আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দুদককে যেভাবে খোজা করা হলো ২০০৪-২০১৩

ট্রুথ নট সেইড টুডে, কুড টার্ন টু আ লাই টুমোরো ২০০৪ সালে দুর্নীতি দমন কমিশন গঠন করছিল বিএনপি সরকার। কিন্তু তারা যেমন নিজেদের দুর্নীতি দমন করেন নাই, এখনকার আওয়ামী লীগ সরকারও করতেছে না। মাঝে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারও একই ধারা অব্যাহত রাখছে। সেনাবাহিনীর দুর্নীতির দিকে তারা নজর দেয় নাই। সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের খপাখপ ধৈরা, বাসা থিকা মদ, শাড়ি জব্দ কৈরা দুদক ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় সেই সময়।

এখন অবশ্য এইসব নেতা নেত্রীদের সংসদে টেবিল চাপড়াইতে, সৌদি আরবে দফায় দফায় ওমরাহ করতে দেখা যাচ্ছে। দুদকের বয়স প্রায় ৯বছর হইতে যাচ্ছে। দুদকের সাফল্য ব্যর্থতার কারণ খোজার টাইম হইসে। কারণ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা দুর্নীতি। দুর্নীতিতে সারা বিশ্বে সামনের কাতারে দীর্ঘদিন।

গতবার আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল দুর্নীতিদমন। কিন্তু তারা করসে উল্টা- দুর্নীতিরমন। দুই দশ কোটির জায়গায় এখন শত কোটি, হাজার কোটির দুনীতি হরহামেশাই ধরা পড়তেছে। আওয়ামী লীগ সরকার কমিশন এক্টের এমেন্ডমেন্ট কইরা দুদককে খোজা কইরা রাখছে। এইকাজে অগ্রণী ভুমিকা রাখসিল মখা আলমগীর।

এই সংশোধনীগুলা নিচে দিলাম: ১। সরকারী কর্মচারী, জজ, মেজিস্ত্রেইটদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ আনতে বা মামলা করতে হইলে 'অবশ্যই' সরকারের অনুমতি নিতে আবেদন(প্রমানসহ) জমা দিতে হবে। -এইটার মাধ্যমে সকল সংসদ সদস্য দুদক চিন্তামুক্ত দুর্নীতি করার লাইসেন্স পাইলেন। ২। সরকার নিজেই দুদক চেয়ারম্যান নিয়োগ দিবে।

এমনকি নিয়োগদানের টার্মস এন্ড কন্ডিশন সব সরকার নির্র্ধারন করবে। - পাপেট স্থাপন এবং হাতে পায়ে সুতা বাঁধা সারা। ৩। সরকারী কোন প্রতিষ্ঠান থেকে সরকারের অথরিটিতে দুদক তদন্ত স্বার্থে কোন তথ্য চাইতে পারে। - এরমানে সরকার না চাইলে জিন্দেগীতে কোন তথ্য পাবে না দুদক, দিতে বাধ্যও থাকবে না সরকারি, আধা সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলান।

৪। দুদক কোন সমন বা ওয়ারেন্ট ইস্যু করতে পারবে না কারো নামে। তারা শুধু 'নোটিশ' পাঠাইতে পারবে। তার মানে দাড়াইলো স্বদিচ্ছা থাকলেও দুদক সরকারী দুর্নীতি ধরতে পারবে না শক্ত ইনভেস্টিগেশন চালায়ে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দুদক মামলা করার চেয়ে মামলা বাতিল করতে বেশি সক্রিয় ছিল।

পত্রিকাতে যেসব বড় বড় দুর্নীতির কথা আসছিল তা সরকারের ভাবমূর্তিকে ক্ষুন্ন করতে শুরু করলে দুদক সরকারের স্বার্থসংরক্ষণ করতে ক্রাইসিস ম্যানেজ করতে ভূমিকার রাখসে। কিন্তু নিজে থেকে কোন বড় মামলা বা তদন্ত করতে যায় নাই। যেমন বলা যায়, পদ্মা সেতুর ক্ষেত্রে উপদেষ্টা মশিউর আর আবুলদের রক্ষা করার চেষ্টা, হলমার্কের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিত্সক কাম উপদেষ্টাকে রক্ষা। সবক্ষেত্রেই ফায়ার ব্রিগেটের মত আগুন নেভাতেই দুদককে দেখা গেছে দায়সারা অবস্থান থেকে ধামাচাপা দিয়ে আইওয়াশ দিতে। ১/১১-এর সময় দুদকের বেশিরভাগ মামলা ছিল হয়রানিমূলক- বলেন চেয়ারম্যান গোলাম রহমান।

অধিকাংশ মামলাতেই তারা হেরেছে সেচ্ছায় কিংবা প্রমানের অভাবে, অভিযোগ গঠনের দুর্বলতায় উচ্চআদালতে। উনাদের ক্লিনাপ প্রসেসের কিছু নমুনা খবরের শিরোনামে: #দুদকের মামলায় শেখ হেলাল ও তার স্ত্রীর সাজা বাতিল: ৮ নভেম্বর ২০১০ #নুর-ই আলম চৌধুরীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা বাতিল :কালের কন্ঠ ১২ অক্টোবর ২০১০ #দুর্নীতির মামলায় হাজি সেলিমের সাজা বাতিল: ৩ জানুয়ারী ২০১১ #বিজয় টিভি চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র মহিউদ্দিনের মামলা বাতিল #ফালু-হাশেমের সম্পদের মামলা বাতিল :২০ জানুয়ারী ২০১২ #দুদকের ৭২৫ মামলার আসামিদের অব্যাহতির সুপারিশ:৩০ সেপ্টেম্বর ২০১০ #খ ম জাহাঙ্গীরের মামলা ও আতিকউল্লাহ মাসুদের সাজা বাতিল:৭ অক্টোবর ২০১০ #সাজেদা চৌধুরীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা হাইকোর্টে বাতিল:৩০ নভেম্বর ২০১২ #আমান ও শাহজাহান ওমরসহ চার জনের সাজা বাতিল:১৭ আগস্ট ২০১০ #যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে করা দুদকের মামলা বাতিল: ২০ মে ২০১১ #আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ও নাছিরের সাজা বাতিল: ১১ আগস্ট ২০১০ #সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোর্শেদ খানের ছেলে ফয়সাল মোর্শেদের সাজার রায় বাতিল: ৪ আগস্ট ২০১০ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পুরো সময় দুদক গোয়েন্দা কার্যাবলি খাতে এক কোটি ২৯ লাখ টাকা ব্যয় করে। এভাবে পাইকারী মামলা প্রত্যাহার, রায় বাতিল মানে পুরো টাকাই অপচয়। আগের পর্বে বলেছিলাম কিভাবে আইনে সংশোধনী এনে আওয়ামী লিগ সরকার দুদককে খোজা করে রাখসে। ক্যাপাসিটি বিল্ডাপ করতে 'ফরেনসিক একাউন্টিং' এ ট্রেনিং দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক।

এতে কে কোন টাকা কোথায় সরাচ্ছে ব্যবহার করছে তা খুজতে দুদকের সক্ষমতা বাড়তো। কিন্তু দুদক সেই প্রস্তাব গ্রহণ করে নাই। তারা সনাতনী মিলিটারী পন্থায় ২০০৭ সালে যে ইনভেস্টিগেশন করে তার নমুনা দেখতে পাই লিক হওয়া অডিও, ভিডিওতে আওয়ামী লীগের এমপিরা একে অন্যের নামে 'শুনেছি' এত কোটি, 'মনে হয়' এত কোটি নিয়েছে এমন কথা বলেছেন। তাতে আমাদের মনে দুর্নীতির ধারণা পরিস্কার হয়। কিন্তু এর প্রমান ও কন্ভিক্সনের জন্য যেই তদন্ত আর অভিযোগ গঠনে এনালাইসিস দরকার তার অভাব প্রকট ছিল।

ভবিষ্যতে কারো গ্রেফ্তারেই তালিয়া না দিয়ে কন্ভিক্সন পর্যন্ত অপেক্ষা করা অনুরোধ থাকলো। স্বস্তা জনপ্রিয়তার জন্য গ্রেফতার করে হয়রানিকরে আখেরে কোন ফল হয় না। দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে দুদকের শক্তি বৃদ্ধি করতে হবে, সত্যিকারের স্বায়ত্বশাসন দিতে হবে। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৯ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।