ভাড়াটে খুনি মুফিজের কোনসময়ই তার "ক্ষেপ" নিয়ে বেশি চিন্তা ভাবনা থাকে না। পয়সা ফেল, কাজ নাও - তার কাস্টমারদের প্রতি এই-ই তার মনোভাব। তাও এবারেরটা নিয়ে সে একটু চিন্তায় না পড়ে পারেনি। বছর আটেকের একটা শিশু.....তায় আবার মেয়েমানুষ........ না না বিবেক যন্ত্রণার মত ফালতু ব্যপারের কোন বালাই অন্তত মুফিজের নেই, তবে এই দুই ক্ষেত্রেই বড় ঝামেলা, গুলি করে মেরে ফেললে এক সেকেন্ডের মাঝেই সব ঝামেলা শেষ, কাহিনী খতম। তা না,বাচ্চাটাকে আটকে রেখেছে সে গত বারো ঘন্টা ধরে, কাজেম আলী কি করতে হবে কিছুই তাকে বলছে না।
ভাবে মনে হয় সে আসল বস না, বরং অন্য কারো হাতের ইশারার পুতুল,যেমনটা সে নিজে এই মূহূর্তে কাজেম আলীর। তাতে অবশ্য মুফিজের কি যায় আসে! তার তো স্রেফ হুকুমের অপেক্ষা, তা কাজেম আলীর মুখ থেকেই আসুক কিংবা তার উপরওয়ালার। কাজ ফিনিশ করে সোজা বাড়ির পথ ধরা। ভালো জিনিসের জোগাড় হয়ে আছে বাড়িতে, প্রাণভরে আয়েশ করে ঐটা টানার মজাই আলাদা।
আর এ কি ঝামেলায় সে জড়িয়ে পড়লো।
এইটা কিডন্যাপিং এর কেস নাকি কে জানে। কাজ নেয়ার সময় ভালোমত কোন কিছু না জিজ্ঞেস করেই কাজ নিয়ে নিয়েছে সে। ভালো টাকা দেবে- শুধু এইটুকুই তার জানা দরকার ছিল। কিডন্যাপিং এর কেইস তার পোষায় না এমনিতেই, অনেক কম আয় ঐসবে,ঝামেলাও বেশী- তাই, কিন্তু এই কাজে এত বেশী দেবার কথা হয়েছিল, যে মার্ডার কেস ছাড়া অন্য কোন কিছুর কথা মনেই হয়নি তার।
আর তাছাড়া কিডন্যাপিং অনেক নিচুদরের কাজ, সে একজন কিলার - নতুন শেখা শব্দটা মনে মনে আবৃত্তি করে সে, এইসব ছোটমোটো কাজ তার জন্য রীতিমত মানহানিকর।
তা এইসব নানা কারণে মুফিজের মেজাজ একটু বেশীই খারাপ হয়েছিল। তারপর আরও যন্ত্রণার উপর যন্ত্রণা, পিচ্চি আবার কান্নাকাটি শুরু করে দিল, নানা অনুনয় বিনয়, সাধে কি আর সে পিচ্চি আর মেয়েলোকদের উপর বিরক্ত হয়? রেগে মেগে কাজেম আলীর অলক্ষ্যে সে একটা চড় কষিয়ে দিয়েছে মেয়েটার গালে। বলাবাহুল্য বড়লোকের বাচ্চাকে মারতে পেরে সে এক ধরনের বিমলানন্দ পেয়েছে, বড়লোকদের প্রতি তার সবসময়েই এক অকারণ বিদ্বেষ আছে।
নিজের আজন্ম দারিদ্র্যতা জাত বঞ্চণা এর একটা কারণ হলেও হতে পারে।
সব মিলিয়ে তার মেজাজ এখন চরম খারাপ।
মুফিজ উঠে দাঁড়ালো, কাজেম আলীর কাছে একটু যাওয়া দরকার। কিছু জিজ্ঞেস করতে সে বেশী ভরসা পায় না, তেমন কিছু যা জানা যাবে তা ও মনে হচ্ছে না ..তাও।
শেষ বারের মত বিড়িতে টান মেরে ফেলে দিয়ে সে রওনা দিলো। তার "সম্ভাব্য" শিকারের দিকে একবার তাকালো সে এইসময়। আশ্চর্য, বাচ্চাটিও তাকিয়ে আছে তার দিকে।
সে তাকাতেই শিউরে উঠে একেবারে গুটিয়ে গেল।
একদম বাইরে দাঁড়ি্যে কাজেম আলী কার সাথে যান ফোনে কথা বলছিল। নির্ঘাত তার হুকুমদাতা বসের সাথে। আড়াল থেকে মুফিজ কান পাতে। কথার ফাঁকে ফাঁকে বের হয়ে পড়ে আসল মানুষটার নাম।
আড়ালে দাঁড়িয়ে মরফিজ কেঁপে ওঠে। এই অতীব কুখ্যাত আন্ডারওর্য়ালড ডনের নাম কে না শুনছে, তবে সে যা জেনেছে তা জানলে মুফিজ আর বেঁচে থাকবে না,ডন কোন প্রমাণ পেছনে রাখেনা। পায়ে পায়ে পিছু নিশব্দে সরছিল সে, এককোনায় অবহেলায় পড়ে থাকা তুচ্ছ টিনের কৌটাটা সব সর্বনাশ করে দিলো। পা লাগতেই ঝমঝম আওয়াজ করে উঠলো। এখন আর কোন আড়াল নেই,রুদ্ধশ্বাসে একসারি রুম পার হয়ে এক দৌড়ে সে চলে এল সেই যেখানে বাচ্চাটা বন্দি।
এই ঘরের পেছনে একটা ব্যাকডোর আছে, কাঁপা হাতে একটানে খুলে ফেললো সেটা,পায়ের আওয়াজ পাচ্ছে সে, কাজেম আলীর প্যান্টের পকেটে লুকানো পিস্তলের অপেক্ষা আর .......এক নিমিষে সব শেষ। না, স্পিং -এর মত লাফিয়ে বার হয়ে পড়ার সময়....,হঠাৎ বন্দির দিকে চোখ যায় তার। নিজের আচরণটা অবিশ্বাস্য বটে , তার নিজের কাছেই , ......... হাত ইশারায় ওকে ডাকে মুফিজ। শিকার ও শিকারীর পায়ে যেন ডানা গজিয়েছে , প্রাণের ভয়ে যেন উড়ে যেতে থাকে ওরা , দৌড়ে নয়..............।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।