কলম চালাই ,এইগুলো লেখার পর্যায়ে পরে কি না তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে :) ব্লগের বয়স বছরের উপরে দেখালেও নিয়মিত লিখছি ১৭ আগস্ট ২০১২ থেকে :)
এক.
চেম্বারে বসে আছে জুবায়ের । শান্ত চেহারা । কিন্তু চোখের দিকে তাকালে বুঝা যাবে , অস্থির সে । হাতের দামি ঘড়িটার দিকে তাকাল । রাত দশটা বাজতে এখনও পাঁচ মিনিট বাকি আছে ।
সময় এতো ধীরে যাচ্ছে কেন ? সেকেন্ডের কাঁটাগুলো যেন অনেকক্ষণ পর পর লাফ দিচ্ছে । যেন অলস –ক্লান্ত । দুর্বল দেহ নিয়ে লাফিয়ে যাচ্ছে একের পর এক ঘর । অনিচ্ছায় ।
লোকে বলে পাগলের ডাক্তার ।
বিজ্ঞানের ভাষায় সাইকোলোজিস্ট । জী ! জুবায়ের একজন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ । স্বনামধন্য । শান্তিনগরে তার বহুতল ভবনে অফিস । এমনকি তার ব্যাক্তিগত সহকারীও আছে ! তবে জুবায়ের একজন কাউন্সিলিং সাইকোলোজিস্ট ।
এপিএ(আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল এ্যাসোসিয়েশন ) এর মতে ছাপ্পান ধরনের সাইকোলোজিস্ট আছে পৃথিবীতে ।
জুবায়ের তার শেষ ক্লায়েন্টের জন্য অপেক্ষা করছে ।
রোগী বলেন না । ক্লায়েন্ট বলাটা অনেকটা স্বস্তিজনক । পি এস কে ছুটি দিয়ে দিয়েছেন সেই ন’টার সময়ই ।
তিনি চান না এই সময়টা সে থাকুক । না । আসলে তার ক্লায়েন্টই বিষয়টা চান না । মেনে নিয়েছেন জুবায়ের । প্রথম কারণ , পাগলে কত কিছুই না চায় ! পাগল ভালো করতে হলে , তারা যা চায় তা শোনাই উত্তম ।
দ্বিতীয় এবং প্রধান কারণ , তারও ভালো লাগে সময়টা একান্তে কাটাতে – একান্তই তার ক্লায়েন্টের সাথে ।
------------------------------------------------------------------
মেয়েটা হাত পা ছুঁড়ছে । তার পায়ের আঘাতে ব্যথায় কাতরে উঠলো কেউ একজন । গালি দিল । কয়েকজন মিলে তাঁকে বিছানার সাথে চেপে ধরে রাখল ।
প্রাণপণ চেষ্টা করেও মেয়েটা একচুলও নড়তে পারল না । পাশবিক শক্তিতে যেন তাঁকে ধরে রেখেছে কিছু পশু ! পাশবিক তাদের হাসি । লিপ্সা ! কুকুরের মত মুখ হা করে আছে তারা । লালাভ জিহবা । এতো মানুষের চাপে প্রতিবাদ করে উঠলো সস্তা দরের কাঠের খাটটি ।
মেয়েটির আলু-থালু চুল চোখ মুখ ঢেকে রেখেছে । তার মাঝ দিয়ে দেখা যাচ্ছে তার কাতর চোখ দুটি । অনুনয়ের দৃষ্টি সে চোখে – যেন তার কাছে এতোটুকু সাহায্যের আশায় ! দাড়িয়ে আছে জুবায়ের । যেন পাথরের মূর্তি । কেউ একজন জুবায়েরকে ধমকে উঠলো ।
হয় চলে যেতে নাহয় সাহায্য করতে !
মেয়েটির প্রচণ্ড শীৎকারে কেপে উঠলো ঘরের বাতাস । জুবায়ের চলে যায় নি । তার হাত দুটো মেয়েটির মুখের উপরে । অবশেষে চিৎকারও বন্ধ হয়ে গেল তার । বোবা চোখে তাকিয়ে আছে জুবায়েরের দিকে ।
সে দৃষ্টিতে শুন্যতা – ঘৃণা – ধিক্কার ! ক্ষিপ্ত হয় জুবায়ের । মেতে ওঠে আদিম লিপ্সায় । একি ? এতো ঠাণ্ডা লাগছে কেন মেয়েটার দেহ ? যেন বরফ ! চামড়াগুলো ধূসর ফ্যাকাসে হয়ে যাচ্ছে । মুখ তুলে তাকায় সে । দেখে – মাথা তুলে তাকিয়ে আছে মেয়েটি তার দিকে ।
এলোমেলো চুলে ঢাকা সে মুখে ভয়ঙ্কর হাসি ! তার সারা শরীর থেকে মাংস খসে খসে পড়ছে । পচা গলা দেহ – বিশ্রী গন্ধ , লিকলিকে কিছু পোকা বের হচ্ছে । তার পা-কোমর থেকে গা বেয়ে বেয়ে উঠছে জুবায়েরের গায়ে । ঘৃণায় ভয়ে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে ওঠে ও । হঠাৎ মেয়েটা যেন তার পা দিয়ে প্রচণ্ডবেগে লাথি দেয় ওকে ।
শুণ্যে ছিটকে পড়ে জুবায়ের ।
দুই .
হাত ঘড়ির অ্যালার্মের শব্দে জেগে উঠলো জুবায়ের । ঘামছে । পায়ে যেন কোথাও কেটে গেছে তার । জ্বলছে ।
ব্যথাও হচ্ছে । ঘুমের চোখে হয়তো পা চালিয়েছিল , আর তা লেগেছিল কাঠের টেবিলে । দামী চেয়ারটার ভিতরে যেন দেবে গেছে সে । চেয়ারের হাতলে রাখা হাতটা একটু একটু কাঁপছে তার ।
একধরনের ঘোরের মাঝে আছে এখনও সে ।
-দুঃস্বপ্ন ? নাকি স্মৃতিস্বপ্ন ?
-দুঃস্বপ্ন ।
-মিথ্যে কথা ।
-স্মৃতি স্বপ্ন তাহলে !
-হুম শোনা যাক দেখি !
-না ! মনে করতে চাই না ।
-বলুন না !
-আমি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি । হলে থাকি ।
আমার রুমমেট ছিল রাজীব । একটু প্রেমিক পুরুষ ধরনের ছেলে ।
-হুম!
-একদিন এক ঝড়ো রাতে একটি মেয়ে আসলো । কড়া নাড়ল দরজায় । মধ্যবিত্ত ঘরের আটপৌরে মেয়ে ।
আজ রাতে নাকি রাজীব আর তার পালিয়ে যাবার কথা । বিয়ে করবে । মেয়েটার বাড়ি থেকে অন্য কোথাও বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে । রাজীবকে না দেখে মেয়েটা কিছুটা ভয় পেল ।
-বলে যান ।
শুনছি –
-আমি অসহায় বোধ করলাম । মেয়েটাকে কিছু বললাম না । এই ঝড়ো রাতে সে কোথায় যাবে ? সত্যটাও তাঁকে বলতে পারলাম না । রাজীব গতরাতে ইয়েমেন চলে গেছে ! কি বলব ! মেয়েটা দুই পা জড় করে আড়ষ্ট হয়ে বসে আছে । বললাম , রাজীব একটু বাইরে গেছে ।
সকাল হওয়ার আগেই চলে আসবে । সময় নিচ্ছি । ভাবছি কথাগুলো কিভাবে গুছিয়ে বলব । হঠাৎই দরজায় খিড়কি নাড়ার শব্দ আবার ! মেয়েটা আশায় মুখ তুলে তাকাল । আমি দরজা খুললাম ।
-তারপর?
-হোস্টেলের কয়েকজন বড়ভাই আর আমার এক সহপাঠী । পাঁতি নেতা গোছের । আমাকে সরিয়ে ভিতরে ধুকলো । দরজা লাগিয়ে দিল কেউ একজন । একজন বড়ভাই বলল – কি আশরাফ ? হোস্টেলে এসব কি ? আমি বললাম – ভাই যা ভাবছেন তা না ।
উনি রাজীবের বান্ধবী । বড়ভাই বলল – বান্ধবী ? এত রাতে ? আর রাজীব তো ইয়েমেন গেছে গা ! ‘’ বড়ভাইয়ের মুখে বিজাতীয় হাসি । শুনে মেয়েটা যেন স্তব্ধ হয়ে গেল । আমি দাড়িয়ে আছি । অসহায় ।
মেয়েটা তাকিয়ে আছে আমার দিকে ।
(ধীরে ধীরে ঘোর কেটে যেতে লাগল জুবায়েরের )
-তারপরে কি ঘটল জুবায়ের সাহেব ?
-কিসের পরে কি ঘটল ?
-তারপর আপনারা কি করলেন ?
-আমি মনে করতে চাই না !
-তাই নিয়েই বুঝি স্মৃতিস্বপ্ন দেখেন , তাই না ?
(পুরপুরি ঘোর কেটে গেল জুবেয়রের )
জুবায়ের অবাক হয়ে লক্ষ্য করল , সে প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে । অথচ হওয়ার কথা ছিল উল্টোটা ! টিস্যু দিয়ে মুখের ঘাম মুছল । প্রতি রাতে এই সময়টা বাসায় ফোন করে সে । তাই অ্যালার্ম দেওয়া আছে ।
সুরাইয়ার কড়া নির্দেশ । তার স্ত্রী । আজকে আর করল না । তার সামনে বসে আছে তার ক্লায়েন্ট । তার সাথেই কি সে এতক্ষণ সে ঘোরের মাঝে কথা বলছিল ? ছি ছি ! কতটুকু বলেছে ?
তার ক্লায়েন্ট যেন জমিদারী আমলের কোন হাতে আঁকা ছবি থেকে উঠে এসেছেন ।
দীঘল চুল । দেবশ্রী ধরনের চেহারা । যেন গরম পানি দিয়ে এইমাত্র মুখ ধুয়ে এসেছেন । গায়ে কারুকাজ করা শাল । ধীর কিন্তু স্পষ্ট কণ্ঠস্বর ।
বনলতা সেন যেন একেই বলে । যদিও জুবায়ের জানে না বনলতা সেন দেখতে কেমন ছিলেন । আজকালকার মেয়েদের মত খোলামেলা ফ্যাশনের নয় , তবুও কেমন যেন একটা আকর্ষণ আছে । এড়িয়ে যাওয়া যায় না । ঘোরলাগা আকর্ষণ ।
সারা চেম্বারে হাসনাহেনার একটা মৃদু শীতল ঘ্রাণ । মুখে তার একচিলতে হাসি । সে হাসি বুকে ব্যথা ধরায় যেন ।
এই হল নিলাদ্রি ঘোষ । জুবায়েরের সামনে বসে আছেন ।
তার শেষ ক্লায়েন্ট ।
.............................................পরবর্তী পর্বের কিছু অংশ ;
(নিলাদ্রি ঘোষ বলছেন , চোখ বন্ধ করে আছেন তিনি । ‘’নিজ হাতে ছানাদুটির বুক চিরে বের করে আনল ওদের কলিজা । মুখে তুলে দিল আমার । বলল – খেলেই নাকি ভালো হয়ে যাব আমি ।
ইষটে গন্ধওয়ালা । নোনা স্বাদ । আমার বমি এসে যাচ্ছিল । গিলে ফেললাম । অনেকটাই ভালো হয়ে উঠলাম আমি ।
পানাহার করলাম , হাসলাম , গল্প করলাম । সে রাতে অনেকদিন পরে মিলিত হলাম আমরা । ‘’)
................চলবে । ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।