আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাকির ভাই কোথায়?হাওয়া ভবনের চার কর্মকর্তা হাওয়া-গ্রেপ্তার এড়াতে কূটনীতিকদের কাছে ধর্না দিচ্ছেন বাবর

বাঙ্গালী জাতির গৌরবময় ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় সংস্কৃতির জন্য অপমানজনক কোনকিছু এই ব্লগে লেখা যাবে না।

ঘটনাটি 2005 সালের শুরুর দিকের। রাজনৈতিক ও প্রশাসনিকভাবে চাপ সৃষদ্বি করেও যখন জোট সরকারের কেউ বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরিচু্যত 10 সিবিএ নেতার চাকরি ফিরিয়ে দিতে পারছিল না, তখন রাষদ্ব্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর জোট সরকার সমর্থক সিবিএ নেতাদের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর ড. ফখরুদ্দীন আহমদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। ওই দলে ছিলেন সোনালী ব্যাংক সিবিএর সভাপতি ও শ্রমিক দলের যুগ্গ্ম সমঙ্াদক বিএম বাকির হোসেন। ওই সময় সিবিএ নেতারা চাপ দিয়েও যখন গভর্নরের কাছ থেকে কোনোত্রক্রমেই চাকরিচু্যত 10 সিবিএ নেতার চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি আদায় করতে পারেননি, তখন বাকির হোসেন উত্তেজিত হয়ে তৎকালীন গভর্নর ও বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষদ্বা ড. ফখরুদ্দীন আহমদকে অশালীন গালাগাল করেছিলেন।

অন্য সিবিএ নেতারা চেষদ্বা করেও বাকিরকে গালাগাল থেকে নিবৃত্ত করতে পারেননি। ওই সময় ড. ফখরুদ্দীন শুধু নিচের দিকে তাকিয়ে একজন বাকির হোসেনের অপমান সহ্য করেছিলেন। ঘটনার কিছু অংশ তিনি তৎকালীন অর্থমন্পী এম সাইফুর রহমানকে জানিয়েছিলেন। কিন্তু তাতে কোনো ফল হয়নি। এ ঘটনার আগে-পরেও টেলিভিশনের পর্দায় অর্থমন্পীর পাশে বাকির হোসেনকে দেখা গেছে অহরহ।

কিন্তু ঘটনার কোনো বিচার হয়নি। জোট সরকারের 5 বছরে একজন সিবিএ নেতা হয়েও বাকির ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। ব্যাংক কর্মচারীরা এই বাকির ভাইকে এখন আর খুঁজে পাচ্ছেন না। যাদের সমর্থনের দোহাই দিয়ে তিনি হয়েছিলেন ব্যাংক কর্মচারীদের জোট আমলের নেতা, তারা এখন সময়-অসময় ও বিপদকালে বাকির ভাইর প্রশ্রয় পাচ্ছেন না। তারা দেখছেন তাদের নেতাই রয়েছেন নানা ঝামেলায়।

এমনকি তিনটি ব্যাংককে কোমঙ্ানি করার নীতিগত সিদব্দানস্ন নিয়েও বাকির ভাইয়ের কোনো বক্তব্য নেই। রাষদ্ব্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর সিবিএ (কালেকটিভ বার্গেনিং এজেন্ট) কর্মচারীদের স্ট্বার্থ আদায়ের নামে নির্বাচিত হয়ে অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে ব্যক্তিগতভাবে তিনি সমঙ্দের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। টাকার বিনিময়ে বদলি, পদোন্নতি, সুদ মওকুফ, ঋণ অনুমোদন, টেন্ডার থেকে বিশেষ কমিশন, ব্যাংকের কাছে গাড়ি ভাড়া দেওয়া, ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গৃহঋণের বিপরীতে 5 থেকে 10 শতাংশ কমিশন আদায়, এলসি খোলার ক্ষেত্রে বীমা কমিশনের নামে টাকা নিয়ে তিনি হয়ে পড়েছেন কোটিপতি। বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন। জোট সরকারের 5 বছরে তার উত্থান হয়েছে অনেকটা আলাদিনের জাদুর চেরাগের রূপকথার মতো।

অর্থমন্পী বিদেশ সফর করে দেশে এলে বিমানবন্দরে তাকে স্ট্বাগত জানাতে যাওয়ার কথা তার নিয়ন্পণাধীন মন্পণালয়ের সংশি্নষদ্ব উচ্চপদস্ট্থ সরকারি কর্মকর্তাদের। কিন্তু বেশির ভাগ সময় বিএম বাকির হোসেন চলে গেছেন সবার আগে। প্রটোকল ভঙ্গ করে তিনি দাঁড়িয়েছেন অর্থমন্পীকে অভ্যর্থনা জানানোর সারির সবার আগে। অর্থমন্পীর স্টেম্নহধন্য ছিলেন বলে হয়তো তিনিও কখনো এ সব নিয়ম ভঙ্গের বিষয়ে কোনো কিছু বলেননি বাকিরকে। তিনি হয়তো জানতেন না, ছোট একটি নিয়ম ভঙ্গ করা থেকে সাহস সঞ্চয় করে এক পর্যায়ে তিনি কত বড় নিয়ম ভঙ্গ করতে পারেন।

যেটি জোট সরকারের শেষ দিকে বাকির করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নরের সঙ্গে। এ ছাড়া বিএনপির মহাসচিব আবদুল মানাল্পম্ন ভূঁইয়া, সাবেক প্রধানমন্পী বেগম খালেদা জিয়ার পাশেও তাকে বিভিল্পম্ন অনুষ্ঠানে দেখা গেছে। আর এসবকে পুঁজি করে বাকির সিবিএর নামে কামাই করেছেন অর্থকড়ি। ওই সময়ে অর্থমন্পীর সঙ্গে তার এতো ঘনিষ্ঠতা নিয়েও বিভিল্পম্ন মহলে প্রশম্ন উঠেছিল। জোট সরকারের শেষ দিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আলাদা বেতন স্ট্কেল প্রণয়নের যৌক্তিকতা মেনে নিয়েছিলেন সাবেক অর্থমন্পী এম সাইফুর রহমান।

তার নীতিগত সল্ফ্মতির ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এ বিষয়ে একাধিক চিঠিও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আলাদা পে-স্ট্কেল দেওয়া হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, অর্থমন্পীর কাছে বাকির হুমকি দিয়েছিলেন, 'কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আলাদা বেতন স্ট্কেল দিলে তাদেরও দিতে হবে। অন্যথায় তারা আন্দোলন করবেন। ' এর পর আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জন্য আলাদা পে-স্ট্কেল দেওয়ার বিষয়টি এগোয়নি।

অনুসল্পব্দানে জানা গেছে, সোনালী ব্যাংকের সিবিএ নেতা বিএম বাকির হোসেন বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন। অথচ তার মাসিক বেতন সাড়ে 5 হাজার টাকা। নিজ ব্যাংক থেকে নেওয়া গৃহ ঋণ ও মোটরসাইকেল ঋণের কিস্টিস্ন শোধ করে তার নিট বেতনের পরিমাণ আরো কম। এরপরও তিনি নিজের সনস্নানদের উচ্চতর লেখাপড়ার ব্যয় মিটিয়ে কীভাবে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন! তার আয় ও ব্যয়ের মধ্যে কোনো সঙ্গতি নেই। দু'হাতে টাকা উড়িয়েছেন।

এমপি হওয়ার স্ট্বপ্নও দেখছেন। যেখানে ব্যাংকের শীর্ষ কর্তাব্যক্তিটিও বেতনের টাকায় সংসার চালাতে পারছেন না। বাধ্য হয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করছেন। জোট সরকারের 5 বছরে চারটি রাষদ্ব্রায়ত্ত ব্যাংকের মধ্যে সোনালী ব্যাংকে সিবিএর দাপট ছিল অপ্রতিরোধ্য। এ ব্যাংকে সরকার সমর্থিত সিবিএ নেতা বিএম বাকির হোসেনের কথা ছাড়া কোনো কাজই হতো না।

প্রশাসনের প্রয়োজনে কোনো বদলি করলেও তা কার্যকর করা সম্ভব হতো না। ব্যাংক চলত অলিখিতভাবে বাকিরের নির্দেশে। জোট সরকারের শেষ সময়ে সোনালী ব্যাংকে অফিসার থেকে ডিজিএম পর্যনস্ন পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। পুরো প্রত্রিক্রয়াটি ব্যাংকের প্রশাসন করলেও চূড়ানস্ন (অনুমোদন!) করেছেন সিবিএ নেতা বাকির হেসেন। তিনি ব্যাংকের বিভিন্ন স্টস্নরের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের ঘুষ নিয়ে মেধারভিত্তিতে তৈরি তালিকা থেকে ইচ্ছামতো বাদ দিয়েছেন।

বাকিরের পছন্দ মতো পদোল্পম্নতি ও বদলির ফাইলে সই না করায় একজন জিএমকে বদলি করে দেওয়া হয়েছে ঢাকার বাইরে। এ যন্পণা সহ্য করতে না পেরে অনেকেই এখন হাল ছেড়ে দিয়েছেন। শুধু পদোন্নতির ক্ষেত্রে নয়, বদলির ক্ষেত্রেও ব্যাপক অনিয়ম ও টাকার খেলা চলেছে। ব্যাংকের সাবেক এমডির সময়ে তার জন্য কেনা গাড়ি বেশির ভাগ সময়ই ছিল বাকির হোসেনের দখলে। ব্যাংকের তৎকালীন জিএম সাবেরা খন্দকার অন্য ব্যাংকে বদলি হয়ে গেলে তার কক্ষটি দীর্ঘদিন বাকির দখল করে রেখেছিলেন।

ব্যাংকের গাড়ি সিএনজি করার বিষয়ে একটি কনভারশন সেন্টারের কর্মকর্তা ব্যাংকে গেলে তাকে বাকির বেঁধে রেখেছিলেন কিছুক্ষণ। এ ব্যাপারে যাতে আর কোনোদিন ব্যাংকে না আসে সে বিষয়েও শাসিয়ে দেন। ব্যাংকের যে কোনো অনিয়মের ঘটনায় প্রশাসনিক ব্যবস্ট্থা নেওয়ার আগে সিবিএ ব্যবস্ট্থা নিত। ব্যাংকের স্ট্থানীয় কার্যালয়ে ভুয়া ব্যাংক ড্রাফট ও সঞ্চয়পত্র জালিয়াতির ঘটনাটি ব্যাংকের বিভাগীয় ব্যবস্ট্থা নেওয়ার আগে সিবিএ মীমাংসা করা করেছে। বাকিরের ঘনিষ্ঠ সিলেটে ব্যাংকের একজন সিবিএ নেতাকে সংবর্ধনা দিতে একজন ডিজিএমের নেতৃত্বে কমিটি গঠন করা হয়েছিল কয়েক বছর আগে।

খুলনায় ব্যাংকের একটি শাখায় ব্যাপক অনিয়মের কারণে একজন ডিজিএমের চাকরি চলে যাওয়ার উপত্রক্রম হলে সিবিএর হস্টেস্নক্ষেপে তাকে এক ধাপ পদাবনতি দিয়ে চাকরিতে বহাল রাখা হয়। ব্যাংকের গৃহায়ন খাতে দেওয়া ঋণ সিবিএর একটি বড় আয়ের উৎস্য। এভাবে বাকির হোসেন একাধিক বাড়ি, গাড়ির মালিক হয়েছেন। '91 থেকে '96 সালে বিএনপি সরকারের সময়ের বাকির আর এখনকার বাকিরের মধ্যে আকাশ-পাতাল ব্যবধান। নড়াইল থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার আশায় জোট সরকারের শেষ দিকে তিনি নড়াইলে পানির মতো টাকা ঢেলেছেন।

বাকিরের কারণে নড়াইলের বাতাসে কিছুদিন টাকা উড়ে বেড়াত বলেও শোনা গেছে। তার রয়েছে এক ছেলে ও এক মেয়ে। স্ট্পী গৃহিণী। একজনের আয় দিয়ে রাজধানীর মালিবাগে 6 তলা একটি বিলাসবহুল বাড়ি করেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তার ভায়রা থাকেন বিদেশে।

তারা অনেক ধনাঢ্য ব্যক্তি। তিনি তাকে ওপরে ওঠার জন্য আর্থিক সহায়তা করেছেন। বেশির ভাগ তাদের অর্থে বাড়ি করেছেন। ওই বাড়ির মালিক তার স্ট্পী ও তার শালী। নড়াইল জেলা সদরে জমি কিনে মার্কেটে করেছেন, রামপুরায় ফ্ল্যাট কিনেছেন, রাজধানীর কয়েকটি অভিজাত মার্কেটে রয়েছে তার কয়েকটি দোকান।

এসব অভিযোগ অস্ট্বীকার করেছেন বাকির। নামে-বেনামে সঞ্চয়পত্র কিনেছেন। এ প্রসঙ্গে বাকির হোসেন বলেন, ঋণ বিতরণ ও আদায় করে ব্যবস্ট্থাপনা কতর্ৃপক্ষ। এখানে সিবিএ কীভাবে কমিশন খায়। পদোন্নতির বিষয়ে তার বিরুদব্দে আনা অভিযোগ অস্ট্বীকার করে বলেন, তিনি খুব সাধারণ জীবনযাপন করেন।

তার কিছু নিকট আত্মীয় বিদেশে থাকেন। তাদের আয়ের একটি অংশ তিনি পাচ্ছেন। যে অর্থে তিনি সমঙ্দ গড়েছেন। জোট সরকারের শেষ সময়ে নির্বাচনী ব্যয়ের তহবিল গড়তে ব্যাংকে বাকির হোসেন অবাধে করেছেন চাঁদাবাজি। ব্যাংকের বড় বড় ঋণ গ্রহীতাদের কাছ থেকে চাঁদা নিয়ে তাদের বেআইনি সুবিধা আদায় করে দিয়েছেন।

সিবিএর হুমকি-ধমকির মুখে ব্যাংক কর্মকর্তারা ছিলেন অসহায়। তাদের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করতে না পারায় ঊধর্্বতন কর্মকর্তাদেরও নাজেহাল হওয়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটেছে। ভিকারুননিসা স্ট্কুল অ্যান্ড কলেজের অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচনে তিনি ব্যয় করেছেন মোটা অংকের অর্থ। ব্যাংকের গাড়ি ব্যবহার করে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন। কেউ কোনো আপত্তি করার সাহস পায়নি।

যদিও ব্যাংকের কর্মকর্তারা গাড়ির অভাবে প্রায়ই অন্য ব্যবস্ট্থায় বাসায় গেছেন। ব্যাংকের ঊধর্্বতন কর্মকর্তাদের একটি অংশও পদোল্পম্নতি ও পছন্দনীয় বদলির জন্য বাকিরের কাছে তদবির করতেন। তিনি দিনের একটি অংশ কাটাতেন অর্থ মন্পণালয়ে। বিভিল্পম্ন তদবির করে অর্থ কমিশন আদায় ও তার প্রভাব প্রতিপত্তি সমঙ্র্কে ব্যাংকের গ্রাহকদের সমর্থন নেওয়াই ছিল লক্ষ্য। তিনি এনেকটা সফলভাবেই এসব করতে পেরেছেন।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বনানীর অফিস হাওয়া ভবনের চার কর্মকর্তা লাপাত্তা। তারা আর অফিসে আসেন না। যৌথ বাহিনী তাদের খুঁজছে_ এই আশগ্ধকায় তারা আত্দ্মগোপনে চলে গেছেন। তবে ঢাকাতেই আছেন। তারা হলেন_ মিয়া নহৃরুরদ্দীন অপু, তৌহিদুল ইসলাম ওরফে আশিক ইসলাম, রকিবুল ইসলাম বকুল ও সাজ্জাদুজ্জামান সিরাজ জয়।

অপু ছিলেন তারেক রহমানের পিএস, আশিক ছিলেন হাওয়া ভবনের মুখপাত্র, বকুল ও জয়ের দায়িত্দ্ব ছিল সরকারি প্রশাসনের নিয়োগ-বদলি ইত্যাদি দেখাশোনা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাওয়া ভবনের কর্মকর্তা হলেও তারা ছিলেন মহৃলত দলের সিনিয়র যুগ্গ্ম মহাসচিব তারেক রহমানের ব্যক্তিগত কর্মকর্তার মত। হাওয়া ভবনের মতো এসব কর্মকর্তাও তারেক রহমানের আদেশ-নির্দেশে চলতেন। দলের মধ্যে যেমন তাদের নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা, তেমনি ক্ষোভ-বিক্ষোভও রয়েছে। দেশে জরুরি অবস্ট্থা জারির পর গ্রেফতারের ভয়ে ধীরে ধীরে তারা আত্দ্মগোপনে চলে গেছেন।

সহৃত্র জানিয়েছে, এই চার কর্মকর্তার মধ্যে সবচেয়ে দাপট ছিল তারেক রহমানের পিএস অপুর। মানুষকে তিনি থোড়াই কেয়ার করতেন। দলের অনেক নেতা-কর্মীর সঙ্গেও তিনি দুর্ব্যবহার করতেন। সর্বশেষ গত 28 অক্টোবরও তিনি নয়াপল্কল্টনের সমাবেশ মঞ্চ থেকে যুবদল ও মহানগর বিএনপির কয়েকজন নেতা-কর্মীকে অপমান-অপদস্টস্ন করে নামিয়ে দেন। তার অসৌজন্যমহৃলক আচরণের কারণে একবার হাওয়া ভবন থেকে তারেক রহমান বের করে দিয়েছিলেন।

আমানউল্ক্নাহ আমানের অনুরোধে আবার বহাল হন। অপু ছিলেন জগল্পম্নাথ কলেজের ছাত্র এবং আমানের দেহরক্ষী। তার বাড়ি বৃহত্তর ফরিদুপরে। আত্দ্মীয়-স্ট্বজন আওয়ামী লীগ করেন। বর্তমানে তিনি তারেক রহমানের সঙ্গে তাদের বাসভবনেই অবস্ট্থান করছেন বলে জানা গেছে।

বকুল ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ছিলেন। হাওয়া ভবনে ঠাঁই পাওয়ার পর তিনি তারেক রহমানের আস্ট্থাভাজন হন। ক্ষমতায় থাকাকালে তিনি দায়িত্দ্ব পান প্রশাসনে নিয়োগ, বদলি, পদোল্পম্নতি ইত্যাদি দেখার। বিশেষ করে তারেক রহমানের পক্ষে তৎকালীন স্ট্বরাষদ্ব্র প্রতিমন্পী লুৎফুজ্জামান বাবরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন এবং পুলিশ প্রশাসনের নিয়োগ, বদলি ও পদোল্পম্নতি দেখতেন। পিএসসিতে যত নিয়োগ হতো তার তালিকা যেত এই বকুলের হাত দিয়ে।

তার সঙ্গে ছিলেন জয়। ক্ষমতার 5 বছরে তিনি তারেক রহমানের পক্ষে প্রশাসনের বদলি ও পোসদ্বিংগুলো দেখতেন। আশিক ইসলামের দায়িত্দ্ব ছিল প্রচার মাধ্যমের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা। হাওয়া ভবনের মুখপাত্র হিসেবে তিনি এই দায়িত্দ্ব পালন করেছেন। তার বিরুদব্দে অভিযোগ করা হয়, তিনি কিছু তরুণ সাংবাদিককে নিয়ে একটি সিন্ডিকেট গড়েছিলেন।

চার কর্মকর্তা এখন পালিয়ে থাকায় সমালোচনার বিস্টস্নার ঘটেছে। গ্রেপ্তার আতঙ্কে ভুগছেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর। যৌথবাহিনী দুর্নীতিবাজ ও গডফাদার মন্ত্রী-এমপি-নেতাদের পাকড়াও অভিযান শুর" করায় গা বাঁচাতে পশ্চিমা কূটনীতিকদের কাছে দৌড়ঝাঁপ শুর" করেছেন এক সময়ের ক্ষমতাকেন্দ্র হাওয়া ভবনের একানত্দ ঘনিষ্ঠ এ রাজনীতিক। অভিযোগ রয়েছে, বিগত বিএনপি-জামাত জোট সরকারের আমলের শীর্ষ দুর্নীতিবাজ, জঙ্গিবাদ লালনকারী ও সন্ত্রাসের গডফাদারদের মধ্যে বাবর অন্যতম। জানা গেছে জর"রি অবস্থা জারির পর একবার তার বাসায় অভিযানও চালিয়েছে যৌথবাহিনী।

তবে সে সময় তাকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। পরবর্তী সময়ে 'র"ই-কাতলা' পাকড়াও অভিযান জোরদার করায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন বাবর। যৌথবাহিনীর ধরপাকড় থেকে বাঁচতে ধর্না দিতে শুর" করেন প্রভাবশালী বিদেশী কূটনীতিক মহলে। কূটনীতিকদের সঙ্গে সম্পর্ককে আত্মরক্ষার লক্ষ্যে বাতাবরণ হিসেবে ব্যবহার করছেন বাবর। আর বিএনপির হাই কমান্ড তার এই কৌশলে উৎসাহ জোগাচ্ছে।

এরই অংশ হিসেবে সোমবার মার্কিন রাষ্ট্রদূত প্যাট্রিসিয়া এ বিউটেনিস ও ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত আনোয়ার চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন লুৎফুজ্জামান বাবর। মার্কিন রাষ্ট্রদূতের গুলশানের বাসভবনে এ সাক্ষাৎকালে বাবর যৌথবাহিনীর অভিযানে যাতে তাকে আটক না করা হয় সে জন্য কূটনীতিকদের হসত্দক্ষেপ কামনা করেন বলে জানা গেছে। এর আগে গত 21 জানুয়ারি বাবর তার গুলশানের বাসভবনে প্রভাবশালী পশ্চিমা কূটনীতিকদের সম্মানে নৈশভোজের আয়োজন করেন। এ অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব আব্দুল মান্নান ভুঁইয়া ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোরশেদ খানও উপস্থিত ছিলেন। বাবরের বাসভবনে এ ভোজসভা আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য ছিল এটা প্রমাণ করা যে তিনি বিএনপির গুর"ত্বপূর্ণ নেতা।

প্রভাবশালী কূটনীতিকদের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক রয়েছে। যৌথ বাহিনীর অভিযানে তাকে স্পর্শ করা যাবে না। জানা যায়, বিএনপি হাই কমান্ড বাবরকে আটক বা জিজ্ঞাসাবাদের হাত থেকে রক্ষার বিষয়টিকে গুর"ত্ব দিচ্ছে। কারণ তিনি শুধু নিজেই দুনর্ীতির সঙ্গে জড়িত নন, হাওয়া ভবনের যাবতীয় অপকর্মের অন্যতম সারথিও। তাছাড়া, বাবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে (প্রতিমন্ত্রী) থাকাকালে তার জ্ঞাতসারেই দেশে জঙ্গিবাদের চূড়ানত্দ বিস্ফোরণ ঘটে বলে অভিযোগ রয়েছে।

তিনি ধরা পড়লে এসব জারিজুরি ফাঁস হয়ে যেতে পারে বলে দলের নীতিনির্ধারকরাও ভেতরে ভেতরে শঙ্কিত। লুৎফুজ্জামান বাবর বিগত বিএনপি-জামাত জোট সরকারের অন্যতম ক্ষমতাধর ও সর্বাধিক আলোচিত স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। দলে বড়ো কোনো পদ না থাকলেও হাওয়া ভবনের পুষ্ট হওয়ায় তার ছিল প্রচণ্ড দাপট। জোট সরকারের দুর্নীতিবাজ মন্ত্রীদের তালিকায়ও তার নাম ছিল শীর্ষে। দুর্নীতির মাধ্যমে মাত্র 5 বছরে তিনি শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।

তার আমলে পুলিশের গাড়ি কেনা, পুলিশের পোশাক বদলে ব্যাপক দুর্নীতিসহ মন্ত্রণালয়ের যে কোনো টেন্ডারে 10 শতাংশ কমিশন আদায়ের অভিযোগ আছে তার বির"দ্ধে। পুলিশে নিয়োগ ও পোস্টিঙের ক্ষেত্রে উৎকোচ গ্রহণের মাধ্যমেও বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিসেবে পুলিশকে অনেকটা দলীয় বাহিনীতে পরিণত করেছিলেন বাবর। অভিযোগে জানা যায়, তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবরের নির্দেশ ছাড়া পুলিশের কোনো নিয়োগ, বদলি কিংবা পদোন্নতি হতো না। আর এ জন্য তাকে দিতে হতো মোটা অংকের উৎকোচ।

গত বছরের জুনে ডিএমপিতে সাড়ে 700 কনস্টেবলকে এএসআই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এ পদোন্নতিতে জনপ্রতি দেড় থেকে দুই লাখ টাকা করে উৎকোচ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। জাতিসংঘ শানত্দি মিশনে পুলিশ পাঠানোয় অনিয়ম ও দুর্নীতি ছিল ওপেন সিক্রেট। পুলিশের এএসআই পদে পদোন্নতি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র হাজার হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। গত বছরের 13, 14 ও 15 অক্টোবর অনুষ্ঠিত এ পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টি প্রকাশ হয়ে পড়লে পুলিশের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

পরে ঐ পরীক্ষা বাতিল করে 20, 21 ও 22 অক্টোবর গ্রহণ করা হয়। অভিযোগ রয়েছে বাবরের নির্দেশে পিএসসির মাধ্যমে দলীয় পরিচয়ে 200 এএসপি নিয়োগ করা হয়। এ নিয়োগের ক্ষেত্রে জনপ্রতি 5 থেকে 7 লাখ টাকা উৎকোচ গ্রহণ করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগে আরো জানা যায়, 2004 সালে এসআই পদের জন্য দরখাসত্দ আহ্বান করা হয়। ঐ বছরের নভেম্বর মাসে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেয় 13 হাজার প্রার্থী।

কিন' লিখিত পরীক্ষায় পাস করে মাত্র 300 জন। পরে 20 মার্ক গ্রেস দিয়ে পাস করানো হয় 1 হাজার 100 জনকে। এর মধ্যে নিয়োগ দেওয়া হয় 830 জনকে। এরা সাবই ছিল বিএনপি-জামাতের দলীয় লোক। তা সত্ত্বেও এদের প্রত্যেকের কাছ থেকে 2 থেকে 5 লাখ টাকা উৎকোচ আদায় করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

র্যাব, পুলিশ ও ফায়ার ব্রিগেডের হাজার হাজার কোটি টাকার গাড়ি ক্রয়ে বাবর দুর্নীতির মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলেও অভিযোগে প্রকাশ। সার্ক সম্মেলনকে সামনে রেখে 2005 সালের মাঝামাঝি সময়ে 1 হাজার 948টি গাড়ি কেনার সিদ্ধানত্দ নেয় সরকার। র্যাব ও পুলিশের জন্য এ গাড়ি ক্রয়ের পুরো প্রক্রিয়া ছিল দুর্নীতি আর অনিয়মে ভরা। তড়িঘড়ি করে কিছু শর্ত আরোপের মাধ্যমে একটি বিশেষ প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে ঐ গাড়িগুলো আমদানি করা হয়। হাওয়া ভবনের নির্দেশে এর নেপথ্যে যাবতীয় কলকাঠি নেড়েছেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবর নিজে।

এই গাড়ি আমদানির মাধ্যমে হাওয়া ভবন ও বাবর কোটি কোটি টাকা কমিশন খেয়েছেন বলে অভিযোগ আছে। ভূমি দখলবাজিতেও বাবর পিছিয়ে ছিলেন না। সাভারের মিথুন গ্রামে বাবর শতাধিক খ্রিস্টান পরিবারকে উচ্ছেদ করে 90 বিঘা জমি দখল করেন। এই নিয়ে এলাকায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হলে তিনি পরে এই জমির দখল ছেড়ে দেন। বাবর স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী থাকা অবস্থায় তার নির্বাচনী এলাকা নেত্রকোনা-4 এর মোহনগঞ্জে গড়ে তুলেছিলেন ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী।

জয়নাল হাজারীর স্টিয়ারিং কমিটির আদলে গঠিত এই কমিটি ছিল 'এইট কমিটি' নামে পরিচিত। 8 নেতার সমন্বয়ে গঠিত বলে কমিটি এই নামে পরিচিতি পায়। এই এইট কমিটি মোহনগঞ্জকে সন্ত্রাসের রাজত্বে পরিণত করে বলে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। এইট কমিটির সন্ত্রাসী বাহিনীর হাতে প্রতিপক্ষের কমপক্ষে 3 জন খুন হয়। আহত হয় অসংখ্য।

অনেক হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটায় এইট কমিটির সন্ত্রাসীরা। একটি ঘটনায় আদালত 5 সন্ত্রাসীকে শাসত্দি দিলেও বাবরের প্রচেষ্টায় তাদের সাজা মওকুফ করে আবার মাঠে নামানো হয়। এলাকায় ব্যাপক প্রভাব ছিল এইট কমিটির। কেউ তাদের বির"দ্ধে মুখ খোলার সাহস করতো না। ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ, কাবিখা-টিআরের বরাদ্দ বণ্টন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওপর কর্তৃত্ব সবই ছিল এইট কমিটির হাতে।

সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবরের বির"দ্ধে সবচেয়ে বড়ো অভিযোগ জঙ্গিবাদ লালনের। সামপ্রদায়িক জঙ্গিগোষ্ঠীর বির"দ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে তাদের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিসেবে তাদের বেড়ে ওঠার সুযোগ করে দিয়েছিলেন তিনি। হাওয়া ভবনসহ বিএনপি-জামাতের শীর্ষ মহলের ইঙ্গিতে জঙ্গি দমনের পরিবর্তে তাদের মদদ দিয়েছিলেন বাবর। তার ও হাওয়া ভবনের মূল দুশ্চিনত্দা এখানেই। বাবর যৌথ বাহিনীর হাতে ধরা পড়লে জিজ্ঞাসাবাদের মুখে সবকিছু ফাঁস করে দিতে পারেন এই আশঙ্কায় বাবরকে রক্ষায় মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে বিএনপি হাইকমান্ড।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।