........................... পরীক্ষা ছাড়াই মেডিকেলে ভর্তির সিদ্ধান্তের পক্ষে বেশ কিছু মতামত পাওয়া যাচ্ছে। এই হইল বাঙ্গালী! নিজের দলের নেতা যদি বলে 'ভাত বাদ দিয়া গু খান', তাইলে গু খাওয়ার জন্য কিছু লোক লাইনে দাঁড়ায়া পড়বে। কেউ কেউ জাতীয় জীবনে গু খাওয়ার গুরুত্ব সম্পর্কে বিভিন্ন পত্রিকায় কলাম লিখবে, পত্রিকাগুলো সেগুলো আবার ফলাও করে ছাপাবে। গুয়ের মধ্যে কি কি ভাইটামিন আছে, সেই ব্যাপারে কতিপয় বিজ্ঞানী গবেষণা শুরু করবেন, এবং বেশ কিছু আবিষ্কারও করে ফেলবেন। কিছু ডাক্তার হেলথ টিপস নামক প্রোগ্রামে গুরুত্ব সহকারে আলোচনা করবেন গু কেন স্বাস্থ্যের জন্য ভাতের চেয়ে বেশী উপকারী, এবং নিশ্চতভাবেই বাংলাদেশ টেলিবিভীষণ এই অনুষ্ঠান দিনে ৫ বার প্রচার করবে।
আসুন দেখি ভর্তি পরীক্ষা না হওয়ার পক্ষে কি কি যুক্তি দেখা যাচ্ছে-
সরকার বলছে কোচিং সেন্টারের দৌরত্ব রোধ করতে এই ব্যবস্থা। ভাই রে, কোচিং সেন্টারের ব্যাপারে নীতিমালা করল শিক্ষা মন্ত্রনালয়, তারও আগের কাহিনী দেখি, জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ দেখেছেন নাকি কেউ? সেই নীতি অনুসারে কোচিং সেন্টার নামের জিনিসটাই বেআইনী। দুই বছরের মাথায় নীতিমালা প্রণয়ন করে সেইটাকে বৈধতা দেয়া হল, আর আমরা বুদ্ধিমান জাতি, শিক্ষামন্ত্রিকে পারলে নোবেল প্রাইজ দিয়ে দেই এমন অবস্থা। যা হোক, নীতিমালা অনুসারে কোন শিক্ষক ১৫ জনের বেশি একই ব্যাচে পড়াতে পারবে না। সেই হিসাবে মেডিকেল, বুয়েট, বিশ্ববিদ্যালয় সবগুলায় ভর্তির কোচিং সেন্টারই তো অবৈধ।
কোনদিন তো শুনলাম না সেই অবৈধ ব্যবসার জন্য কোন কোচিং সেন্টারকে শোকজ করা হয়েছে, বা কোন কোচিং সেন্টার বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, কেন?? সেই টাকাওয়ালাদের পাছায় আঙ্গুল দিতে উনারা ভয় পান?? তাই ঠিক করলেন যে দুর্বল, কচি কচি ছেলে-মেয়েগুলোর পাছায় আঙ্গুল দিতে হবে!! মজার ব্যাপার, যে শিক্ষা মন্ত্রনালয় নীতিমালা করল, তাদের আন্ডারে যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সেগুলোতে কিন্তু ভর্তি পরীক্ষা সিস্টেম বাতিল হয়নাই। মাঝখান থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ে হঠাৎ গুড়াকৃমির সংক্রমন ঘটল, মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা বাতিল হয়ে গেল। কোচিং সেন্টারের দৌরত্ব কি বুয়েটে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে কম??!!
বিশিষ্ট কয়েকজন দেখলাম ফেসবুকে লিখেছেন যে কোচিং সেন্টারগুলো আন্দোলনের জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের মদদ দিচ্ছে, তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য। ছাত্র-ছাত্রীদের বলির পাঠা বানানো হচ্ছে। সে হিসেবে তো ভাই আমরা বাংলাদেশীরা ভারতের কেনা গোলাম হয়ে গেছি, কারণ মুক্তিযুদ্ধে ভারত আমাদের সহযোগীতা করেছিল, আর সেটা তারা নিজেদের জন্য না করে শুধুমাত্র আমাদের মুখের দিকে তাকিয়ে করেছিল, এমনটা ভারত নিজেও বিশ্বাস করে না।
ভাল কিছুর জন্য যখন আন্দোলন হয়, তখন খারাপ কোন উদ্দেশ্য নিয়ে কেউ সেটাকে সাপোর্ট করলে সেটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার, তাতে কি আন্দোলনের গুরুত্ব কমে যায় নাকি?? স্বৈরাচারী সরকার পতনের সময় তো আলু-বেগুন একসাথে বহুৎ আন্দোলন করেছে, কি কারণে করেছে এখন তো নিজের চোখেই দেখতে পাই, দেশটার কি গুষ্টি উদ্ধার তারা করে চলেছে, টার্ম বাই টার্ম... তাই বলে কি এখন আমাদের মনে হয় ঐ স্বৈরাচারি লম্পট টাই দেশের জন্য ভাল ছিল??
কিছু কিছু লোক আবার এই আন্দোলনে জামাত শিবিরের সক্রিয় অংশগ্রহণ খুঁজে পেয়েছেন। পাবারই কথা, এদের কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিলে সেটাকেও তারা জামাত শিবিরের কুচক্রান্তের ফসল বলে চালিয়ে দেন। এদের পশ্চাৎদেশ দিয়ে দু'একটা জামাত শিবির ঢুকিয়ে দেয়া দরকার।
এত এত যুক্তি দেয়া হচ্ছে পরীক্ষা না নেয়ার পক্ষে, ভাই আপনারা আমার কয়েকটা প্রশ্ন যুক্তি দিয়ে উত্তর দেন তো দেখি,
SSC, HSC মিলিয়ে ১০ স্কোর করা student-এর সংখ্যা দেশে ৫০-৬০ হাজার,যার মধ্যে ৩০-৩৫ হাজার পিওর সায়েন্স, মেডিকেলের সীট সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ৬-৭ হাজার, তারপরেও কেন সর্বনিম্ন স্কোর ৮ রাখা হল? পরীক্ষা ছাড়া এই ৩০-৩৫ হাজার ১০ স্কোর করা student-এর থেকে ৬-৭ হাজার আপনারা কিভাবে বাছাই করবেন? আগে আসলে আগে পাবেন ভিত্তিতে?? এই্টা কি বাস-ট্রেনের টিকেট? আমার এক শ্রদ্ধেয় শিক্ষক লিখলেন মার্ক হিসেব করে ভর্তি করা যেতে পারে। থোর বড়ি খাঁড়া, খাঁড়া বড়ি থোর।
মেডিকেল রিলেটেড কোন সাবজেক্ট যদি SSC & HSC তে থেকে থাকে তাহলে সেটা বায়োলজি। SSC & HSC মিলিয়ে টোটাল মার্ক
হল ২৩০০, সেখানে বায়োলজির মার্ক হল ২০০। যে ছেলেটা SSC আর HSC ৭০০ মার্ক করে পেয়েছে, সে যে বায়োলজিতে ৯০% মার্ক পায়নাই, এটা আপনি কিভাবে বুঝবেন? নাহয় সেটাও বিবেচনায় আনলেন, কিন্তু ঢাকা বোর্ডে যে পরীক্ষা দিয়ে ৯০% মার্ক পাওয়া যায়, সেই একই পরীক্ষা দিয়ে কুমিল্লা বোর্ডে যে ৭৫% মার্কও পাওয়া যায় না, সেই discrimination কিভাবে দূর করবেন??
ভাইসব, যখন কোন খারাপ কাজ হবে, সবাই অন্তত: বিবেকের কাছে ভাল থাকতে সেটাকে নিদেনপক্ষে মনে মনে ঘৃণা করুন, আর তার বিরুদ্ধে যখন ভাল কোন পদক্ষেপ নিতে কেউ এগিয়ে আসবেন, তাকে জোর গলায় সাপোর্ট করতে না পারেন, অন্ততঃ ফাউ বিরোধিতা করে বা অবান্তর প্রসঙ্গ তুলে তাকে রাশ টেনে ধরবেন না। দয়া করে নিজেকে শুকর কিংবা কুকুরের সন্তান প্রমাণ না করে মানুষ প্রমাণ করুন। অন্যথায় একদিন এই গালিগুলো হয়তো আপনাকে আপনারই ভাই-বোন বা ছেলে-মেয়ের কাছ থেকে শুনতে হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।