রাজধানীর রাস্তাঘাটের বেহাল দশা যারপরনাই নাগরিক ভোগান্তিকে চরমে তুলেছে। রাজধানীর মোট রাস্তা দুই হাজার ২৮৯ দশমিক ৬৯ কিলোমিটার। প্রধান কয়েকটি সড়ক ছাড়া আর প্রায় সবই এখন ব্যবহারের অনুপযোগী! অনেকদিন আগে এই দুর্দশার শুরু। বর্ষার পানি পেয়ে সে দুর্দশা আরও চরমে উঠেছে। ভাঙ্গা রাস্তা আরও ভাঙ্গছে।
গর্তগুলো বড় হচ্ছে, পিচ উঠে যাচ্ছে। খোয়া বেরিয়ে পড়ছে নিচ থেকে। অধিকাংশ রাস্তারই এই অবস্থা। বাকিগুলোর বেশির ভাগের অবস্থা বলার মতো নয়। শুধু তাই নয়, বেহাল রাস্তায় যানজট মারাÍক রূপ নিয়েছে।
অপরদিকে গণপরিবহনের সঙ্কট মানুষের ভোগান্তিকে চরমে তুলেছে। ঢাকা দেশের রাজধানী। সবচেয়ে বড় নগরী এবং দেড় কোটির মতো মানুষের বাস এখানে। নানা অফিস-আদালত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল এখানে। অনেক বিদেশীও নানা কর্মসূত্রে আসছেন; অনেকে বাসও করছেন।
মহা কর্মব্যস্ত নগরী এটা; এ কথা বললে বাড়িয়ে বলা হবে না। ভোর থেকে অনেক রাত অবধি অগণিত নারী-পুরুষ শিশু এসব রাস্তায় যাওয়া-আসা করছে। ভাঙ্গা এসব রাস্তা ঢেউখেলানো নদীর মতো হলেও গাড়ি বা রিকশার চলাচল নদীর যাত্রার মতো মসৃণ নয়, বরং একবার খাদে পড়া আরেকবার খাদ থেকে ওঠার মতো ক্রমাগত বিরক্তির এবং যন্ত্রণাদায়ক। এসব ভাঙ্গা পথ দিয়ে প্রতিদিন নানা যানবাহন যাওয়ার কারণে গর্তগুলো বাড়তে থাকে। খানাখন্দ প্রসারিত হতে থাকে।
গর্তে বৃষ্টির পানি জমে তার ওপর দিয়ে গাড়ি গেলে ছিটকে পড়ে তার নোংরা পানি এবং কাদা।
দীর্ঘদিন ধরে এই ভাঙ্গা, এবড়োখেবড়ো রাস্তা দিয়ে মানুষ চলাচল করছে। এখানকার রাস্তার েেত্র একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য দেখতে পাওয়া যায়। যেভাবে কাটা গর্ত ভরাট করা হয় তা সবেেত্রই চলাচলের জন্য খুবই অসুবিধাজনক। রাস্তা মেরামত করার আগে কাটা হয় না অথচ হয় তৈরির পর।
এটা বহুকালের একটা ব্যাপার। কেন এই ধারা বন্ধ হচ্ছে না? এ ব্যাপারে নানা সমস্যার কথা বলা হয়। বলা হয় বিভিন্ন দফতরের মধ্যে কাজের সমন¦য়হীনতার কথা। কিন্তু এই সমন¦য়হীনতা দূর করা কি কোনকালেই সম্ভব নয়?
রাজধানী নগরীর ভাঙ্গা রাস্তার কারণে দু’চারজন মানুষের নয়, লাখ লাখ মানুষের প্রতিদিন অসুবিধা হচ্ছে চলাচলে। একে রাজধানী নগরী, তার ওপর এত মানুষের দুর্ভোগ; তাই অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে রাস্তাগুলোর মেরামত কাজ শুরু করা প্রয়োজন।
এত মানুষের কষ্টের কারণ যেটি তার দিকে বিশেষ নজর দেয়া প্রয়োজন। অবিলম্বে সেই কাজ সমাধা করার উদ্যোগ নেয়া দরকার। এখানে অসুবিধা, সমস্যা, সমন¦য়হীনতা বা অন্য কোন সমস্যা থাকলে জনস্বার্থে তা সমাধানের পদপে নিয়ে রাস্তাগুলোকে সংস্কার করার উদ্যোগ নিতে হবে। চিরন্তন সমস্যায় রূপ নেয়া যানজট নিয়ে একটা কিছু করতে হবে। আর গণপরিবহনের সঙ্কট যেন গোদের উপর বিষফোঁড়া।
রাস্তাগুলোকে অবিলম্বে মেরামতের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে রাজধানীবাসীর এটাই প্রত্যাশা। আর নগর পরিবহনে ভাড়া নিয়ে চলছে চরম নৈরাজ্য। সিএনজিচালিত অটোরিক্সা, ট্যাক্সিক্যাব ও ‘কাউন্টার বাস’ সার্ভিস কোন নীতি মেনে চলছে না। দীর্ঘদিন ধরে যাত্রীরা তাদের হাতে জিম্মি। নিয়মিত চলাচলকারী যাত্রীরা উপায়হীন হয়ে জ্বালাতন সয়ে যাচ্ছে।
ফলে স্বল্পআয়ের মানুষ বাস এবং অটোরিক্সা ও ট্যাক্সিক্যাবের ওপর যারপরনাই বিরক্ত। যানবাহনের স্বেচ্ছাচারিতা যেন দিন দিন সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে সিএনজিচালিত অটোরিক্সা, ট্যাক্সিক্যাবের দৌরাÍ্যরে কোন শেষ নেই। পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে ঢাকা ও চট্টগ্রামের ২৬ হাজার অটোরিক্সা চালক যাত্রীদের জিম্মি করে প্রতিদিন হাতিয়ে নিচ্ছে অতিরিক্ত প্রায় ১ কোটি টাকা। মিটারে নয়, মনগড়া চলাচলেই তারা অভ্যস্ত।
এগুলো দেখার যেন কেউ নেই।
জরুরী মুহূর্তে অটোরিক্সা ও ট্যাক্সিক্যাব যাত্রীদের দিকে ফিরেও তাকায় না। তাকালেও ভাড়া চেয়ে বসে দ্বিগুণ-তিনগুণ। মিটারের কোন বালাই নেই। মৌখিক চুক্তি মোতাবেক চালকরা অস্বাভাবিক হারে ভাড়া আদায় করছে।
অন্যদিকে বাস কাউন্টারে নিয়মিত চলছে ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায়ের নানান ফন্দি। সরকারীভাবে ভাড়া নির্ধারণ করা হলেও পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা তা মানছে না। পুরনো নীতিমালা দিয়ে চলছে পরিবহন। এ নীতিমালা অসম্পর্ণ। এটিকে যুগোপযোগী করা জরুরী।
আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তির বিধান রাখা জরুরী। ভাড়া নিয়ে যথেচ্ছাচার বন্ধ করা জরুরী।
বর্তমানে রাজধানীতে লোকাল বাসের পাশাপাশি চলছে বিভিন্ন ধরনের ‘কাউন্টার সার্ভিস’। আর এ সার্ভিসের নামে একই রুটে একই দূরত্বে আদায় করা হচ্ছে একেক রকমের ভাড়া। অন্যদিকে সিটিং সার্ভিস লেখা থাকলেও বেশিরভাগ সার্ভিসে দাঁড় করিয়েও যাত্রী নেয়া হয়।
বাড়তি ভাড়া আদায়, একেক রকম ভাড়া আদায় এবং দাঁড় করিয়ে যাত্রী নেয়ার বিষয়ে কেউ প্রতিবাদ করলে তার জবাব দেয়ার প্রয়োজন বোধ করে না পরিবহন কর্তৃপ। দু’একটি রুটে বিআরটিসি বাস সার্ভিস চালু হলেও সেবার মান নিয়ে অভিযোগ রয়েছে। সবচেয়ে দুঃখজনক হচ্ছে, কোন বাস সার্ভিসই সরকার নির্ধারিত হারে ভাড়া আদায় করে না। নানা অজুহাতে এরা সরকারের আইনকে অমান্য করে বেশি ভাড়া আদায় করছে। এছাড়া গণপরিবহনের তীব্র সঙ্কট নাগরিক জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে।
এ অবস্থায় নাগরিক দুর্ভোগ কমাতে সিএনজি অটোরিক্সা, ট্যাক্সিক্যাব যাতে মিটারে চলে সে ব্যবস্থা করতে হবে এবং যাত্রীদের প্রয়োজন অনুযায়ী যেন গন্তব্যে যায় সেটিও নিশ্চিত করতে হবে। বাস, মিনিবাসগুলো যেন ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য চালাতে না পারে সেটিও দেখতে হবে। গণপরিবহনের সঙ্কট দূর করতেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে এবং তা খুব দ্রুত। এ ব্যবস্থাগুলো নিশ্চিত হলেই কেবল যাত্রীরা জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পাবেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।