আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

উন্মাতাল বাদ্য আর আতশের ঝলকানিতে শুরু হলো অলিম্পিক

আজন্ম ছাগু ফাইটার। ছাগু দেখিলেই সাইজ করি। পূর্ব লন্ডনে শুক্রবার রাতকে রাত বলে মনে হয়নি আলোর শিখায়। কুইন অব সেবা রানী এলিজাবেথের উদ্বোধন ঘোষনার সাথে সাথে সেই আলো বেড়ে যায় আরো শতগুন। শুরু হলো ক্রীড়া মহাসমর।

এ যেনো এক রূপকথা। শৈল্পিক দক্ষতায় তুলে আনা হয়েছে যুক্তরাজ্যের ইতিহাস। ২৭ মিলিয়ন পাউন্ড ব্যয়ে এক হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবীর অংশ গ্রহণে দেখানো হয়েছে যুক্তরাজ্যের অবদান। অনেক 'বি' এর সমন্বয়ে ব্রিটিশরা দেখালো একটি অনন্য পরিবেশনা। 'বি' - বেল: স্থানীয় সময় রাত নয়টা বারো মিনিটে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও নিখুঁতভাবে ‘টিউনিং’ করা একটি ঘন্টার ধ্বনি বাজিয়ে শুরু হয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।

ঘন্টা বাজান ট্যুর ডি ফ্রান্স জয়ী ব্র্যাডলি উইগিন্স। 'বি' - বয়েল: অস্কার বিজয়ী সুরকার ড্যানি বয়েল বর্ণাঢ্য এই অনুষ্ঠানে অনন্য দক্ষতায় ব্যবহার করেছেন আধুনিক প্রযুক্তি। তার পরিচালনায় ‘বিস্ময়ের দ্বীপ’ অনুষ্ঠানের শুরুতে তুলে ধরা হয়েছে যুক্তরাজ্যের গ্রামীণ ‘সবুজ ও সমাহিত’ পটভূমি। খামারের আসল গবাদি পশুই ব্যবহার করেন বয়েল। দেখানো হয় গ্রামীণ ক্রিকেট ম্যাচও।

জেরুসালেম, ড্যানি বয়, ফ্লাওয়ার অব স্কটল্যান্ড ও ব্রেড অব হেভেন- এই চার গানের মধ্য দিয়ে যুক্তরাজ্যের চার দেশকে তুলে ধরা হয়েছে। উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের অমর নাটক টেমপেস্টের ছোট্ট অংশ এ সময় ব্যবহার করেন বয়েল। নিপুণ দক্ষতায় দেখানো হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লব। 'বি' - বন্ড: বড় পর্দায় দেখানো হয় সিক্রেট এজেন্ট জেমস বন্ডের একটি শর্ট ফিল্ম। এর শেষ পর্যায়ে একটি হেলিকপ্টারে করে ইংল্যান্ডের রাণী এলিজাবেথকে নিয়ে অলিম্পিক স্টেডিয়ামে পৌঁছান বর্তমান বন্ড ড্যানিয়েল ক্রেইগ।

এতে 'বি'-তে ব্রেইভ বা সাহসী রাণী হেলিকপ্টার থেকে ইউনিয়ন জ্যাক সম্বলিত প্যারাসুটে করে ঝাঁপ দিয়ে স্টেডিয়ামে আগমন দেখানো হয়। রাণী স্টেডিয়ামে আসার পরপরই বেজে ওঠে ইংল্যান্ডের জাতীয় সংগীত। 'বি' - বিটস: সত্তর দশকের দুনিয়া কাপাঁনো ব্রিটিশ রক মিউজিকের সাথে নেচে উঠে সারা স্টেডিয়াম। যুক্তরাজ্যের সংস্কৃতি ও তার বিবর্তনকে তুলে ধরার সম্ভাব্য চেষ্টাই করেছেন বয়েল। গ্রামীণ সংস্কৃতি তুলে ধরার পর ব্যস্ত নগর জীবনের অস্থির তারুণ্য ও হালের পপ-সংস্কৃতিতেও সামনে নিয়ে আসেন তিনি।

ছোট নাটিকার মাধ্যমে জনপ্রিয় গান আর চলচ্চিত্রের ফুটেজ ব্যবহার করা হয়। শিল্পের পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের গ্ল্যামার জগৎকেও সমানভাবে তুলে ধরেছেন বয়েল। 'বি' - বেসিক: কল্পনাপ্রবন শিশুদের বেডটাইম স্টোরী থেকে কি হতে পারে তা সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলছে তিনশ শিশু আর এক হাজারের মতো এন এইচ এসের ১০০০ কর্ম॥ জেকে রাওলিংয়ের জনপ্রিয় চরিত্র জাদুকর হ্যারি পটার ও তার প্রধান শত্র“ লর্ড ভলডারমট আরেকবার মুখোমুখি হন অলিম্পিকের উদ্বোধনী আসরে। বরাবরের মতো হেরেই বিদায় নিতে হয় ভলডারমটকে। 'বি' - বীম: লেজার রশ্মির আলোশিখা নানা বর্ণে আলোকিত করে তুলে পুরো এলাকা।

সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত এই আলোর খেলা মন মাতিয়ে তুলে সবার। 'বি' - বাংলাদেশ: পূর্ব লন্ডনে অলিম্পিক হবে আর বাংলাদেশী অধ্যুষিত জায়গায় বাংগালী কেউ থাকবে না তা কি করে হয়। বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত কেরিওগ্রাফার কোরিওগ্রাফার আকরাম খানের নেতৃত্বে ৫০ সদস্যের একটি দল জীবন-মৃত্যুর মধ্যবর্তী সময়ে মানুষের সংগ্রামকে ফুটিয়ে তুলে। লাল-সবুজ পতাকা নিয়ে মাঠে মার্চপাস্ট করার সময় ভাষ্যকারেরা বাংলাদেশের পদক জয়ের সম্ভাবনা নিয়েই বলছিলো। বাংলাদেশের পতাকা বহন করেন সাঁতারু মাহফিজুর রহমান সাগর।

বাংলাদেশের অন্য চার প্রতিযোগী হলেন শারমিন আক্তার রত্না, ইমদাদুল হক মিলন, মোহন খান ও সাইক সিজার। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে টিভি পর্দায় দেখানো হয়। 'বি' - বিন: হাসির খোরাক জোগাতে হাজির ছিলেন ছোট-বড় সবার প্রিয় চরিত্র মিস্টার বিন খ্যাত রোয়ান অ্যাটকিনসন। অর্কেস্ট্রার সাথে তার ছোট পরিবেশনা সবাইকে আবারও হাসিতে মাতিয়ে তুলে। 'বি' - বারনারস: ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব এর জনক স্যার টিমোথি বার্নার্স লিও ছিলেন তার কম্পিউটার নিয়ে এসেছিলেন মঞ্চে।

এর মাধ্যমেই মনে করিয়ে দেয়া হলো তথ্যপ্রযুক্তিতে ব্রিটিশদের অবদানের কথা। 'বি' - বেকহাম: অলিম্পিক স্টেডিয়ামে পৌঁছানোর আগে ৮ হাজার বহনকারীর হাত ঘুরে ৮ হাজার মাইল পথ অতিক্রম করে মশাল। স্পিড বোটে করে তরুণ ফুটবলার জেন বেইলি মশাল নিয়ে আসেন স্টেডিয়ামে। ঐ বোটের চালক ছিলেন সাবেক ইংলিশ ফুটবল দলের অধিনায়ক ডেভিড বেকহাম। ২০১২ সালে লন্ডনে অলিম্পিক আয়োজন করার পিছনে বেকহামের অবদানের কারনেই তাকে এই সন্মান দেয়া হলো।

বেইজিং অলিম্পিকে পতাকা গ্রহন অনুষ্ঠানেও ছিলেন তিনি। 'বি' - বোট: নানা রং-এর আলো বিচ্ছুরিত স্পীড বোটে করে যখন অলিম্পিক মশাল টেমস নদীর লন্ডন টাওয়ার ব্রীজ অতিক্রম করার দৃশ্য যে কোনো রোমান্চকর সিনেমাকে হার মানাতে যথেষ্ট। বোটে করে নিয়ে আসা মশাল জেন বেইলির কাছ থেকে নেন রোয়িংয়ে ৫টি অলিম্পিক সোনা জয়ী স্যার স্টিভ রেডগ্রেভ। 'বি' - ব্রিলিয়ান্ট: ইতিহাসের সাথে প্রযুক্তির সন্মিলন ঘটিয়ে পরিবেশনা এক কথায় ছিলো অনবদ্য। গ্রামীন পরিবেশ থেকে মুহুর্তেই ব্রিটেনের শিল্প বিপ্লবের দৃশ্যে পরিণত করা এক অনন্য মেধার প্রতিফলন।

অংশগ্রণকারী ২০০ দেশের মার্চপাস্টের সময় সাথে করে নিয়ে নিয়ে আসা কপারের পাত্র দিয়েই তৈরী হয় অলিম্পিকের মূল মশাল। বোটে থেকে নেয়া মশাল স্যার রেডগ্রেভ তুলে দেন সাত তরুণ অ্যাথলেটের একটি দলের হাতে। তারা পুরো মাঠ প্রদক্ষিণ করে প্রজ্বালন করেন স্টেডিয়ামের মূল মশাল। ফুলের মতো ছড়িয়ে থাকা কপারের পাত্রগুলো ধীরে ধীরে একত্রিত হয়ে তৈরী হয় বিরাট মশালে। 'বি' - ব্রাইট: লক্ষ আতশবাজীর রোশনাই অলিম্পিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে করেছে উজ্জ্বল।

বিশেষ করে অলিম্পিক মশাল অতিক্রম করার সময় টাওয়ার ব্রীজ থেকে বর্ণিল আতশবাজীর ছটা ছিলো দারুণ উপভোগ্য । 'বি' - বিগ বেন: স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ১২ মিনিটে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার ১২ ঘন্টা আগে ৩ মিনিটে ৪০ বার ঘণ্টাধ্বনির মাধ্যমে বিগ বেন ঘোষণা করে অলিম্পিকের আগমনী বার্তা। ৬০ বছর পর প্রতি ঘন্টায় ঘণ্টা বাজানোর ব্যতিক্রম করলো বিগ বেন। এর আগে ১৯৫২ সালের ১৫ ফেব্র“য়ারি রাজা ষষ্ঠ জর্জের মৃত্যুর পর সর্বশেষ নির্ধারিত সময়ের বাইরে বেজেছিল বিগ বেন। শুধু লন্ডনের বিগ বেনই নয়, যুক্তরাজ্যের সব ঘণ্টাই বেজে ওঠে এক সুরে।

'বি' - বিটলস: এক সময়ের ভুবন দোলানো রক ব্যান্ড বিটলসের উপস্হিতি ছিলো সুনিপুনভাবে। বিভিন্ন সময়ে বিটলসের গান ব্যবহার করা ছাড়াও অনুষ্ঠানের শেষভাগে ওই দলেই সদস্য স্যার পল ম্যাকার্টনি গান দিয়ে মাত করে দেন স্টেডিয়াম। তার সাথে গলা মিলান স্টেডিয়ামে থাকা আশি হাজার মানুষ। 'বি' - বেস্ট: ১৯০৮ ও ১৯৪৮ সালে অলিম্পিকের পর তৃতীয়বারের মতো আয়োজক হলো লন্ডন। নব নির্মিত অলিম্পিক স্টেডিয়ামে বসে ৮০ হাজার ও টেলিভিশন পর্দায় ১ বিলিয়ন দর্শক উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।

১৪ বিলিয়ন পাউন্ডের এই অলিম্পিকে ২৬টি খেলায় ৩০২টি ইভেন্টে ২০৪টি দেশের ১৪ হাজার সাতশ প্রতিযোগী অংশ নিচ্ছেন। ২৭ মিলিয়ন পাউন্ড ব্যয়ে এক হাজারেরও বেশি স্বেচ্ছাসেবীর অংশ গ্রহণে এই আয়োজন ব্রিটিশদের যেকোনো অনুষ্ঠানের চেয়েও সেরা। ঐতিহ্য মেনেই সবার আগে মার্চপাস্টে অংশ নেয় গ্রিস, এরপর বর্ণক্রম অনুসারে আসে অন্যরা। এর আগে ১৮৯৬ সালের এথেন্স অলিম্পিকের মশাল প্রজ্বালনের দৃশ্য দেখিয়ে বর্তমানে ফেরানো হয় দর্শকদের। ৭০ দিনের মশাল র‌্যালির একটি ভিডিও চিত্রও দেখানো হয় এ সময়।

তুমুল করতালি আর হর্ষধ্বনির মাঝে সবার শেষে মার্চপাস্টে আসে স্বাগতিক যুক্তরাজ্য। বেইজিং অলিম্পিকের সাথে হয়ত তুলনা শুরু হয়ে যাবে কিংবা চুলেচেরা বিশ্লেষন হবে। কিন্তু ইতিহাস আর আভিজাত্যর অপূর্ব সমাবেশে লন্ডন অলিম্পিক স্বকীয়। সূত্র:  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।