প্রায় তিন কিলোমিটার দীর্ঘ ও চার ফুট প্রস্থ রাজপথের হাজার হাজার ইট লুটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাও আবার খোদ রাজধানীর ব্যস্ত সড়ক মিরপুরের বেগম রোকেয়া সরণি থেকে। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি লিমিটেড-পিজিসিএলের বিদ্যুত্ সঞ্চালন প্রকল্পের কেবল বসানোর জন্য রাস্তা খোঁড়ার সঙ্গে সঙ্গেই ইটগুলো লোপাট হয়ে যায়। তবে মানসম্মতভাবে সংস্কার না করায় মিরপুর ১০ নম্বর সেকশন থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত তিন কিলোমিটারের সড়কটির একটি বড় অংশ দেবে গেছে। গত কয়েক দিনে বিরামহীন বৃষ্টিতে কোথাও আবার বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
এর ইট লুট হওয়ার দায় রাস্তার সংস্কারকারী মালিকানার ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কিংবা সিটি করপোরেশন কেউই নিতে নারাজ। এই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মালিক যুবলীগের নেতা।
যেভাবে লুট করা হয়
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি লিমিটেড-পিজিসিএলের নির্বাহী প্রকৌশলী হারুনুর রশিদ জানান, ‘আগারগাঁও-পুরোনো বিমানবন্দর বিদ্যুত্ সঞ্চালন প্রকল্পে’ বিদ্যুত্ কেবল বসানোর জন্য ঢাকা সিটি করপোরেশনের কাছ থেকে গত ২০১২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি তারিখে অনুমতি পায়। আগারগাঁও থেকে মিরপুর ১০ নম্বর পর্যন্ত তিন হাজার মিটার দীর্ঘ সড়কে ১৩০ কেভির এই কেবল বসানোর কাজ শুরু হয় ওই বছরের ২৪ মার্চ। এ জন্য সিটি করপোরেশনকে ৮৭ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।
গত ২০১১ সালে ক্রিকেট বিশ্বকাপের সময় এ সড়কটি নতুন করে কার্পেটিং করে সেনাবাহিনী। আগারগাঁও বিদ্যুত্ উপকেন্দ্র থেকে শেওড়াপাড়া পর্যন্ত এক হাজার ১০০ মিটার সড়কে কেবল বসানোর পর বর্ষা চলে আসায় কাজ বন্ধ করে পিজিসিএল। এরপর এ বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি আবারো শেওড়াপাড়া থেকে প্রকল্পের কাজ শুরু করে বিদ্যুত্ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) অধীন এ প্রতিষ্ঠানটি। পিজিসিএলের সূত্রে জানা গেছে, ফেব্রুয়ারি মাসে বাকি এক হাজার ৯০০ মিটার সড়কের কাটার কাজ শুরুর পর কয়েকবার বাধা দেন যুবলীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। রাস্তা কাটার পর পিচ তুলে নিয়ে যায় সিটি করপোরেশন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসী জানায়, সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের সামনেই ট্রাকের পর ট্রাকে করে ইট নেওয়া শুরু করেন যুবলীগের নেতা-কর্মীরা। পিজিসিএল শর্তানুযায়ী কেবল বসিয়ে বালু দিয়ে সিটি করপোরেশনকে সড়কটি বুঝিয়ে দেয়। এদিকে সিটি করপোরেশনের কাছ থেকে সড়কটি সংস্কারের কাজ পায় ঢাকা মহানগর যুবলীগের (উত্তর) সভাপতি মায়নুল হোসেন খানের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান খান ট্রেডার্স। কিন্তু সংস্কারের সময় আগের ইট আর বসানো হয়নি। এলাকাবাসী জানায়, ইট না বসিয়ে নিম্নমানের ইট-খোয়া ফেলে দুই ইঞ্চি কার্পেটিং করে কাজ শেষ করা হয়।
সরেজমিন দেখা গেছে, নিম্নচাপ মহাসেনের প্রভাবে অবিরাম বৃষ্টিতে কার্পেটিংয়ের প্রলেপ উঠে সড়কটির বিভিন্ন স্থানে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। যান চলাচলের কারণে কোথাওবা রাস্তা দেবে গেছে। ফলে ধীরগতিতে যান চলাচলে এখানে দিনের বেশির ভাগ সময় থাকে যানজট।
ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের ভাষ্য
খান ট্রেডার্স সড়কটি সংস্কার করলেও এর সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না বলে দাবি করেন ঢাকা মহানগর যুবলীগের (উত্তর) সভাপতি মায়নুল হোসেন খান। গতকাল মঙ্গলবার মুঠোফোনে প্রথম আলো ডটকমকে তিনি বলেন, ‘যুবলীগের ছেলেপেলেরা কাজটি করেছে।
তবে ইট আমাদের কেউ নেয়নি। ’ খান ট্রেডার্সের পক্ষ থেকে সুমন নামে কাফরুল থানা যুবলীগের নেতা পরিচয় দিয়ে মুঠোফোনে কল করে বলেন, ‘সিটি করপোরেশন হয়তো ইট নিয়ে গেছে। কিন্তু আমরা মানসম্মতভাবেই কাজ করেছি। ’
সিটি করপোরেশনের ভাষ্য
সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-৪-এর নির্বাহী প্রকৌশলী সাইদুর রহমানের দাবি, নিয়মনীতি পুরোনো থাকায় ক্ষতিপূরণ কম মেলে। গতকাল মঙ্গলবার মিরপুরে তাঁর কার্যালয়ে তিনি বলেন, ‘এই কম টাকায় সংস্কার করে সড়কগুলো চেহারা ফেরানো যায় না।
ইটগুলো কোথায় গেছে, আমার জানা নেই। তবে ইটের বদলে খোয়া ফেলে পাথর-রাস্তা সংস্কার করা হয়েছে। ’ সড়ক দেবে যাচ্ছে স্বীকার করে প্রকৌশলী সাইদুর রহমান আরও জানান, আগামী জানুয়ারির মধ্যে সড়কটি আগের মতো হয়ে যাবে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।