আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

”শিখন্ডী কথা” অমোঘ সত্যের অবজ্ঞাভরা নাম

রহস্যময় গ্যালাক্সি ঘুরে, অসীম আকাশে উড়ে আর সাগরের অতল গভীরে ডুবে আমৃত্যু পান করতে চাই ভালোবাসার অমৃত সুধা... বাজার ভর্তি মানুষ৤ গাজীপুরের হোতাপাড়ার ছোট্ট একটি বাজার৤ মাঝে মাঝে ভীড় ঠেলে ব্যাটারী চালিত রিক্সা কচ্ছপের মতো এগিয়ে যাচ্ছে৤ এতো লোকসমাগম হয়েছে যে একটু বেমানান ঠেকছিল৤ কারন, মাছের বাজারে হঠাৎ কি হলো যে ঘন হয়ে উঠল মানুষের জটলা? আগ বাড়লাম৤ দেখলাম এক দঙ্গল হিজড়া৤ তবে একটু ব্যতিক্রম মনে হলো৤ সাধারন হিজড়াদের চেয়ে সাজুগুজুটা একটু বেশিই মনে হলো৤ গলায় ঢোল, পরিপাটী সুন্দর লম্বা চুল, নতুন শাড়ী পরিহীত এই হিজড়ারা মাছ কিনছেন৤ এটা তো স্বাভাবিক ঘটনা৤ তবে এতো বড় জটলা কেন? যখন দেখলাম দূরে কাঁধে ক্যামেরা নিয়ে কেউ একজন ভিডিও করছেন, এছাড়া হিজাড়ারা একই ঘটনা বার বার করছেন তখন বুঝতে পারলাম যে অভিনয় করা হচ্ছে৤ ভীষণ আগ্রহ জাগলো মনে৤ বাস্তবে আমি হিজড়াদের দেখলে এড়িয়ে যাই৤ কিন্তু এক্ষেত্রে এগিয়ে গেলাম শ্যূটিং দেখার জন্য৤ সিকোয়েন্স ভালোই ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করলো এই অভিনেতা-অভিনেত্রী হিজড়ারা৤ এই এ্যাক্টিং হিজড়াদের দেখে সত্যিকার বাস্তব হিজড়ারা এসে হাজির৤ এরা মনে করেছে আমাদের রাজ্যে নতুন এরা আবার কারা? প্রায় ১০/১২ জন হিজড়া সাদামাটা পোশাকে চলে এসেছেন৤ মারমূখী অবস্থা৤ শ্যূটিং-এর কথা শুনে শান্ত হলো৤ এবার বাড়তি সাপোর্টও দেয়া শুরু করলো নতুন এই এ্যাক্টিং হিজড়াদেরকে৤ “বেলা হিজড়া” ক্যারেক্টারে অভিনয় করছেন এমন একজনের সাথে শ্যূটিং-এর ফাঁকে কথা হলো৤ বললাম, সব সময় আপনি কাঁধে ঢোল নিয়ে থাকেন আর তোলা (টাকা) তোলার সময় বাজাতে থাকেন৤ এটাই আপনার অভিনয়ের অংশ? বলল, ঠিক ধরেছেন৤ এখানে প্রায় ৮/৯ জন ছেলে, হিজড়া ক্যারেক্টারে অভিনয় করছি৤ এই ৮/৯ জনের ৮/৯ রকমের বাতিক৤ একেক হিজড়া একেক রকম থাকতে পছন্দ করে৤ প্রত্যেকটি চরিত্রের এককভাবে একটি করে কষ্টের কাহিনী আছে৤ ”শিখন্ডী কথা” নাটকটির মাধ্যমে তা স্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে৤ হিজড়াদের আমরা এড়িয়ে চলি৤ এদের নিয়তি এদেরকে এমন এক ধরনের মানুষ হিসেবে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন, এর জন্য সৃষ্টিকর্তাই দায়ী৤ অথচ এই বাস্তবতাটা মানুষ বুঝতে চায় না৤ হিজড়াদের অবজ্ঞা করে৤ দূরে ঠেলে দেয়৤ তিরস্কার করে৤ অপমান করে৤ সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখে৤ স্বাভাবিক কোনো রকম সুযোগ সুবিধা এরা পায় না৤ সমাজের চরম ঘৃণার পাত্র এরা৤ এই নাটকটির মাধ্যমে প্রত্যেকটি হিজড়ার জীবন কাহিনী তুলে ধরা হবে নিখুঁত ভাবে৤ বেলা হিজড়া মূলত দু’টি স্বত্ত্বা নিয়ে বেড়ে ওঠে৤ এক হচ্ছে সে একজন পুরুষ তাই সে গান করে, ঢোল বাজায়৤ আবার অপর দিকে সে একজন নারীও বটে কারন সে নাচে, শাড়ী পরে, সুন্দর করে সাজতে পছন্দ করে৤ নাটকটির প্রায় প্রত্যেক পরতে পরতে গান বাজনা করার বিষয়টি থাকছে৤ গান বাজনা করেই হিজড়ারা বিভিন্ন বাজার ঘাট মহল্লা থেকে টাকা তুলে থাকে৤ দর্শকদের এই নাটকটি অনেক ভালো লাগবে নিঃসন্দেহে৤ কারন হিজড়াদের অপ্রত্যাশিত কিছু বাস্তব কাজকর্ম যা হিজড়াদের অবজ্ঞার পাত্র করে, তা দেখানো হবে, আবার তাদের কষ্টবোধগুলো চরম ভাবে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা কেরা হবে৤ সমাজের এই সত্যটাকে সবার নজরে আনার জন্য পরিচালক শহীদ রায়হান চেষ্টা করে যাচ্ছেন প্রাণপনে৤ এটিএন বাংলায় এই ধারাবাহিক নাটকটির ১ম পর্ব প্রচার হবে আগামী ০২ ডিসেম্বর ২০১১ শুক্রবার রাত ১১টা ১৫ মিনিটে৤ চোখ মুছতে মুছতে আমি কখন তাদেরকে ছেড়ে আমার দোকানে এসে বসেছি জানিনা৤ শুধু এতোটুকু বলতে পারবো এই নাটকটি আমি দেখার চেষ্টা করবো৤

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।