আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মাসুদ রানা থ্রিলার রিভিউ- 'ব্ল্যাক স্পাইডার'(১৯৭৪)

........ পরীক্ষা শেষ হওয়ার কয়রকদিন পরে “আউট বই” কেনার জন্য দোকানে গেলাম । সেখানে গিয়ে উচ্চমার্গীয় বই না কিনে ২১০টাকা দিয়ে চারটা মাসুদ রানা ভলিউম কিনে আনলাম । মাসুদ রানার ভলিউমগুলো হাতে আসলে পুরনোগুলো আগে পড়া শুরু করি, কারণ ১৯৬৬ থেকে ১৯৮০ সালের মাঝে প্রকাশিত হওয়া থ্রিলারগুলো কেমন জানি ক্লাসিকের মত মনে হয় । এই সিরিজের একটা জিনিসই আমার খারাপ লাগে, সেটা হল মাসুদ রানার অতিরিক্ত নারীপ্রিয়তা । এসব বিদেশী স্পাই থ্রিলারের অনুকরণে দেয়া হলেও মনে রাখা উচিত, হাজার হোক মাসুদ রানা একটি বাঙ্গালী চরিত্র ।

একটি আদর্শ চরিত্র হিসেবে মাসুদ রানাকে উপস্থাপন করা যেত । কিন্তু যে কারণেই হোক, লেখক কাজী আনোয়ার হোসেন তা করেননি । প্রথমে যে বইটা পড়েছি তার নাম “ব্ল্যাক স্পাইডার” । ১৯৭৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে এই বইটি প্রকাশিত হয় । কাহিনীর পটভূমি বাংলাদেশের ঢাকা আর ভারতের মুম্বাই ।

ঘটনাচক্র শুরু হয় ঢাকার মগজার এলাকার একটি কুখ্যাত হোটেল ব্যাম্বিনোতে । ২২-২৩বছরের একটি কেতাদুরস্ত মেয়ে আরতি লাহিড়ী যে কিনা আসলে একটি উদীয়মান সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের সদস্য ঢাকা এসে হাজির হয় । ব্যাটম্যান সিরিজের টু ফেস হার্ভি ডেন্টের মত বীভতস দেখতে ঢাকার এক কুখ্যত অপরাধী মোস্তাককে বাংলাদেশের ধনী ব্যাবসায়ী জহিরুল হকের কাছে থেকে টাকা আদায় করার দায়িত্ব দেয়া হয় । টাকা না দিলে খুন করার নির্দেশ দেয়া হয় মোস্তাককের ভাড়াটে খুনিকে । যেই ভাবা সেই কাজ, মুক্তিপণ দাবি করা হল ।

জহিরুল হকের ঘনিষ্ঠ বন্ধু মাসুদ রানা টাকা চাওয়ার খবর জানতে পেরে খবরটা নিয়ে যাতে বেশি হইচই না হয় সে পরামর্শ দেয় । কিন্তু যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করা স্বত্তেও জহিরুল হকের সামান্য অসত্ররকতার কারণে তিনি খুন হয়ে যান । রান খেপে উঠে । বাঘের মত অনুসরণ করতে থাক খুনী আলিবাবাকে । খুঁজতে খুঁজিতে একসময় আরতি লাহিড়ীর কাছাকাছি এসে পড়ে রানা ।

আরতি লাহিড়ির আত্মবিশ্বাসে চির ধরে যায় । তাড়াতাড়ি মুম্বাই ফিরে যাবার চেষ্টা করে আরতি । বাংলাদেশের আরেক ধনাঢ্য ব্যবসায়ী আসফ খানের ছদ্মবেশে আরতির পিছু নেয় রানা । গিলটি মিয়া আর সালমাকে নিয়ে মুম্বাইয়ে ঘাঁটি গেড়ে বসে রানা । আরতির ভয় ক্রমে ক্রমে আর চাপা থাকল না ।

প্রথমে তার পার্টনার চিরঞ্জীব জানতে পারে । আরতি তাকে নিয়ে পালিয়ে যেতে বলে । কিন্তু দুনিয়েজুড়ে সম্প্রসারিত হতে থাকা সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের দুই নাম্বার ক্ষমতাশালী ব্যক্তি চিরঞ্জীব তার সাপের মত ধূর্ত, নিষ্ঠুর বসকে যমের মত ভয় করে । তাই আরতির মুখে বিদ্রোহের কথা শুনে গালাগাল দিয়ে তাকে চুপ থাকতে বলে চিরঞ্জীব । চিরঞ্জীবের এই বসটিই হচ্ছে মাসুদ রানার আদি ও অকৃত্রিম শত্রু কবির চৌধুরী ।

ওদিকে আসফ খানের ছদ্মবেশে থাকা মাসুদ রানা কবির চৌধুরীর “এভিল লেয়ার” এ প্রবেশ করতে গেলে আটকা পড়ে যায় । আসফ খানের জন্য ১০ লাখ ডলার মুক্তিপণ দাবি করা হয় । এইদিকে আরতির সুস্থ জীবনে ফেরার আশা, চিরঞ্জীবের টিকে থাকার ভয়, মাসুদ রানার প্রতিশোধস্পৃহা, কবির চৌধুরীর ধূর্ততা ইত্যাদির মিশেলে এগিয়ে যেতে থাকে “ব্ল্যাক স্পাইডার” এর কাহিনী । রানার আসল পরিচয় একদম শেষ মূহুর্তে টের পায় কবির চৌধুরী । রানা ও অন্যদেরকে বন্দী করে চলে যায় পাগল বিজ্ঞানী ।

অদ্ভুতভাবে একের পর এক মারা যেতে থাকে আটককৃতরা । বহু কষ্টে বেঁচে বেড়িয়ে আসে রানা, আরতিকে পুলিশের কাছে না ধরিয়ে সুস্থ জীবনের ওয়াদা করিয়ে নেয় । কাহিনীর শেষ দেখানো হয়েছে মাসুদ রানা ও কবির চৌধুরীকে সামনাসামনি দাঁড় করিয়ে রেখে । কবির চৌধুরীর কোন পরিস্কার পরিণতির কথা বলা হয়নি । শুধু বলা হয়েছে, “………গুলি করল রানা……” এইটুকুই ।

থ্রিলারটি মোটামুটি উপভোগ্য । অনেকেই নিশ্চয়ই পড়ে ফেলেছেন । যারা পড়েননি তারা সময় কাটানোর জন্য পড়ে দেখতে পারেন । ভালোই লাগবে । ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.