চারিদিকে দেখো চাহি হৃদয় প্রসারি আন্দোলনের বিশ্ব
• বিশ্বজোড়া শাসক বিরোধি আন্দোলন চলছে সমস্ত মহাদেশগুলি জুড়ে। এশিয়া, আফ্রিকার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে, গোটা ইউরোপে, আমেরিকার শহরগুলোতে চলছে জনগণের শাসক বিরোধি লড়াই। ইউরোপে ক্ষমতার পালাবদলে জনগণের শক্তিগুলি কোথাও কোথাও নির্বাচনে বিজয় বা বিশেষ জনসমর্থন আদায় করে নিচ্ছে। লাতিন আমেরিকার জনপ্রিয় সরকারগুলো আওয়াজ তুলছে আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতার। নতুন নতুন দেশ এই লড়াইয়ের ময়দানে যুক্ত হচ্ছে।
• এশিয়া - আফ্রিকা
• এশিয়ার পশ্চিমাংশ ও আফ্রিকার উত্তরাংশে অর্থাৎ ভূমধ্যসাগর তীরবর্তি দেশগুলোয় এই আন্দোলন অনেকটাই একনায়কতন্ত্রী শাসনের বিরুদ্ধে। তিউনিশিয়া, মিশর, লিবিয়া, বাহারিন, ইয়েমেন, জর্ডন, সিরিয়া –সর্বত্রই তানাশাহী বিরোধি সংগ্রাম। কোথাও কোথাও ক্ষমতার কেন্দ্র থেকে পুরনো শাসকেরা অপসারিত হয়েছেন। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নতুন শাসক এসেছেন। যেমন তিউনিশিয়া বা মিশরে বা ইয়েমেনে।
সে ব্যবস্থাগুলিও এখনো দৃঢ়তা পায় নি। মিশরে সামরিক পরিষদ আর নির্বাচিত সংসদের মধ্যে ক্ষমতার ভাগবিন্যাস নিয়ে বিতণ্ডা চলছে। জনগণ দাবী সনদ নিয়ে এখনো জমা হন তাহরির স্কোয়ারে। কোথাও আমেরিকা ও ন্যাটো প্রত্যক্ষ মদতে পুরনো শাসককে অপসারিত করে নিজেদের মনোমত নতুন শাসক বসিয়েছে। যেমন লিবিয়া।
কোথাও এই মুহূর্তেও শাসক ও বিরোধী জোটের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম চলছে। যেমন সিরিয়া আর বাহারিন।
• আরব দুনিয়ার এই বিক্ষোভ বিশ্ব রাজনীতির রঙ্গমঞ্চে নতুন দিশা হাজির করছে। বিক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দু এই দেশগুলি হয় রাজতান্ত্রিক বা একনায়কতান্ত্রিক। দুই তিন বা চার দশক ধরে সেখানে চলছে তানাশাহী।
দেশের মধ্যে ব্যাপক অসাম্য, দুর্নীতি, মূল্যবৃদ্ধির সমস্যা আর স্বৈরাচারী শাসনের প্রকোপ। অন্যদিকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষে তারা আমেরিকার স্বার্থরক্ষাকারী ও মদতপুষ্ট। এ সবের বিরুদ্ধেই পথে নেমেছে জনগণ। সর্বত্রই শাসকেরা আশ্রয় নিচ্ছেন নানামাত্রিক দমননীতির। আমেরিকা মৌখিকভাবে কোথাও কোথাও গণ আন্দোলনের প্রতি শাসকদের সহানুভূতিপ্রবণ হওয়ার আহ্বান জানালেও এই শাসকদের প্রতি তাদের দীর্ঘদিনের মদত সবার কাছে দিবালোকের মতোই স্পষ্ট।
গণজাগরণের মুখে নিজেদের পছন্দের একনায়কদের অপসারণ বাধ্যতামূলক হলেও আমেরিকা তাদেরই কোনও আস্থাভাজনকে ক্ষমতায় রাখতে আগ্রহী। জনগণের লড়াই আমেরিকার প্রভাবকে কতটা মেনে নেয়, তা বিশ্বরাজনৈতিক ক্ষমতা ভারসাম্যের প্রশ্নে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর এটা অনেকটাই নির্ভরশীল গণ আন্দোলনের নেতৃত্বকারী শক্তির রাজনৈতিক দিশার ওপর। সাধারণভাবে আরব দেশগুলির এই গণ আন্দোলনে বড় ভূমিকা রয়েছে ছাত্রযুবদের। সেইসঙ্গে বিভিন্ন দেশে শ্রমিকশ্রেণির ঐক্যবদ্ধ লড়াই, ট্রেড ইউনিয়নগুলির সক্রিয়তাও বিশেষভাবে চোখে পড়ছে।
মধ্যবিত্ত ও বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে শিক্ষক আইনজীবীদের রাস্তায় নামতে দেখা গেছে। দেশের গণতান্ত্রিক মানুষের দীর্ঘদিনের আশা আকাঙ্ক্ষারই প্রতিফলন ঘটছে এই আরব বিপ্লবে। বিশ্ববাসীর একাংশ মূলত পশ্চিমী প্রচারমাধ্যমের ‘ক্ল্যাস অব সিভিলাইজেশনস’ তত্ত্ব অনুসারে আরব দুনিয়াকে যেভাবে সংরক্ষণশীল মানসিকতার দেশ হিসেবে ভেবেছিল, স্থাপন করেছিল বুর্জোয়া উদারনৈতিকতার নেতিবাদী বিপ্রতীপে – এই আরব বিপ্লব তারই বলিষ্ঠ প্রতিবাদ হিসেবে দুনিয়াজোড়া গণতান্ত্রিক লড়াইয়ের কেন্দ্রে নিশ্চিতভাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করছে।
• পঞ্চাশ ষাট সত্তর দশকে গোটা বিশ্বে যে গণতান্ত্রিক লড়াই হয়েছিল তাতে প্রত্যক্ষ ঔপনিবেশিকতা বা সামন্তবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় গণমুক্তি ও সমাজতন্ত্রে স্বপ্ন ছিল মূল প্রেরণা। বিশ শতকের শেষ দশক বা একুশ শতকের প্রথমে লাতিন আমেরিকার দেশে দেশে উত্তর আমেরিকার অর্থনৈতিক আগ্রাসণ ও আগ্রাসী পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই ভেনেজুয়েলা, বলিভিয়া, ব্রাজিল, ইকুয়েডরে প্রেরণা হিসেবে দেখা দেয়।
আরব ভূখণ্ডের নিজস্ব ভৌগলিক বৈশিষ্ট্য ও রাজনৈতিক ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে সেখানে যে গণতান্ত্রিক বিপ্লব ঘটছে তা অতীতের কোনও আন্দোলন বৈশিষ্ট্য নিয়ে আত্মপ্রকাশ করবে – এমন ধারণা বাস্তবোচিত নয়। আরব বিপ্লব শেষপর্যন্ত কোন পরিণতি ধারণ করবে আর তা বিশ্ব রাজনীতিকে কোন নতুন অভিমুখ দেবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
• আমেরিকা –
• ‘আমরা ৯৯%’ এই পরিচয় নিয়ে এবং দখল করার ডাক দিয়ে নারী-পুরুষ, শিক্ষার্থী-শিক্ষক, শ্রমিক, লেখক-শিল্পী, বেকার, দরিদ্র, নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্ত এবং সংবেদনশীল নিপীড়ন-বৈষম্য অন্যায়বিরোধী মানুষের বিক্ষোভ ক্রমেই দেশ থেকে দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। সমাবেশে উপস্থিতি শত ছাড়িয়ে হাজার, হাজার ছাড়িয়ে লাখ অতিক্রম করছে। ইতিমধ্যে বিশ্বের প্রায় এক হাজার শহরে এই বিক্ষোভ-সমাবেশ সম্প্রসারিত হয়েছে।
কোথাও কোথাও পুলিশ বাধা দেওয়ায় তার সঙ্গে সংঘাত তৈরি হয়েছে। রক্তাক্ত হয়েছে নিরস্ত্র বিক্ষুব্ধ মানুষ। কয়েক দিন আগে বিক্ষোভকারীরা একটি ছোট্ট ভিডিওতে প্রকাশ করেছে, ওবামা ও হিলারি যখন সিরিয়া, লিবিয়া বা মিসরকে উপদেশ দিচ্ছেন মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় দমন-পীড়ন বন্ধ করতে, যখন তরুণ প্রজন্মকে নতুন ইতিহাস নির্মাণে অভিনন্দন জানাচ্ছেন, তখন তাদেরই পুলিশ যুক্তরাষ্ট্রের শহরে শহরে নিরস্ত্র বিদ্রোহী তরুণদের ওপর বর্বর হামলা পরিচালনা করছে (Click This Link) | তরুণ বিক্ষোভকারীরা প্রত্যয়ী, তাদের সংখ্যা ও দৃঢ়তা বাড়ছেই।
কারা এই বিক্ষোভের লক্ষ্য? কারা এর প্রতিপক্ষ? আর কারা এই আন্দোলনের পক্ষে? এই আন্দোলনের গতিমুখ কোন দিকে? কেন এই দুটি স্লোগানের সঙ্গে সবাই নিজের আকাঙ্ক্ষা মেলাতে পারছে? ‘আমরা ৯৯%’ স্লোগানের মধ্য দিয়ে সর্বত্র শতকরা ৯৯ ভাগ মানুষের জীবন ও স্বার্থের ঐক্য-সংহতি প্রকাশ করা হয়েছে। এটি আরও স্পষ্ট হয় যখন বিক্ষোভকারীরা বলে, ‘শতকরা ১ ভাগ আমাদের সম্পদ দখল করে রেখেছে।
’ মাইকেল প্যারেন্টি বলছেন, ‘এটি সরাসরি শ্রেণীযুদ্ধের আওয়াজ। ’ সেই এক ভাগের খুব গুরুত্বপূর্ণ অংশ একচেটিয়া পুঁজির প্রতিনিধি বৃহৎ বহুজাতিক সংস্থা, ব্যাংক, বিমা এবং নানা অর্থকরী প্রতিষ্ঠানের স্বার্থের সঙ্গে সম্পর্কিত। তাদেরই কেন্দ্র নিউইয়র্কের বাণিজ্যিক এলাকা ওয়াল স্ট্রিট। এক পোস্টারে এর নাম দেওয়া হয়েছে, ওয়ার স্ট্রিট। কেননা, এদের স্বার্থেই যুক্তরাষ্ট্র দেশের পর দেশ দখল ও সন্ত্রাসে তার সর্বশক্তি নিয়োজিত রেখেছে গত ছয় দশক।
আরেক পোস্টারে লেখা, ‘অকুপাই ওয়াল স্ট্রিট, নট আফগানিস্তান’। এক পোস্টারে বলা আছে ‘ওয়াল স্টিট গ্রিড=হাংরি কিডস’। ১%-এর লোভের জন্যই সারা বিশ্বে অনাহার, দারিদ্র্য, অকালমৃত্যু—যাদের বড় অংশ শিশু। সারা বিশ্বের সর্বজনের সম্পদ উন্নয়নের নামে গ্রাস করেছে কতিপয় গোষ্ঠী কিংবা করপোরেশন। তাদের মুনাফার লোভ মেটাতে গিয়ে অনিশ্চয়তা, সন্ত্রাস, অপমানে জর্জরিত শতকরা ৯৯ ভাগ মানুষ।
যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ কেন অনাহারে এবং চিকিৎসার অভাবে বিপর্যস্ত হবে? কেন আশ্রয়হীন থাকবে? এটা অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হওয়ার কথা। কেননা, বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর, নিজ দেশ শুধু নয় সারা বিশ্বের বিশাল সম্পদ কতিপয় মার্কিন গোষ্ঠী আর তাদের শাগরেদদের দখলে। একটি ছোট ঘোষণা ভিডিওতে প্রথম কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। (Click This Link)। বলা হয় ‘ডেমোক্র্যাটরা ব্যর্থ, রিপাবলিকানরা ব্যর্থ।
এখন আমাদের স্বার্থ আমাদেরই দেখতে হবে, তোমার স্বার্থ তোমাকেই দেখতে হবে। ’ আরও বলা হচ্ছে, ‘যারা পরিকল্পিতভাবে আমাদের সম্পদ লুট করে নিজেদের সম্পদের পাহাড় গড়েছে তাদের মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে। ‘আমরা ৯৯%। ’ কর্মসূচির নাম দেওয়া হয়েছে, ‘অপারেশন এম্পায়ার স্টেট’। যুক্তরাষ্ট্রের কেন এই হাল? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে পুঁজিবাদী বিশ্বব্যবস্থার কেন্দ্র ইউরোপ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে সরে যায়।
তার পর থেকে আধিপত্য বিস্তার এবং তেল কোম্পানি, অস্ত্র কোম্পানিসহ বৃহৎ ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ, সহিংসতা, সামরিক শাসন, গণহত্যা বিস্তৃত করেছে। নোয়াম চমস্কি, জোসেফ স্টিগলিজ, নাওমি ক্লেইন, উইলিয়াম ব্লুমসহ অনেকেই তথ্য-উপাত্ত দলিল দিয়ে দেখিয়েছেন কীভাবে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের নামে যুক্তরাষ্ট্র হয়ে উঠেছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী শক্তি। কোনো দেশ পারমাণবিক গবেষণা করলে যুক্তরাষ্ট্র তার বিরুদ্ধে নানা প্রতিরোধ তৈরি করে কিন্তু নিজের পারমাণবিক স্থাপনা রক্ষণাবেক্ষণের জন্যই তাকে প্রতিবছর খরচ করতে হয় বিশাল অর্থ।
এক হিসাবে দেখা গেছে, শুধু এই কাজে যুক্তরাষ্ট্রের যে অর্থ ব্যয় হয় তা যদি এক ডলারের নোট দিয়ে দড়ি বানানো হয় তাহলে তার দৈর্ঘ্য এমন হবে যে, সেই দড়ি দিয়ে চাঁদে গিয়ে ফেরত আসা যাবে। যখন যুক্তরাষ্ট্রে কখনো না কখনো অনাহারে থাকেন এমন মানুষের সংখ্যা সাড়ে ৪ কোটি, বেকার শতকরা প্রায় ১৩ ভাগ, যখন শিক্ষা-চিকিৎসার অর্থ পাওয়া যাচ্ছে না, তখন যুদ্ধ, গোয়েন্দাগিরি, চক্রান্ত ইত্যাদি কাজে এই একই রাষ্ট্রের বার্ষিক খরচ এক হাজার বিলিয়ন ডলার বা এক ট্রিলিয়ন ডলার।
অনাহারী মানুষের খাদ্য জোগানের খরচ মাত্র ১০ বিলিয়ন ডলার!
কৃত্রিম জৌলুশ, বিশ্বব্যাপী দখল সন্ত্রাস ও একচেটিয়া পুঁজিকে সম্পদ জোগাতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এখন সবচেয়ে ঋণগ্রস্ত দেশ। বার্ষিক জাতীয় আয়ের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে তার ঋণ। রাষ্ট্র, পরিবার এবং ব্যক্তি—সবই এখন ঋণে আকণ্ঠ নিমজ্জিত। রাষ্ট্রীয় ঋণের সীমা যখন অতিক্রম করতে যাচ্ছে, তখন গত মাসে, কংগ্রেসে ঋণসীমা বৃদ্ধির অনুমতি নিয়েছে ওবামা সরকার। গৃহঋণ ধস থেকে পরিষ্কার হয়েছে যে পরিবারের পর্যায়ে আয়ের তুলনায় ঋণ এত বেশি যে তা শোধ করার সীমা তারা পার হয়ে গেছে অনেক আগেই।
এই জায়গায় এসে ফুলে ফেঁপে ওঠা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও ধসে পড়ে। আবার বেইলআউটের নামে জনগণের করের টাকায় ট্রিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করা হয় তাদের উদ্ধারের জন্য। যাদের জন্য মানুষ ও অর্থনীতির দৈন্য তাদের শাস্তি না দিয়ে, হাতে আরও টাকা তুলে দেওয়া হয় ‘চুইয়ে পড়া তত্ত্ব’ অনুযায়ী; যে তত্ত্ব বলে ধনীদের হাতে যত টাকা যাবে তত তারা বিনিয়োগ করবে, তত কর্মসংস্থান বাড়বে। বাড়েনি, বেকারত্ব বেড়েছে। কারণ, সম্পদ কেন্দ্রীভূত যাদের হাতে, অধিক মুনাফার জন্য তারা এমন বিনিয়োগে আগ্রহী যাতে উৎপাদনশীল তৎপরতা বরং ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের কাজ আয় এমনকি খাদ্য যখন অনিশ্চিত তখন বড় বড় করপোরেশনের, যাদের জালিয়াতির জন্য অর্থনীতির ধস, কর্মকর্তারা বেইলআউটের টাকায় আয় করেছে কোটি ডলার বোনাস, বেতন।
এই ছবি শুধু যুক্তরাষ্ট্রের নয়, সারা বিশ্বের অধিকাংশ দেশের। যুক্তরাষ্ট্র যাদের সম্পদ দিয়ে একটা কৃত্রিম সচ্ছলতার ঘোর তৈরি করে মার্কিনদের বহুদিন বুঁদ করে রাখতে পেরেছিল, সেই সব প্রান্তস্থ দেশে লড়াই বহুভাবে বহুদিন ধরেই চলছে। সেই লড়াই দমনে বুদ্ধিবৃত্তিক ও সামরিক জোগানদার ছিল যুক্তরাষ্ট্রই। এখন কেন্দ্র প্রত্যক্ষ করছে বিদ্রোহ।
এখন শোষণ-নিপীড়নের বিশ্বায়নের মোকাবিলা করতে জোরদার হচ্ছে প্রতিরোধের বিশ্বায়নের ঐতিহাসিক পর্ব। আন্দোলনের সক্রিয় অংশীদার আমেরিকান ওয়ার্কার্স কোঅপারেটিভের প্রেসিডেন্ট বন্ধু ডিজার হর্ন ১৮ অক্টোবর ই-মেইলে সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে আমাকে জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘১০ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে কেউ পুঁজিবাদ শব্দটি উচ্চারণ করলেই তাঁকে কমিউনিস্ট গালি খেতে হতো। এখন পুঁজিবাদের ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে সর্বত্র। যেসব জায়গায় বিক্ষোভকারীরা অবস্থান নিয়েছে, সেখানেই শিক্ষার নতুন পর্ব বিকশিত হচ্ছে।
শিকাগোতে হচ্ছে বহু পাঠচক্র, লিখিত হচ্ছে নাটক, গান। দেখা গেল শ পাঁচেক তরুণ বসে কমিউনিস্ট মেনিফেস্টো নিয়ে আলোচনা করছেন। নিউইয়র্কে জুকত্তি পার্কে নিপীড়িতের থিয়েটার, অর্থশাস্ত্র, নতুন অর্থনীতি, দর্শন নিয়ে একের পর এক বৈঠক হচ্ছে। যৌথ জীবন, সামষ্টিক স্বার্থ, ভবিষ্যতের নতুন মানবিক জীবন নিয়ে আলোচনা চর্চা লড়াইকে ভাষা দিচ্ছে, সামনে তাকানোর শক্তি জোগাচ্ছে। এটা ঠিক যে একক কোনো নেতৃত্ব নেই এই আন্দোলনে।
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের শহরগুলোতে দীর্ঘদিন যেসব ইউনিয়ন বা সংগঠন গড়ে উঠেছে, তারাই মুখ্য ভূমিকা পালন করছে প্রচার ও যোগাযোগে। এত দিন ভিন্ন ভিন্ন ভাবে কাজ হতো এখন তৈরি হচ্ছে একক লক্ষ্য ও ঐক্যসূত্র। আগামী বছরে শিকাগোতে যে জি-৮ সম্মেলন হতে যাচ্ছে, সেটা নিশ্চিতভাবেই এক বড় লড়াইয়ের ক্ষেত্র হবে। ’
তিনি আরও বলছেন, ‘এই আন্দোলনের সবচেয়ে বড় সাফল্য হলো, যাঁরা আন্দোলনের কর্মী নন, যাঁরা সংগঠক নন, যাঁরা বামপন্থী নন, এটি তাঁদের হূদয়কেও টান দিয়েছে। …আমাদের সংখ্যা বিস্তৃত হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ এখন বিশ্বের মানুুষকে জানাচ্ছে যে তারা আর ঘুমিয়ে নেই। আমরা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মুক্তির লড়াইয়ের সঙ্গে সংহতি নিয়ে উঠে দাঁড়াচ্ছি’। [আমেরিকার আন্দোলনের এই অংশটি শ্রদ্ধেয় আনু মহম্মদের একটি লেখা থেকে গৃহীত]
• ইউরোপ – ইউরোপের আর্থিক সঙ্কট : কারণ ও প্রতিক্রিয়া
• মার্কস পুঁজিবাদী ব্যবস্থার মধ্যেই একটা অন্তর্নিহিত সঙ্কটের দিক চিহ্নিত করেছিলেন – অতি উৎপাদনের সঙ্কট।
• এই সঙ্কট থেকে পুঁজিবাদ নানা প্রক্রিয়ায় পরিত্রাণ পেতে চেয়েছে –কখনো যুদ্ধ, কখনো নতুন নতুন নতুন বাজার দখল, প্রযুক্তির বিকাশ এসব এর মধ্যে রয়েছে।
• উৎপাদন নির্ভর অর্থনীতি ক্রমশ সরে গেছে অন্যদিকে।
একে বলা হয় ফায়ার অ্যান্ড আইস ইকনমি। ফিনান্স, ইন্সুরেন্স, রিয়েল এস্টেট এবং ইনফরমেশন, কমিউনিকেশন, এন্টারটেনমেন্ট –এগুলিই অর্থনীতির বড় ভিত্তি হয়ে উঠেছে। অর্থনীতিতে ফাটকা ব্যবস্থা বড় হয়ে উঠেছে, শেয়ার ও অন্যান্য ঋণপত্র, ডেরিভেটিভ [অর্থাৎ ঋণপত্রের নানা মিশ্রিত প্যাকেজ, যার নিজস্ব কোন ক্ষমতা নেই, যা অন্য কিছু থেকে ডিরাইভ করা হয়, অর্থাৎ যা অন্য কিছু থেকে রসদ সংগ্রহ করে] – ইত্যাদি গুরূত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
• সাম্প্রতিককালে প্রথমে আমেরিকায় ও পরে ইউরোপে যে আর্থিক সঙ্কট দেখা দিয়েছে তাতে বড় ভূমিকা থেকেছে একটা ফাটকা বুদবুদের বিস্ফোরণের, যা হাউজিং বাবল বিস্ফোরণ নামে খ্যাত। সরকারগুলো ঘড়বাড়ির বাজারকে করছাড় ইত্যাদি দিয়ে ফুলিয়ে তুলেছে, ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা আছে কিনা তা না দেখেই ঋণ দেওয়া হয়েছে।
ঝুঁকি বেড়েছে, বেড়ে যাওয়া ঝুঁকিকে মিলিয়ে তারা ডেরিভেটিভে পরিণত করেছে। ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা সীমার বাইরে যাওয়ার পর যাবতীয় ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ একসাথে অনাদায়ী হয়ে পড়েছে, ব্যাঙ্কগুলোর পতনের সাথে সাথে সামগ্রিক অর্থনীতি সঙ্কটে পড়েছে।
• ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সরকারী ঋণ অত্যন্ত বেড়ে যাওয়াটাকেই সাম্প্রতিক ইউরো জোন ক্রাইসিস বলা হচ্ছে। জিডিপির তুলনায় এটা এত বেড়ে গেছে যে তা অপরিশোধ্য জায়গায় চলে গেছে। জিডিপির তুলনায় গ্রীসের ঋণ ১৪০ শতাংশ, আইসল্যাণ্ডে ১২৩ শতাংশ, ইতালিতে ১১৯ শতাংশ, আয়ারল্যান্ডে ৯৫ শতাংশ, পোর্তুগালে ৯৩ শতাংশ, জার্মানি ও ফ্রান্সে ৮৩ শতাংশ করে, স্পেনে ৬০ শতাংশ।
• এক দেশের সঙ্গে অন্য দেশের অর্থনীতি এই বিশ্ব ব্যবস্থায় অঙ্গাঙ্গী যুক্ত হওয়ায় এক দেশের সঙ্কট অন্য দেশে সহজে ছড়িয়ে পড়ে। যেমন -২০১১ তে ফরাসী ব্যাঙ্ক থেকে ইতালীয় গ্রাহকরা ৩৬৬ মিলিয়ন ডলার ঋণ নিলে ও তারপর সেই ঋণ শোধ দিতে না পারলে ফরাসী অর্থনীতি সরাসরি সঙ্কটগ্রস্থ হয়।
• বিভিন্ন বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ঝুঁকি নিয়ে যে সঙ্কট ডেকে এনেছে তা থেকে মুক্তি দিতে সরকার বেল আউট প্যাকেজ ঘোষণা করে। বিপুল বেল আউট প্যাকেজের ফলে বাজেট ঘাটতি দেখা যায়। ২০০৭ এ ই ইউ দেশগুলির যে গড় বাজেট ঘাটতি ছিল ০.৬ শতাংশ, তা আর্থিক সঙ্কটের পর দাঁড়ায় ৭ শতাংশ তে।
গড় সরকারী ঋণ জিডিপির ৬৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ৮৪ শতাংশ হয়।
• আর্থিক সঙ্কটের প্রেক্ষিতে ইউরোপের শাসক দলগুলি ব্যয় সঙ্কোচের নীতি নেয়। এর দুটি দিক – ১) মানুষের ওপর সরকারের বেশি বেশি কর চাপানো, ২) বিভিন্ন সরকারী ব্যয়বরাদ্দ কমানো, ভরতুকি কমানো বা বন্ধ করা।
• এর ভিত্তিতে ব্যাপক সামাজিক প্রতিক্রিয়া হয়, ব্যয়বরাদ্দ হ্রাসের কারণে বিক্ষোভ শুরু হয়। বিভিন্ন নির্বাচনে এর প্রভাব পড়ে।
ফ্রান্সে ফাঁসোয়া ওলাঁদ ক্ষমতায় আসেন ধনীদের ওপর ব্যাপক কর বসানো, সেই টাকায় ৬০,০০০ শিক্ষক নিয়োগ করা, অল্প আয়ের মানুষদের জন্য বিদ্যুতের ব্যয়ে ভরতুকি দেবার প্রতিশ্রুতি নিয়ে। যে জার্মানী ও তার প্রেসিডেন্ট মার্কেল ব্যয়সঙ্কোচের প্রবক্তা সেখানেও দুটি প্রদেশের সাম্প্রতিক নির্বাচনে ব্য্যসঙ্কোচের বিরোধিতার ভিত্তিতে সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি এবং গ্রীন পার্টি বিজয়ী হয়েছে। গ্রীসের নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর পরাজিত হলেও সিরিজা এবং বামেদের বিপুল সমর্থনভিত্তি লাভ সেখানে একটা বড় ঘটনা। ই ইউ থেকে বেরিয়ে গেলে গ্রীস বেতন পেনসন দিতে পারবে না এই ভয়ঙ্কর আর্থিক অবস্থার কারণে, এই ভয় দেখিয়ে বুর্জোয়া মিডিয়া শাসক নিউ ডেমোক্রেসি ও প্যাসক জোটকে বিজয়ী হতে সাহায্য করে। কিন্তু বামপন্থীদের বিপুল সাফল্য সাম্প্রতিক ইতিহাসের প্রেক্ষিতে একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা।
• স্পেন এ ২০১১ থেকে লাগাতার চলছে অকুপাই আন্দোলন, ১৫ মে শুরু হওয়ায় যার জনপ্রিয় নাম ‘এম-১৫’। সাম্প্রতিক সময়ে এই আন্দোলন নতুন গতি পেয়েছে যার প্রেক্ষাপটে আছে গণ আন্দোলনের চাপে বিশিষ্ট ব্যাঙ্কার, প্রথমে আই এম এফ এবং পরে স্পেনের চতুর্থ বৃহৎ ব্যাঙ্ক ‘ব্যাঙ্কিয়া’র প্রাক্তন কর্ণধার রডরিগো র্যােডোর বিরুদ্ধে ফৌজদারী তদন্ত শুরুর নির্দেশ অর্জনের সাফল্য। উল্লেখযোগ্য রডরিগো ব্যাঙ্কের শীর্ষপদে থেকে বহু মানুষের সর্বণাশ করেছিলেন। যদিও এই আন্দোলন এই ধরণের শীর্ষস্থানীয়দের বিরুদ্ধেই শুধু নয়, গোটা ব্যবস্থাটারই বিরুদ্ধে। কেন এই আন্দোলন তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে প্রতিবাদীদের এক সংগঠক, বছর পঁচিশেক বয়সের স্টেফানি গুয়েরসো জানাচ্ছেন, “ যেদিকে যাচ্ছিলাম, যা দেখছিলাম তা আমাদের ভালো লাগছিল না।
আমরা অনুভব করছিলাম আমরা আমাদের গণতন্ত্র হারাচ্ছি, আমাদের দেশকে হারাচ্ছি, আমাদের জীবন ধারণের পথকে হারাচ্ছি। আমাদের একটাই স্লোগান, আমরা প্রকৃত গণতন্ত্র চাই”।
• আন্দোলন চলাকালীন স্পেনের প্রধানমন্ত্রীর পার্লামেন্ট ঘোষণা নিঃসন্দেহে বিক্ষোভের আগুনে ঘৃতাহুতি দিয়েছে। সরকারের ঘোষিত ব্যয়সংকোচ কর্মসূচীতে ভ্যাট বাড়ানো থেকে শুরু করে ক্রিসমাসের বোনাস ছাঁটাই - কিছুই বাদ যায়নি। প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন,পণ্য ও পরিষেবাতে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট তিন শতাংশ বাড়ানো হবে,ফলে স্পেনে ভ্যাটের নতুন হার হবে একুশ শতাংশ।
অনেক সরকারি কর্মচারী আর বড়দিনের বোনাস পাবেন না,আর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলেই সরকারি চাকুরেদের সংখ্যা বা বেতন ছাঁটাই করা হবে - কোনও কোনও ক্ষেত্রে তা হবে এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত। স্পেনের সঙ্কটাপন্ন ব্যাঙ্কগুলোকে সাহায্য করার জন্য ইউরোজোনের নেতারা এ মাসের মধ্যেই তিন হাজার কোটি ইউরো দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন - তার শর্ত হিসেবে স্পেনকে নতুন একগুচ্ছ ব্যয়সঙ্কোচনের প্রস্তাবে রাজি হতে হয়েছে। আর সেই শর্ত পূরণের তাগিদ থেকেই প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাহয় পার্লামেন্টে এই সব নতুন পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করেন।
• এই পর্বে আন্দোলনের শুরুতে নগরের কেন্দ্রস্থল পুয়ের্তো দেল সোল এ প্রথমে জমা হয়েছিলেন মাত্র জনা পঞ্চাশেক বিক্ষোভকারী। পুলিশ বলপ্রয়োগে তাদের হটিয়ে দিতে চায়।
এতে আন্দোলন তীব্র হয়। দিন তিনেকের মধ্যেই স্পেনের অন্তত বারোটি শহরে হাজার হাজার মানুষের বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য ২০১১ থেকে বিশ্বজোড়া অকুপাই আন্দোলনের অংশ হিসেবে স্পেনের এই আন্দোলন শুরু হলেও আমেরিকার মতো হঠাৎ গতি হারিয়ে ফেলেনি বরং নানা আকর্ষক পথে এগিয়ে চলেছে। বিভিন্ন কর্মী দলে বিভক্ত হয়ে নানা ইস্যু ভিত্তিক লড়াইয়ে তারা অংশগ্রহণ করছেন। রাজপথের আন্দোলনের সাথেই তারা মিলিয়ে নিয়েছেন আইনী লড়াইকেও।
একটি দল বহু মানুষের সর্বণাশকারী রডরিগো র্যা গোর মত ব্যাঙ্কারের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি লড়াইয়ের পথে যাবার সিদ্ধান্ত নেন। প্রায় জনা পঞ্চাশেক আইনজীবী এগিয়ে আসেন বিনা পারিশ্রমিকে মামলা লড়তে, মামলার অন্যান্য খরচ মেটানোর জন্য অজস্র মানুষের থেকে অল্প অল্প টাকা নিয়ে একদিনেই ওঠে পঁচিশ হাজার ডলার। মামলা শুরু হয়। আর ব্যয়সঙ্কোচ নীতির ফাঁস যত তীব্র অয়েছে, ততই বেড়েছে রাজপথে বিক্ষোভ। প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রোজার যখন পার্লামেন্টে আরো বেশি কৃচ্ছসাধন নীতির কথা ঘোষণা করছেন, বলছেন বিক্রকর বাড়ানো বা সরকারী কর্মচারীদের মজুরী কমানোর কথা, বেকারভাতার সময়সীমা কমিয়ে আনার কথা তখন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার খনি শ্রমিক এসে পৌঁছেছেন মাদ্রিদে।
তাদের স্লোগান ছিল ‘আমরা নিরানব্বই শতাংশ’। খনিশ্রমিকদের বক্তব্য,স্পেন সরকার যেহেতু কয়লাখনি সংস্থাগুলোকে দেওয়া ভর্তুকির প্রায় দুই তৃতীয়াংশই ছাঁটাই করছে - তার ফলে এই খাতে হাজার হাজার কর্মী চাকরি খোয়াবেন। শ্রমিকদের আন্দোলন বৃহত্তর জনসমাজের সমর্থনলাভে সক্ষম হয়েছে। টোনি নামে প্রতিবাদকারী একজন খনিশ্রমিক বলেন তারা মাদ্রিদবাসীর কাছ থেকেও আশাতীত সমর্থন পেয়েছেন । “দারুণ সাড়াজাগানো সমাবেশ হয়েছে - দেখুন, কত মানুষ এসেছেন! কেউ কেউ বলে মাদ্রিদ না কি দক্ষিণপন্থীদের শহর - কিন্তু আমার তো তা মনে হয় না! এটা তো শ্রমজীবীদের শহর,সাচ্চা শহর।
আমরা ভীষণই খুশি - গোটা পদযাত্রায় আমরা দেশের প্রতিটা গ্রামে যেরকম সাড়া পেয়েছি মাদ্রিদেও তার কোনও ব্যতিক্রম হয়নি ... সত্যিই এটা দারুণ ব্যাপার। ”আগত খনি শ্রমিক ও মাদ্রিদের নাগরিকদের বিপুল অংশ ব্যয়সংকোচ নীতির বিরুদ্ধে মিছিল করে অগ্রসর হলে রবার বুলেট নিয়ে পুলিশ তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, অন্তত ছিয়াত্তর জন গুরূতর যখম হন। কিন্তু দমন নীতি অগ্রাহ্য করে আন্দোলন ক্রমশ আরো তীব্র হচ্ছে। আগামী ১৯ জুলাই বড় ধরনের বিক্ষোভ দেখানোর পরিকল্পনা নিয়েছে সেদেশের প্রধান দু’টি ট্রেড ইউনিয়ন- ইউজিটি এবং সিসিওও। সংগঠন দু’টি এ বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করার জন্য দেশের সব নাগরিকের প্রতি আহবান জানিয়েছে।
• পর্তুগাল সরকারও তাদের কৃচ্ছসাধন নীতির বিরুদ্ধে নেওয়া প্রতিবাদী আঁচ ভালোরকম টের পাচ্ছে। রাজধানী লিসবনে প্রায় তিন লাখ শ্রমিক প্রতিবাদ মিছিলে অংশ নিয়ে জানিয়েছেন ব্যয়সংকোচ করা চলবে না। বস্তুতপক্ষে গত তিন দশকের মধ্যে এটিই পর্তুগালে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ সমাবেশ। সমাবেশে অংশগ্রহণকারী বয়ন শ্রমিক সুশানা লিল জার্মানী নির্দেশিত ব্যয়সঙ্কোচ নীতির বিরোধিতা করে বলেছেন, “আর্থিক সঙ্কট কেবল জার্মানীকেই লাভবান করছে”। মে মাসে পর্তুগালের সংসদ শ্রম আইনে যে সব পরিবর্তন এনেছে, পর্তুগালের প্রধান শ্রমিক ইউনিয়ন তার তীব্র বিরোধিতা করেছে।
• তিরিশ বছর ধরে চলা স্বাস্থ্যনীতিতেও এসেছে পরিবর্তন। বস্তুতপক্ষে ব্যয়বরাদ্দর তীব্রতম প্রকোপ পড়েছে স্বাস্থ্যখাতেই। চিকিৎসক, নার্সদের বেতনে কাটছাঁট করা হচ্ছে, বাড়ছে ওষুধের দাম। অনেক সরকারী হাসপাতাল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চিকিৎসার সুযোগ পেতে রোগীদের অনেক বেশি সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। স্বাস্থ্যখাতে ব্যয়বরাদ্দ হ্রাসের প্রতিবাদে চিকিৎসকেরা শুরু করেছেন ধর্মঘট।
লিসবনের কেন্দ্রীয় হাসপাতাল সাও হোসের চিকিৎসক ড. পিলার এবং ড. কার্লোস মার্টিং জানিয়েছেন দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বেসরকারীকরণ সমাজে গভীর প্রভাব ফেলবে। মানুষ স্বল্পব্যয়ে উন্নত চিকিৎসার যে সুযোগ পেতেন তা থেকে বঞ্চিত হবেন। বেসরকারীকরণের তাগিদে অনেক সরকারী হাসপাতাল বন্ধও করে দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসা লাভজনক পণ্যে পরিণত হবার ফলে জনস্বাস্থ্য বিঘ্নিত হচ্ছে। এসবের প্রতিবাদেই তাদের এই ধর্মঘট।
সাধারণ মানুষ এই ধর্মঘটকে ব্যাপকভাবে সমর্থন করছেন। এদেরই একজন দক্ষিণ লিসবনের আলমাদার এক ক্লিনিকে চিকিৎসার জন্য আসা জনৈক জোয়াল পালমা ক্ষোভের সুরে জানিয়েছেন, “স্বাস্থ্য একটা ভালো ব্যবসা হয়ে দাঁড়িয়েছে। টাকা আছে তো ঠিক আছে, না হলেই মরণ”।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।