"হরি আছেন পূর্বে, আল্লা আছেন পশ্চিমে, তুমি তোমার হৃদয় খুঁজে দেখ- করিম ও রাম উভয়েই আছেন হৃদয়ে; এ জগতের সমস্ত মানব-মানবীই তাঁর অংশ। " (সন্ত কবীরের গান; তর্জমা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর) অভিমান
কেউ জানে না
জীবন ঝরে যায় বার্চের পাতার মতো,
আর পায়ে মাড়িয়ে যে যার গন্তব্যে চলে যায়, পেছন ফেরে না, শরীরে জমতে থাকে বরফের চাঁই, পাথর।
চিৎপুরে কিংবা আরমানিটোলার গলি হলে কেউ নিশ্চয় আহা
বলত
পলাশির রাস্তায় ভিড় হত, গাড়িঘোড়া শ্লথ হত শ্যামবাজারে,
নীলক্ষেতে।
জীবন উড়ে যায় দুরন্ত সি-গালের মতো, কেউ জানে না কোথায়,
পেছনে কেউ হাত নাড়ে না, কেউ জল মোছে না আঁচলে বা শার্টের
হাতায়,
কেউ মাথার দিব্যি দিয়ে বলে না ফিরে এসো।
জীবন পড়ে থাকে ফুটপাতে শুকনো ফুলের মতো, সিগারেটের
ফিলটারের মতো,
কাগজের ঠোঙার মতো,
পেছন ফেরে না কেউ, শরীরে জমতে থাকে শ্যাওলা, ব্যাঙের ছাতা।
ঝরে যেতে থাকি বার্চের পাতার মতো, পড়ে থাকি ঘোর অন্ধকারে
কে আর আলো জ্বেলে বলবে- বাঁচো!
এ তো আর বোলপুর নয়, বনানী বা বঙ্গবাজারের মোড় নয়।
অস্বীকার
ভারতবর্ষ কোনও বাতিল কাগজ ছিল না যে তাকে ছিঁড়ে টুকরো
করতে হবে।
সাতচল্লিশ শব্দটিকে আমি রবার দিয়ে মুছে ফেলতে চাই।
সাতচল্লিশের কালিকে আমি জল সাবান দিয়ে ধুয়ে দিতে চাই।
সাতচল্লিশ নামের কাঁটা গলায় বিঁধছে, এই কাঁটা আমি গিলতে চাই না,
উগরে দিতে চাই
উদ্ধার করতে চাই আমার পূর্বপুরুষের অখণ্ড মাটি।
আমি ব্রহ্মপুত্র যেমন চাই, সুবর্ণরেখাও চাই
সীতাকুণ্ড পাহাড় চাই, আবার কাঞ্চনজঙ্ঘাও চাই।
শ্রীমঙ্গল চাই, জলপাইগুড়িও।
শালবন বিহার চাই, আবার ইলোরা অজন্তাও।
কার্জন হল যদি আমার, ফোর্ট উইলিয়ামও আমার।
একাত্তরে যে মানুষ যুদ্ধ করে
জয়ী হয়,
দ্বিজাতি তত্ত্বকে ঠেঙিয়ে বিদেয় করে-
সাতচল্লিশের কাছে সে মানুষ পরাজিত হয় না কখনও।
মৃত্যুদণ্ড
এই আমি দাঁড়ালাম
শরীরে কোনও অসুখ আছে কি না পরীক্ষা করুন। শেষ স্নান করিয়ে দিন।
আখেরি ইচ্ছে-টিচ্ছের কথা জিজ্ঞেস করুন-
আপনারা তো এমন কথাই জিজ্ঞেস করবেন, কী আমার খেতে ইচ্ছে করে
বিরুই চালের ভাত? গলদা চিংড়ি? কই ভাজা? তেঁতুলের আচার? সর্ষেবাটা ইলিশ
কাকে দেখতে ইচ্ছে করে, বাবা মা? ভাই বা বন্ধু? খুব কাছের কোনও মানুষ?
না, এরকম কোনও ইচ্ছে আমার করবে না,
এসবের কিছুই না চেয়ে
আমি এমন একটি ইচ্ছের কথা বলব যে আমি জানি আপনারা চমকে উঠবেন।
আমি যদি বলি একটি সেকুলার পৃথিবী চাই, দেবেন?
অথবা যদি চাই শস্যখেতের সব আল ভেঙে যাক, কাঁটাতার সীমানা আর
দেশে দেশে দেয়াল ধসে যাক।
যদি চাই কোনও শ্রেণী নেই, নারী ও পুরুষে বৈষম্য নেই, ধর্ম নেই, দেবেন?
দেবেন তেমন একটি সুন্দর জগৎ আমার চোখের সামনে?
দিলে আমি হেসে ঝুলব ফাঁসিকাঠে
দিলে আমি মাথা পেতে নেব মৃত্যুদণ্ডাদেশ,
তা না হলে ফাঁসির দড়ি ছিঁড়ে আমি বেরিয়ে যাব, আবার বাঁচব।
বেঁচে আমি স্বপ্ন বপন করব একভাগ মাটি আর তিনভাগ জলে।
চরিত্র
তুমি মেয়ে,
তুমি খুব ভাল করে মনে রেখো
তুমি যখন ঘরের চৌকাঠ ডিঙোবে
লোকে তোমাকে আড়চোখে দেখবে।
তুমি যখন গলি ধরে হাঁটতে থাকবে
লোকে তোমার পিছু নেবে, শিস দেবে।
তুমি যখন গলি পেরিয়ে বড় রাস্তায় উঠবে
লোকে তোমাকে চরিত্রহীন বলে গাল দেবে।
যদি তুমি অপদার্থ হও
তুমি পিছু ফিরবে
আর তা না হলে
যেভাবে যাচ্ছ, যাবে।
প্রত্যাশা
কারুকে দিয়েছ অকাতরে সব ঢেলে
সেও অন্তত কিছু দেবে ভেবেছিলে।
অথচ ফক্কা, শূন্যতা নিয়ে একা
পড়ে থাকো আর দ্রুত সে পালায় দূরে
ভালবেসে কিছু প্রত্যাশা করা ভুল।
আলোকিত ঘর হারিয়ে ধরেছ অন্ধকারের খুঁটি
যারা যায় তারা হেসে চলে যায়, পেছনে দেখে না ফিরে।
তলা ঝেড়ে দিলে, যদিও জোটেনি কানাকড়ি কিছু হাতে
তুমি অভুক্ত, অথচ তোমার সম্পদ খায় তারা
যাদের বেসেছ নিংড়ে নিজেকে ভাল।
ঠকতেই হবে ভালবেসে যদি গোপনে কিছুর করো
প্রত্যাশা কোনও, এমনকি ভালবাসাও পাবার আশা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।