আমি একজন পর্যটন কর্মী। বেড়াতে, বেড়ানোর উৎসাহ দিতে এবং বেড়ানোর আয়োজন করতে ভালোবাসি। কিস্তি-৩০
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যারা রিপোর্ট করেন, তারা সবাই মাঠে থাকেন, এমনটা কম হয়। একটু সিনিয়র হলে বাইরে আড্ডায় অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন কেউ কেউ। আমি এ বৃত্তের বাইরে ছিলাম।
প্রতিদদিন সকালে ক্যাম্পাসে বের হয়ে রাতেই হলে ফিরতাম। এর মধ্যে ক্লাশ, পরীক্ষা এবং রিপোর্ট সংগ্রহ সবই চলতো। আমার কাছে এখনো এ দিকটা উপভোগ্য মনে হয়। ঘটনা স্থলে হাজির থাকলে যে কোনো বিষয়ে ভালো রিপোর্ট হয়্। এটি আমি আমার সাংবাদিকতা জীবনে সব সময় মেনে চলি।
এখনো অবশ্য সেভাবে হয় না। তবুও চেষ্টা থাকে।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের চারজন মানুষের সাথে আমার দিনে একবার হলেও দেখা হতো। কদাচিৎ তাদের দেখা না দিয়ে থাকতাম। তারা চারজনই আমার কাছে ভিন্ন ভিন্ন কারণে অসাধারন মানুষ।
সবচেয়ে প্রিয় মানুষ আশরাফ ভাই। তার দপ্তরে ঢুঁ না মারলেই নয়্। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক রিলেশনের ডিরেক্টর তিনি। এত হাস্যোজ্জ্বল ও দু:শ্চিন্তামুক্ত ভালো মানুষ ক্যাম্পাসে দ্বিতীয়টি দেখিনি। আমার বিশ্ববিদ্যালয রিপোর্টিং জীবনে এত সৎ এবং সাহসী মানুষ দেখা হয়েছে কম।
আশরাফ ভাই বয়সে আমার বাবার সমান বা তারো বেশি হবেন, কিন্তু তার অফিসে গেলে যেভাবে গ্রহণ করতেন, আমি সব সময় তার কাছে এ জন্য কৃতজ্ঞ। আমার মত একজন ছোট সাংবাদিকদক তিনি যেভাবে সঙ্গ দিতেন, সহযোগিতা করতেন তা ভোলার নয়।
আমরা বন্ধুরা অনেকে তার অফিস থেকে ফোন করতাম। কখনো বিরক্ত হতেন না। কারণ রিপোর্টের প্রয়োজনে প্রতিদিনই আমাদের অনেক ফোন করতে হতো।
সব ফোন মোবাইল থেকে করা সম্ভব হতো না, কারণ সে সময় মিনিট প্রতি মোবাইল বিলি ছিল ৬ টাকা ৯০ পয়সা। বলছি ২০০১, ২০০২, ২০০৩ সালের দিকের কথা।
আশরাফ ভাই কখনো ব্যাক্তিগত কোনো বিষয় নিয়ে আবদার করেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভালো চান সব সময়, সব ভিসির সময়্য়। তার কাছে বিশ্ববিদ্যালযের সুনাম আগলে রাখাটাই মুখ্য।
তাই নেগেটিভ কোনো তথ্য তার কাছ থেকে কখনোই পাওয়া যায়নি। বিশ্বিবিদ্যালয়কে তিনি খুবই ভালোবাসেন। মানুষ হিসাবে এক কথায় অসাধারণ আশরাফ ভাই।
দ্বিতীয় যে মানুষটিকে আমার ভালো লাগতো এবং আমি যার দপ্তরে প্রায়ই যেতোম তিনি আলমগীর ভাই। টিএসসির পরিচালক।
আমার সব সময়কার কাজের সহযোগি ছিলেন। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে রিপোর্টার ছাড়া্ও ঢাকা ইউনিভার্সিটি টুরিস্ট সোসাইটির প্রেসিডেন্ট ছিলাম, যে কোনো সময় তার কাছে গেছি, হাসি দিয়ে আপন করে নিয়েছেন, প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করেছেন। সব সময় কাজের উৎসাহ দিযেয়েছন। টিএসরি দিলশাদ ম্যাডামও হেল্প করতেন। ভালো লাগতো তাকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা আসেন বা না আসেন, যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে জানেন তারা মধুর ক্যান্টিনও চিনেন বা এ নাম শুনে থাকবেন। এটি এখন পরিচালনা করছে অরুণ দা। উনি কোন দলের সমর্থক সেটি আবিষ্কার করার রীতিমত গবেষণার বিষয়। তার কাছে সব দলের নেতারা আশ্রয় পান, বাকি খান। সে বাকির টাকা শোধ না করেও অনেকে মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী এমপি হয়ে আছেন।
তাতে তার কোনো আফসোস নেই। অরুণ দা বাকির খাতাটা লুকিয়ে রাখেন।
একবার আমাকে অ্যাসাইন করা হলো মধুর ক্যান্টিনের বাকির হিসাব নিয়ে একটা রিপোর্ট করতে। আমি ক্যাম্পাসের অনেক সিনিয়র রিপোর্টারের সাথে আলাপ করলাম। সবাই বললেন, এটা অসম্ভব।
অসম্ভবকে সম্ভব করাটাই আমার কাজ। তাই চেষ্টা চালিযে যাচ্ছি। কিন্তু অরুণ দা ধরা দেন না। পরে বললাম একটা সিলিং বলেন। শেষ পর্য়ন্ত তাকে সিলিংয়ে রাজি করাতে পেরেছিলাম।
এবং এ রিপোর্ট মানবজমিন লিড করেছিল্। ব্যাপক সাড়া পেযেছিলাম।
এ রিপোর্ট প্রকাশের পরের বছর মধু দা'র মৃত্যুবার্ষিকী অনুষ্ঠানে এসে অনেক সাবেক ছাত্র নেতা এ প্রসঙ্গ টেনেছিলেন। ভালো লেগেছে এত বড় বড় নেতাদের চোখে পড়েছে এই রিপোর্ট, সে জন্য।
তবে বাকির টাকা নিয়ে কোনো মাথা ব্যথা নেই অরুণ দা'র।
আমি নিজেও বাকির একজন তালিকাভুক্ত। মধুর ক্যান্টিনের মিষ্টি ও বাটার ব্রেড খেতাম বেশি। অরুণ দা দেখা হলেই এগিয়ে আসতেন, দাদা কি খবর? দেখি না কেন? অথচ দুদিন আগেও তার সাথে দেখা হতো। প্রতিদিন একবার অন্তত মধুতে যাওয়া হত। সব সময় উনি থাকতেন না বলে দেখা হতো না।
মানুষকে আপন করে নেসয়ার একটা অদ্ভূত ক্ষমতা আছে তার।
চতুর্থ জন গোপাল দা। ডাকসু সংগ্রহ শালার দায়িত্বে আছেন। ভালো মানুষ্। তবে আপনি কোন দল করেন, বা করতে পারেন, বা সাপোর্ট করতে পারেন সেটি বুঝে কথা বলেন।
অনেকটা ঝোপ বুঝে কোপ মারার মত। আবার আপনি কোন পত্রিকার সাংবাদিক, সে হিসাবে তার কথা বা আলোচনা চলবে। তবে আদতে ভালো মানুষ গোপাল দা। সব সময় স্মৃতি ধরে রাখবার জন্য ছবি তোলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক পুরনো ও ভালো স্মৃতি আছে তার কাছে।
তার দপ্তরে প্রায় যেতাম। তবে মানবজমিনে থাকতে এক রকমের খাতির ছিল, পরে খাতিরের পরিমাণটা বদলে গেছে। তবুও দেখলে চিনেন, এগিয়ে এসে কথা বলেন, এটাইবা কম কিসে। ধন্যবাদ গোপাল দা। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।