ছাত্র সরকারিভাবে সারা দেশে ছয় মাস থেকে পাচ বছর বয়সী শিশুদের শুধু ভিটামিন-এ ক্যাপসুল এবং দুই বছর থেকে পাচ বছর বয়সী শিশুদের এ ক্যাপসুলের সঙ্গে কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়ানোর কর্মসূচি পালিত হয় গত ১২ মার্চ। এ ওষুধ খাওয়ানোর প্রেক্ষিতে সেদিনই সারা দেশে কয়েকটি শিশুর মৃত্যু এবং হাজার হাজার শিশুর অসুস্থ হয়ে হসপিটালে ভর্তি হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ে। এ খবরকে ভিত্তিহীন ও গুজব আখ্যায়িত করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বিবৃতি দেয়া হয়। বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং টিভি চ্যানেলে স্বাস্থ্য মন্ত্রী এবং স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী দেশব্যাপী শিশুদের গণহারে অসুস্থ হওয়ার খবরকে সরকারের বিরুদ্ধে কুচক্রী মহলের গুজব হিসেবে অভিহিত করেন।
এ ক্যাপসুল খাওয়ানোর পরদিন ১৩ মার্চ প্রথম আলোসহ বেশির ভাগ দৈনিক পত্রিকায় সারা দেশে শিশুদের অসুস্থ হয়ে পড়ার খবরকে সরকারের সঙ্গে সুর মিলিয়ে গুজব ও অপপ্রচার হিসেবে রিপোর্ট করা হয়।
এসব রিপোর্টে আরো বলা হয়, ১২ মার্চ সকাল থেকেই সারা দেশে সরকার বিরোধী একটি মহল ভিটামিন-এ ক্যাপসুলকে মানহীন ও ক্ষতিকর হিসেবে আখ্যায়িত করে গুজব ছড়িয়ে দেয়। ফলে বহু পরিবার তাদের শিশুদের ক্যাপসুল খাওয়ানো থেকে বিরত থাকে। এতে দেশের সামগ্রিক শিশু স্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে মন্তব্য বরা হয়।
এরপর ১৭ মার্চ দৈনিক ইত্তেফাক এবং এর ধারাবাহিকতায় আরো দু-একটি পত্রিকায় ভিটামিন-এ ক্যাপসুল নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশিত হয়। এসব রিপোর্ট থেকে জানা যায়, সরকার এবার ইনডিয়ার ‘অলিভ হেলথ কেয়ার’ নামের একটি অখ্যাত ওষুধ কম্পানি থেকে নিম্নমানের ভিটামিন-এ ক্যাপসুল সংগ্রহ করেছে।
এ দেশে বরাবরই জানুয়ারি মাসে শিশুদের ভিটামিন-এ এবং কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়ানো হয়ে থাকে। কারণ এ ধরনের ওষুধ খাওয়ানোর উপযুক্ত সময় হলো শীতকাল। এবারো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানুয়ারিতেই একবার তারিখ নির্ধারণ করেছিল। কিন্তু সরকারের এ কর্মসূচিতে আর্থিক সহায়তাকারী ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের আপত্তিতে সেই তারিখ পরিবর্তন করা হয়।
জানা যায়, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের আপত্তিতে সরকার তিন দফা তারিখ পরিবর্তন করে।
ওয়ার্ল্ড ব্যাংক প্রশ্ন তুলেছিল ভিটামিন-এ ক্যাপসুল সরবরাহকারী ইনডিয়ান কম্পানিটি সম্পর্কে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডঐঙ)-র অনুমোদন ছাড়া এই ক্যাপসুল কেনা এবং খাওয়ানো ঠিক হবে না বলে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক সরকারকে সতর্ক করেছিল।
ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের পরামর্শ এবং বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা উপেক্ষা করে সরকার বিতর্কিত ইনডিয়ান কম্পানি থেকেই ১০ কোটি পিস ভিটামিন-এ ক্যাপসুল কেনে। শিশু মৃত্যু হ্রাস, অপুষ্টিজনিত অন্ধত্ব প্রতিরোধে সরকারিভাবে দেশের সব শিশুকে বছরে দুইবার ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের অর্থায়নে ভিটামিন-এ ক্যাপসুল খাওয়ানো হয়। এই ক্যাপসুল কেনা হয় আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে।
এই দরপত্রে কোনো কম্পানি সর্বনিম্ন দরদাতা হলেও সেই কম্পানি অযোগ্য বিবেচিত হবে, যদি সেই কম্পানি এ দেশের ওষুধনীতির আলোকে গ্রহণযোগ্য না হয়।
অনুসন্ধানে দেখে গেছে, ইনডিয়ার অলিভ কম্পানির ভিটামিন-এ ক্যাপসুল বাংলাদেশে নিবন্ধিত নয়। এ ছাড়া কম্পানিটি উন্নত কোনো দেশেই নিবন্ধিত নয়। নেই তাদের আন্তর্জতিকভাবে স্বীকৃত কোনো সার্টিফিকেট। তাই ইনডিয়ার এ কম্পানিটি আন্তর্জাতিক দরপত্রে সর্বনিম্ন হলেও অযোগ্য এবং দরপত্র প্রাক-মূল্যায়ন পর্যায়েই তাদের বাদ পড়ার কথা।
এ কারণে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকও এ কম্পানি থেকে ক্যাপসুল নেয়া উচিত নয় বলে সরকারকে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছিল।
মূলত এ বছর ভিটামিন-এ ক্যাপসুল কেনার পুরো প্রক্রিয়ায় ছিল অনিয়ম আর দুর্নীতি। সরকারি দলের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক পদধারী এক নেতার কয়েক শ কোটি টাকার কমিশন প্রাপ্তির কারণেই ইনডিয়ার কম্পানিটি শেষ পর্যন্ত ভিটামিন-এ ক্যাপসুল সাপ্লাইয়ের অর্ডার পায়। শুধু তা-ই নয়, নিম্নমানের এ ওষুধ গতবারের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি দামে কম্পানির কাছ থেকে কেনা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের অর্থ লুটপাটের প্রতিযোগিতায় শেয়ার বাজার, কুইক রেন্টাল, হলমার্ক, ডেসটিনি, ইউনিপে টু, পদ্মা সেতুর পর যুক্ত হলো শিশুদের এই ক্যাপসুল।
সরকারের শেষ সময়ে এসে দুগ্ধপোষ্য শিশুরাও আওয়ামী লীগ নেতাদের লুটপাটের শিকার হলো। তাদের সর্বগ্রাসী দুর্নীতি এবং সন্ত্রাস থেকে এ দেশের কোনো প্রতিষ্ঠান বা গোষ্ঠী আজ নিরাপদ নয়।
fb.com/ShafikRehmanPresents
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।