এক রোগীর অ্যাটেনডেন্টের সঙ্গে ইন্টার্নি ডাক্তারদের অপ্রীতিকর ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্নি চিকিত্সক পরিষদ অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি ঘোষণা করেছে। এতে হাসপাতালে নেমে এসেছে চরম অচলাবস্থা। বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি শত শত রোগীর দুর্ভোগ চরমে। চিকিত্সা না পেয়ে অনেকেই গতকাল হাসপাতাল ছেড়েছেন। এ ঘটনায় নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডের প্রধান ড. শেখ ইকরামুল আলীকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
রোববার রাতে এক রোগীর অ্যাটেনডেন্ট রায়হানুল হক রুবেল ওরফে ফিরোজ রোগীর চিকিত্সা নিয়ে পরামর্শ নিতে গেলে ইন্টার্নি ডাক্তার রামেক ছাত্রলীগ সভাপতি শাহ আলম সিদ্দিকী লালন অসদাচরণের অভিযোগে তাকে বেদম পিটিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেন। ওই রাতেই ইন্টার্নি ডাক্তাররা কর্মবিরতির ডাক দেন।
রামেক হাসপাতালে গিয়ে রোগী ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আবদুল হক (৫৫) নামের এক রোগীকে রোববার রাত ৯টায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৮নং ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ওই রোগীর অবস্থা ছিল গুরুতর। রোগীর সঙ্গে
তার আত্মীয়স্বজনরাও ছিলেন।
এ সময় নিউরোসার্জারি বিভাগের প্রধান ওই ওয়ার্ডে গিয়ে এক মুমূর্ষু রোগীকে দেখে ওয়ার্ড থেকে চলে যান। এ সময় চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসা রোগী আবদুল হকের অ্যাটেনডেন্ট ফিরোজ একজন ইন্টার্নি ডাক্তারকে গিয়ে বলেন, আমাদের রোগীর এখনও জ্ঞান ফেরেনি। ওই রোগীকে একটু দেখুন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কথাবার্তার একপর্যায়ে ইন্টার্নি ডাক্তার ছাত্রলীগ সভাপতি লালন উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। পরে ফিরোজকে মারধর শুরু করেন।
এ সময় ফিরোজের মা হাসিনা বানু এগিয়ে গেলে তারও গলা টিপে ধরা হয়। একপর্যায়ে ওয়ার্ডবয় রবিউল ইসলামের সহযোগিতায় ওয়ার্ডের গেটে তালা লাগিয়ে লালন, মামুন, এসএম ফাহাদ, প্রীতম, শাহীন ও হজরতসহ বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ ক্যাডার ফিরোজকে পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেয়। স্কুল শিক্ষিকা হাসিনা বানু জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ওয়ার্ডে গেলে ইন্টার্নি ডাক্তাররা উল্টো তার ছেলেকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। কিছুক্ষণ পর ৮নং ওয়ার্ডসহ প্রতিটি ওয়ার্ডের ইন্টার্নি ডাক্তার ওয়ার্ড ছেড়ে বের হয়ে যান। রাত ১২টার দিকে তারা হাসপাতালে কর্মবিরতি ঘোষণা করেন।
ইন্টার্নি ডাক্তাররা ওয়ার্ডগুলো ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় হাসপাতাল পরিচালকের অপসারণ দাবি করেন।
এদিকে ফিরোজ নামে ওই অ্যাটেনডেন্টকে আহত অবস্থায় পুলিশ চিকিত্সার জন্য জরুরি বিভাগে ভর্তি করে। পরে তাকে ৮নং ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়। গতকাল দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, হ্যান্ডকাপ পরা অবস্থায় পুলিশ পাহারায় ফিরোজের চিকিত্সা চলছে। মাথায় ব্যান্ডেজ, হাত-পা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে তার আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
তিনি জানান, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা তাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছে। এ সময় তার মা স্কুল শিক্ষিকা হাসিনা বেগম জানান, ইন্টার্নি ডাক্তাররা আমাকেও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। তবে ইন্টার্নি ডাক্তাররা এসব অভিযোগ অস্বীকার করে তাদের ওপর প্রথমে হামলা করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন।
এদিকে ইন্টার্নি ডাক্তারদের লাগাতার কর্মবিরতির কারণে ভেঙে পড়েছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিত্সা ব্যবস্থা। গতকাল সকালে সিনিয়র চিকিত্সকরা রাউন্ড দিয়েই তাদের কর্তব্য শেষ করেছেন।
চিকিত্সাসেবা না পেয়ে গতকাল দুপুরে অনেক রোগীকে হাসপাতাল ছেড়ে চলে যেতে দেখা গেছে। এক রোগীর অভিভাবক সান্টু জানান, রোববার রাত থেকে তার রোগী ফ্লোরে পড়েছিল, কোনো চিকিত্সক আসেননি। তাই হাসপাতাল ছেড়ে ক্লিনিকে যাচ্ছি। গতকাল সকালে ইন্টার্নি চিকিত্সক পরিষদ সংবাদ সম্মেলন করে ৪ দফা দাবিতে তাদের কর্মবিরতি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে।
ইন্টার্নি চিকিত্সক পরিষদের সভাপতি ডা. শাহ আলম সিদ্দিকী লালন জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে ক্রমাগতভাবে রোগীর অভিভাবকরা ইন্টার্নি ডাক্তারদের লাঞ্ছিত করে আসছেন।
প্রতিদিন কোনো না কোনো ওয়ার্ডে লাঞ্ছিত করা হচ্ছে দায়িত্বরত ইন্টার্নি ডাক্তারদের। এ নিয়ে বার বার হাসপাতালের পরিচালকের কাছে আবেদন করে নিরাপত্তা ব্যবস্থার দাবি জানানো হলেও তিনি কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। এ কারণে আবারও লাঞ্ছনার শিকার হয়ে তারা লাগাতার কর্মবিরতি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।