বুকের ভেতর বহু দূরের পথ...
আগামীকাল থেকে লন্ডনে শুরু হচ্ছে অলিম্পিক গেমসের ৩০তম আসর। অলিম্পিক গেমসকে বলা হয় দ্য গ্রেটেস্ট শো অন দ্য আর্থ। প্রতি চার বছর অন্তর আয়োজিত এই ক্রীড়া প্রতিযোগিতার জন্য মুখিয়ে থাকেন প্রতিযোগী থেকে শুরু করে বিশ্বের কোটি কোটি দর্শক। একশ' বছরের বেশি সময় ধরে চলতে থাকা অলিম্পিক গেমস ইতিহাস আর ঐতিহ্যে বরাবরই ঘটনাবহুল। অলিম্পিক গেমস একাধারে যেমন বিশ্বশান্তি আর ভ্রাতৃত্বের প্রতীক, তেমনি বিভিন্ন সময় জন্ম দিয়েছে ন্যক্কারজনক ঘটনা।
তাই বিশ্ব চলচ্চিত্রেও অলিম্পিক বরাবরই পাধান্য পেয়েছে। জেনে নেয়া যাক অলিম্পিক গেমসের প্রেক্ষাপটে নির্মিত কিছু বিখ্যাত চলচ্চিত্রের কথা ।
Chariots of Fire(1981)
Director: Hugh Hudson
অলিম্পিক গেমস নিয়ে নির্মিত সম্ভবত এটাই সবচেয়ে বিখ্যাত চলচ্চিত্র। এতে তুলে ধরা হয়েছে ১৯২৪ সালে ফ্রান্স অলিম্পিকে দু'জন অ্যাথলেটের স্বর্ণজয়ের গৌরবগাথা, যাদের একজন ইহুদি, অন্যজন খ্রিস্টান। আপাতদৃষ্টিতে সাদামাটা কাহিনী মনে হলেও ছবিটিতে রয়েছে দারুণ নাটকীয়তা।
খ্রিস্টান অ্যাথলেট খুবই ধার্মিক হওয়ায় নিয়মিত 'সাবাথ' পালন করেন [খ্রিস্টধর্ম অনুসারীদের সপ্তাহের একটি দিন সাধারণত রোববার জাগতিক সব বিষয় থেকে নিজেকে দূরে রাখাকে বলে 'সাবাথ']। কিন্তু মূল প্রতিযোগিতায় তার ইভেন্টটি পড়ে রোববার। বেঁকে বসেন অ্যাথলেট। ইভেন্টে অংশগ্রহণ করবেন না। ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম এতদিনের পরিশ্রম।
একদিকে দেশ, অন্যদিকে তার ধর্মবিশ্বাস। সম্পূর্ণ সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত ছবিটি জিতে নেয় শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রসহ চিত্রনাট্য, সঙ্গীত ও পোশাক পরিকল্পনা শাখায় অস্কার পুরস্কার জিতে নেয়।
চলচ্চিত্রটির টাইটেল মিউজিকটা আসাধারন!
Munich (2005)
Director: Steven Spielberg
১৯৭২ সালে মিউনিখ অলিম্পিকে ১১ ইসরায়েলি অ্যাথলেটকে অপহরণ করে হত্যা করা হয়। এ হত্যায় জড়িত ছিল দ্য বল্গ্যাক সেপ্টেম্বর অরগানাইজেশন [বিএসও] নামে একটি প্যালেস্টাইনি জঙ্গি সংগঠন। এ হত্যার প্রতিশোধ নিতে অবসরপ্রাপ্ত এক মোসাদ কর্মকর্তাকে দলনেতা করে টিম গঠন করা হয়।
লক্ষ্য এ হত্যার সঙ্গে জড়িত সবাইকে মেরে ফেলা। মিশনে নামার পর বেরিয়ে আসে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ এ মিশনটির কথা অনেকদিন ধরে গোপন রাখে। চলচ্চিত্রটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত।
The Cutting Edge (1992)
Director: Paul Michael Glaser
১৯৮৮ সালে শীতকালীন অলিম্পিক গেমসে ব্যর্থ দুই অ্যাথলেটের প্রেমের আখ্যান এ ছবি।
একজন আইস হকি খেলোয়াড়, আরেকজন ফিগার স্কেটার। এক বুক স্বপ্ন নিয়ে তারা অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করেন কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ব্যর্থ হন। দু'জনের ক্যারিয়ার প্রায় শেষ হয়ে যায়। চার বছর পর অলিম্পিকে আবার তাদের সামনে নিজেদের সম্মান পুনরুদ্ধারের সুযোগ আসে। স্কেটিংয়ে স্বর্ণজয়ের লক্ষ্যে দু'জন একসঙ্গে জোট বাঁধেন।
ঘৃণা রূপ নেয় ভালোবাসায়। এ ছবির বিখ্যাত একটি গান 'ফিলস লাইক ফরএভার'-এ কণ্ঠ দেন জো কোকার এবং গানটির গীতিকার ব্রায়ান অ্যাডামস।
Without Limits (1998)
Director: Robert Towne
যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত দৌড়বিদ স্টিভ প্রেফন্টেইনের জীবনীমূলক ছবি। লং ডিসট্যান্স দৌড়ে আন্তর্জাতিক রেকর্ড বহুদিন তার দখলে ছিল। মিউনিখ অলিম্পিকে অংশ নেওয়া এ দৌড়বিদ মাত্র ২৪ বছর বয়সে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন।
এ চলচ্চিত্রে মূলত স্টিভের সঙ্গে তার কোচ বিলি বাওয়ারম্যানের সম্পর্কেও বিভিন্ন দিক উঠে এসেছে। মিউনিখ অলিম্পিকে তিনি অংশগ্রহণ করেন। এ ছবিটিতে টম ত্ক্রজের অভিনয় করার কথা থাকলেও বয়সের কারণে তিনি অভিনয় করতে পারেননি। চরিত্রটির জন্য আরও কম বয়সের অভিনেতার প্রয়োজন ছিল। তবে ক্রুজ ছবিটি প্রযোজনা করেন।
আমেরিকান এ দৌড়বিদকে নিয়ে ১৯৯৭ সালে 'প্রেফন্টেইন' নামে আরেকটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়।
Miracle (2004)
Director: Gavin O'Connor
অলিম্পিকের আরেকটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত ছবি এটি। ১৯৮০ সালের অলিম্পিকে আমেরিকান হকি দলের কোচ হার্ব বুকসের নৈপুণ্যে তৎকালীন সবচেয়ে শক্তিশালী ও অপ্রতিরোধ্য দল রাশিয়াকে হারিয়ে স্বর্ণপদক জয় করে যুক্তরাষ্ট্র। সিমিত আমিন পরিচালিত ও শাহরুখ খান অভিনীত হিন্দি 'চাক দে ইন্ডিয়া' চলচ্চিত্রটি মিরাকল ছবি থেকে অনুপ্রাণিত।
Berlin'36 (2009)
Director: Kaspar Heidelbach
জার্মান এ চলচ্চিত্রটিও সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত।
গ্রেটেল বার্গম্যান একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নারী অ্যাথলেট, যিনি হাই জাম্পে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। ইহুদি হওয়ায় নাৎসি বাহিনীর চাপের মুখে গ্রেটেলের বাবা-মা তাকে ট্রেনিংয়ের জন্য যুক্তরাজ্যে পাঠিয়ে দেন। ১৯৩৬ সালের বার্লিন অলিম্পিকে যুক্তরাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি ইহুদিদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে আয়োজকদের কাছে দাবি জানায়। গ্রেটেল যুক্তরাজ্য থেকে জার্মানিতে এসে জাতীয় দলের সঙ্গে যোগ দেন। কিন্তু ইহুদি হওয়ায় নাৎসি বাহিনী শেষ মুহূর্তে তাকে কৌশলে জাতীয় দল থেকে বাদ দেয়।
পরে তার জায়গায় স্থলাভিষিক্ত হন নারী ছদ্মবেশ ধারণকারী একজন পুরুষ অ্যাথলেট! শেষ পর্যন্ত জার্মানির পক্ষে হাই জাম্পে কোনো পদক জয় সম্ভব হয়নি।
The Jesse Owens Story (1984)
Director: Richard Irving
মার্কিন কৃষ্ণাঙ্গ অ্যাথলেট জেসি ওয়েনসের জীবনীভিত্তিক চলচ্চিত্র । ১৯৩৬ সালের বার্লিন অলিম্পিকে তিনি দৌড় ও লং জাম্পে চারটি স্বর্ণপদক জেতেন।
Running Brave (1983)
Directors: Donald Shebib, D.S. Everett
উত্তর আমেরিকান-ইন্ডিয়ান অ্যাথলেট বিলি মিলসের জীবনীভিত্তিক চলচ্চিত্র । ১৯৬৪ সালের টোকিও অলিম্পিকে দশ হাজার মিটার দৌড়ে তিনি স্বর্ণপদক জয় করে ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছেন।
Personal Best (1982)
Director: Robert Towne
তিন নারী অ্যাথলেটের গল্প। তাদের স্বপ্ন ১৯৮০ সালের অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করা। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অলিম্পিক বর্জন করতে চাইলে তাদের স্বপ্ন হুমকির মুখে পড়ে। এ ছবিটিতে মূলত বিশ্বব্যাপী নারী অ্যাথলেটদের দুর্দশা ও কষ্টের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
Astérix at the Olympic Games (2008)
Directors: Thomas Langmann, Frédéric Forestier
বিখ্যাত কমিক চরিত্র অ্যাসটেরিক্স ও অবেলিক্সকে নিয়ে অলিম্পিক গেমস-নির্ভর হাসির ছবি এটি।
(২৬ জুলাই ২০১২ দৈনিক সমকালের সাপ্তাহিক বিনোদন পাতা নন্দনে প্রকাশিত)
____________________________________________
**চলচ্চিত্র বিষয়ক আমার যত পোস্ট** ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।