ঢাকা মহানগরীতে কত গাড়ী আছে ? তার হিসাব না নিয়েও এটুকু আনায়াসে বলা যায় রাস্তার ধারন ক্ষমতার চেয়ে বেশি । তাই যানজট নিত্যসঙ্গী । আর মহানগরীতে বসবাসকারী মানুষের নিত্যসঙ্গী হল ভোগান্তি । শুধু কি শারীরিক ভোগান্তি ? সময়ের বিশাল অপচয় , জ্বালানী খরচ বৃদ্ধি , যাতায়াত ব্যয় বৃদ্ধি , পরিবেশ দূষন- এসবই যানজটের কারনে হচ্ছে । যানজটের কারন কি কেবল রাস্তার তুলনায় অধিক যানবাহন চলাচল ? পার্কিং ? এটি কি যানজটের অন্যতম বড় কারন নয় ? এইযে দেখুন কাওরানবাজার , ভেতরের রাস্তা অনেক প্রশস্ত ।
কাজী নজরুল ইসলাম এভিন্যুর পূর্বপাশে এক সারিতে বড় বড় কিছু অফিস বিল্ডিং- তিতাস , বিএসইসি, ওয়াসা ইত্যাদি বিল্ডিং । পেছনের সারিতে বিটিএমসি, পল্লীভবন, আম্বরশাহ মসজিদ ইত্যাদি । এর পাশে এবং কাওরানবাজার সিটি করপোরেশন মার্কেটের মাঝে একশ ফিট প্রশস্ত রাস্তা । বিল্ডিংগুলোর মাঝ দিয়ে এই রোডের সাথে কাজী নজরুল ইসলাম রোডের সংযোগকারী প্রশস্ত রাস্তা । অনেক রাস্তা ।
তারপরেও যানজট । কেন ? যে কেউ একবার ঘুরে এলে সহজেই বুঝতে পারবেন । পেছনের সারির ভবনগুলোয় কোন কার পার্কিং এরিয়া নেই , থাকলেও নিতান্তই অকিঞ্চিতকর । এসবের কর্মকর্তাদের এবং দর্শনার্থীদের যানবাহন বাইরে রাস্তাতেই পার্ক করে থাকে । এতে প্রশস্ত রাস্তাটির প্রায় এক তৃতীয়াংশ ব্লক হয়ে যায় ।
অপর পাশে মার্কেটের সামনে অনেকখানি জায়গা অস্থায়ী ফল মূল, মুরগী বিক্রেতার দখলে । রাস্তার চলাচল উপযোগী অংশ অবশিষ্ট থাকে মাত্র ১৫-২০ ফিট । বুঝুন এবার !
মহাখালী এলাকার অবস্থা কি ? বনানী দুই নম্বর রোডের শুরু থেকে ওয়্যারলেস গেট পেরিয়ে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি পর্যন্ত রাস্তার উভয় পাশে সারি বদ্ধ ভাবে গাড়ী পার্ক করা । রাস্তাতো এতে অর্ধেক হয়ে যাচ্ছে । এ দৃশ্য কামাল আতাতুর্ক এভিন্যু, গুলশান এক ও দুই নম্বর সবখানেই ।
মিরপুর ১ নম্বর , কাজীপাড়া , মিরপুর রোডে ধান্মন্ডি হকার্স মার্কেট, এলিফ্যান্ট রোড, গাউসিয়া , নিউমার্কেট , মতিঝিল, দিলখুশা , নয়াপল্টন- কোথায় নেই রাস্তায় অবাধে কারপার্কিং । রাস্তা কম , তায় আবার এমন সংকোচন । দূর্বিসহ যানজটকে আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে পার্কিং নামের এই সাময়িক রাস্তা দখল । এর থেকে মুক্তির উপায় কি ? ঢাকা মহানগরীতে যাদের গাড়ী আছে সবাইরই নিজস্ব পার্কিংএর ব্যবস্থা আছে । অর্থাৎ অব্যবহৃত অবস্থায় প্রাইভেট গাড়ীগুলো রাস্তায় অবস্থান করেনা ।
তবে প্রচুর সংখ্যক বাস মিনিবাস রাস্তায় রাখতে দেখা যায় । যাহোক, প্রাইভেট ও পাবলিক সকল গাড়ীই কাজের প্রয়োজনে রাস্তায় বেরোবে এবং গন্তব্যে এগুলোর কাছাকাছি অবস্থানের অর্থাৎ পার্কিং এর সুবিধা থাকতে হবে । এ ব্যবস্থা অবশ্যই প্রাইভেট বা পাবলিক অফিস ভবন বা ব্যবসা প্রতষ্ঠান ভবন মালিকদেরই করতে হবে । সিটি করপোরেশনকেও এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে । বিভিন্ন উপযুক্ত এলাকায় এক বা একাধিক বেসমেন্ট সহ বহুতল পার্কিং বিল্ডিং নির্মান করা যেতে পারে ।
স্থান সংকট হলে ভূগর্ভস্হ পার্কিং এর ব্যবস্থাও নেয়া যেতে পারে । এটিতে গাড়ী উঠা নামার জন্য লিফট ব্যবহার করা যেতে পারে । কলকাতা নিউমার্কেটের সামনে এধরনের পার্কিং ব্যবস্থা মার্কেটের পাশের রাস্তা সমূহের যানজট নিয়ন্ত্রনে বেশ ফলপ্রসূ হয়েছে । অপর পক্ষে যে সকল সরকারী বেসরকারী অফিস ভবন/ বানিজ্যিক ভবনে কার পার্কিং সুবিধা নাই সেসবে কার পার্কিং সুবিধা তৈরী করার জন্য উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আদেশ জারী ও বাস্তবায়ন করা যেতে পারে । এক্ষেত্রে প্রয়োজনে নিচ তলা কার পার্কিংএ রূপান্তর করা যেতে পারে ।
রাজউক এবং ডিসিসি বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে ভেবে ব্যবস্থা নিলে নগরীর যানজট অনেকাংশে কমে আসবে বলে আশা করা যায় ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।