে দিতে নারাজ, কারন ইগো। তার মাথায় এখন ঘুরছে কিছুক্ষন আগে মিঠুর দেয়া কুটবুদ্ধিখানা। মিঠুদের এই মেসটায় শুভ উঠেছে মোটে দুইমাস।

ম্যানেজারের দায়িত্ব নিতে না পারায় গত দুইটা মাস তার খুব কষ্ট করে চলতে হচ্ছে। এই সময় এমন একটা যুগান্তকারী ভাবনা তার মাথায় না এসে মিঠুর মাথায় কেন আসল ভেবে চুল ছিরতে ইচ্ছা করছিল তার। মিঠু বেশকিছুক্ষন ধরেই তাগাদা দিচ্ছে, একটা ডিসিশান দে এত চিন্তার কি আছে? তুই হা বললে আমরা আজকেই একটা প্লান ফাইনাল করতে পারি। আমার ভয় লাগতাছেরে, বলল শুভ। আরে বেকুব এত ভয়ের কি আছে? ওই মেসে তুই আগে থাকতি, এখন একদিন গেলে কেউ কিছু মনে করব না।

আর ঐ এলাকার অলিগলিও তুই ভাল চিনস। আর পুরা রিস্ক তো বললামই, আমার। কথাগুলো একনাগারে বলে গেল মিঠু। শুভ নিমরাজী হয়েই ছিল কিন্তু কিছুক্ষন অভিনয়ের পরে বলল, ওকে ডান। ২ বন্ধের দিন।

বিকেলে রুমে বসে একটা সিনেমা দেখছিল রনক আর পুলক। এইসময় শুভ এসে হাজির পুলকদের মেসে। কিরে এতদিন পরে? রাস্তা ভুল করে চলে এলি নাকি? ঈষত্ ক্ষোভের সুরে বলল পুলক। মেসে থাকার সময় শুভর বেশিরভাগ সময়ই কাটত পুলকের সাথে। তাই এমন আহ্লাদি সম্ভাষন।

শুভ বলল নারে দোস্ত একটু দৌড়ের উপরে আছি, বলতে বলতেই টেবিলের সাথে লাগোয়া চেয়ারটায় বসল। দুই বন্ধুতে আলাপ চলল বেশ অনেকটা সময়। অনেক বিষয় আলোচনার মাঝখানেই পুলকের চাবির রিংটা নিয়ে নাড়াচাড়া করছিল শুভ। বেশকিছুক্ষন আড্ডা মেরে আধা প্যাকেট বিড়ি শেষ করে আড্ডার বিরতি দিল উভয়েই। সন্ধ্যার পরপরই বেরিয়ে গেল শুভ।

নিজের মেসের দিকে রওয়ানা দিলো। রনক বা পুলক কেউই খেয়াল করতে পারলনা তাদের রুমের দরজার চাবির কপিটা রিং এ নেই। ৩ পুলকদের মেসের কাছাকাছি একটা টং দোকানে বসে চা খাচ্ছিল মিঠু। অপেক্ষা করছিল শুভর জন্য। শুভ হাটছিল আর ভাবছিল এইতো কয়েকটা মাস আগেই এই মেসটা, মেসের এই এলাকাটা তার কত আপন মনে হত।

আজ কেন জানি অদ্ভূত রকমের অপরিচিত লাগছে গোটা এলাকা। দ্রুতপায়ে পার হয়ে এল মেসের গলিটা। বড় দিঘীটার পাশের রাস্তায় উঠেই দোকানের সামনের বেঞ্চিতে দেখতে পেল মিঠুকে। শুভর মুখের হাসিই সব বলে দিল মিঠুকে। আজ রাতে একটা লম্বা ঘুম দিতে হবে, কারন কাল সকালে অনেক কাজ।

মনে মনে ঠিক করে নিল মিঠু। কারন বাকী কাজটা যে তাকেই করতে হবে। অবশেষঃপরদিন দুপুরে ভার্সিটি থেকে ফিরে এসে পুলক আর রনক দরজা খুলে দেখল, তাদের ল্যাপটপ দুটি টেবিলের উপর নেই। দরজা বাইরে থেকে তালা মারা, তিনতলার জানালার থাই গ্লাসটাও ভেতর থেকে আটকানো। একে অন্যের দিকে অর্থহীন তাকিয়ে থাকল।

৪ রনক আর পুলক হঠাত্‍ করেই এই ঘটনায় পুরাপুরিই হতবাক। তারা দুইজন সাথেসাথেই ফোন করে তাদের মেসের বাকী সদস্যদের। ফোন পেয়ে মেসের বাকী সদস্যরা সঙ্গে সঙ্গেই রওয়ানা দেয় মেসের উদ্দেশ্যে। পথিমধ্যেই তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে থাকে কে বা কারা ল্যাপটপ চুরি করতে পারে। একজন হঠাত্‍ করেই মজার বশেই শুভর নাম প্রস্তাব করে বসে।

কিন্তু পরক্ষনেই সে নিজেকে সামলিয়ে নেয়, বলে না না এ কি করে সম্ভব? ও আমাদের সাথে এতদিন থেকেছে, ও এইকাজ করার সম্ভাবনা নাইই। এরপর আর কারো মধ্যেই তেমন কোন কথা হয় না। শহরে নেমেই একজন প্রস্তাব দিল, ল্যাপটপ চুরি হলে তো পিসির কোন দোকানেই বিক্রি করতে নিয়া আসবে, চল আমরা দোকানগুলাতে একটা ঢু মাইরা যাই। যেই কথা সেই কাজ, অনুন্নত জেলা শহর বলে দোকান ও অল্প কয়েকটা। কিছুক্ষনের মধ্যেই সবগুলা দোকানে খবর দেয়া হয়ে গেল।

৫ মেসে পৌছেই দেখা গেল রনকের উত্‍ছন্নের মত চেহারা। আহারে বেচারার নতুন মালডা গেলগা। বাসায় পৌছে দেখা গেল বাকী চারটা রুমেই তালা মারা। কোন ক্ষয়ক্ষতির লেশমাত্র নেই। কোন কালবিলম্ব না করেই সব মেসমেটরা মিলে চিন্তা করতে থাকল কি করা যায়? কে চুরি করল? সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রনকের আব্বাকে ফোন করে ব্যাপারটা জানানো হল।

ও হ্যা রনকের বাবা পুলিশ অফিসার। তিনি সাথে সাথেই সুধারাম থানার এস আইকে ফোন করে জানিয়ে দিয়ে বললেন একটা ব্যাবস্থা করতে। ঐ রাতেই এস আই সাহেব মেসে আসল, শুরু হল জেরা। রনক উনাকে বলে দিল আগেরদিন শুভর মেসে আসার ঘটনা এবং চাবি নিয়ে খেলাধূলার ঘটনা ৬ সিনেমায় যে রকম দেখা যায় পুলিশ সাহেবরা মুখ গোমরা করে বলেন আই সি, এরকম কিছুই দেখা গেল না। এস আই সাহেব কিছুক্ষন চুপ করে থেকে রনককে উদ্দেশ্য করে বললেন আমি তোমাকে কাল ফোন করব তুমি থানায় চলে আসবা।

এই বলে তিনি চলে গেলেন। এরপরদিন যথারীতি এস আই সাহেব রনককে নিয়ে চলে গেলেন শুভ ও মিঠুদের মেসে। শুভকে ডেকে নিয়ে গিয়ে বললেন কাল সন্ধ্যার মধ্যে মাল থানায় গিয়া দিয়া আসবি, কেউ জানবে না। অবশেষের পরেঃ বিকালবেলা রনক হাসি হাসি মুখে এসে বলল "ভাই জিনিস লইয়া আইলাম" (রনক, পুলক ও শুভ প্রায় বছরখানিক একই মেসে থাকত। ) অনেক আগে লেখা একটা গল্প কিন্তু একসাথে সবগুলো অংশ ছিলনা।

গল্প পাঠক ও বোদ্ধাদের মন্তব্য চাচ্ছি। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।