কযেক বছর আগেও সন্ধ্যায় বাসায় ফেরার সময় চপ অথবা সিঙ্গারা কিনে না নিয়ে আসলে কেদে বুক ভাসাতো,,,তার এখন নিজের ২ বছরের মেয়ে সামলাতে হয় । সত্যিই অবাক লাগে । আমার একমাত্র ছোট বোনের কথা বলছি । ওর নাম স্নিগ্ধা ।
আজ ওর জন্মদিন ।
কততম এখন ঠিক মনে পড়ছেনা , তবে ২১ অথবা ২২ হবে । একই শহরে থাকি আমরা । অথচ মাসে একবার অথাব দুই বার দেখা হয় আমাদের । আমি ধানমন্ডি ও মিরপুর থাকে । ছোট একটা বাসা নিয়ে ওদের ছোট সংসার ।
নিজে পছন্দ করে বিয়ে করেছে । ছেলেটা ভালো । এড ফার্মে চাকরি করে । নিজের অতিরিক্ত জেদ এর কারনে ছোট ছোট ঝামেলা বাদ দিলে আমার মনে হয় সুখেই আছে । ওর মেয়ের নাম ছোয়া ।
আমি নাম দিয়েছি এনজেল । ২০১০ এর ২৯ জুন ওর জন্ম । এনজেল কে দেখলে ছোট্ট স্মিগ্ধার মুখয়ব চোখের সামনে চলে আসে । মনে পড়ে স্নিগ্ধার যেদিন জন্ম হয়,,,আমি আর আমার চাচতো মামা নানা বাড়ি উঠানে খেলা করছিলাম। মামারা নতুন টিভি কিনেছিলো ।
টিভিতে তখন রোমানা পেইন্ট এর এড দিতো । এড এর মেইন ভুমিকাই ছিলো একটা জোকার । জোকারটা কিভাবে নাচে, কি বলে সেগুলো মামা আমাকে করে দেখাচ্ছিলো । হঠাত আমার ছোট আন্টি এসে বললো তোর বোন হয়েছে । তোর থেকে ফর্সা ।
তার পর কি হয়েছিলো ভুলে গ্যাছি ।
এখন ওর বাসায় গেলে ও আমাকে খেতে দিয়ে সামনে বসে থাকে । নিজে হাতে রান্না করে । সংসারের সব কাজ একাই করে । খুব অবাক লাগে ।
যে মেয়ে নিজে হাতে ভাত বেড়ে খেতো না, প্রয়োজনে না খেয়ে থাকতো । সেই স্নিগ্ধা এখন কত্ত কাজ করে । আব্বু দেখে যেতে পারলো না । ছোট্টবেলায় ওর আর আমার খুব মারামারি হতো । মনে পড়ে একদিন ওকে কি কারনে যেনো মেরেছিলাম ।
রাতে আব্বু আসলে ও আব্বুকে বলে দেয় । আব্বু সেদিন আমাকে অনেক মেরেছিলো । বলেছিলো, আর কোনদিন যেনো আমি ওর গায়ে হাত না দিই । ও মারবে আর আমি শুধু মাইর খাবো । এরপর থেকে এই নিতী অনুসরণ করতাম ।
এর পর ওকে আর কোনদিন মারিনি । আব্বু ওকে অনেক বেশি ভালোবাসতো । আব্বুর মৃত্যুর সময় আমি আর আমার বোন দুজনের কেউ তার পাশে থাকতে পারিনি । শুধু আম্মু ছিলো । এখন আব্বুকে খুব বলতে ইচ্ছে করে...আব্বু তোমার মেয়ের একটা মেয়ে হয়েছে,...তুমি নানা হয়েছো ।
তোমার মেয়ে তোমার নাতনিকে মারে,,,এখন তুমি কিছু বলবেনা ?
আমার স্কুল জীবনে আমি আর আমার বন্ধুরা সবাই অপেক্ষা করতাম স্নিগ্ধার জন্মদিনের । কারন ওর জন্মদিন মানেই নাচ গান আনন্দ । জন্মদিনের সন্ধ্যায় হইতো কেক কাটা,,কেককাটা শেষ হলেই লটারি । ওর বান্ধবি আর আমার বন্ধুদের মধ্যে হতো প্রতিযোগিতা । নাজ গান কৈাতুক ।
এখন শুধু আমি না ,,আমার বন্ধুরাও সে দিনগুলো অনেক মিস করে ।
কাল ওর বাসায় যবো । পকেটের অবস্থা খুবই খারাপ । মেসের কারো কাছ থেকে যাওয়ার ভাড়া লোন নিয়ে যাবো । ছোট বোনের জন্মদিনে গিফটা না দিলে মানসম্মান এর উপর কোন প্রভাব পড়ে না ।
জানি আসার সময় প্রতিবারের মত হাতে কিছু টাকা দিয়ে বলবে রেখে দে । আমিও নির্লজ্জের মত নিয়ে নিবো । আমি ওকে বলেছি একদিন ওর সব টাকা শোধ করে দিবো । ও নাকি সেদিনের অপেক্ষায় আছে । আমিও ।
আপনারা আমার ছোট বোনের জন্য দোয়া করবেন,,,,শুধু আমার না পৃথিবীর সব ছোটবোনদের জন্য দোয়া করবেন,,,
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।