আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তসলিমা নাসরিন

যে কোনো মানুষের কাছেই মা-মাটি আর মানুষের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। কিন্তু একটি মানুষকে যখন নিজের দেশ থেকেই বিতাড়িত করা হয়, তখন এর চেয়ে কষ্টের আর কিছু নেই। বিশেষত একজন সৃজনশীল মানুষ কিংবা রাজনৈতিক নেতা যাকে তার মুক্তমত প্রকাশ কিংবা সামাজিক চেতনা বদলানোর চেষ্টা থেকে বিরত রাখতেই নির্বাসনে পাঠানো হয়। নির্বাসনের এই রীতি সৃষ্টির সেই আদিকাল থেকেই চর্চিত হয়ে আছে। সেই প্রাচীনকাল থেকে আজ অবধি বহু বিখ্যাত মানুষ নিজের জন্মভূমি ও দেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে নির্বাসিত জীবনযাপন করেছেন।

সাম্প্রতিক ও ঐতিহাসিক এরকমই কিছু নির্বাসনের ঘটনা নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন।

 

তার আসল নাম নাসরিন জাহান তসলিমা হলেও তিনি সবার কাছে তসলিমা নাসরিন নামেই পরিচিত। মূলত স্কুলজীবনে কবিতাচর্চার সময় তিনি 'তসলিমা নাসরিন' নাম গ্রহণ করেন। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণকারী এই সাহিত্যিক নানা কারণে আলোচিত এবং সমালোচিত। বলা হয়ে থাকে, তার সাহিত্যকর্ম আলোচনার চেয়ে বিতর্কই বেশি জন্ম দিয়েছে।

অবশ্য অনেকেই তাকে নারীবাদী কথাসাহিত্যিক হিসেবে অভিহিত করেন।

তসলিমা নাসরিনের জন্ম ১৯৬২ সালে ময়মনসিংহ শহরে। দুই ভাই দুই বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। তসলিমার পিতা রজব আলী পেশায় একজন চিকিৎসক ছিলেন। মা ইদুল আরা ছিলেন তসলিমার পিতার দ্বিতীয় স্ত্রী।

তসলিমা ১৯৭৬ সালে ময়মনসিংহ রেসিডেন্সিয়াল স্কুল থেকে এসএসসি এবং ১৯৭৮ সালে আনন্দমোহন কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এর মধ্যেই তার টুকটাক লেখালেখি চলছিল। এর পর সাহিত্যিক হিসেবে পরিচিতি এবং বিতর্কিত হওয়ার আগেই তসলিমা ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে ১৯৮৬ সালে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন। এর পর ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত তিনি সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেন। ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে মামলায় জড়িয়ে পড়ে গ্রেফতার এড়াতে তিনি দেশত্যাগে বাধ্য হন।

তিনি যখন ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে দেশত্যাগ করেন তখন সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অজ্ঞানবিশেষজ্ঞ (অ্যানেসথেসিওলজিস্ট) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এর পর তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নেন।

সাহিত্য জগতে প্রবেশ সত্তর দশকের শেষভাগে কবিতা লেখার মধ্য দিয়ে। ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে স্ব-উদ্যোগে প্রথম কবিতা সংকলন প্রকাশ করেন, যার নাম শিকড়ে বিপুল ক্ষুধা। আত্দজৈবনিকতা তার কবিতার বৈশিষ্ট্য।

প্রথম থেকেই তার কবিতায় জৈবিক বিষয়ের উপস্থাপনা ছিল, যা পরবর্তীতে তার গদ্যেও দেখা গেছে আরও প্রবলভাবে। ছাত্রজীবনে ১৯৮০-এর দশকের শেষ দিকে কবি হিসেবে তার পরিচিতি ঘটতে থাকে। নির্বাসন জীবনে তসলিমা লেখালেখিকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। নারীবাদী দৃষ্টিভঙ্গি এবং ইসলামের সমালোচনার জন্য বিশ্বব্যাপী তার নাম ছড়িয়ে পড়ে। নিজের জন্মভূমি বাংলাদেশ ত্যাগের পর তিনি প্রতিবেশী বাংলাভাষী পশ্চিমবঙ্গে বসবাস করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন।

কিন্তু ভারতীয় মুসলিম ধর্মগুরুদের আপত্তি ও মৌলবাদীদের প্রাণনাশের হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৮ সালে তাকে কলকাতা পরিত্যাগ করতে হয়। বর্তমানে তিনি সুইডেনে বসবাস করছেন।

১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে তিনি কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহর প্রেমে পড়েন এবং বাবা-মা ও আত্দীয়স্বজন কাউকে না জানিয়ে গোপনে বিয়ে করেন। ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। পরে সাংবাদিক ও সম্পাদক নাইমুল ইসলাম খানের সঙ্গে বিয়ে এবং ১৯৯১ সালে বিচ্ছেদ হয়।

তিনি ১৯৯১ সালে সাপ্তাহিক বিচিন্তার সম্পাদক মিনার মাহমুদকে বিয়ে করেন এবং ১৯৯২ সালে এটিও ভেঙে যায়। এর পর অবশ্য তিনি আর বিয়ে করেননি। তার কোনো সন্তানাদি নেই। তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে যুগল জীবনযাপন করেছেন।

তার নির্বাসিত জীবন শুরু হয় ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে দেশ ত্যাগের সময় থেকে।

এর আগে আদালতে মামলা দায়ের হলে এবং আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করলে তিনি বিভিন্ন বন্ধু-বান্ধবের বাসায় আত্দগোপন করেন। বাংলাদেশ ত্যাগের পর তিনি প্রধানত ফ্রান্স, সুইডেন এবং ভারত_ এই তিনটি দেশে বসবাস করেছেন। বাংলাদেশের বাইরে একমাত্র পশ্চিমবঙ্গে বসবাস করতে তিনি আগ্রহী। প্রায়শ ধর্ম ও প্রতিষ্ঠানবিরোধী লেখা ও মন্তব্য জনরোষ সৃষ্টি করে বিধায় সামাজিক শান্তির স্বার্থে ২০০৭ থেকে ভারত সরকার তার ভারতে অবস্থানের ওপন নিষেধাজ্ঞা বলবৎ করে। তসলিমা নাসরিন প্রধানত আত্দজীবনীমূলক রচনায় বেশি সময় ব্যয় করেছেন।

আত্দজীবনীতে বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের বর্ণনা দিয়ে তিনি বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছেন এবং এ কারণে তার বিরুদ্ধে সৈয়দ শামসুল হকসহ অনেকে আদালতে মর্যাদাহানির জন্য ক্ষতিপূরণ মামলা করেছেন। তসলিমা তার উদার ও মুক্তচিন্তার মতবাদ প্রকাশ করায় দেশ-বিদেশ থেকে একগুচ্ছ পুরস্কার ও সম্মাননা গ্রহণ করেছেন।

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।