সাধ না মিটিল আশা না ফুরিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ইন্টার্নি ডাক্তারের সাথে সাংবাদিকদের মারামারির ঘটনা বেশ কিছুদিন যাবৎ আলোচনায় আসছে। ঘটনাটি দেখে লোকজন যার যার মতো মন্তব্য করছেন-কেউ ডাক্তারের দোষ দিচ্ছেন আর কেউ দিচ্ছেন সাংবাদিকদের। কিন্তু আসল ব্যাপরটা হলো জাত হিসেবে ডাক্তার কিংবা সাংবাদিক কেউই খারাপ না।
একটা ছেলে বা মেয়ে যখন ইন্টারমেডিয়েট পাশ করে ডাক্তারি পড়তে শুরু করে তখন মোটা মোটা বইয়ে চিকিৎসার বিভিন্ন নিয়মকানুন সম্পর্কে জানতে থাকে। পড়াশুনা করা অবস্থায় যখন তারা তাদের প্রশিক্ষণরত বড় ভাই-বোনদের চিকিৎসার ধরণ দেখে তখন তারা নিজেরাই অবাক হয়।
বইয়ের চিকিৎসা পদ্ধতির সাথে কর্তব্যরত ডাক্তারদের চিকিৎসা পদ্ধতির ব্যপক পার্থক্য দেখে তারা হয়তো কখনো কখনো ভাবে-"বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা এতো খারাপ! আমি যখন ইন্টার্নি করবো তখন ভালোভাবে চিকিৎসা দেব আর শিখে নেব"।
অতঃপর একদিন তাদেরও ইন্টার্নি করার সুযোগ চলে আসে। যথারীতি রোগীর আধিক্য আর হুড়মুড়িতে তারা বুঝতে পারে তখন কতটা ভুল ভেবেছিল।
শিক্ষানবিশ অবস্থায় একজন ডাক্তারকে যখন গুটিকয়েক রোগী নিয়ে নিগুঢ পর্যবেক্ষণ আবশ্যক সে স্থলে তারা শত শত রোগীর আর্তচিৎকারের মাঝে পড়ে কিংকর্তব্যবিমুঢ হয়ে যায়। তখন কার সমস্যা রেখে কার দিকে তাকাবে ওরা? যৌক্তিক কারণেই বেশিরভাগ সময়ই ইন্টার্নি ডাক্তারদের হতে হয় কঠোর।
মাঝে মাঝে অক্ষরজ্ঞানহীন, সহজ সরল আর অজ পাড়াগা থেকে আসা মানুষ হঠাৎ করে বুঝতে পারে না এত বড় হাসপাতালে আসলেই তাদের কর্তব্যটা কি? তখন তাদের হাজারো প্রশ্ন (প্রায়ই অমূলক প্রশ্ন) কর্তব্যরত ইন্টার্নি ডাক্তারদের মাথা গরম করে দেয়। ধরা যাক, কোনো ওয়ার্ডে একজন রোগী এলেন যার হাত কেটে রক্ত পড়ছে-রক্ত দেখেই তিনি খুব ভয় পেয়েছেন। সেই সময়েই অজ্ঞানবস্থায় আরেকজন রোগী এলেন যার পেটের ভেতরের কোন অরগান থেকে ব্লিডিং হচ্ছে যা বাইরে থেকে বোঝা গেলেও ঠিক কোথায় জখমটা হয়েছে তা ধরা যাচ্ছে না। এমতাবস্থায় কার সমস্যাটা আগে দেখা উচিৎ? ইন্টর্নি ডাক্তারদের সাথে সরাসরি কথা বলার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি- এরকম পরিস্থিতিতে প্রয়োজনবোধে প্রথমোক্ত রোগীকে তারা ধমকও দিয়ে থাকে তারা।
একজন ডাক্তারের অবস্থান থেকে দেখলে সবাই নিশ্চই ডাক্তারটিকে দোষ দিতে পারবেন না।
কিন্তু ধরা যাক, ধমক দেয়ার সময় সেখানে একজন সাংঘাতিক পত্রিকার সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন। একজন রোগীকে ধমক দেয়া অবশ্যই একটি সামাজিক অসংগতি এবং সাংবাদিকের দায়িত্ব অবশ্যই অসংগতিগুলো তুলে ধরা। এখন যদি সাংবাদিকটি বেশ রসালোভাবে পাঠক জনপ্রিয়তার জন্য (যে কাজটি অনেক সাংবাদিক প্রতিদিনই করে থাকেন) খবরটি তুলে ধরে তখন সেই কর্তব্যরত ডাক্তারটির কেমন লাগবে?
সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া ঘটনাটি এমন নয়। আমি জানি সেখানকার ঘটনাটা কি? কিন্তু সেটা বিশ্লেষনের প্রয়োজন মনে করছি না। কারণ, সাংবাদিক এবং ডাক্তার দুজনই তাদের নিজ নিজ জায়গায় হয়তো ঠিকই থাকেন কিন্তু ক্ষোভের কারণ হয়ে দাড়ায় আভ্যন্তুরীন জটিলতা কিংবা আরও খোলামেলা করে বলতে চাইলে বলা যেতে পারে এর জন্য দায়ী প্রশাসন এবং রাষ্ট্র নিজেই।
অনেকের মনে হবে আমি সাংবাদিকের বিপক্ষে-কেননা সাংবাদিকের কথা লিখতে গিয়ে আমি কিছুটা ব্যঙ্গ করার চেষ্টা করেছি। ব্যাপারটা অনেকটা সত্য। বিভিন্ন জায়গায় দেখেছি একটা ব্যনার নিয়ে দাড়ালেই সবাই চেষ্টা করে যেন সেটা মিডিয়া কাভারেজ পায়। কিন্তু মিডিয়াগুলোও যে অনেক রাজনৈতিক দলের লেজুর ধরে আছে সেটা আমরা ভেবে দেখি না। নিরপেক্ষ কিছু সংবাদ প্রকাশ করলেই পুরু মিডিয়াকে বস্তুনিষ্ঠতার সার্টিফিকেট দেয়া উচিৎ না।
তবে হ্যা। সাহসী সাংবাদিকতার প্রয়োজনীয়তা আছে যেমন আছে বিচক্ষণ ডাক্তারের। কিন্তু, রাষ্ট্রের দুর্বলতার কারণে দুটোই অপ্রতুল। সরকারি ইন্টার্নি ডাক্তাররা মনে করে তারা যথেষ্ট ভালো চিকিৎসা দিচ্ছে কিন্তু অসন্তোষ রয়ে গেছে রোগীদের মধ্যে। আর সাংবাদিকরা মনে মনে এই সুপারপাওয়ারের অধিকার করে যে তারা মনে করে তাদেরকে কিছুই বলা যাবে না, বললে একদম মিডিয়াতে দিয়ে দেবে তখন বুঝবে ঠেলা।
খারাপ ভালো সবজায়গাই থাকতে পারে। সাংবাদিকদের মনোভাব অনেকটা এইরকম "সাংবাদিকের সাথে খারাপ ব্যবহার করা হয়েছে এটাই বড় কথা কি কারণে করা হয়েছে তা দেখার কোনো দরকার নেই। সাংবাদিককে মেরেছে! গেলো রে গেলো মত প্রকাশের স্বাধীনতা গেলো। "
ডাক্তারদের উপযু্ক্ত শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত হোক। আর সাংবাদিকরা তাদের অহমিকা থেকে বেড়িয়ে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করুন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।