বাঙ্গালী জাতির গৌরবময় ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় সংস্কৃতির জন্য অপমানজনক কোনকিছু এই ব্লগে লেখা যাবে না।
::::ভোরের কাগজ:::::
ছাত্র হিসেবে মেধাবী ছিলেন না। স্নাতক পাসের পর কোথাও চাকরি না পেয়ে 1977 সালে যোগদান করেন রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকে নিম্নমান করণিক হিসেবে। লোকে বলে, বর্তমানে শতাধিক কোটি টাকার মালিক। মানুষ খুন করে টাকা করেননি, খুন করেছেন দেশের অর্থনীতি।
ব্যাংক প্রশাসনকে জিম্মি করে চালিয়েছেন দেদারসে কমিশনবাজি। কপর্দকশূন্য দশা থেকে রাতারাতি বেহিসেবি বিত্তবৈভবের মালিক বনে যাওয়া কোনো ব্যাপারই হয়নি। একজন সামান্য করনিক থেকে পরিনত হয়েছেন ধনকুবেরে। ঢাকায় রয়েছে একাধিক জমি, গাড়ি, বাড়ি, ফ্লাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। রয়েছে বেহিসেবি অস্থাবর সম্পদ, বিপুল ব্যাংক ব্যালান্স।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, 1990 সাল পর্যনত্দ জাতীয় পার্টি (এরশাদ) সমর্থিত সোনালী ব্যাংকের সিবিএ (সেন্ট্রাল বার্গেনিং এজেন্ট) নেতা জামাল উদ্দিনের একজন সাধারণ কমর্ী হিসেবে কাজ করতেন বি এম বাকির হোসেন। 1991 সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর বিএনপিতে যোগদান করেন। এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। 1991 থেকে 1996 সালের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে একবার বিএনপি সমর্থিত সিবিএ নেতা হিসেবে পূর্ণ প্যানেলে নির্বাচিত হন। সে সময় তেমন কোনো প্রভাব ব্যাংকে ফেলতে পারেননি বাকির।
কিন' 2001 সালে বিএনপি-জামাত ক্ষমতায় আসার পর তিনি পুনরায় পুর্ন প্যানেলে সিবিএ নেতা নির্বাচিত হন। সেই থেকে আজ পর্যনত্দ বাকির সিবিএ নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আর এই সময়টাই একজন করণিকের স্বর্ণযুগ। এ সময় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমান ও হাওয়া ভবনের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা সৃষ্টি হয়। তিনি হয়ে ওঠেন ব্যাংক পাড়ার সম্রাট।
শুর" হয় অর্থ উপার্জন। হয়ে ওঠেন কোটিপতি থেকে শতাধিক কোটি টাকার মালিক। গাড়ি, বাড়ি ও জমি ক্রয়ের মাধ্যমে তার সাম্রাজ্য বাড়তে থাকে।
2001 থেকে 2006 সাল পর্যনত্দ এই ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) বাকিরের নির্দেশে চলতে হয়েছে। অঘোষিত এমডি হিসেবে তিনি ব্যাংকে সমধিক পরিচিত ছিলেন।
বিএনপির ছত্রছায়ায় থাকার কারণে তিনি ব্যাংক কোম্পানি আইন, প্রশাসন ও প্রচলিত আইনের ধরাছোঁয়ার উধের্্ব উঠে যান। ব্যাংক প্রশাসনের নির্দেশে বাকির চলেননি, বরং প্রশাসন তার নির্দেশে চলেছে। হাওয়া ভবন থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় পর্যনত্দ সর্বত্র তার অবাধ বিচরণ ছিল, কোথাও বাধা ছিল না। হাওয়া ভবনের সুনজরে থাকার সুবাধে তিনি ব্যাংকের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হয়ে যান। তার প্রভাব ও দাপটের কারণে ব্যাংকাররা তাকে সোনালী ব্যাংকের মালিক মনে করতেন।
রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের করণিক থেকে উপহিসাব রক্ষক হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন বাকির, কিন' একটি মুহূর্তের জন্য তিনি উপহিসাব রক্ষকের চেয়ারে বসেননি। সারাক্ষণ সিবিএ অফিসে বসে তদবিরের কাজ করেন। সিবিএ অফিসে তাকে 1 মিনিটের জন্য ফ্রি পাওয়া যায় না।
টেন্ডারবাজি, বদলি, নিয়োগ, নতুন ঋণ অনুমোদন, খেলাপিসহ যে কোনো ঋণের সুদ মওকুফ থেকে শুর" করে ব্যাংক প্রশাসনের সর্বত্র কমিশনবাজিতে তার একচ্ছত্র আধিপত্য। প্রতিদিন তার ঝুলিতে গড়ে কতো টাকা জমা হতো তা নিয়ে নানা কথা প্রচলিত আছে।
তবে তা লাখের হিসেবে বলে ধারণা তারই ঘনিষ্ঠজনদের। এ ছাড়া নানা 'থোক আয়'তো ছিলই।
বি এম বাকির ভিকার"নি্নসা নূন স্কুলের অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচনে 7 কোটি টাকার ওপরে ব্যয় করেন। এই নির্বাচনে অভিভাবকদের শাড়ি ও প্যান্ট পিস, মিষ্টির হাঁড়িসহ নানা উপহার পাঠিয়ে তাদের মন জয় করেন এবং অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচিত হন। বিতর্কিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নড়াইল-2 আসন থেকে এমপি পদে নির্বাচন করার লক্ষ্যে গত দুবছর ধরে প্রতিদিন ঢাকায় বসবাসরত নড়াইলবাসীদের সঙ্গে বৈঠক করে বিভিন্ন ধরনের উপহার প্রদান, অর্থ সরবরাহ করে তাদের মন জয় করেন।
ঢাকাস্থ নড়াইলবাসী তাকে এমপি হিসেবে পাওয়ার জন্য সর্বত্র চেষ্টা করেছেন। এছাড়া সপ্তাহে দু'দিন নড়াইলে গিয়ে অবস্থানকালে বাকির প্রতিদিন প্রচুর টাকা খরচ করতেন বলে নড়াইলবাসীরা জানায়। এই নির্বাচনে বাকিরের বাজেট ছিল 100 কোটি টাকা বলে একাধিক সূত্রে জানা যায়।
একজন করণিক হয়েও বাকির ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা ও রাজশাহী শহরে বিমান ছাড়া যাতায়াত করেন না। সোনালী ব্যাংকে গত 5 বছরে যতো নিয়োগ, পারস্পরিক বদলি, টেন্ডার, নতুন ঋণ অনুমোদন ও সুদ মওকুফ হয়েছে তা বি এম বাকিরের নির্দেশ ছাড়া হয়নি।
ঢাকা থেকে যে কোনো জেলা শহরে পারস্পরিক বদলির ক্ষেত্রে 50 হাজার থেকে 1 লাখ টাকা পর্যনত্দ কমিশন বাকিরকে দিতে হয়েছে।
প্রতিটি টেন্ডারের ক্ষেত্রে 25 শতাংশ হারে কমিশন, ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সকল সংস্কার কাজ, আসবাবপত্র ও স্টেশনারি ক্রয় বাকিরের নামে হতো, তিনি যে বিল করে দিতেন তাই পাস হয়ে যেতো। তার বিলের ওপর কারো কোনো মনত্দব্য করার অধিকার ছিল না।
ঋণ বিতরণ ও সুদ মওকুফের ক্ষেত্রেও বাকির ইচ্ছামতো ক্ষমতা প্রয়োগ করেন, নতুন ঋণ অনুমোদনের ক্ষেত্রে বাকির 5 থেকে 10 শতাংশ হারে কমিশন নেওয়াসহ সুদ মওকুফের ক্ষেত্রে একই পদ্ধতি অবলম্বন করেন। এক্ষেত্রে কারো কোনো কথা বলার অধিকার নেই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।