আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্মদিন এবং বঙ্গবন্ধু পরিবারের একাত্তরের কিছুদিন। শুভ জন্মদিন সজীব ওয়াজেদ জয়

শান্তির জন্য সংগ্রামী অসহযোগ আন্দোলনের শেষ দিনগুলোঃ ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবাবের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ ঐতিহাসিক ৭ই মার্চে রেসকোর্স ময়দানে ভুবনখ্যাত ভাষনের রাতেই ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক বাড়িতে খাওয়ার সময় বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমার যা বলার ছিলো আজকের জনসভায় তা প্রকাশ্যে বলে ফেলেছি। সরকার এখন আমাকে যে কোন মুহুর্তে গ্রেফতার বা হত্যা করতে পারে। সেজন্য আজ থেকে তোমরা প্রতিদিন দু’বেলা আমার সঙ্গে একত্রে খাবে’। শেখ হাসিনা, শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রেহানা, শেখ রাসেল, শেখ শহীদ, ড এম এ ওয়াজেদ মিয়া এবং বেগম মুজিবকে উদ্দেশ্য করে এমনটিই বলেছিলেন। সেই থেকে ২৫শে মার্চ দুপুর পর্যন্ত একবারও ব্যতিক্রম ঘটেনি।

বাঙালির জীবনে ঘটে যাওয়া সেই অমানিষার অন্ধকার রজনীতেই ঘটে কেবল ভিন্নতা। ঘটারই কথা। এই রাতেই বাঙালির বুকের তাজা রক্তের উপর দাঁড়িয়ে বাঙালির হাজার বছরের প্রিয় মানুষ শেখ মুজিব ২৬ তারিখ শুরুর প্রারম্ভেই স্বদম্ভে ঘোষনা করেছিল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের স্বাধীনতা। সেই ৭ তারিখের পর থেকে একে একে ঘটতে থাকে সকল না দেখা ঘটনা। চলতে থাকে অসহযোগ আন্দোলন।

রাজনীতির আড়ালের রাজনীতির কুটকৌশল আলোচনা পর্ব। সাড়ে সাত কোটি বাঙালি তাদের ধৈর্যের সকল পরীক্ষা দিয়েই বিদ্রোহী সত্তায় অবতীর্ণ হয়। অসহযোগ আন্দোলন শুরুর প্রথম দিকেই বঙ্গবন্ধুর নিরদেশে ও তাগাদা দেওয়ায় ওয়াজেদ মিয়া আলাদা বাড়ি ভাড়া নেন হাতিরপুলে অবস্থিত বিজ্ঞানী ড আব্দুল্লাহ আল মুতী শরফুদ্দিনের শ্বশুর খান বাহাদুর আবদুল হাকিম সাহেবের ১২ নং ফ্রি স্কুল স্ট্রীটের একই কম্পাউন্ডের তিনটি বাড়ির মধ্যকার একটি বাড়ির দুতলা। ঐ সময়ে শেখ হাসিনা ছিলেন চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা এবং দেশের অবস্থা ক্রমেই ঘোলাটে পরিস্থিতির দিকে ধাবিত হওয়ায় তাদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই বঙ্গবন্ধু এমন নিরদেশ দিয়েছিলেন। সেইমতো ১৪ মার্চ কিছু আসবাবপত্রও সেই বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়।

কিন্তু ১৫ মার্চে ড ওয়াজেদ মিয়া ও শেখ হাসিনা সেই বাসায় গিয়ে নিঃসঙ্গতা বোধ করায় তৎক্ষনাৎ বাসা ছেড়ে দিয়ে ঐতিহাসিক ৩২ নম্বরেই ফিরে আসেন। ১৬ মার্চ ধানমন্ডি(পুরাতন) ১৫ নম্বরস্থ(নতুন ৮/এ-১৭৭) বাড়িটির নীচতলা ভাড়া নেন এবং ১৭ মার্চ যথারীতি আসবাবপত্র রেখে আসা হয়। হন্তারকের গনহত্যার শুরু ও বাঙালির স্বাধীনতা ঘোষনাঃ ২৫ তারিখ দিবাগত রাতে বঙ্গবন্ধু নেতা কর্মীদের সঙ্গে গুরুত্বপুর্ন আলোচনা ও নিরদেশদানে ব্যস্ত থাকায় সেই ৭ তারিখ থেকে মেনে চলা নিয়মের ব্যত্যয় ঘটে। অন্যরা সকলেই রাতের খাবার শেষ করলেও বেগম মুজিব স্বামীর জন্য অপেক্ষায় থাকেন। রাত ন’টার দিকে অন্যসকলের খাওয়া শেষেই শেখ কামাল বিদায় নিয়ে চলে যান গোপন আস্তানায়।

রাত ১১ টার পরেও বঙ্গবন্ধু খেতে না আসায় শেখ হাসিনা পিতাকে নীচতলা থেকে নিয়ে আসতে যেতেই সিড়িতেই বাবা মেয়েকে জড়িয়ে ধরে আবেগাপ্লুত হয়ে বলে উঠেন ‘মা তোকে আমি সারাদিন দেখিনি’। এরপরে রাত ১১টা থেকে ১২টার মধ্যেই কয়েকজন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে আসে। বিভিন্নজনের কাছ থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খবর পেয়ে বঙ্গবন্ধু স্বিদ্ধান্ত নেন তিনি বাড়ি ত্যাগ করবেন না বা পালিয়ে কোথাও যাবেন না। অপরাপর সকল নেতা-কর্মীদের বিভিন্ন নিরদেশ দিলেন। ওয়াজেদ মিয়াকে ডেকে বলনে, হাসিনা, রেহানা ও জেলীকে নিয়ে তার নতুন ভাড়া নেওয়া বাড়িতে চলে যেতে।

শুরু হয় বিচ্ছেদের পর্ব। বাঙালির জীবনে নেমে আসে ঘোর অমানিষার কালো অধ্যায়। পৃথিবীর মানুষ অতীতে এমনটি দেখেছে সেই কথা ইতিহাসের কোথাও কেউ উল্লেখ করেনি আজো। হয়ত বাংলাদেশ স্বাধীন হবে, সেজন্যই রক্তের খেলায় মেতেছিল উন্মাদ পাকবাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরেরা। গ্রেফতার, নির্যাতন ও আত্মগোপনের মধ্যদিয়ে ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক বাড়ির সঙ্গে বিচ্ছিন্নতার শুরুঃ ড এম এ ওয়াজেদ মিয়া নানারকম শংকা ও থমথমে পরিস্থিতির মধ্যেই ধানমন্ডির নতুন ভাড়া বাড়িতে পৌছার মিনিট বিশেকের মধ্যেই হাসিনা, রেহানা, জেলী এবং বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে দীরঘিদিন ধরে বিভিন্ন কাজকর্মের দেখাশুনা করা ওয়াহিদুর রহমান উরফে পাগলা সহ বঙ্গবন্ধুর গাড়িতেই পৌছান।

কিছুক্ষনের মধ্যেই চারদিকে গোলাগুলি ও কামানের আওয়াজ শুরু। অজানা আশংকা নিয়েই পাড়ি দেন পুরো রাত শুধু হারিকেন জ্বালিয়ে। আগের রাত থেকে সন্ধ্যাবধি ঘর থেকে বের হতে না পারায় বাইরের কোনো খবরই সংগ্রহ করতে পারেন নি। ২৬ তারিখ সন্ধ্যায় শেখ কামালের এক বন্ধু গোপনে অনেকগুলো বাড়ির দেওয়াল টপকিয়ে গিয়ে খবর দেন, গতরাত আনুমানিক ১টার দিকে পাকিস্থানী আর্মী বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে সশস্ত্র হামলা চালিয়ে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করেছে। বঙ্গবন্ধুর সহকর্মী গোলাম মোরশেদকে রাইফেলের বাট দিয়ে আঘাত করে আহত অবস্থায় গ্রেফতার করে নিয়ে গেছে।

অন্যান্য কাজে নিয়োজিত আজিজ, ফরিদ, বাবুচি নিয়াজ এবং শিশু রাসেলের দেখাশোনায় নিয়োজিত আজিজুন নেছা উরফে বুড়িকেও গ্রেফতার করেছে। বেগম মুজিব, জামাল ও রাসেল শুধু গ্রেফতারের মধ্যে পড়েনি। পাগলা এই খবর শোনার পরেই কারফিউ উপেক্ষা করে বেরিয়ে পড়েন বঙ্গবন্ধুর বাড়ির উদ্দেশ্যে। ঠিকানাহীন পথচলাঃ বেগম মুজিব, জামাল ও রাসেল বিভীষিকাময় সেই রাতের পর ২৭ তারিখ ভোরের আগে কোন এক সময়ে ড এ কে এম মোশাররফ হোসেনের বাসায় আশ্রয় নেন। ২৭ তারিখ সকালে কারফিউ শিথিল হলে ড ওয়াজেদ, শেখ হাসিনা ও জেলীকে নিয়ে বেগম মুজিব, জামাল ও রাসেলকে খুজতে বেরিয়ে দেখেন বঙ্গবন্ধুর বাড়িটি শশ্মান ভুমিতে পরিনত হয়েছে।

আর্মী পাহারা দিচ্ছে। অনুমান করে তারা পাশের বাসায় খুজতে গিয়ে দেখেন, বঙ্গবন্ধুর ফুফাতো ভাই মোমিনুল হক খোকা অনেক বাসার দেওয়াল টপকিয়ে প্রথমে আহমদ ফজলুর রহমানের বাসা হয়ে বাহাউদ্দিন চৌধুরীর বাসায় গিয়ে শোনেন গতরাতে এই বাসাতেই শেখ কামাল ও বঙ্গবন্ধুর দেহরক্ষী মহিউদ্দিন ছিলেন, আজই অজানা কোথাও চলে গেছেন। সেখান থেকে পালিয়ে পালিয়ে ৩২ নম্বরের বাড়ি পৌছে কাউকে না পেয়ে পাশের বাসায় যান কোন খোজ খবর পাওয়া যায় কিনা এই আশায়। সেখানেই বেগম মুজিবসহ অন্যদের পেয়ে গাড়ি সংগ্রহের জন্য রাস্তায় আসতেই কাকতালীয়ভাবে শেখ কামালের বন্ধু তারেক(ব্যারিষ্টার আজমালুল হোসেন কিউসি)’কে পেয়ে যান। এই তারেকের গাড়িতে করেই বেগম মুজিব, শেখ জামাল, শেখ রাসেল ও খোকা ধানমন্ডি ২ নম্বর রোডে অবস্থিত মোরশেদ মাহমুদের বাসায় যান।

কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখেন অজানা আশংকায় বাসার সকলেই বাক্স-প্যাটরা গুছিয়ে নিয়েছে ঢাকা ত্যাগ করার উদ্দেশ্যে। কাজেই সেখানেও থাকা অসম্ভব বিধায় চলে গেলেন ধানমন্ডি ১৫ নং রোডে অবস্থিত(ড ওয়াজেদে সাহেবের নতুন বাসার নিকটেই) বঙ্গবন্ধুর শুভাকাংখী এবং সে সময়ের পূর্ব পাকিস্তান শিপিং কপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন রহমানের বাসায়। কিছুক্ষনের মধ্যেই সেখানে পৌছান শেখ কামাল ও বঙ্গবন্ধুর প্রেস সচিব আমিনুল হক বাদশা। ক্যাপ্টেন রহমানের পরামরশেই শেখ কামাল ও খোকা তাদের শখের গোফ কামিয়ে ফেলেন। এদিকে ড ওয়াজেদ গং বেগম মুজিব গংদের খুজে না পেয়ে এমনি ব্যর্থ মনোরথে ফিরতি পথে ওয়াজেদ সাহেবের নতুন বাসার নিকট ক্যাপ্টেন রহমানের বাসার দু’তলা থেকে রাসেল চিৎকার করে ডাকতে থাকেন।

সেখানে পৌছলে এক রিদয়বিদারক ঘটনার অবতারনা হয়। মোমিনুল হক খোকাও বেগম মুজিবের পরামরশে পাশেই অবস্থিত ড ওয়াজেদের বাসায় গিয়ে শুধু শেখ রেহানাকে পেয়ে তাকেই এখানে নিয়ে আসেন। এখানেই ক্যাপ্টেন রহমান ও অন্যান্যের সম্মিলিত পরামরশে ঠিক হয় এবং ক্যাপ্টেন রহমানই বলেন, ‘আমি শিপিং এর এক ভদ্রলোকের সঙ্গে বন্দোবস্ত করে ফেলেছি। কিছুদিনের মধ্যেই সে একটা লঞ্চ ঠিক করে দিবে যাতে করে আমরা সবাই ভারতে চলে যেতে পারব। ’ কিন্তু সেই লঞ্চ কবে কখন ঠিক হবে সেটা অজানা।

তাই ভেঙ্গে না পড়ে নতুন বাসস্থানের খোজে ড ওয়াজেদ ও খোকা উভয়েই বেরিয়ে পড়েন। ড ওয়াজেদ তার বন্ধু ও সহকর্মী ড মোজাম্মেল এবং মোজাম্মেলের বোনজামাই ও সহকর্মী ড ফয়জুর রহমানের বাসায় গেলে সরিদয় ড ফয়জুর রহমান তাদের কক্ষটিই ছেড়ে দেন ড এম এ ওয়াজেদ মিয়া, শেখ হাসিনা ও জেলীকে। এদিকে মোমিনুল হক খোকা ওয়ারিস্থ তার শ্বশুরের বাসায় অন্যদের নিয়ে আশ্রয় নেওয়ার জন্য রওয়ানা হলেও রাস্তায় মানুষের নিঃশব্দ মিছিল এবং অল্প সময়ের মধ্যেই কারফ্যু শুরু হয়ে যাবে এই আশংকায় মগবাজার চৌরাস্তার নিকটস্থ বঙ্গবন্ধু পরিবারের আত্মীয় প্রকৌশলী আলী সাহেবের বাসায় ঢুকে দেখেন ধানমন্ডির পরিচিত অনেকেই এখানে আশ্রয় নিয়েছেন আগামীকাল ঢাকা ত্যাগ করার প্রস্তুতি নিতে। ২৬ তারিখ থেকে দিনগুলো এমনভাবেই অতিবাহিত হচ্ছিল যে, আসলে কেউ কারো খোজ রাখতে পারছিল না। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হলে নেতা কর্মীরা দ্রুত ভারতে আশ্রয় নিচ্ছিল।

এবং এই সময়টা এমনই ছিল যে, কেউ তাদের সংসারের খবরও নিতে পারছিলেন না বা সম্ভব ছিল না। নেতারা নিজেরা গোপনে দূরে যেতে পারলেও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের পক্ষে সেটাও অসম্ভব ছিল। এক্ষেত্রে বঙ্গতাজ তাজউদ্দিন আহমদের কণ্যা সিমিন হোসেন রিমি তার ‘আমার ছোটবেলা, বাবা তাজউদ্দিন আহমদ ও ১৯৭১’ গ্রন্থটি পাঠ করলেই সেসময়ের একজন নেতার পরিবারের দুরদশা অনুধাবন করা যায়। বঙ্গবন্ধু পরিবার বোধকরি আরো ভয়ংকর দুরদশায় উপনীত হয়েছিল। প্রাকৃত বাস্তবতায় নেতাদের পক্ষেও পরিবারের প্রতি নজর দেওয়ার সুযোগ বা দায়িত্বের চেয়ে দেশের জন্য প্রাণপনে কাজ করাই মুখ্য ছিল।

হয়ত এজন্যই প্রায় সকল নেতার পরিবারই অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে সেই সময়টা পাড়ি দিয়েছে। এর মধ্যেই আপৎকালীন ব্যবস্থা হিসেবে ড ওয়াজেদ মিয়া ১ এপ্রিল থেকে তার নামে ভাড়া নিয়ে খিলগাও চৌধুরীপাড়ায় একটি বাড়িতে উঠেন। একসাথে তিনটি পরিবার। বঙ্গবন্ধু ও শেখ কামাল বাদে পরিবারের অন্য সকল সদস্য, ড ওয়াজেদ মিয়ার পরিবার, মোমিনুল হক খোকার পরিবার। এই বাসায় থাকাকালীন সময়েই শেখ কামাল পলাতক অবস্থা থেকে দেখা করতে এসে যুদ্ধে যাওয়ার জন্য বিদায় নেন।

৫/৬ তারিখেই বাড়িওয়ালী বেগম মুজিবকে ভাড়া ফিরিয়ে দিয়ে বলেন, ‘আপনাদের পরিচয় জানাজানি হয়ে গেছে। আল্লাহর দোহাই, আপনারা দয়াকরে এই বাড়ি ছেড়ে দিয়ে অন্যত্র চলে যান। তা না হলে পাকিস্থানী আর্মী আমাদের বাড়িটি ডিনামাইট দিয়ে ধবংস করে দিবে। ’ কোন উপায়ান্তর না পেয়ে বেগম বদরুন্নেসার স্বামী নুরউদ্দিন আহমেদের কৃপায় তার মগবাজার চৌরাস্তার বাসার নীচতলায় থাকতে দেন। এই বাসাতে থাকতেই জানতে পারেন বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এই মর্মে বঙ্গবন্ধুর ছবিসহ পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে জানতে পারেন।

বেগম মুজিব দ্রুতই বুঝতে পারেন, তাদেরকে পাকিস্থানী গোয়েন্দারা অনুসরন করছে। তাই দ্রুত বাসা বদলের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এবার কাছেই আরেকটি বাসায় উঠেন। এখানেই এর মধ্যে কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী তাদের সঙ্গে দেখা করতে আসে। তাদের কাছেই খবর পায়, বঙ্গবন্ধুর নামে আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতার ঘোষনা এবং সরকার গঠনের।

এমন সময়ে নতুন বাড়ি খুজতে বেরিয়ে কারফ্যু’র সময়ে হতবিহবল হয়ে রাস্তার পাশে খালি বাড়িতেও রাত্রি যাপন করতে হয়েছে অভুক্ত শিশু নারী সকলের। যেখানেই এক রাত আশ্রয়ের খোজে গেছে হয় বাড়িওয়ালা নিজেই ঢাকা ত্যাগের প্রস্তুতি নিচ্ছেন নয়ত মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছেন। ভাড়া পাওয়া গেলেও দুই এক দিনের মধ্যেই বাড়িওয়ালা পরিচয় জানতে পেরে সবিনয়ে বিদায় করে দিয়েছে। এমনি ঠিকানাবিহীন পথচলা গ্রেফতার হওয়ার পূর্ব নাগাদ চলেছে। একাত্তরের ঢাকাঃ বাঙালি জাতির স্বাধীকার আন্দোলন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও সশস্ত্র সংগ্রাম, বিজয় অর্জন, স্বাধীনতা লাভ এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় আধুনিক জাতি রাষ্ট্র গঠনের ইতিহাসে একটি অনবদ্য ঘটনা।

আর এইসকল আন্দলন ও ভুমিকার প্রধান চারণভুমি হিসেবে ঢাক শহর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। আজকের লেখায় যে পরিবার ও যার জন্মকথা নিয়ে লেখা হচ্ছে সেটিও এই ঢাকা শহরকে কেন্দ্র করে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ের ঘটনাই। এবং এই পরিবারটি এমন একটি পরিবার যে পরিবারের প্রধান ব্যক্তিটি শুধু পারিবারিক গন্ডিতেই নয় সমগ্র দেশবাসীর প্রধান ব্যক্তিরুপে অভিহিত। তাই একাত্তরে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে যেসব ঘটনা ঘটেছে সেগুলোর সবগুলোই বঙ্গবন্ধু পরিবারকে স্পর্শ করেছে। তাই বঙ্গবন্ধু পরিবারের যেকোন ঘটনাই রাজনীতির সঙ্গে যেমন ওতপ্রোতভাবে সংশ্লিষ্ট পাশাপাশি ঘটনার ঐতিহাসিক প্রবাহতাও অনস্বীকার্য।

সেজন্যই বঙ্গবন্ধু পরিবারের একটি ঘটনার উল্লেখে আরো বহু ঘটনাকে ব্যাখ্যা বিশ্লেষনের প্রয়োজন দেখা দেয়। সে কারনেই একাত্তরের ঢাকা শহরের বাস্তবতা উল্লেখ করা জরুরী। ১৯৪৭ সালের পরবর্তী সময়ে ১৯৭১ পর্যন্ত ঢাকা পাকিস্তানের প্রাদেশিক রাজধানী হলেও মুলত এটি একটি মফস্বল শহরের মতোই বেড়ে উঠে। যদিও রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারনে ঢাকা শহরের জনসংখ্যা এবং এর অবকাঠামো সম্প্রসারন ঘটতে থাকে। ১৯৫১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী ঢাকার জনসংখ্যা ছিল ২,৭৩,৪৫৯ জন যা ১৯১১ সালের জনসংখ্যা ১,০৮,৫৫১ জনের প্রায় দ্বিগুন।

১৯৬১ সালে জনসংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেয়ে হয় ৩,৬২,০০৬ জন। এই বৃদ্ধির কারন সমুহের মধ্যে ভারত ও পাকিস্তানের বিভাজনের আগে ও পরে বিভিন্ন সময়ে ভারত থেকে আগত মোহাজের ছাড়াও ঢাকার আয়তন বৃদ্ধি এবং আরও নানারকম রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারন জড়িত। ১৯৬০ এর দশকে ঢাকা পাকিস্তানের দ্বিতীয় রাজধানী হিসেবে প্রশাসনিক স্বীকৃতি পায়। ফার্মগেট অঞ্চলকে নতুন রাজধানীর এলাকা ঘোষনা করে নামকরন করা হয় শেরে বাংলা নগর। পাকিস্তানের দ্বিতীয় সংসদ ভবনও এই এলাকাতেই নির্মাণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

উপরন্তু পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ শিক্ষা, চাকুরী ও ব্যবসার লক্ষ্যে ঢাকা শহরে আগমন ঘটায়। এসবের কারনে ঢাকায় যেমন নতুন নতুন অফিসারের আগমন ঘটে তেমনি তাদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে আশেপাশের এলাকাকে ঢাকার আওতাভুক্ত করা হয়। বাড়াতে হয় শিক্ষায়তন এবং সিট সংখ্যাও। সরকারী আবাসিক এলাকা হিসেবে নির্মাণ করা হয় পলাশী ব্যারাক, আজিমপুর স্টেট ও ঢাকেশ্বরী আবাসিক এলাকা। নাগরিক সুবিধার প্রয়োজনে নতুন নতুন বাজার ও বিপনিকেন্দ্র স্থাপিত হয়।

১৯৫৪ সালে নিউমার্কট স্থাপন করা হয়। পঞ্চাশের দশকের শুরুতেই আজিমপুর, নিউমার্কট, নিউ ইস্কাটন, পুরানা পল্টন, কমলাপুর প্রাথমিকভাবে সম্প্রসার করা হয়। ১৯৫৩ সালে ধানমন্ডি এলাকা এবং ১৯৬০ এর দশকে মোহাম্মদপুর, তেজগাও ও গুলশান এই সম্প্রসারনের আওতায় আসে। রাজারবাগ ও শান্তিনগরে মুলত সরকারী আবাসনের আওতায় পড়ে দ্রুত পরিবর্তন হয়ে যায়। ১৯৫৯ থেকে ১৯৬৪ সালের মধ্যে তেজগাও শিল্প এলাকায় রুপান্তরিত হয়।

১৯৬০ সাল থেকে কাজ শুরু হয়ে ১৯৬২ সালেই রেল স্টেশন ফুলবাড়িয়া থেকে কমলাপুরে স্থানান্তরিত হয়। ১৯৫০ সালে নটরডেম কলেজ স্থাপনের পর থেকেই মতিঝিল এলাকা ধীরে ধীরে বেড়ে উঠে ষাটের দশকেই বানিজ্যিক এলাকা হিসেবে গড়ে উঠে। ১৯৬১ সালে বনানীকে মডেল টাউন হিসেবে গড়ে তোলা হয়। পঞ্চাশের দশক থেকেই ঢাকা শহরের বড় রাস্তাগুলোর মাঝখানে আইল বসিয়ে(যাকে ডাইভারশন বলা হয়) ভাগ করা হয়। এই সবের বিশ্লেষনে অধ্যাপক আহমেদ হাসান দানী তার ‘ঢাকা এ রেকড অব ইটস চেঞ্জিং’ গ্রন্থে ষাটের দশকে ঢাকার জনসংখ্যা পুরুষ ২,১৮,১৪৬ এবং নারী ১,৫০,৪২৯ মোট ৩,৬৮,৫৭৫ জন উল্লেখ করেছেন।

উপরোক্ত তথ্যমতে বলা যায়, সত্তরের দশকের শুরুতে ঢাকা শহরের জনসংখ্যা চার লাখের বেশি বা কম এরকমটাই হওয়ার কথা। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে অসহযোগ আন্দলন শুরু হতেই প্রথম ধাক্কায় নিম্ন শ্রেণীর এক বিশাল অংশ ঢাকা ত্যাগ করতে শুরু করে। ২৫ তারিখের গনহত্যার পর থেকে মধ্যবিত্তের কর্মজীবি ব্যক্তিটি বাদে পরিবারের অন্যদের ঢাকার বাইরে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া শুরু হয়। যার ফলে মার্চ-এপ্রিলেই ঢাকার জনসংখ্যা প্রায় আধাআধিতে পরিণত হয়। ধীরে ধীরে এই ঢাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার সংখ্যা বাড়তেই থাকে।

এমনি প্রায় শুণ্য ঢাকা শহরে ঘর থেকে বেরিয়ে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে গোপনে যাতায়াত অসম্ভব ছিল। উপরন্তু এপ্রিল থেকেই ঢাকা শহরের মোড়ে মোড়ে বসানো হয় সামরিক চেক পোষ্ট। ঠিক সেই অবস্থায় বাংলাদেশের মানুষের কাছে তো বটেই পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর অতি চেনা মুখ বঙ্গবন্ধু পরিবারের পালিয়ে থাকা একরকম দুঃসাধ্য বিষয়ে পরিনত হয়। রাস্তা ঘাট, বাড়ি ঘর, অফিস আদালত ফাকা, পালিয়ে কোথাও মাথা গোজার ঠাই হিসেবে উপস্থিত হয়ে দেখা গেছে সেই বাড়ির সকলেই হয় ইতিমধ্যে ঢাকা ত্যাগ করেছে নয়ত ঢাকা ত্যাগের প্রস্তুতি নিচ্ছে। শত শত বাড়ি ফাকা পড়ে আছে কিন্তু বসবাসের উপযোগী বা ভাড়া পাওয়া যাবে এমন বাড়ি একসময় পাওয়া অসম্ভব হয়ে যায়।

এমনি অবস্থায় গ্রেফতার এড়িয়ে পাকিস্তানী সেনাদের চোখের সীমানার মধ্যে বাস করা সম্ভব হয়না। ঢাকা ত্যাগ করে অন্য কোথাও চলে যাওয়ার আগেই এক সময়ে ঠিকই ধরা পড়ে যায় বঙ্গবন্ধু পরিবার। শুরু হয় বন্দী জীবনের অনিশ্চিত অধ্যায়। বন্দী ও নির্যাতনের অনিশ্চিত জীবনের শুরুঃ অন্য কোথাও চলে যাওয়ার আগেই মে মাসের ১২ তারিখ বিকেলে পাকিস্থানী আর্মীর মেজর হোসেন পরিচয়ে এসে গ্রেফতার করে কড়া পাহারায় ধানমন্ডির ৯/এ(পুরাতন ১৮) নম্বর রোডের ২৬ নম্বর বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেদিন দুপুর ১টার দিকে তিনজন ছাত্রলীগ কর্মী তাদের নিয়ে যেতে আসলেও তাদের সঙ্গে এক্ষনই এত বিশাল মানুষের বহর নিয়ে বেগম মুজিব যেতে রাজি হন নি।

কিন্তু মাত্র কয়ক ঘন্টার মধ্যেই মনে জেগে উঠা সন্দেহ বাস্তবে রুপ নিল। কোনরকম বিছানা, ফ্যান বা অন্য কোন আবাসনের ন্যুনতম সুবিধাটুকুও দেওয়া হয়নি। উপরন্তু ১৫/২০জন সশস্ত্র সৈন্য সবসময় পাহারায়। এই বাড়িতে নিয়ে আসার পরেই বেগম মুজিব অসুস্থ হয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। পাকি সেনাদের নানান নিয়মের বোলচাল পেরিয়ে ওয়াজেদ সাহেব ধানমন্ডি বালিকা বিদ্যালয়ে অবস্থিত ক্যাম্পে গিয়ে চিকিতসার প্রয়োজনের কথা জানানোয় একজন নারসকে পাঠানো হয়।

অন্তরীন করার ৪র্থ দিনে মেজর হোসেন শুধুমাত্র ড ওয়াজেদ, চিকিতসার প্রয়োজনে তার অন্তসত্ত্বা স্ত্রী শেখ হাসিনা এবং মোমিনুল হক খোকাসহ তার দুই সন্তানকে পড়ালেখার অজুহাত দেখিয়ে বাইরে যাওয়ার অনুমতি পাওয়া হয়। আটক অবস্থার প্রতিটি দিনই পাহারারত সৈন্যরা নানাভাবে সকলকে হয়রানি ও মানসিক নির্যাতন করেছে। বাড়ির ছাদে উঠে লাফালাফি, প্রত্যেক ঘরের লাইট জ্বালিয়ে রেখে জানালায় রাইফেল তাক করে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতো। এমনি নির্মম মানসিক ও শারিরীক নির্যাতনে বন্দী দিনগুলো কাটাতে হয়েছে। বন্দী ও নির্যাতন জীবনের পুরো সময়কে এখানে উল্লেখ করার সুযোগ নেই।

কারন এই লেখায় মুলত একাত্তরের যে দিনটিতে বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র ও শেখ হাসিনা তনয় সজীব ওয়াজেদ জয় জন্ম গ্রহন করেছিলেন সেই পর্যন্তই সীমিত রাখলাম। বঙ্গবন্ধু পরিবারের একাত্তরের দিনগুলো নিয়ে আরেকটি লেখা আলাদাভাবে পাঠক ও ব্লগারদের সম্মানে লেখার ইচ্ছা রইল। নবজাতকের জন্ম ও চিকিৎসা বিড়ম্বনাঃ জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে ডাঃ ওয়াদুদ ও ডাঃ সুফিয়া ওয়াদুদের ক্লিনিকে শেখ হাসিনাকে নেওয়া হলে চেক-আপ করা হয়। প্রতি সপ্তাহে ক্লিনিকে যাওয়ার পরামর্শ দেন। জুলাই মাসের মাঝামাঝি শেখ হাসিনাকে ডাঃ ওয়াদুদের তত্বাবধানে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়।

সমস্যা দেখা দেয় হাসপাতালে কে থাকবেন। সেজন্য মেজর হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করে বেগম মুজিবকে থাকার অনুমতি চাইলে মেজর ইকবাল নামক একজন সেনা অফিসার বন্দীশালায় এসে রুঢ় ব্যবহার করে জানিয়ে কেবল একজন সেবিকা বা এজাতীয় কেউ একজন হাসপাতালে অবস্থান করতে পারবেন। কোন উপায়ান্তর না পেয়ে বঙ্গবন্ধুর ছোট বোন এবং এ টি এম সৈয়দ হোসেনের স্ত্রী লিলি হোসেন নিজেই সেবিকা সেজে এসে শেখ হাসিনার সঙ্গে হাসপাতালে অবস্থান করেন। ২৭ জুলাই রাত ৮টার দিকে নির্ধারিত সময়ের ৬ সপ্তাহ পূর্বে ড এম এ ওয়াজেদ মিয়া ও শেখ হাসিনার প্রথম সন্তানের জন্ম হয়। পৃথিবীতে নতুন মানুষের আগমনেও কেউ মিষ্টি খাওয়ার কথা ভাবতেই পারেনি।

উপরন্তু হাসপাতাল ও বন্দীশালা উভয় স্থানেই পাক বাহিনীর দৌরাত্ম্য বেড়ে যায়। শুরু হয় নতুন হুমকী দামকী। এরই মধ্যে গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধুর পৈত্রিক বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধুর বৃদ্ধ-অসহায় পিতা-মাতা ঢাকায় এসে আরামবাগের একটি বাসায় নাতনী জামাইয়ের বাসায় আশ্রয় নেন। শেখ হাসিনা সন্তানসহ হাসপাতাল থেকে ছুটি পেয়ে অতিগোপনে দাদা-দাদীকে নতুন অতিথিকে দেখিয়ে দোয়া নিয়ে বন্দীশালায় প্রবেশ করেন।

বন্দীশালায় আসার পর দেখা দেয় বাচ্চা ও মা উভয়ের জরুরী চিকিৎসার প্রয়োজন। কিন্তু এবারও পাকিদের প্রচন্ড উগ্রতায় চিকিৎসককে বাড়িতে আসতে দেওয়া হয়নি। উপরন্তু ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে দু’জন সশস্ত্র প্রহরীকে দেওয়া হয়। এমনিই নানান সংকট শুধুমাত্র পরম করুনাময়ের অশেষ রহমতেই উৎরাতে পেরেছেন। নবজাতকের নামকরন ও পাকিস্তানীদের মনোভাবঃ একদিন নবজাতককে গোসল করিয়ে শরীরে তেল মাখতে মাখতে বেগম মুজিব ছেলে সন্তানের নাম কী হবে সেটা নিয়ে জল্পনা কল্পনা করছিলেন।

শেখ হাসিনা ইতিপূর্বে পিতা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কথোপকতনের কথা উল্লেখ করে জানান, “আব্বা আমাকে বলেছিলেন, ছেলে হলে জয় বাংলার ‘জয়’ আর মেয়ে হলে ‘জয়া’ নাম রাখতে”। বেগম মুজিব সঙ্গে সঙ্গেই নবজাতককে কোলে তুলে নিয়ে বলেন, ‘সত্যিই এ আমার জয়। আমার কোন ভাই নেই, জয় আমার সত্যিই ভাই। তাই মুজিব নামের সঙ্গে মিলিয়ে আসল নাম রাখলাম সজিব’। সেই থেকে ‘সজিব ওয়াজেদ জয়’ বাংলার বিজয় এবং মুক্তিযুদ্ধের সময়ে দলমত নির্বিশেষে সকলের স্লোগান 'জয় বাংলা' একই সুত্রে গাথা এক অচ্ছেদ্য সম্পর্ক।

এই নাম রাখার পর থেকেই বন্দীশালায় পাহারারত সৈন্যরাসহ অন্যান্য অফিসারেরাও ড ওয়াজেদকে প্রায়শই জিজ্ঞাসা করতো ‘জয় নাম কিসলিয়ে রাখা’? ড ওয়াজেদ কৌশলে আসল কথা এড়িয়ে গিয়ে বলতো, নাতিকে পেয়ে আমার শাশুড়ি খুব খুশী হয়েছেন। যেহেতু ‘জয়’ মানে ‘আনন্দ’ তাই আমার শাশুড়ি ‘জয়’ নাম রেখেছেন। পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধ ধীরে ধীরে তীব্র আকার ধারন করলে পাহারারত সৈন্যসহ অফিসারেরাও ড ওয়াজেদকে কটাক্ষ করে বলতো, “পশ্চিম পাকিস্থানমে এক নমরুদকো(বঙ্গবন্ধু) পাকড়াও করকে রাখা হুয়া, লেকিন এধার এক কাফের(সজিব ওয়াজেদ জয়) পয়দা হুয়া। ” বাঙালির জীবনে স্বাধীন বাংলাদেশ পাওয়া হলো পরম পাওয়া। আর সেই পরম পাওয়াটি নিশ্চিত করতে লক্ষ কোটি নিবেদিত প্রাণ নিজেদের বিলিয়ে দিয়েছেন অকাতরে।

কেউ সম্মুখ সমরে আবার কেউ আড়ালে অন্তরালে ভোগ করেছেন অপরিসীম যাতনা। তবু সকলেই যেন মেনে নিয়েছেন সেই কষ্টের কথা, বেদনার কথা। এটাই তো স্বাভাবিক যে, বর্বর পাকবাহিনী যাকে নমরুদ বলে গালি দিয়েছে সে-ই হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আর যাকে কাফের বলে তিরষ্কার করেছে সে হবে আধুনিক বাংলাদেশের অতি আপন মানুষ সজিব ওয়াজেদ জয়। শুভ জন্মদিন জয় বাংলার জয়।

শুভ জন্মদিন মুজিবের সজীব। বি.দ্রঃ এই লেখাটি সম্পন্ন করতে যেসব প্রবন্ধ ও গ্রন্থের সহযোগিতা নিয়েছি সেই সব প্রবন্ধ ও গ্রন্থের লেখক ড.নীলিমা ইব্রাহিম, ড.এম এ ওয়াজেদ মিয়া, শেখ হাসিনা, অধ্যাপক ড.আতিউর রহমান, অধ্যাপক ড। হারুন-অর-রশিদ, অধ্যাপক ড.শরীফ উদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক, অধ্যাপক ড.মুহীত উল আলম, অধ্যাপক ড.আবু মোঃ দেলোয়ার হোসেন, ড.এ কে এম গোলাম রব্বানী, আক্কু চৌধুরী, সেলিনা হোসেন, ড.মোহাম্মদ হাননান, ড.সাব্বীর আহমেদ, ডাঃএম এ হাসান, মফিদুল হক, বেবী মওদুদ, শেখ রেহানা, মোমিনুল হক খোকা প্রমুখ এবং প্রবন্ধ ও গ্রন্থের প্রতি অশেষ শ্রদ্ধা। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.