হাবি জাবি মাথায় যা আসে তাই লিখি, কখনও মাথা লিখি কখনও ছাতা লিখি। লেখার উপায় যখন একটা পাইছি। **** ম্যারেজ মিডিয়া অফিস-দুপুর ০৩:০০ টা
সবুর, মতিঝিলে অবস্থিত পাঁচ তলা ভবনের চতুর্থ তলায়, ম্যারেজ মিডিয়ার অফিসের একটা ব্রাউন কালারের সোফার উপরে বসে আছে। বসে আছে বললে ভুল হবে; একপ্রকার সে সোফার গদির ভেতর ঢুঁকে আছে। গদিটা অনেক পুরোনো তাই নিচের দিকে তা চলে যায় কেউ বসলে পরে।
সবুর বসে বসে ডান হাতের নখ খুব সুচারু রূপে কাটার চেষ্টায় ব্যস্ত। তার মনে খালি এখন একটাই চিন্তা, কখন তার ডাক আসে ভেতর হতে।
অফিসটা দুই কামরার। না না, এটাকে এক কামরার বলা যেতে পারে। আসলে কালো রঙের একটা থাই এ্যালুমিনিয়াম গ্লাস দিয়ে এটাকে দু’অংশে ভাগ করা হয়েছে।
একটাকে মূল অফিস আর আরেকটাকে বানানো হয়েছে বসার স্থান।
সেই বসার স্থানেই সবুর বসে আছে। নখটা দাঁত দিয়ে কামড়াতে কামড়াতে তার চোখ চলে যায় একটা ওয়াল পেইন্টের দিকে। সেখানে আধা বসনের এক নারী। নারীটার চোখে মুখে এক মায়াবী আভা।
তার শরীরীটা জড়িয়ে রেখেছে একটা হালকা নীল রঙের কাপড়। বুকের কাছ হতে তার ঊরুর একটু নীচ পর্যন্ত সেই কাপড়। একটা সবুজ কার্পেটের মত ঘাসের মাঝ দিয়ে নারীটা একটা প্রজাপতি ধরার চেষ্টায় ব্যস্ত। কিন্তু তার পীঠের উপরেও একজোড়া সাদা রঙের জরি জরি পাখা লাগানো।
সবুর, এক দৃষ্টিতে পেইন্টিঙটার দিকে তাকিয়ে আছে নখ কামড়ানো বন্ধ করে।
সবুরের মনে হচ্ছে এটাই হয়তো আধুনিক পেইন্টিং। যদিও সে ছবি বিশারদ না তবুও সে হলফ করে বলে দিতে পারবে, যে কেউ এই ছবি দেখে মুগ্ধ হবে।
হঠাৎ রুমের পাশ দিয়ে কেউ একজনের গলার খাঁখানি শুনে সবুরের ধ্যান ভাঙ্গে। সে হঠাৎ বিব্রত বোধ করে ছবিটার দিকে তাকিয়ে।
সে একজন অতি সাধারণ মুসলিম ঘরের ছেলে।
অথচ সে কিনা এমন একটা ছবির দিকে তাকিয়ে ছিল!! এখন তার একটু একটু লজ্জা করছে ছবিটার দিকে তাকাতে। সে তাকাবে না বলেও আড় চোখে বারবার তাকাচ্ছে। আসলে মানুষের নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি আকর্ষণ বেশি। সবুর ভাবে, এজন্যই হয়তো তাদের গ্রামের কাল্লু মিয়ার দোকানে ভিড় বাট্টা বেশি। যেই দোকানে একদিন ভুলেও কেউ পা বাড়াতো না, সেই দোকানে আজ কেন এতো ভিড়? তার একটাই কারণ।
জাদুর বাক্স। যেটার মাঝে রাত হলেই অর্ধ নগ্ন কিছু নারীর অশালীন অঙ্গভঙ্গি ভেসে উঠে।
ছিঃ কি লজ্জা!! এটা ভেবেই সবুর তার জিহ্বায় একটা কামড় দেয়। তার কারণ সে নিজেও একবার কৌতূহল বসত দেখতে গিয়েছিল।
সে আবার পেইন্টিঙটার দিকে তাকায় আড় চোখে।
এবার তার ভীষন লজ্জা করছে। সে নিজের প্রতিই এখন একটা বিচ্ছিরি গালি মনে মনে ছুড়ে দেয়, এমন একটা জিনিসের প্রতি এতক্ষণ তাকিয়ে ছিল বলে।
হঠাৎ সেই থাই এ্যালিমিনিয়াম দিয়ে ঘেরা রুম হতে সবুরের ডাক আসে। সে কিছুটা ভয়ে ভয়ে সোফা হতে উঠতে চেষ্টা করে। একবার পড়েও যায়।
সার্টের কলারটা সে ঠিক আছে কিনা শেষবারের জন্য দেখে নেয়। পকেট হতে চিরুনি বের করে মাথা আঁচড়ে নেয় একবার। কিছু দোয়া পড়ে বুকে ফুঁ দেয়।
“ম্যাডাম আসব?”
এই মিডিয়া সেন্টারের মালিক এই মহিলা। নাম কি যেন সবুর মনে করতে চেষ্টা করে।
সবুরের সাথে এনার দেখা হয়েছিল কাফরুলে । ঢাকা ক্যান্টেনমেন্টের কাছে এই জায়গায় সবুর তার গ্রামের এক ভাইয়ের কাছে এসে, তার কসমেটিকের দোকানে কাজ করা শুরু করে। সেখানেই এই মহিলার সাথে দেখা হয়েছিল।
সবুর মাথা চুলকে মনে করে নামটা, রাজিয়া খাতুন। কথায় কথায় তার এই অফিসের কথা সে বলে সবুরকে।
সবুরও খুশিতে গদগদ হয়ে তার সমস্যা খুলে বলে।
সবুর যে গ্রামে খুব খারাপ ছিল তা না, ইন্টার পাশ করে মফস্বলের একটা চাকরি করে তার মা সহ দিন ভালোই চলে যাচ্ছিল। সে সাদিয়া নামে একজন স্কুল পড়ুয়া বালিকাকে পছন্দ করে এক বছর যাবত।
পছন্দ বললে ভুল হবে। আসলে একে অপরকে তারা ভালোবাসে।
তাই কিছুটা ভাগ্য পরিবর্তনের জন্যই সবুরের গ্রাম থেকে শহরে ছুটে আশা। শত হলেও সাদিয়াকে নিয়ে নতুন এক স্বপ্নের জাল সে বুনতে যাচ্ছে। ঢাকায় এসে সে তার গ্রামের পূর্ব পরিচিত এক ভাইয়ের দোকানে চাকরি নেয় সেলস ম্যান হিসেবে। চাকরিটা মন্দ না। ভালোই লাগে তার।
কিন্তু দু’মাস আগে সাদিয়া তাকে ফোন করে জানায়, তার বাবা নাকি এক বিদেশ ফেরত পাত্রের সাথে তার বিয়ে ঠিক করেছে। বাবাকে সে সবুরের কথা বলায়; তাকে শর্ত দেয়া হয়, সবুর যদি বিদেশে যেতে পারে তবেই সে সাদিয়াকে সে ফিরে আসলে তার হাতে তুলে দিবে। এই কথা শোনার পর সবুরের খুব শাকিব খান হতে ইচ্ছা করে। মনে মনে সে আফসোস করে কেন সে তা হল না। তাহলে দু’মাস কেন দু’দিনেই সাদিয়ার বাবাকে দেখিয়ে দিত।
কিন্তু বড়ই আফসোস, জীবনটা বাংলা সিনেমার ফিতা না।
তাই হঠাৎ করে রাজিয়া খাতুনের সাথে দেখা হওয়ায় যেন, সৌভাগ্যের চাঁদ হাতে পেল। রাজিয়া খাতুন তাকে বলল, সে যদি একজন লন্ডনি কন্যাকে নকল ভাবে বিয়ে করতে পারে তবে তার মনোবাসনা পূর্ণ হবে। তবে কিছু অর্থ তাকে গুণতে হবে। কিন্তু লন্ডনি কন্যার সাথে যাচ্ছে বলে, তার পরিমাণ খুবই সামান্য।
তাই সবুর গ্রামে তাদের দুধ দেয়া দুইটা গাভী আর তাদের দু’কাঠা জমি বিক্রির টাকা রাজিয়া খাতুনের হাতে তুলে দেয়।
সবুরকে সেদিন পায় কে? বহুদিন পরে সে মেসে ফিরে ভাত তরকারি রেঁধে,খেয়ে, নাকে তেল দিয়ে লম্বা ঘুম দিল। তবে সে এটাও ভেবে রেখেছিল যে, এই বিষয়টা সাদিয়াকে জানানো যাবে না।
“আরে সবুর সাহেব যে!! আসুন আসুন। “
সবুর বাস্তবে ফিরে আসে।
সবুরকে কেউ কোনদিন সাহেব বলে ডাকেনি, তাই সে কিছুটা বিব্রত বোধ করে।
“আপা, আমার কাজটা......”
“আরে সব রেডি। এই যে পাত্রীর ছবি। ধরুন, দেখুন”
সবুর ছবিটার দিকে তাকায়। একটু ভড়কে উঠে সে, আরে! এতো বয়স বেশি! পর- মুহূর্তেই সে সামলে উঠে আর মনে মনে নিজেকে বোঝায়,
“আরে সবুর, এটা-তো নকল বিয়ে।
একবার লন্ডনে যেতে পারলে কেল্লা ফতে। তারপর ছাড়াছাড়ি। আর সাদিয়াকে ফোন করে বলা আমি বিদেশে আছি। এরপর একটা কাজ খুঁজে নেয়া”
“কি সবুর সাহেব? অত কি ভাবেন? পাত্রী পছন্দ হয়নি?”
সবুর ইতস্তত হয়ে বলে, “না না হয়েছে.........”
“আরে ভাই ইনি দেখতে তাও ভালো। এই বিধবা আরকি... আপনার-তো ভাগ্য ভালো, সুন্দর দেখে একজন পেলেন কিন্তু গতকাল যার বিয়ে দিলাম তার বউটা অত সুন্দর ছিল না”
এটা বলেই একটা তীক্ষ্ণ হাসি নিয়ে রাজিয়া খাতুন তার রোলিং চেয়ারে হেলান দিয়ে বসলেন।
চেয়ার হতে একটা কচ কচ আওয়াজ বের হয়ে আসল। আসলে ঐ সোফা হতে এই চেয়ার পর্যন্ত সব ভাড়া করা সেকেন্ড হ্যান্ড মাল।
“আচ্ছা আসব কবে? বিয়ে কবে?”
“এইতো কাল এসে পড়েন। পাত্রী কালই আসবে, শুভ কাজ যত তাড়াতাড়ি করা যায় আরকি”
সবুর রুম হতে বের হয়ে আসে। হঠাৎ করেই তার মনে পড়ে সে কয়েক ঘণ্টা ধরে তার প্রাকৃতিক কর্ম করা হয়নি।
সে এক লোককে জিজ্ঞাসা করায়, লোকটা তাকে দেখিয়ে দেয় স্থানটা।
সে কার্য সম্পাদন করে বের হতে গিয়ে দেখে, দেয়ালে এম প্লাস এস লেখা। তার সাদিয়ার কথা মনে পড়ে যায়। তারও ইচ্ছা করে দেয়ালে নিজেদের নামের প্রথম অক্ষর লিখতে। সে বুক পকেট হতে কলম বের করে গাঢ় করে সেখানে, এস প্লাস এস লিখে।
তার ভালোবাসা কি কম নাকি? সেটা বোঝাতে সে নামের পাশে লাভ চিনহ একে দেয় বড় করে।
এবার সবুরের কেমন যেন শান্তি শান্তি লাগছে। সে লেখাটার দিকে তাকিয়ে দাঁতের পাটি বের করে একটা হাসি দেয়।
*** সবুরের মেস-রাত ০২:০০টা
সবুর একটা আজব স্বপ্ন দেখে ধড়ফড় করে বিছানা হতে উঠে পড়ে মধ্যরাতে। সে তাদের রুমের এক কোনে রাখা প্ল্যাস্টিকের পানির জগ হতে ঢগ ঢগ করে কয়েক গ্লাস পানি খেয়ে নেয়।
জগ উঁচু করে খেতে গিয়ে তার হলুদ কালারের ছিদ্র-ওয়ালা সেন্টু গেঞ্জিটার উপর পানি কিছুটা ছলকে পড়ে যায়। সে গেঞ্জিটা দিয়ে মুখের পানি মুছে নেয়।
সে তার মেঝেতে করা বিছানাতে বসে ভাবতে থাকে, ইয়া আল্লাহ! এটা কি দেখলাম আমি?
সবুর বাসায় এসে নিশ্চিন্ত মনে ঘুম দিয়েছিল কিছুটা খাবার নাকে মুখে খেয়ে। তারপরেই ঘুমের মাঝে সেই স্বপ্ন। রীতিমত ভয়ংকর স্বপ্ন।
সে দেখতে লাগল, সেই ম্যারেজ মিডিয়া অফিসের সেই দেয়াল পেইন্টিঙটার আধা বস্ত্র গায়ে দেয়া আর পাখাওয়ালা নারীটার তার সামনে দাড়িয়ে। তাকে ইশারা করে ডাকছে। সবুরও তার হাতের ইশারাতে মোহ আবৃত হয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে যাচ্ছে। হঠাৎ করে সে তার আঙুল স্পর্শ করতে পারে। সে, সেই একটা আঙুল ধরেই হঠাৎ করে লক্ষ্য করল; মেঝে হতে তার পা শূন্যে উঠে গেছে।
সে নির্ভয়ে তার হাত ধরে উড়ে বেড়াচ্ছে। উড়তে উড়তে সে অনেক উপরে চলে যাচ্ছে।
এমন সময় তার চেক খয়েরি কালারের লুঙ্গীটা একটা গাছের মগডালে গেল আটকে। সবুর হাত ছেড়ে দিয়ে সেটা খুলতে গিয়ে সেই মগডালে ঝুলতে লাগল উল্টো হয়ে। সবুর বাতাসের দোলের সাথে ঝুলছে-তো ঝুলছে।
তাকে কেউ সাহায্য করতে আসছে না। সেই মগডাল হতে তাকে নামানোর জন্য সে জোরে জোরে চিৎকার করছে, তাও কেউ নামাচ্ছে না। সবুজ ঘাসের সেই প্রান্তরে কোন জনমানবের চিনহ নেই। হঠাৎ করে তার লুঙ্গির কোনার ফড়ফড় করে ছেড়ার আওয়াজ পেল; সেখানে তাকিয়ে দেখে, আর একটু পরেই লুঙ্গি ছিঁড়ে গিয়ে সেসমেত তা ভূপতিত হবে। তার ভাবনায় তখন একটা চিন্তা খেলা করছে, হয় এখন সে ভূপতিত হবে তা না হলে লুঙ্গি ছাড়া মানসম্মান।
তাই সবুর লুঙ্গির কোণা হাত দিয়ে ছুটিয়ে নিজেই শূন্যে ভাসতে ভাসতে নীচের দিকে পড়তে লাগল প্যারাসুটের মত............।
আর এটা দেখার সাথেই সাথেই সবুরের ঘুম ভেঙে গেল। সে পানি খেয়ে আল্লাহ্র নাম নিয়ে একরাশ থুতু বুকে ছিটিয়ে আবার ঘুমানোর চেষ্টা করল। কিন্তু সবুর শুয়ে শুয়ে এপাশ ওপাশ গড়াগড়ি করল কিছুক্ষণ, কিন্তু আজ রাতে আর ঘুম নামক দুর্লভ বস্তুটা তার চোখে এসে হানা দিল না। তার উপর তার মাথায় এখন একটাই ভাবনা খেলা করছে।
তা হল, আগামীকাল তার বিয়ে। সেটা মিথ্যা মিত্থি হলেও তাতে কি?? বিয়ে-তো! তাও নিজের প্রথম বিয়ে বলে কথা।
সবুর তার ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে, সেখানে সাদিয়ার নামে দশটার বেশি মিসকল। সবুর মনে মনে একশ একবার নিজেকে গালি দিতে থাকে, কেন সে ফোনটা ধরল না!!
সাদিয়ার নিজের কোন ফোন নাই। সে তার পাশের বাড়িতে বান্ধবীর ফোন হতে ফোন করে।
এখন আর সেখানে ফোন ব্যাক করলেও তাকে পাওয়া যাবে না। নিশ্চয়ই খুব জরুরি কিছু কথা ছিল সাদিয়ার। সবুর জানে রাতে ছাড়া আর সাদিয়াকে পাওয়া যাবে না বা সে তাকে ফোন করার সুযোগ পাবে না।
***ম্যারেজ মিডিয়া অফিস- সন্ধ্যা ৭:০০ টা
সবুর রাজিয়া খাতুনের সামনে বসে তার রাতে দেখা ভয়ংকর স্বপ্নের কথা হাত নেড়ে নেড়ে বোঝানোর চেষ্টা করছে।
“আরে, ভয় পাবেন না সবুর ভাই।
সব ঠিক হয়ে যাবে। পাত্রী এসে পরলেই একটা কাগজে কোর্ট ম্যারেজের মতো সই করবেন, তারপর আর আপনাকে পায় কে? এক সপ্তাহর মধ্যে আপনার ভিসা রেডি”
সবুর রাজিয়া খাতুনের কথায় কিছুটা ভরসা পায়।
কিছুক্ষণ পরে পাত্রী এসে উপস্থিত হয় সেই অফিসে। সবুর তার নকল বউয়ের মুখের দিকে একটু লজ্জা নিয়েই তাকায়। ছবির থেকেও পাত্রীকে এখন বেশিই বয়স লাগছে।
সবুর আবার নিজেকে বোঝায়, আরে এটা নকল বিয়ে। সত্যি সত্যি-তো সে তার বউ হবে না। তার বউ হবে সাদিয়া। সাদিয়ার কথা ভেবে তার বুক একবার কেঁপে উঠে। ইসস, সে কেন ফোন করেছিল? জানা হল না।
আবার সে মনে মনে নিজেকে বোঝায়, যা করছে আজ সবই সাদিয়াকে পাবার জন্য।
রাজিয়া খাতুনের কণ্ঠে তার ধ্যান ভাঙে,
“এখানে সই করেন”
সবুর কিছুটা কাঁপা কাঁপা হাতেই সই করে ফেলে। একজন কাজীও আছে সেখানে। কলমা পড়া শেষ হলে তিনি পাত্র পাত্রীর জন্য দোয়া করে দেন।
*** তিন দিন পরে সেই অফিস-সকাল ১০:০০ টা
“ভাই এখানে না একটা অফিস ছিল!”
“ধুর মিয়া! কিয়ের অফিস টফিস করতাছেন কতক্ষণ ধইরা??”
“আপনি বলতে চাইতাছেন, এখানে কোন অফিস ছিল না!!”
“ভাইরে, আপনারে কতবার কইলাম এটা একটা সিঁড়ি ঘর।
দেখেন না পাশে দিয়া সিঁড়ি ছাদে উইঠা গেছে!!”
সবুর সেই সিঁড়ির উপরেই বসে পরে ধপ করে। এতগুলো টাকা সে দিল সেই ম্যারেজ মিডিয়া অফিসে তিনদিন আগে; আর এখন এই লোক বলে এখানে কিছুই ছিল না!! সবুর বসে বসে ভাবতে থাকে, কোথায় যাবে এখন সে?? সাদিয়ার সেই ফোন করার রাতেই বিয়ে হল জানতে পারল আজ সকালে। আর এদিকে টাকা ফেরত নিতে এসে দেখে সেই দু’কামরা বিশিষ্ট অফিস হাওয়া। সবুর আর কিছুই ভাবতে পারছে না।
**** কাফরুলে একটা কসমেটিকের দোকান- সকাল ১০:০০ টা
আমার সামনে দাড়িয়ে থাকা রাজিয়া খাতুন নামের এই মহিলা আমাকে বোঝাতে চাইছেন কিভাবে বিদেশ গেলে ভালো রোজগার করা যাবে আর সেখানে যাওয়ার সহজ উপায়।
আমি হা করে তাকিয়ে আছি সেই মহিলার দিকে। এমন সময় আমার দোকানের মালিক মানে আমার গ্রামের পরিচিত ভাই ডাক দিয়ে বলল,
“কিরে সবুর, আজকাল কাম কাইজ ছাইড়া গবসব শোনা হয় নাকি?”
“আপা আপনে কিছু নিতে হলে নেন। আমি অন্য কথা বলতে পারমু না। আমার আরও কাস্টমার আছে”
আমি স্পষ্ট দেখলাম রাজিয়া খাতুন নামের সেই মহিলা মুখ কালো করে আমার দোকান হতে বের হয়ে যাচ্ছে।
আমি তার পিছনে দাড়িয়ে দাড়িয়ে ভাবছি ভাগ্যিস আমার এই দোকানের মালিক ভাইয়ের মতো কোন সাদিয়া নামের কোন প্রাক্তন প্রেমিকা ছিল না।
তা নাহলে আমিও আজ ফাঁদে পা দিতাম এইসব রাজিয়া খাতুন নামের মহিলাদের। ভালোই আছি এখানে। রাত আটটা বাজলে দোকান বন্ধ করে মোড়ের বিল্লুর দোকানে আড্ডা দেই আর মাস শেষ হলে মায়ের কাছে ভালো অংকের টাকা পাঠাই।
ও বলা হয়নি, আমার এই দোকানের মালিক ভাই আর আমার নাম একই, সবুর। সবুর ভাই কয়েক বছর আগে এমন একটা ঘটনায় সব হারিয়ে বহু কষ্টে এই দোকানটা দাড় করিয়েছে এমন এক ব্যস্ত নগরীর মাঝে।
আমিও চাই এমন একটা দোকান দিয়ে আরও আয় উপার্জন করব।
কিন্তু আমাদের এই দুই সবুরের মাঝে পার্থক্য কেবল একটাই থাকল, তাহলো রাজিয়া খাতুন নামক একটি উদাহরণ। আমার চেনা হয়ে গেছে কিন্তু সবুর ভাইয়ের তা চেনা ছিল না এই রঙচঙা শহরের মাঝে।
========+======== ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।